কষ্টের ভালোবাসার গল্প – কষ্টের প্রেমের গল্প

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন। আজ আমি আপনাদর কাছে তুলে ধরবো ভালোবাসা নিয়ে বাস্তব কিছু কথা, বাস্তব জীবনের ছোট গল্প। জেনে নেবো একটা সত্যি কারের হেরে না যাওয়া প্রেমের গল্প আপনার এই গল্পের কোনো মতামত থাকলে আপনি জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট করে।

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বাস্তব জীবন নিয়ে কিছু কথা

কলকাতার দমদমের বাসিন্দা মধুমিতা ভারী হাসিখুশি মিশুকে মেয়ে ছিল, গল্পটি তখন যখন সে একাদশ শ্রেণীতে পড়তো। আজ সে অনেক দিন পর আমাদের সাথে শহরে করলো তার জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া একটা হেরে না যাওয়া প্রেমের গল্প ।

মেয়েটি ছিল বড্ড সরল। একদিন সন্ধ্যেবেলা সে বাড়িতে পড়াশোনা করছিল, ঠিক সেই সময় বাড়ির ফোনে একটি ফোন আসে, একটি ছেলের গলা পায় মধুমিতা, মধুমিতা পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই ,ছেলেটি উত্তর দেয় ছেলেটি নাকি তাকে আগেও দেখেছে এবং তাকে কিছু বলতে চায়, কিন্তু মধুমিতার মাথায় কিছুই ঢোকে না।
মধুমিতা জিজ্ঞাসা করে, “আরে তুমি কে ? আগে তো সেটা বল, আর তুমি আমার নাম্বার কি করে পেলে”? ছেলেটির নাম ছিল “দিব্যেন্দু”।

মধুমিতা রেগে গিয়ে ফোনটা কেটে দিল, ছেলেটা আবার কল করে যাচ্ছিল,
তারপর শেষমেষ দিব্যেন্দু স্বীকার করল যে সে নাম্বারটা কিভাবে পেল, আসলে দিব্যেন্দু হলো মধুমিতার বান্ধবীর দাদার বন্ধু। মধুমিতার সেই বান্ধবী হলো নম্রতা। নম্রতা ওর দাদার ফোন থেকে মধুমিতার বাড়িতে ফোন করে যোগাযোগ করত। আর দিব্যেন্দু নম্রতা দাদার ফোন থেকে এই নাম্বারটা কোন ভাবে নিয়ে নিয়েছিল।
আর সেই সন্ধ্যেবেলা তেই দিব্যেন্দু মধুমিতাকে দেখতে চাইছিল খুব খুব বায়না করছিল একটু দেখা করার জন্য। যেন মনে হচ্ছিল অনেকদিনের বন্ধুত্ব মধুমিতার সাথে, তারপর মধুমিতা কেমন যেন একটা হয়ে গেল ,মেনে নিল ওর বায়না টা।

বেদনাদায়ক প্রেমের গল্প – Love Story In Bengali 

আর হ্যাঁ মধুমিতার জীবনে কিন্তু এর আগে কখনো প্রেম আসেনি, এই প্রথমবার একটি ছেলে তাকে দেখতে চাইছে এতবার করে ,এই অনুরোধ টা মধুমিতা ফিরিয়ে দিতে পারেনি।তাই চুপিচুপি রাস্তায় বেরিয়ে মধুমিতা দাঁড়িয়েছিল (মনে ভয় নিয়ে), আর দিব্যেন্দু সাইকেল নিয়ে পাশ থেকে গিয়ে একটু হেসে চলে গেল। আর যখন দিব্যেন্দু মধুমিতার সামনে দিয়ে গেল, তখন মধুমিতার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছিল, আর হৃদস্পন্দনটা অনেকটাই বেড়ে গেছিল।
এর থেকে তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে মধুমিতার মনে একটু হলেও দাগ কেটেছিল দিব্যেন্দু। তারপর প্রায় রোজই এক-দুবার করে ফোনে কথা হতো ওদের। মধুমিতার নিজস্ব কোন ফোন ছিল না ওটা ছিল ওর বাড়ির ফোন।
মধুমিতা দিব্যেন্দু কে বলেই রেখেছিল দিব্যেন্দু যাতে হুটহাট ওই ফোনে ফোন না করে, তাই মধুমিতা যখন দিব্যেন্দু কে মিস কল দিত তখনই দিব্যেন্দু তাকে উল্টে কল করতো, তারপরে মধুমিতা কোচিং সেন্টারে যেত দিব্যেন্দু দাঁড়িয়ে থাকতো।দিব্যেন্দু মধুমিতার সাথে একটু সময় কাটাতে চাই তো ,কথা বলতে চাইতো কিন্তু মধুমিতার খুব ভয় ছিল তাই সে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস পেত না রাস্তাঘাটে।

