Incomplete Love – অসম্পূর্ণ প্রেমের কথা

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে এক অসম্পূর্ণ প্রেমের কথা আলোচনা করবো যা কিনা সত্য ঘটনা অবলম্বনে, কিন্তু কিছু প্রয়োজনে এই গল্পের আসল স্থান-কাল-পত্র পাল্টেছি। কমেন্ট করে জানাবেন কেমন লাগলো
প্রিয় শুভ্র, আজ চিঠি না লিখে পারলাম না, তোমার বাড়ির ঠিকানা টা দিয়েছিলে এক সময়। গত তিন তারিখ আমি মা হয়েছি। না সেই সুখবর দিতে তোমায় চিঠি লিখতে বসিনি। তোমায় ধন্যবাদ জানাতে আর তোমায় একটা অনুরোধ করতে। এই কয়েক বছরে একদিনও যায়নি যে তোমার কথা মনে পড়েনি। আমাদের হয়তো এই পরিণতি টাই ছিলো। আমি আপাদমস্তক গৃহিণী হয়ে উঠেছি এই ক বছরে। আর আমি চাই তুমিও এবার জীবনে এগিয়ে যাও। অফিসের অনিল দা এর থেকে শুনলাম তুমি এখনও একা। তাই এই চিঠি লেখা।
জানো, অফিসের পিকনিকে যেদিন প্রথম তোমার কবিতা শুনেছিলাম , সাথে সাথেই প্রেমে পড়েছিলাম। পরে একই গ্রুপ এ কাজ করতে করতে একটা চুম্বকীয় টান তোমার প্রতি অনুভব করতে থাকি। তোমার ওই অনুভূতি ভরা চোখ, ঠোঁটের কোণে কোন মাধুর্যে ভরা হাসি, আমাকে নিজেকে আটকাতে দেইনি। হয়তো আমার নীরব দৃষ্টি তোমার অগোচর হয়নি, তুমিও ধীরে ধীরে কাছে এসে ছিলে।
তুমি মুসলিম তার উপর বাংলাদেশ থেকে কয়েক মাসের জন্য এদেশে। অন্যদিকে আমার পদবী বন্ধপাধ্যায়। গোরা ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে। কিন্তু কোনো দিনই জাত, ধর্ম ভালোবাসা কে আটকাতে পারেনা, পারেনি ও। দুজনেই কবে একে অপরের দিকে এগিয়ে গেছিলাম বুঝতে পারেনি। তুমি সাবধান করেছিলে। বলেছিলে ভবিষ্যত টা সুখের হবেনা। আমি বরাবরই জেদী, মানতে চাইনি সেই সব কথা।
এক বন্ধু কে তোমার কথা বলায় সে বলেছিল মুসলিম দের ধর্মে লেখা আছে হিন্দু মেয়ে কে বিয়ে করলে নাকি স্বর্গ বাস হয়। এদিকে তত দিনে কাবুলিওয়ালার বাঙালী বউ পরে ফেলেছি, সুস্মিতা ব্যানার্জী এর প্রাণ ও চলে গেছে সেই কাবুলেই। কিন্তু শত বাধা, বা চিন্তাও তোমার প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারেনি।
জানো তোমায় পরীক্ষা করব বলেই বলেছিলাম বিয়ের পর ধর্ম পাল্টে নেবো, উত্তরে তুমি বাধা দিয়েছিলে বলেছিলে যদি আমি এভাবেই তোমার সাথে পাশে বাসে দুর্গা কে পুজো দিতে পারি তবেই বিয়ে করবে। মনের কোণে যেটুকু দ্বিধা ছিলো সেদিন তাও দূরে চলে গেলো। তোমার সাথে কাটানো সময়, তোমার কবিতা, তোমার বড়ো মাগ এ চা খাওয়া, ঢাকাইয়া বাংলায় তোমার মায়ের সাথে কথা বলা, তোমার তর্ক, তোমার যুক্তি, তোমার ইফতার, তোমার ঈদ , সব টাকে ভালোবেসে ছিলাম।
আমি বরাবরই অল্পেতে রেগে যাই, রাগ করলে মিষ্টি হেসে তোমার রাগ ভাঙ্গানো, একটা বড়ো ভারে দুজনের চায়ের চুমুক সবটা আজও আপন করে রেখেছি।
অফিসে আমাদের কথা চাউর হতে সময় নেয়নি। বাড়িতে ও খবর পৌঁছলো ঝড়ের গতিতে। ছেলে দেখা শুরু হলো। কাজেও পড়লো ইতি।
মনে আছে কি ভয়ানক সাহস দেখিয়ে তুমি আমার বাড়ি এসেছিলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। বাবা কিভাবে তোমায় প্রত্যাক্ষান করেছিল।
এক বন্ধুর সাহায্যে তোমার সাথে আবার দেখা করি। নিজের সবটা দিতে চেয়ে ছিলাম। তোমার জবাব ছিলো, “তোমার শরীর টা তো পাবো, তোমায় পাবো কি?”
