বাংলাদেশের রচনা – Bangladesh Paragraph in Bangla

নমস্কার বন্ধুরা আজ কিন্তু আমি আমাদেরই প্রতিবেশী রাষ্ট্র বা দেশ বাংলাদেশ এর ব্যাপারে কিছু  আলোচনা করবো। আমরা সবাই জানি যে আমাদের দেশ স্বাধীন হবার আগে কিন্তু এই ভারত,বাংলাদেশ, আর পাকিস্তান একটাই দেশ ছিল হিন্দুস্থান বা ভারতবর্ষ। তারপর অনেক লড়াই করে এক এক করে ভাগ হবার পরেই নাম হলো বাংলাদেশ আর পাকিস্তান। ভারত বর্ষ স্বাধীন হবার পর কিন্তু পাকিস্তানের আন্ডার এ ছিল বাংলাদেশ। তার পর ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে আলাদা হয়ে নিজ দেশ গঠন করে ১৯৭১ স্বাধীন হয়।  বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ভৌগোলিকভাবে একটি উর্বর ব-দ্বীপের অংশ বিশেষ। পার্শ্ববর্তী দেশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা-সহ বাংলাদেশ একটি ভৌগোলিকভাবে জাতিগত ও ভাষাগত “বঙ্গ” অঞ্চলটির মানে পূর্ণ করে। “বঙ্গ” ভূখণ্ডের পূর্বাংশ পূর্ব বাংলা নামে পরিচিত ছিল, যা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পৃথিবীতে যে ক’টি রাষ্ট্র জাতিরাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পায় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশের বর্তমান সীমান্ত তৈরি হয়েছিল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে যখন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাবসানে, বঙ্গ (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি) এবং ব্রিটিশ ভারতবিভাজন করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের আয়তন ও লোকসংখ্যা 

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম যদিও আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৪তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর নবম। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও কম এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশটির প্রাক্কলিত (২০১৮) জনসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি অর্থাৎ প্রতি বর্গমাইলে জনবসতি ২৮৮৯ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১১৫ জন)। রাজধানী ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১.৪৪ কোটি এবং ঢাকা মহানগরীর জনঘনত্ব প্রতি বর্গমা্গইলে ১৯,৪৪৭ জন।[১১] দেশের জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা; সাক্ষরতার হার ৭২ শতাংশ।

যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই বাংলাদেশের প্রাচীনতম যাতায়াত পথ হিসেবে গণ্য করা হয় নৌপথ বা জলপথকে। নৌপথের নদীপথ এবং সমুদ্রপথ উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ যাতায়াত ব্যবস্থায় নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ, তবে বহির্বিশ্বের সাথে যাতায়াত ব্যবস্থায় সমুদ্রপথ ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো নৌচলাচলের জন্য বেশি উপযোগী। এ অঞ্চলেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরগুলো অবস্থিত: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, খুলনা প্রভৃতি। নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে অধিকাংশই (৯৪%) নৌকা ও লঞ্চে এবং বাকিরা (৬%) স্টিমারে যাতায়াত করেন। দেশের সমুদ্রপথ মূলত ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর,মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর একাজে ব্যবহৃত হয়।

বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগের মধ্যে সড়কপথ উল্লেখযোগ্য। সড়কপথের অবকাঠামো নির্মাণ এদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ভৌগোলিক অবকাঠামোর মধ্যে বেশ ব্যয়বহুল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশে পাকা রাস্তার পরিমাণ ছিলো ১৯৩১.১৭ কিলোমিটার, ১৯৯৬-১৯৯৭ সালের দিকে তা দাঁড়ায় ১৭৮৮৫৯ কিলোমিটারে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে দেশের জাতীয় মহাসড়ক ৩৪৭৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪২২২ কিলোমিটার এবং ফিডার/জেলা রোড ১৩২৪৮ কিলোমিটার। দেশের সড়কপথের উন্নয়নের জন্য “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন” (বিআরটিসি) নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে। সড়কপথে প্রায় সব জেলার সাথে যোগাযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো (ব্রিজ, কালভার্ট) নির্মিত না হওয়ায় ফেরি পারাপারের প্রয়োজন পরে। সড়কপথে জেলাভিত্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় বড় যানবাহন যেমন: ট্রাক, বাস ব্যবহৃত হলেও আঞ্চলিক বা স্থানীয় পর্যায়ে ট্যাক্সি, সিএনজি, মিনিবাস, ট্রাক ইত্যাদি যান্ত্রিক বাহন ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বহু পুরাতন আমলের অযান্ত্রিক বাহন যেমন: রিকশা, গরুর গাড়ি, ঠেলাগাড়িও ব্যবহৃত হয়।

সংস্কৃতি

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য হাজার বছরের বেশি পুরনো। ৭ম শতাব্দীতে লেখা বৌদ্ধ দোহার সঙ্কলন চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় কাব্য, লোকগীতি ও পালাগানের প্রচলন ঘটে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বাংলা কাব্য ও গদ্যসাহিত্যের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বাংলা ভাষায় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলার লোক সাহিত্যও সমৃদ্ধ; মৈমনসিংহ গীতিকায় এর পরিচয় পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সংগীত বাণীপ্রধান; এখানে যন্ত্রসংগীতের ভূমিকা সামান্য। গ্রাম বাংলার লোক সঙ্গীতের মধ্যে বাউল গান, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, গম্ভীরা, কবিগান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গ্রামাঞ্চলের এই লোকসঙ্গীতের সাথে বাদ্যযন্ত্র হিসাবে মূলত একতারা, দোতারা, ঢোল, বাঁশি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

