সর্দার প্যাটেলের মূর্তি – Statue of Unity Height

ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের একটি বিশাল মূর্তি উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটের নর্মদা জেলার ছোট্ট একটি দ্বীপে তৈরি করা এই মূর্তিটি এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি – স্ট্যাচু অফ লিবার্টির প্রায় দ্বিগুণ। এর নাম ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ বা ‘ঐক্যের মূর্তি।’

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে এই মূর্তি তৈরির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আদিবাসী ও কৃষকদের একটা অংশ। তারা বলছেন, ফসলের দাম পাওয়া যাচ্ছে না, চাষের জল নেই – অথচ বিপুল অর্থ খরচ করে এই মূর্তি বানানো হল।

অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে যে সর্দার প্যাটেল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে নিষিদ্ধ করেছিলেন গান্ধী হত্যার অভিযোগে, যিনি এই সংগঠনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিষ ছড়ানোর অভিযোগ করেছিলেন, তারই বিশালাকার মূর্তি কেন বানালেন আর এস এস থেকেই বিজেপিতে আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী? মূর্তি উন্মোচনের পরে দেওয়া ভাষণে মি. মোদী বলছিলেন, কেন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে ভারতের মানুষের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

“বিশ্বের সবথেকে উঁচু এই মূর্তি গোটা পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সর্দার প্যাটেলের সাহস, সংকল্প এবং সামর্থ্যর ইতিহাস মনে করিয়ে দেবে। তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি ভারতমাতাকে টুকরো টুকরো করার চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। কৌটিল্যের কূটনীতি এবং শিবাজী মহারাজের শক্তি একত্র হয়েছিল তার মধ্যে। বহু মতভেদ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সুষ্ঠু শাসন চালাতে হয়, সেটা সর্দার সাহেব করে দেখিয়েছিলেন,” বলছিলেন মি. মোদী।

তার কথায়, “আজ যদি কচ্ছ থেকে কোহিমা, কারগিল থেকে কন্যাকুমারী সহজে যাতায়াত করা যায়, সেটা সর্দার সাহেবের সংকল্পের ফলেই সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এরকম একজন মহাপুরুষকে কেন প্রশংসা করা হচ্ছে, শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে – তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে !”

একতা এক্সপ্রেস

সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ‘ঐক্যের মূর্তি’র উদ্বোধনে ‘একতা এক্সপ্রেস’ পরিষেবা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রেল। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৪৩তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে আইআরসিটিসি। ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজকোট থেকে ‘একতা এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালানো হবে। পর্যটকদের জন্য টানা ১২দিন এই পরিষেবা প্রদান করা হবে।

রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ৩১ অক্টোবর ‘একতা এক্সপ্রেস’ যাত্রা শুরু করবে রাজকোটের উদ্দেশ্যে। এই বিশেষ ট্রেন রাজকোট, সুরেন্দ্র নগর, বিরামগম, সবরমতী, আনন্দ, ভদোদরা, ভারুচ, সুরাট, বাপি, কল্যাণ ও পুনে ছুঁয়ে যাবে। এই ট্রেনটি রামেশ্বরম, মাদুরাই, কন্যাকুমারী, কোচুভেলি, ত্রিভান্দুম, তিরুপতি, শিরদি এবং শনি শিংগনপুরের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনেও পৌঁছবে।’স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তিটিতে দুটি উচ্চ-গতির যাত্রী এলিভেটর রয়েছে, যা পর্যটকদের গ্যালারি থেকে মূর্তির সামনে নিয়ে যাবে। একসঙ্গে ২০০ পর্যটক উঠতে পারবেন এই এলিভেটরে। ১৮২ মিটার উচ্চতার ওই মূর্তি তৈরি করতে ২৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সময়ে লেগেছে ৩৩ মাস।

টানা ১২ দিন চলবে এই ট্রেন। আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, মোট ৮০৪টি স্লিপার ক্লাসের বার্থ, ৬২টি থার্ড এসি বার্থ থাকেব এই বিশেষ ট্রেনে। আগ্রহী যাত্রীরা অনলাইন তাদের টিকিট বুকিং করতে পারবেন। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’র দ্বিগুণ উচ্চতার মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র উদ্বোধন করবেন।
ধানমন্ত্রী মোদি জানান, এই মূর্তিটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। ঠিক যেমন ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ নিউ ইয়র্কের বুকে আকর্ষনীয়, তেমনই ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ ভারতের বুকে বিরাজমান থাকবে। গুজরাট সরকারের মতে, এটি প্রতিদিন অন্তত ১৫ হাজার পর্যটক টানতে সক্ষম হবে।
গুজরাতে গোলমাল শুরু হলে কর্মরত সংস্থা তাদের শ্রমিকদের সুরক্ষিত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। তবে সেই ভালো ভাগ্য গুজরাতের অন্য প্রান্তে কাজ করা বিহার বা উত্তরপ্রদেশের হয়নি। তাদের ভয়ে গুজরাত ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

গুজরাতে যেখানে জলের সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে, সেখানে নর্মদার পাড়ে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি বসানো নিয়ে প্রথম জোর বিতর্ক হয়েছে। এবং এখনও হয়েই চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর একটি ইস্যু। যাতে রাজনীতির রং লেগেছে। গত মাসে গুজরাতে নাবালিকার যৌন হেনস্থার ঘটনায় সেরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের উপরে আক্রোশ গিয়ে পড়েছে।যার জেরে দলে দলে শ্রমিক গুজরাত ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। এদের অনেকেই সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তির জন্য কাজ করছিলেন। সবমিলিয়ে মোট ৪৫০০ জন শ্রমিক ঐক্যের প্রতীক মূর্তি তৈরির কাজে লিপ্ত ছিলেন। বুধবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই মূর্তি যার উচ্চতা ১৮২ মিটার তা উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে তার মধ্যেই আতঙ্কের চোরাস্রোত বইছে। কোনও কোনও মহল থেকে ভূমিপুত্রদের উসকে দেওয়া হচ্ছে। বাইরের লোকেরা স্থানীয়দের কাজ ছিনিয়ে তাদের বেকার করে দিচ্ছেন, এমন অভিযোগও বাতাসে ছড়ানো হয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে আতঙ্ক যেন গ্রাস করেছে। পাশাপাশি অন্য অসন্তোষও রয়েছে। নিউ ইয়র্কের স্ট্যাচু অব লিবার্টি তৈরিতে বেশিরভাগ বিনিয়োগই বেসরকারি ছিল। আর এখানে ২৯০০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে যার বেশিরভাগটাই সরকারি টাকা, অর্থাৎ জনগণের টাকা। এদিকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির একাংশ এটা ভেবে ক্ষুব্ধ যে এত বিশাল অঙ্কের টাকার সামান্যটুকুও সরকার তাদের পিছনে খরচের কথা ভাবেনি।

শেষ কথা 

বিজয় রূপানির সরকার বিলক্ষণ এই বিষয়ে খবর রাখছে। অসন্তোষ যে জমেছে তা সামনে না মানলেও পাল্টা ঐক্য তৈরিতে প্যাটেলের অবদানের কথা মনে করিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জনতাকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে।