হার্বাল বিউটি টিপস – Beauty Tips in Bangla Language

হার্বাল রূপচর্চার সবই আপনার হাতের নাগালে–আপনার রান্নাঘরেই, বা আপ-নেয়ার বাড়িতেই আছে হয়তো আপনি জানেন না। তাই আজকে আপনি জেনে নিন হার্বাল বিউটি টিপস আমাদের কতটা সাহায্য করে আমাদের স্কিন বা বিউটির জন্য কতটা উপকারী। এসব ব্যবহারে আপনি পাবেন দীর্ঘস্থায়ী ভালো ত্বকের নিশ্চয়তা। যেসব প্যাকেটজাত সৌন্দর্য সামগ্রী আমাদের উজ্জ্বল ত্বকের নিশ্চয়তা দেয় আমরা অনেকেই তা একবার করে আমাদের মুখে পরীক্ষা করে দেখে থাকি। এই করতে গিয়ে আমাদের মুখের ত্বকের বারোটা বাজে। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই–উজ্জ্বল ত্বক আসলে সুস্থ ত্বকেরই বাইরের রূপ। বেশিরভাগ নারীই উজ্জ্বল ত্বকের জন্য বিভিন্ন ধরণের কসমেটিক পণ্য ব্যবহার করেন। যদিও এর দ্বারা উজ্জ্বল ত্বক পাওয়া হয়না। আপনার ত্বকের জন্য ভেতর থেকে এবং বাহির থেকে পুষ্টি প্রয়োজন। কেমিক্যাল কসমেটিক এই পুষ্টি সরবরাহ করতে পারেনা এবং এরা কেবল বাহিরের ত্বকেই কাজ করে। প্যাকেটজাত পণ্য দীর্ঘদিন ব্যবহার করাও স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তাই উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার জন্য হারবাল পণ্য ব্যবহার করুন। এরা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের উপর ভালো প্রভাব ফেলে। 

দীর্ঘস্থায়ী উজ্জ্বল ত্বকের নিশ্চয়তা কেবল সুস্থ ত্বকই দিতে পারে, বাইরের ত্বক নয়। বাজারে চালু ত্বক ফর্সা করা ক্রিমগুলি আমাদের ত্বকের বাইরের অংশে কাজ করে। এগুলির রাসায়নিক উপাদান শেষ পর্যন্ত ত্বকের ক্ষতিই করে। রূপচর্চার জন্যে আমাদের হাতে যখন হার্বাল বা ভেষজ উপাদানের মত বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে তখন কেন এসব রাসায়নিকের ব্যবহার! হার্বাল রূপচর্চার জন্য যা যা প্রয়োজন সব রয়েছে আপনার হাতের নাগালে। চলুন তাহলে জেনে নিই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী ভেষজ উপাদানগুলো সম্পর্কে।

1. চন্দন

বয়সের ছাপ, বিষন্নতা, অযত্ন, ত্বকে স্বাভাবিক আলো বাতাসের অভাবে, ত্বকের সতেজতা হ্রাস পায়। চন্দন গুড়ার সাথে সামান্য হলুদ গুড়া ও দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ত্বক সতেজ আর সুন্দর করতে এই মিশ্রণটি বেশ কার্যকর। 

2. মধু ও দুধের সর

দুধের সরের সাথে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক হবে নরম আর উজ্জ্বল। শীতকালে এই মিশ্রণটি আপনাকে ত্বক নিয়ে অনেকটাই নিরুদ্বেগ রাখবে। 

3. দুধ,লবণ ও লেবুর রস।

প্রাত্যহিক কাজ কর্মের বিভিন্ন সময় ত্বকের ভাজে ভাজে ধূলাবালি ও ময়লা লেগে বাহ্যিক ময়লা আবরনের স্তর লোমকূপের মাধ্যেম টিস্যু/কোষে জমা হয়। ফলে ত্বকে অক্সিজেন প্রেবশ করেত পারে না। দুধের মধ্যে এক চিমটি লবণ আর লেবুর রস মেশান। এই মিশ্রণটি আপনার ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করবে। 

4. টমেটোর রস

ধূলাবালি, ময়লা, সূর্যের তাপ ও অবেহলার কারনে ত্বকের স্বাভাবিক মসৃন ভাব কমে ত্বক রূক্ষ হয়ে যায়। ত্বক নরম করতে টমেটোর রস খুবই কার্যকরী। টমেটোর রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত ত্বকে লাগালে ভালো ফল পাবেন।

5. হলুদ গুড়া, গম ও তিল

অনেকের ত্বকের বিভিন্ন স্থানে অবাঞ্চিত বা অনাকাক্ষিত লোম থাকে। যা মুখের স্বাবাবিত সৌন্দর্য নষ্ট করে। হলুদের গুড়া,গমের ময়দা ও তিলের তেল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখুন। এই মিশ্রণটি আপনার ত্বককে অনাকাঙ্ক্ষিত লোমের হাত থেকে দূরে রাখবে।

6. আঙুর

অনেক ক্ষেত্রেই ত্বকের স্বাভাবিকতা কমে গিয়ে ত্বকের ফর্সা ভাব ও উজ্জলতা কালচে হতে থাকে। বাহ্যিক ময়লা আবরনের স্তর এবং সূর্য রশ্নি দ্বারা ত্বকে কালচে ভাবের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে ত্বক ফর্সা করতে আঙুরের রস দারুণ উপকারি। কয়েকটি আঙুর নিয়ে মুখে আলতোভাবে ঘষুন। আঙুর বেটে ফেসপ্যাক তৈরি করেও মুখে লাগাতে পারেন।