নৃত্যশিল্পের নানা ধরন বাংলাদেশে প্রচলিত। এর মধ্যে রয়েছে উপজাতীয় নৃত্য, লোকজ নৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য ইত্যাদি। দেশের গ্রামাঞ্চলে যাত্রা পালার প্রচলন রয়েছে। ঢাকা-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র শিল্প হতে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হতে ১০০টি বাংলা চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়।

বিয়ের সাজে বৌ, বাংলাদেশের হস্তশিল্পের নমুনা বাংলাদেশে মোট প্রায় ২০০টি দৈনিক সংবাদপত্র ও ১৮০০রও বেশি সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। তবে নিয়মিতভাবে পত্রিকা পড়েন এরকম লোকের সংখ্যা কম, মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫%। গণমাধ্যমের মধ্যে রেডিও অঙ্গনে বাংলাদেশ বেতার ও বিবিসি বাংলা জনপ্রিয়। সরকারি টেলিভিশন সংস্থা বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ১০টির বেশি উপগ্রহভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ও ৫টির বেশি রেডিও সম্প্রচারিত হয়। বাংলাদেশের রান্না-বান্নার ঐতিহ্যের সাথে ভারতীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের রান্নার প্রভাব রয়েছে। ভাতডাল ও মাছবাংলাদেশীদের প্রধান খাবার, যেজন্য বলা হয়ে থাকে মাছে ভাতে বাঙালি। দেশে ছানা ও অন্যান্য প্রকারের মিষ্টান্ন, যেমন রসগোল্লাচমচমসন্দেশকালোজাম বেশ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের নারীদের প্রধান পোষাক শাড়ি। অল্পবয়স্ক মেয়েদের মধ্যে, বিশেষত শহরাঞ্চলে সালোয়ার কামিজেরওপ্রচলন রয়েছে। পুরুষদের প্রধান পোষাক লুঙ্গি, তবে শহরাঞ্চলে পাশ্চাত্যের পোষাক শার্ট-প্যান্ট প্রচলিত। বিশেষ অনুষ্ঠানে পুরুষরা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরিধান করে থাকেন।

কিছু মজার তথ্য 

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে দিয়ে ঘেরা এই দেশটির নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানে বাঙ্গালিদের দেশ বা বাংলাভাষার দেশ। এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানকার মানুষ শুধু মাত্র ভাষার জন্য প্রান দিয়ে ছিল। বাংলাদেশের আধিকারিক নাম পিপিল রিপাব্লিক অফ বাংলাদেশ। এই দেশ আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও এই দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি, প্রায় ১৬ কোটি ২৯ লাখ ৫১ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে এই দেশ বিশ্বের অষ্টম সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসাবে পরিচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কিছু আজানা তথ্য এই বাংলাদেশের ব্যাপারে।

বাংলাদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর হল ঢাকা। এই শহরে বাস করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ আর এত বেশি জনসংখ্যার জন্যই এই শহরটি বিশ্বের জনবহুল শহর গুলির মধ্যে একটি। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ পাকিস্থানের অংশ ছিল।

বাংলাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার দেশ যা পাকিস্থান ও ইন্দোনেশিয়ার পড়েই স্থান পেয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা অবিভক্ত সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত যাকে আমরা কক্সবাজার নামে চিনি এটি প্রায় ১২০ কিলোমিটার লম্বা। বাঙ্গালির কথা হচ্ছে আর খাবারের কথা হবেনা তা কি হয় কথাতেই বলে বাঙ্গালিরা খাদ্য রসিক। আপনারা জেনে অবাক হবেন বাঙ্গালিদের কাছে এত রকমের খাবারের রেসিপি যা পৃথিবীর অন্য কোন জাতির কাছে নেই।

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। ছোট্ট এই দেশটিতে প্রায় সাতশোরও বেশি নদি আছে। গঙ্গাকে এখানে মেঘনা ও ব্রম্ভপুত্রকে এখানে যমুনা বলা হয়। এই দেশে সাতশোরও বেশি নদি থাকার জন্য এই দেশকে মাটি খুবই উর্বর, বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর মাটির দেশও বলা হয়। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিছু  বিশ্ব রেকর্ডের ব্যাপারে যা বাংলাদেশের নামে রয়েছে।

২০১৪ সালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ।  যা গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছে।

শেষ কথা 

মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।। এক সে আকাশ মায়ের কোলে যেন রবি শশী দোলে, এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।। এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল, এক সে মায়ের বক্ষে ফলাই একই ফুল ও ফল।এক সে দেশের মাটিতে পাই কেউ গোরে কেউ শ্মাশানে ঠাঁই এক ভাষাতে মা’কে ডাকি, এক সুরে গাই গান।। 

এটা কিন্তু একটা অতি জনপ্রিয় গান বা কবিতা আমাদের বাংলার। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।

প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।। আমার আঙিনায় ছড়ানো বিছানো, সোনা সোনা ধুলিকণা,মাটির মমতায় ঘাস ফসলে, সবুজের আল্পনা, আমার তাতেই হয়েছে স্বপ্নের বীজবোনা।। অরূপ জোছনায়, সাজানো রাঙানো ঝিলিমিলি চাঁদ তলে নিবিড় মমরায়, পিউ পাপিয়া হৃদয়ের দ্বার খোলে, আমি তাতেই রেখেছি স্বপ্নের দ্বীপ জ্বেলে।। ধন্যবাদ।