পেঁপের গুনাগুন ও উপকারিতা – Health Benefits of Papaya

আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে সবকিছুর পাশাপাশি সুষম খাদ্যগ্রহণ খুবই জরুরি। আমাদের দেহের প্রোটিন ,ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা মিটে যায় আমাদের  দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে। কিন্তু ভিটামিনের প্রয়োজন আমাদের সবার।ভিটামিন আমাদের দেহে সংশ্লেষ হয় না। সেই সকল ভিটামিন আমাদের আলাদা করে গ্রহণ করতে হয়। যে বিশেষ ফল বা খাদ্যসামগ্রীতে এই ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয় তার মধ্যে পেঁপে একটি  অন্যতম বিরাট গুণাগুণ সম্পন্ন ফল।

পেঁপের গুনাগুন ও উপকারিতা – Health Benefits of Papaya


পেঁপে আমাদের দেশে প্রায় সবস্থানে পাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সহজপাচ্য একটি ফল। পেঁপের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই ফল কাঁচা বা পাকা উভয় অবস্থাতেই গ্রহণ করা যায়। এই ফলের থেকে প্রাপ্ত প্যাপাইন হজমে সাহায্য করে। এই ফলের মধ্যে ভিটামিন- এ, সি, কে পাওয়া যায়। ফাইবারযুক্ত এই ফলের মধ্যে  ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, নিয়াসিন বর্তমান। ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে পেঁপে একটি অত্যন্ত দরকারি ফল।

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা-

1. কাঁচা পেঁপের মধ্যে উপস্থিত প্যাপাইন হজমে সাহা্য্য করে। সেই কারণে শিশুরা যাদের হজমশক্তি সঠিকভাবে পরিণত নয়। তাদের জন্য কাঁচা পেঁপে একটি জরুরি খাদ্য।

2. কাঁচা পেঁপে প্রতিদিন সকালে  দু টুকরো খেয়ে জল খেলে বদহজম , গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।

3. কাঁচা পেঁপে লিভারের বৃদ্ধি রোধ করে। ফলে যাদের ফ্যাটি লিভার বা লিভার এনলার্জমেন্টের সমস্যা থাকে তাদের জন্য পেঁপে খুব উপকারী।

4. নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে হৃদরোগের সমস্যার ভয় দূর হয়।

5. রক্ত আমাশয় প্রতিরোধে পেঁপের ভূমিকা অসীম। সকালবেলা ৫-৭ ফোঁটা পেঁপের আঠা  সাথে ৫-৬ টি বাতাসা মিশিয়ে খেলে ২-৩ দিনের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে।

তবে বেশি পেঁপে খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে ক্ষতিকারক।  

কাঁচা পেঁপের পাশাপাশি পাকা পেঁপেও দারুণ উপকারী।

পাকা পেঁপের উপকারিতা –

1. হৃদরোগের উপশমে – নিয়মিত পেঁপে খেলে অথেরোস্ক্লেরোসিস , ডায়াবেটিক হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। পেঁপের মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন – এ , সি ,ই  এর মতো কিছু উল্লেখ্য ভিটামিন থাকে । এই ভিটামিনগুলি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এর মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলি হৃদরোগের ঝুঁকিকে প্রশমিত করে। পেঁপের মধ্যে উপস্থিত থাকে বিপুল পরিমাণে ফাইবার যা উচ্চ কোলেস্টেরল মাত্রাকে কমায়। দেহকে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের হাত থেকে বাঁচায়।

2. দৃষ্টিশক্তির জন্যে – অপথ্যালমোলজি আরক্রাইভস প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দিনে তিন বার পেঁপে খেলে বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে। এর একমাত্র কারণ পেঁপেতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন- এ, সি, ই এর আধিক্য। বৃদ্ধ বয়সে দৃষ্টিজনিত সমস্যার প্রধান কারণ পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব।

3. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে- পেঁপের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও বিটা ক্যারোটিন, ফ্লেভানয়েড, লুটেইন, ক্রিপ্টোক্স্যান্থিন থাকে। এছাড়াও থাকে আরও অনেক গুণাগুণ।harvard school of public health’s department  এর গবেষণাতে দেখা গেছে বিটা ক্যারোটিন ফুসফুসের ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার রোধ করে।পেঁপের মধ্যে উপস্থিত ফ্ল্যাভনোক্সিড কোষে ক্যান্সার এর কোষকে দানা বাঁধতে দেয় না।