7. শসার রস, গ্লিসারিন ও গোলাপ জল

সূর্যের অতি বেগুনি রশ্নি ত্বক পুরিয়ে ফেলে। শসার রস, গ্লিসারিন ও গোলাপ জলের মিশ্রণ রোদে পোড়া ত্বকের জন্যে উপকারি। রোদে যাওয়ার আগে এবং বাসায় ফিরে এগুলি একসাথে মিশিয়ে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল থাকবে। চন্দন, হলুদ ও দুধ

8. বাঁধাকপির রস ও মধু

একটা সময় সবারই বয়স বাড়তে থাকে, এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকে বিভিন্ন বলিরেখার সৃষ্টি হয়। বাঁধাকপির রস ও মধু একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। বলিরেখা দূর করতে এই মিশ্রণ খুব উপকারী।

9. গাজরের রস

ত্বকে অক্সিজেন এর অভাব হলে উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়। ত্বকে ময়লা জমলে অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না। গাজরের রস মুখে আনে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। গাজরের রস নিয়মিত মুখে লাগালে ত্বক সতেজ থাকবে এবং উজ্জ্বলতা বাড়বে।

10. মধু ও দারুচিনি

খাদ্যভ্যাস, ময়লা-ধূলাবালি, দুশ্চিন্তা, মানুষিক চাপ, নিদ্রাহীনতা, ধূমপান, মাদক এবং অতিরিক্ত ঘুমের অষুধ সেবনে মুখে ব্রণ হয়। তিন ভাগ মধু ও এক ভাগ দারুচিনির গুড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি ব্রণের উপর লাগান। সারারাত রেখে পরদিন ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্টটি আপনার ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করবে।

11. বাদাম ও লেবুর রস

শহরের যান্ত্রিক পরিবেশে পর্যাপ্ত পরিমান প্রাকৃতিক বাতাস এর অভাব রয়েছে। এর ফলে ব্রন ও ব্ল্যাকহেড এর সৃষ্টি হয়। বাদামের তেল ও লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগান। এই মিশ্রণটি ব্রণ ও ব্ল্যাকহেড দূর করবে আর ত্বককে রাখবে সতেজ ও সুন্দর।

12. আ্যলোভেরার রস

ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমান জলের অভাবে ত্বকের সজীবতা হ্রাস পায়। ত্বক সুস্থ স্বাভাবিক রাখতে জল আবশ্যক। আ্যলোভেরার রস মুখে লাগালে ত্বকের দাগ দূর হয়। আ্যলোভেরার রস ত্বকের জল স্বল্পতা দূর করে লাবণ্য ফিরিয়ে আনে।

13. ঘি ও গ্লিসারিন

অনেকেই শরীরের বিভিন্ন স্থানের ত্বকের মসৃনতা বজায় রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বাজারের ক্যামিক্যাল যুক্ত এবং বানিজ্যিক ভাবে বিক্রিত প্যাকেট জাক  দ্রব্য অনেকক্ষেত্রে বিপরীত প্রভাব ফেলে। ঘি ও গ্লিসারিনের মিশ্রণ খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার। রাসায়নিক ময়েশ্চারাইজারের বদলে এটি ব্যবহার করে দেখুন। তফাত নিজেই টের পাবেন।

14. মুলতানি মাটি, নিমপাতা, তুলসিপাতা, গোলাপ পাঁপড়ি এবং গোলাপ জল

মুলতানি মাটি, গোলাপের পাঁপড়ি, নিম পাতার গুঁড়া, তুলসি পাতার গুঁড়া সামান্য গোলাপ জল বা লেবু জলের সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল থাকবে।

15. অ্যাপ্রিকট ও দই

দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন অনিয়ম ও ত্বকের কোষে জল শূন্যতা হলে ত্বক শুশ্ক হয়ে যায়। অ্যাপ্রিকট এবং দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বক সতেজ রাখে। যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয় তাহলে এর সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগান।

শেষ কথা 

আমাদের মানব জীবনে সৌন্দর্য একটা বিশাল ব্যাপার। আর এই সৌন্দর্য আসে অনেক কিছু থেকে। কিছুটা কুদরতি মানে প্রাকৃতিক ভাবে তো থেকেই আর বাকিটা আমাদের খাওয়া দাওয়া আর আমাদের নিজস্ব কারুকার্যের মাধ্যমে। তার মধ্যে হার্বাল বিউটি টিপস অর্থাৎ হার্বাল এর জিনিস বা ভেষজ কোনো জিনিস যদি আমরা ব্যাবহার করে থাকি সেটা সব থেকে উপকারী আমাদের স্কিন এর ক্ষেত্রে। আমরা এখন বর্তমান জীবনে অনেক কিছুই করে থাকি আমাদের সৌন্দর্য বা আমাদের স্কিন টাকে ভালো করার জন্য বা ভালো রাখার জন্য।  কখনো আমরা সফল হই আর কখনো আমরা বিফল হই। সফল আর বিফল তা কিন্তু প্রায় অনেকটাই আমাদের হাতে। আমি বলবো সব থেকে ভালো আপনি যদি হার্বাল মানে  ভেষজ কিছু ব্যাবহার করি তাহলে কাজ তা খুউব ভালো দেয় আর ভিতর থেকে দেয়। আর যদি কাজ নাও দেয় তাহলে অন্তত আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। একটু টিপস গুলো ভালো করে দেখে নিন আর সেই ভাবে ব্যাবহার করুন যেভাবে করা উচিত। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর অনেক সুন্দর থাকুন। ধন্যবাদ।

লেখক – শান্তনু পাল