আপনি কি নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে করোনা থেকে নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন ? তাহলে ভুল করবেন

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন।  বর্তমান সারা ভারতবর্ষ তথা সারা বিশ্বে যা অবসস্থা করোনা নিয়ে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষায় রাখেনা  আপনাদের। আপনারা  সবটাই জানেন নানান সংবাদ মাধ্যম থেকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে একটা কথা খুব পরিমানে অর্থাৎ একটু বেশি সোনা যাচ্ছে সেটা হল করোনা থেকে বাঁচতে অগ্রিম ওষুধ খেয়ে নিচ্ছে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ আজ তার বিষয় নিয়ে কথা বলবো।

মাত্র ছ’মাসের পুরনো করোনাভাইরাস ঘুম কেড়ে নিয়েছে সারা বিশ্বের। যত দিন যাচ্ছে, মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ ছাড়া বাকি সর্বত্র সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। এখনও পর্যন্ত এর কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। কাজেই চিকিৎসা যা হচ্ছে সবই উপসর্গভিত্তিক। জ্বর কমানোর ওষুধ, শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন। জটিলতা বেড়ে গেলে হিসেবনিকেশ করে পরীক্ষামূলক ভাবে বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কখনও কখনও অন্য ভাইরাসঘটিত রোগের অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভির, কখনও অ্যান্টিবায়োটিক।

প্রদাহ মারাত্মক বেড়ে শরীরের প্রত্যঙ্গগুলির উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করলে প্রদাহ কমানোর ওষুধ বা অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুসারে আরও কিছু সাপোর্ট দিতে হচ্ছে, যেমন, রোগী নিজে থেকে শ্বাস নিতে না পারলে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেনের জোগান দেওয়া হচ্ছে। কিডনি খারাপ হলে ডায়ালিসিস করা হচ্ছে ইত্যাদি। আর ক্রমাগত সাপোর্ট পেতে পেতে এক সময় রোগী তাঁর জীবনীশক্তির দৌলতে বেঁচে উঠছেন।

এককথায় বলতে গেলে, করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করার কোনও ওষুধ এখনও পর্যন্ত নেই। নেই কোনও টিকা। আজ পর্যন্ত এমন কোনও ওষুধ বেরোয়নি যে টিকার মতো করে কাজ করে সংক্রমণ ঠেকাতে পারে, যাকে বলে কেমো প্রোফাইলেক্সিস। অবশ্য এই প্রথার বিরুদ্ধে বহু প্রমাণ আছে। যে সমস্ত অসুখে এ ভাবে রোগ ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই ফল হয়েছে উল্টো। সেই ওষুধের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে, যাকে বলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স। ফলে রোগের জটিলতা বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ।

কোভিড-১৯ – Covid19 নিয়েও সেই একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা। এমনিতেই মানুষ অসহায়। রোগ হলে কোথায় যাবেন, কী করবেন, কতটা চিকিৎসা হবে তা নিয়ে আতঙ্কিত। তার উপর যে ভাবে অজানা ওষুধের সাহায্যে তার মোকাবিলা করার চেষ্টা চলেছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। নতুন ওষুধপত্র নিয়ে অবশ্যই পরীক্ষানিরীক্ষা হবে। তবে তা হবে গবেষণাগারে। মানুষের উপর নয়। যত দিন না বিজ্ঞান নিশ্চিত করে সেই ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তারথা জানাবে তত দিন অপেক্ষা করতে হবে। মূল প্রতিরোধ মাস্ক, সাবান-স্যানিটাইজারে ভরসা করে। প্রমাণ পাওয়ার আগেই ওষুধের প্রয়োগ শুরু করে দিলে সে সব দিলে বিপদ আরও বাড়বে। যেমন:

1. বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আপাতত এই সংক্রমণ ঠেকানোর অন্যতম হাতিয়ার হল সামাজিক দূরত্ব। প্রচারেও তাই বলা হচ্ছে। দু’জন মানুষের মধ্যে কম করে ৬ ফুট দূরত্ব থাকা দরকার। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে কি? পেটের দায়ে বাসে-ট্রামে ঝুলতে ঝুলতে যেতে হচ্ছে মানুষকে। ফলে রোগের ভয় তাড়া করে ফিরছে সর্ব ক্ষণ। রোগ ছড়াচ্ছেও।

