আগেই বলে নিচ্ছি কেননা আপনারা পরে ভুলে যান। বাকি বন্ধুদের সাহায্যের উদ্দেশে লাইক আর শেয়ারটা মনে করে করে দেবেন। শুরু করছি আজকের বিষয় –
নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর সুস্থ আছেন। বন্ধুরা আমরা তুলসী পাতা সবাই জানি আর কম বেশি এর ব্যাবহারও জানি। কিন্তু আজ আমি তোমাদের জানাবো যে তুলসী পাতার কি কি গুনাগুন আছে। আমরা জন্য যে – তুলসী পাতার ঔষধি গুণ, তুলসী গাছের গুনাগুন, তুলসী গাছের বিষয়ে, তুলসী গাছের উপকারিতা, তুলসী গাছের বৈজ্ঞানিক নাম, তুলসী পাতার বৈজ্ঞানিক নাম, তুলসী পাতার উপকারিতা , তুলসীর ঔষধি গুণ ইত্যাদি ইত্যাদি।
হিন্দুধর্মে তুলসী গাছকে দেবী হিসেবে পুজো করা হয়। পুরাণে বলা আছে, যে বাড়িতে তুলসী গাছ রয়েছে এবং নিয়মিত তার পুজো করা হয়, সেই বাড়িতে কখনও হঠাৎ শোকের ছায়া নামে না। সেই সংসার সব সময় সুখ শান্তি থাকে। বাড়িতে তুলসী মঞ্চ রাখার বা তুলসী গাছে জল ঢালার সঠিক কিছু নিয়ম বা মন্ত্র আছে। যদি সেই সঠিক নিয়মে মেনে চলা যায়, তা হলে বাড়িতে কোনও বিপদ সহজে আসতে পারবে না।
1. তুলসী গাছ যদি বাড়িতে থাকে, তা হলে তার নিত্য পুজো করতেই হবে। সঠিক নিয়মে তুলসী গাছে জল দিতে হবে।
2. তুলসী মঞ্চ বাড়ির জমি থেকে, অর্থাৎ মেঝে থেকে একটু উঁচু জায়গায় রাখতে হবে। এবং তুলসী গাছের ওপর যেন কোনও অপবিত্র ছায়া না পড়ে, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
3. সন্ধ্যাবেলায় তুলসী গাছের কাছে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালতেই হবে।
4. সন্ধ্যা বাতি দেওয়ার পর আর তুলসী গাছ স্পর্শ করা যাবে না।
5. সন্ধ্যা নামার পর তুলসী পাতা তোলা যাবে না।
6. বিশেষ কিছু তিথিতে তুলসী পাতা তোলা যাবে না। যেমন একাদশী, সূর্যগ্রহণ এবং রবিবারে। অন্য দিন তুলসী পাতা তোলা যেতে পারে।
7. তুলসী পাতা তোলার আগে হাততালি বাজিয়ে এবং ওঁ ভদ্রায় নমঃ বলে তুলসি পাতা তুলতে হবে।
তুলসী গাছে জল দেওয়ার সঠিক মন্ত্র
“মহাপ্রসাদ জননী, সর্ব সৌভাগ্য বর্দ্ধিনী
আদি ব্যাধি হরা, নিত্য তুলসী ত্ব
নমহস্তুতে”
এই মন্ত্র উচ্চারণ সহকারে যদি নিত্য তুলসী পুজো করা যায়, তা হলে সংসারে সুখ শান্তি বজায় থাকবে। কর্ম, ব্যবসা এবং সন্তানদের লেখাপড়ায় অগ্রগতি হবেই হবে।
তুলসী পাতার ঔষধি গুণ – তুলসী পাতার উপকারিতা
1. শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। সেখানে কোন দাগ থাকবে না।
2. ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য এছাড়া ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান।
3. চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।
4. যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
5. সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচি বাড়ে।
6. নিয়মিত তুলসীর রস পানে হৃদরোগেও উপকার পাওয়া যায়।
7. চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা জলে ভিজিয়ে রেখে ওই জল দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে নিন। অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চোখটাও সুস্থ থাকবে।
8. পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০-১২টা পাতা সামান্য জিরার সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান।
9. জ্বর হলে জলের মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন। অথবা তিনটি দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন। দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা খান। জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
10. কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান। এতে উপকার পাবেন।
11. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪/৫ বার তুলসী পাতা চেবান।
12. ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘায়ে লাগান কমে যাবে।
13. বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান।
14. প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন। উপকার পাবেন।
15. তুলসীর বীজ জলে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই জলে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাব জনিত জ্বালা যন্ত্রণায় বিশেষ উপকার হয়। এছাড়াও তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ।
16. মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।
17. ত্বকের সমস্যা দূর করতে তিল তেলের মধ্যে তুলসী পাতা ফেলে হালকা গরম করে ত্বকে লাগান।
18. তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতা, এলাচ গুঁড়া এবং এক টুকরো পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদুর্বলতা রোগ সেরে যায়।
19. কোন কারণে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসি পাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি।
20. তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়। জল ফুটলে কয়েকটা তুলশী পাতা দিন। এরপর চাপাতা দিয়ে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে চিনি মিশিয়ে খান। হয়ে গেল তুলশী চা।
21. তুলসি পাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।
শেষ কথা
তুলসী আমাদের ভগবান। সঠিক নিয়মে তুলসী পুজো করুন। নিত্য জল ঢালুন সঠিক নিয়মে। ওপরে সব কিছু লেখা আছে যাতে করে আপনাদের কোনো রকম অসুবিধে না হয়। ভালো থাকবেন নিষ্ঠাবান হন এটাই কামনা করি।