বলে ছিলাম চল পালিয়ে যাই, আমি তো তোমার সাথে থাকতে চাই, আমার মনে আছে আজও শান্ত ভাবে বলেছিলে ‘বাড়ি যাও। বিয়ে করলে তোমার বাবার আশির্বাদ নিয়ে হবে নাহলে নয়। পালিয়ে গেলে আজ সবাই বলবে মুসলিম ছেলে টা হিন্দু মেয়ে টা কে নিয়ে পালিয়েছে। পেছনের ভালোবাসা টা দেখবে না।”
কি দীপ্ত ছিল সেদিন তোমার গলার স্বর ।
তোমার ঠোঁটের শেষ স্বাদ টাও আজও লেগে আছে অন্তরে।
কিন্তু আমরা হয়তো সময়ের থেকে বেশ কিছু আগে ছিলাম সেদিন, সমাজ হয়তো তখনও পরিণত হয়নি । তাই আমাদের ভালোবাসা টাও পরিণতি পেলনা।
তারপর বিয়ে ঠিক হল, তুমি হয়তো বিয়ের দিনের অপেক্ষায় ছিলে, তারপর সেই ভয়ানক রাত টা এলো, বর আনতে গিয়ে বাবার অ্যাকসিডেন্ট হলো, হিতাহিত হারিয়ে তোমায় ফোন করলাম, তুমি নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে হসপিটালে ছুটে এলে। বাবার রক্ত এর প্রয়োজন ছিলো, সেটাও তুমি দিলে, কি নিয়তি তাইনা! একদিন যে মানুষটা বেজাত বলে তোমায় তাড়িয়ে দিয়েছিল বাড়ি থেকে, তার প্রাণ টাও তুমি বাঁচিয়ে গেলে।
আমি তো জানতাম ও না। পরের দিন সকালে যখন সব জানলাম, শুনলাম তুমি সকালের প্লেনে দেশে ফিরে গেছ। একটা চিঠি রেখে গেছিলে, বলেছিলে যেন কোনো যোগাযোগ না করি। করিও নি কোনোদিন।
কিন্তু আজ করতে বাধ্য হলাম।
জানো শুভ্র, যখন তোমার মুখে শুনতাম “কলকাতার মাইয়া গুলো কিউট এর ডিব্বা” কি রাগ ই না হতো, ভাবতাম তোমার চোখ নাজানি কতো মেয়ে কে দেখে বেড়ায়, আজ মন থেকে চাই, নিজে দেখে ভালো করে কাউকে বিয়ে করো , সুখী হও।
লিখেছিলে আমার বিয়ের উপহার টা পাওনা রইলো, কোনোদিন দেখা হলে দেবে।
আজ সেটা চাইছি, তুমি জীবনে এগিয়ে গেলে সেটাই হবে আমার সব চেয়ে বড় উপহার।
উপহার টা আমার চাই কিন্তু।
উপহারের অপেক্ষায় রইলাম।
আমার বর তোমার কথা জানে। বিয়ে তে ডেকো, স্বামী কে সাথে নিয়ে আসবো কথা দিলাম।
নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
মালবিকা