আগের মত পড়াশোনায় মনোযোগ টা কমে যাচ্ছিল মধুমিতার। পড়তে বসে বসে দিব্যেন্দুর কথা ভাবতে থাকতো।
স্কুলে যেত দিব্যেন্দু দাঁড়িয়ে থাকতো ,কোচিং সেন্টারে যেত সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতো।
আর একদিন তো হঠাৎ রাস্তায় বৃষ্টি নেমে গেছিল, মধুমিতা আর নম্রতা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, হঠাৎ পাশ থেকে যেন কে মধুমিতার মাথায় হাত দিয়ে চলে গেল, তারপর খেয়াল করে দেখল ওটা দিব্যেন্দু ছিল, কিন্তু সেদিন মধুমিতা দিব্যেন্দু কে ডাকে নি, আর মাথায় হাত দিয়েছিল কেন জানেন? দিব্যেন্দু নিজের রুমালটা মধুমিতার মাথায় দিয়ে জোরে সাইকেল চালিয়ে চলে গেল।
মধুমিতা ভিজে যাচ্ছিল সেটা দিব্যেন্দু লক্ষ করেছে।
এই ছোট ছোট ঘটনাগুলো মধুমিতা কে দিব্যেন্দুর আরো কাছাকাছি টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
সেদিন ছিল 14 ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিন।
দিব্যেন্দু সেদিন দাঁড়াতে বলেছিল মধুমিতাকে, কিছু উপহার এনেছিল মধুমিতার জন্য দিব্যেন্দু। একটা অন্ধকার রাস্তাতে দিব্যেন্দু হাঁটু গেড়ে বসে একটা গোলাপ ফুলের থোকা উপহার দিল।
আর মধুমিতা, !!সে কি খালি হাতে এসেছে?
না একদমই না, মধুমিতা এনেছিল একটা ছোট্ট গণেশ ঠাকুর। তাও আবার ঠাকুরদার পকেট থেকে টাকা চুরি করে ?

দিব্যেন্দু মধুমিতার হাতটা শক্ত করে ধরেছিল। মধুমিতার চোখ থেকে হঠাৎ জল পড়তে শুরু করলো, দিব্যেন্দু জিজ্ঞাসা করল “পাগলী কাঁদছো কেন?”
মধুমিতা মুখ থেকে কোনও আওয়াজ বার করতে পারছিল না। শুধু দিব্যেন্দুর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল। দিব্যেন্দু তাকে অনেক ভাবে হাসানোর চেষ্টা করলো। সফলও হয়েছিল।?

মধুমিতা বুঝতে পারেনি যে সেদিন রাতে বাড়ি ফেরার পর তার সবকিছু কেমন পাল্টে যাবে, আসলেই কেউ একজন মধুমিতা আর দিব্যেন্দু কে একসাথে দেখে নিয়েছিল, আর মধুমিতার বাড়িতে এসে খবর পৌছে গেছিল।
মধুমিতার বাড়ির নিয়ম খুব কড়াকড়ি, মধুমিতার বাবা খুব রাগী ,বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ তাকে ভয় পায়।
মধুমিতার মা ব্যাপারটা জেনে ছিল ,কিন্তু মধুমিতার বাবাকে জানায়নি। বাড়ি ফেরার পর মধুমিতার মা মধুমিতাকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করে, মধুমিতা স্বীকার করেছিল সত্যিটা।

তারপর মধুমিতার মা নিজে থেকেই মধুমিতার বাবাকে জানিয়ে দিয়েছিল। মধুমিতার বই-খাতা ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল আর বলেছিল ..”এইসব নোংরামি করার জন্য তোকে পড়াশোনা শেখাচ্ছি”
কিন্তু মধুমিতার মনের ভিতরে যা চলছে সেটা কেউ দেখতে পাচ্ছিল না, মধুমিতার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল.. মধুমিতা বাথরুমে গিয়ে কান্না করত।

দিব্যেন্দুর খোঁজ খবর পেয়ে গেছিল মধুমিতার বাড়ির লোক। তারপর দিব্যেন্দুর বাড়িতে মধুমিতার কাকা গেছিল ,অনেক হুমকি দিয়েছিল দিব্যেন্দুকে।
কদিনের মধ্যে মধুমিতাকে ওর মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল। মামার বাড়ীতে থেকে অন্য কারো ফোন থেকে যোগাযোগ করতে গিয়ে মধুমিতা আবার ধরা পড়ে গেছিল। অনেক চড় মেরেছিল মধুমিতার মামা। মধুমিতা খালি মাঝে মাঝে বাথরুমে গিয়ে কান্না করত।
আর একা একা বলতো ..”দিব্যেন্দু তুমি আমাকে নিয়ে যাও তুমি কোথায় আছো আমি একটুও ভালো নেই”
দিব্যেন্দু দোষটা কোথায় ছিল জানেন?
দিব্যেন্দু বেকার ছিল কোন জীবিকা ছিল না ওর। গরিব ছিল। আর তাই ওকে এত কিছু সহ্য করতে হয়েছে।
অনেকদিন হয়ে গেছে ,অনেক মাস হয়ে গেছে
.. প্রায় বছর ঘুরে গেছিল, দিব্যেন্দুর সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না মধুমিতার।