2. অ্যালোপ্যাথির হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনও পৌঁছে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। কিছু হাসপাতালে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মচারীদের খেতে বলা হচ্ছে। খেতে না চাইলে বলা হচ্ছে মুচলেকা লিখে দিতে, যে তাঁর যদি রোগ হয় প্রতিষ্ঠান দায়ী থাকবে না। যদিও কোনও গবেষণায় এখনও পর্যন্ত এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে সে করোনাভাইরাসকে শরীরে ঢুকতে বাধা দিতে পারে। ভাইরাস মারার ক্ষমতাও তার নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা কবে ভাইরাস শরীরে ঢুকবে কেউ তো জানে না। তা হলে কি অনন্তকাল এই ওষুধ খেয়ে যেতে হবে! তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কী হবে? জটিল কোভিড রোগীর চিকিৎসাতেও যখন এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়, রোগীর অবস্থা ভাল করে পর্যালোচনা করে, রোগীকে বা তাঁর বাড়ির লোককে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়ে, লিখিত অনুমতি নিয়ে তবে কাজে নামা হয়। কারণ এর এমন অনেক ক্ষতিকর দিক আছে যে শরীরের অবস্থা যাচাই না করে দিনের পর দিন খাইয়ে গেলে মানুষ মারা পর্যন্ত যেতে পারেন।

3. এক দিকে স্কুল-কলেজ খোলা হয়নি সংক্রমণের ভয়ে, ৬৫ বছরের বেশি বয়সিদের বাইরে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে, কিন্তু বাড়ির রোজগেরে মানুষটির মাধ্যমে যাতে ভাইরাস ঘরে ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা কি হয়েছে? যে সমস্ত বয়স্ক মানুষ একা থাকেন, তাঁদের যাতে বাইরে বেরোতে না হয়, সেই ব্যবস্থা করাও কিন্তু রোগ ঠেকানোর অন্যতম অঙ্গ।

4. অনেক সময় মানুষের ঘরে ঘরে কবিরাজি ও হোমিওপ্যাথির কিছু ওষুধ বিলি করা হচ্ছে। মানুষ তা খাচ্ছেন সংক্রমণ ঠেকানোর আশায়। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞান পত্রিকায় করোনা ঠেকাতে পারবে বলে কোনও প্যাথিকেই নিশ্চিত ধরে নিয়ে কোনও প্রবন্ধ বেরোয়নি। ভাইরাসের বয়স মোটে ৬ মাস। তার মধ্যে গবেষণা করে ওষুধ বেরিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই মানুষ যদি ওষুধের ভরসায় না থেকে এই মুহূর্তে সুরক্ষাবিধি মেনে চলায় মন দেন, সেটাই এখন শ্রেয়।
5. লকডাউন কাগজে-কলমে ৩০ জুন পর্যন্ত থাকলেও দোকান, বাজার, মল, রেস্তরাঁ, ধর্মস্থান সব খুলে গিয়েছে। ফলে মানুষ ভাবছেন, এ বার বেরিয়ে পরা যায়! বিশেষ করে যাঁরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন। বেশির ভাগ মানুষ রোগটাকে ছোট করে দেখছেন। কেউ কেউ বিদ্রূপ করছেন। ফলে মাস্কটুকুও পরছেন না। এর ফলে যে রোগের প্রকোপ আগামী কিছু দিনে মারাত্মক ভাবে বেড়ে যাবে তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
6. আমরা এখন যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি তাতে সবাই যদি দলে দলে অসুস্থ হতে থাকেন, হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে কি? রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে আলাদা ভাবে থাকা যায়। কিন্তু ক’জন মানুষের সে ভাবে থাকার মতো পরিস্থিতি ও সচেতনতা আছে? এই রোগকে যত হেলাফেলা করবেন, সে কিন্তু তত বেশি করে প্রতিশোধ নেবে।
7. পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও অনেক জায়গায় এ রকম ঘটছে। তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখা হলেও হাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের পাতা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফল যে কী মারাত্মক হচ্ছে তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। রোগ ছড়িয়ে পড়ছে হু হু করে। এই অভ্যাস চালিয়ে গেলে তা আরও বাড়বে।

শেষ কথা

আপনি কি নিজে  আপনি ডাক্তার ? না আপনি সব জান্তা ? নাকি আপনার জীবনের কোনো মূল্য নেই ? এইরকম করা ভাবে বললাম বলে কিছু মনে করবেন না। আমার চিন্তা টা শুধু আপনাকে নিয়ে নয়, আপনার মা – বাবা, বা আপনার ছেলে – মেয়ে বা এই রকম অনেক সম্পর্ক আছে যার জন্য এইভাবে বলতে হচ্ছে। একটু দোয়া করে নিজের কথা ভাবুন। সাথে নিজের পরিবারের কথাটাও ভাবতে হবে। সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।