4. চুলের যত্নে – চুলের যত্নে পেঁপে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টক দইয়ের সাথে পেঁপে মিশিয়ে চুলে লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল ঝলমলে হয়। একচামচ পেঁপের আঠার সাথে ৭-৮ চামচ জল মিশিয়ে লাগালে চুল থেকে উকুন দূর হয়।

5.  ত্বকের যত্নে – পাকা পেঁপে কালো দাগ দূর করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাকা পেঁপে এক টুকরো নিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এই পদ্ধতি ৩-৪ সপ্তাহে লাগালে কালো দাগ দূর হয়। পেঁপের মধ্যে উপস্থিত প্যাপিন মরা কোষ দূর করে ত্বককে উজ্জীবিত করে।

এছাড়াও  কাঁচা পেঁপে ব্লেন্ডারে  ব্লেন্ড করে, পুরো মুখে নিয়মিত লাগালে ত্বকে ব্রণের দাগ দূর হয়। পেঁপে বাটা পায়ের ফাটা দূর করে। পাকে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। পেঁপের খোসা নিয়মিত হাতে পায়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। ত্বকে পেঁপের রস লাগালে ত্বকের বয়সের ছাপ দূর হয়। পেঁপে বাটা এবং মধু একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় এবং ত্বক কোমল হয়।   শ্যাম্পু করবার আগে পেঁপে বাটা ও পেঁপের রস লাগালে চুলে খুশকির সমস্যা দূর হয়।

6. স্ট্রেস কমাতে – সারাদিনের ক্লান্তি একনিমেষে দূর করে এক প্লেট পেঁপে। পেঁপের মধ্যে থাকা ভিটামিন-সি স্ট্রেস দূর করে। University of Alabama  এর মতে প্রতিদিন ২০০ গ্রাম করে ভিটামিন-সি খাদ্যতালিকাতে রাখা উচিত এতে স্ট্রেস দূর হয়।

7. উচ্চরক্তচাপ কমাতে – পেঁপে আমাদের দেহের অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করে যা হৃদজনিত রোগ থেকে দেহকে মুক্ত রাখে। চল্লিশ বা পয়তাল্লিশ বছর বয়সের যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রে রক্তচাপজনিত সমস্যা দেখা যায়। রক্তচাপ বৃদ্ধি বা হ্রাস যাই ঘটুক না কেন এই অকস্মাৎ আঘাতে শরীরের নানান অংশে পক্ষাঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। তাই দিনে পাকা বা কাঁচা যেকোনো প্রকারের পেঁপেই রক্তচাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। তাই উচ্চরক্তচাপ থেকে সৃষ্ট হার্ট অ্যাটাকের হাত থেকে দেহকে সুরক্ষিত রাখে পেঁপে।

8. ফাইলেরিয়ারোগ  প্রতিরোধে – ফাইলেরিয়া একটি মশাবাহিত রোগ । ফাইলেরিয়া রোগ নিরাময়ে পেঁপে গাছকে ব্যবহার করা হয়। পেঁপে পাতা গরমজলে ফুটিয়ে সেই পাতার সেঁক দিলে ফাইলেরিয়ার ব্যাথা দূর হয়।

9. অনিয়মিত মাসিক থেকে পরিত্রাণ পেতে – পেঁপে খাওয়ার ফলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হয়। সুতরাং যাদের মাসিকের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত পেঁপে খেলে বেশ উপকার পাবেন।

10. শরীর শুকিয়ে গেলে- কোনো কারণ ছাড়াই যদি শরীর শুকিয়ে যায় এমন অবস্থায় আমরা সকলেই পড়েছি। এই প্রভাব বেশি দেখা যায় অল্পবয়সীদের মধ্যে। অবসাদজনিত ক্লান্তি, মনমরা ভাব ইত্যাদি উপসর্গের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য এই সকল প্রভাব থেকে শরীরকে মুক্ত রাখতে একমাস  নিয়মিত পেঁপে খেলে শরীর সুস্থ থাকে।

আমাদের চারপাশে আছে এমন অনেক প্রকার গাছ, তাদের মধ্যে পেঁপে অন্যতম। পেঁপে আমাদের দেহের পক্ষে অতীব জরুরী একটি ফল। তাই এই ফল আট থেকে আশি সবার কাছেই খুবই প্রিয়।