একদিন হঠাৎ মধুমিতার বাবা মারা গেলেন হার্ট অ্যাটাকে। হার্টের প্রবলেম অনেকদিন ধরেই ছিল।
তার এক বছরের মধ্যে মধুমিতার ফ্যামিলি বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় ফ্ল্যাট কিনে চলে গেল। সবকিছু কেমন থেমে গেছিল।

মধুমিতার খুব জানতে ইচ্ছে হতো দিব্যেন্দু কেমন আছে কি করছে
কিন্তু জানার রাস্তা সব দিক থেকে বন্ধ ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর মধুমিতা আর কোনো চেষ্টা করেনি যোগাযোগ করার,ভেতর থেকে অনেকটা ভেঙে গেছিলো।
তারপর মধুমিতা কলেজে ভর্তি হল কলেজ কমপ্লিট করল।
হঠাৎ একদিন একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো।
সেই চেনা স্বর, মধুমিতা হ্যালো বলার পরে চিনতে পেরে গেছিল, ওটা দিব্যেন্দু।
কিন্তু তাও মধুমিতা জিজ্ঞাসা করল “কে বলছেন”
মধুমিতার নাম্বার দিব্যেন্দু কিভাবে পেল সেটা দিব্যেন্দু কিছুতেই মধুমিতাকে বলেনি।
দিব্যেন্দু একটাবারের জন্য মধুমিতার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। মধুমিতা রাজী হল।
পরেরদিন কলেজের গেটের সামনে দিব্যেন্দু দাঁড়িয়ে আছে, মধুমিতা কলেজ থেকে বেরোচ্ছে,
আগের থেকে মধুমিতার চেহারার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু দিব্যেন্দু বলল তুমি একটু পাল্টাও নি ,সেই আমার পাগলিটাই আছো।

দিব্যেন্দু মধুমিতা কে একটা খবর দিতে এসেছিল,
দিব্যেন্দু বিয়ে করেছে।
জানিনা কেন কিভাবে বিয়ে করেছে, কিন্তু দিব্যেন্দু বলল পারিবারিক কিছু ব্যাপারের জন্য করতে হয়েছে।
মধুমিতা বলল খুব ভালো খবর, ‘আমার মতো বাজে না নিশ্চয়ই তোমার বউ, আমার জন্য তুমি আমার বাড়ির লোকের কাছে অনেক অপমান সহ্য করেছো তাই না”
দিব্যেন্দু হাসলো। দিব্যেন্দু বলল, “আমি বিয়ে করলেও, ভালো তোমাকেই বাসি”
মধুমিতা শুনে বলল, “এটা ঠিক বলছো না সেও একটা মেয়ে তোমার থেকে সেও ভালোবাসা চায় তার সবটুকু দিয়ে”, আরো বললো, “তুমি ফিরে যাও নতুন করে জীবনটাকে শুরু করো, পেছন ফিরে একদম তাকাবে না, খুব ভালো থাকো । আর আমাকে কখনো ফোন করো না, চিন্তা করো না আমি ভালো থাকবো। আমি রাগ করে কিন্তু এ কথাগুলো তোমাকে বলছি না, তুমি যতবার পেছনে ফিরে তাকাবে সামনের দিকে এগোতে পারবে না জীবনে ।আমি এটা ভেবেই খুশি থাকব যে কেউ তো আছে তোমার পাশে যে তোমাকে ভালোবাসবে ভালো রাখবে।”
এটা শুনে দিব্যেন্দু মধুমিতার হাত দুটো শক্ত করে ধরে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলো। মধুমিতা হাতটা ছাড়িয়ে নিল। একটা বাস আসলো, মধুমিতা তাড়াতাড়ি করে উঠে গেল সেই বাসে।
সেটাই ছিল দুজনের শেষ দেখা।

মধুমিতা আর দিব্যেন্দু হয়তো সারা জীবন একসাথে থাকতে পারল না, কিন্তু অন্যদিকে তারা হেরেও যায়নি।
মনের কোন একটা কোনায় থেকেই যাবে দুজন দুজনার মনে।
তাই বলব ভালবাসুন, ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখুন,
নাইবা হলো তার সঙ্গে ঘর করা, তার সাথে থাকা, এভাবেও ভালোবাসা যায়।