নারকেল তেল এর উপকারিতা – Benefits Of Coconut Oil In Bengali

চুলের যত্নে নারকেল তেল

প্রাকৃতিক এই প্রসাধনীটি শুধু চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে তা নয়, নিয়মিত এই তেল ব্যবহারে চুল ও ত্বক ভালো রাখার পাশাপাশি শরীরের অনেক অসুখও দূর হয়। নারিকেল তেল হেয়ার কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। সবচেয়ে কম দামে ও সহজলভ্য হেয়ার কন্ডিশনার হচ্ছে নারিকেল তেল। এই তেল প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে। নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে চুল তাড়াতাড়ি বড় হয়। এছাড়া কিছু কিছু ময়লা আছে যা সহজে পরিষ্কার হয় না। কিন্তু মাথার ত্বক ও চুলে নারিকেল তেল দিলে তা সহজে দ্রবীভূত হয়ে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

দীঘল লম্বা চুলের যুগ থেকে শর্ট ব্যাংস হেয়ার স্টাইল পর্যন্ত চুলের যত্নের সব সময়ই একটা বিষয় প্রাধান্য পেয়ে আসছে আর তা হল সুস্থ চুল। সুস্থ চুল হল নিয়মিত যত্নের ফসল। চুলের যত্ন না নিলে চুল অচিরেই ফাটে এবং ভেঙে যায়। আর চুলের যত্নের প্রাথমিক উপাদান হল তেল। চুলের যত্নে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার সেই আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। এখনকার যুগে বিভিন্ন রকম হেয়ার সল্যুশন কেমিক্যাল প্রোডাক্ট-এর ভিড়েও বহু পরিচিত একটি প্রাকৃতিক প্রসাধনী হচ্ছে নারিকেল তেল। চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নারকেল তেলের জুড়ি নেই। চুল মসৃণ করে চুল মসৃণ করার একটি বড় উপায় হলো চুলে প্রতিদিন তেল দেওয়া। চুলে তেল দিলে তা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এতে চুল মসৃণ ও ঝলমলে হয়।

1. সপ্তাহে একদিন হট অয়েল ট্রিটমেন্ট ট্রাই করুন। নারকেলের তেল গরম করে স্কাল্পে হালকা হাতে ঘষুন।

2. শুস্ক, স্বাভাবিক, তৈলাক্ত বা কালারড হেয়ারের জন্য রেগ্যুলার নারকেল তেল ব্যবহারের পাশাপাশি আলাদা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

3. শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল দিয়ে ভালো করে আঁচড়ে নিন। চুলের জটতো ছাড়বেই, সঙ্গে ময়লাও পরিষ্কার  হবে, মরা কোষ ঝরে পড়বে।

মাথায় তেল দেওয়ার উপকারিতা

 

অকালে চুল পাকা থেকে রক্ষা করে

অনেকেই বলেন, প্রতিদিন চুলে তেল দিলে বুড়ো বয়সের আগে চুল পাকা প্রতিরোধ হয়, অর্থাৎ অকালে চুল পাকা রোধ হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রতিদিন তেল দেওয়া চুলকে করে মজবুত ও স্বাস্থ্যকর।

দূষণ থেকে মুক্তি 

অনেকেই হয়তো জানেন না, প্রতিদিন চুলে তেল দিলে দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমরা তো প্রতিদিন মুখ ধুই। তবে প্রতিদিন কি চুল পরিষ্কার করে ধুতে পারি? তেল চুলের উপরিভাগে একটি পরত বা লেয়ার তৈরি করে। এতে ধুলা, ময়লা, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চুলকে নিরাপদে রাখা যায়।

শুষ্কতা প্রতিরোধ করে

নিয়মিত হেয়ার স্পা করা চুলের শুষ্কতা কমায় আর নিয়মিত চুলে তেল দিলে চুল পুষ্টি পায়। যদি আপনার চুল খুব শুষ্ক হয়, চুলে তেল মাখুন। একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভেজান, এর পর তোয়ালে থেকে পানি ঝরিয়ে চুলে পেঁচিয়ে নিন। এতে তেল ভালোভাবে স্কাল্পে প্রবেশ করবে, শুষ্কতা কমবে।

ত্বকের যত্নে নারকেল তেল

বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে গেলে সুন্দর ত্বকই সবচেয়ে সেরা মেকআপ। তাই ত্বক আর একটু উজ্জ্বল করে তুলতে আমাদের চেষ্টার কসুর নেই! যতরকম পোশাকি জিনিসপত্রই ব্যবহার করুন না কেন, ত্বকের যত্নের ব্যাপারে নারকেল তেল যতটা কাজের তার ধারেকাছে আর কিচ্ছু আসতে পারবে না! অবাক হচ্ছেন? আসলে নারকেল তেল আপনার চুলের জন্য যতটা, ত্বকের জন্যও ঠিক ততটাই ভালো! দেখে নিন ঠিক কীভাবে মুখেও ব্যবহার করতে পারেন নারকেল তেল!

কী লাগবে

সিকি কাপ নারকেল তেল
1 টেবিলচামচ কাঁচা মধু
সিকি কাপ শিয়া বাটার

পদ্ধতি

1. পাত্রে একসঙ্গে নারকেল তেল আর শিয়া বাটার নিয়ে আঁচে বসিয়ে গলিয়ে নিন।
2. আঁচ থেকে নামিয়ে তাতে কাঁচা মধু যোগ করুন
3. ভালো করে মিশিয়ে সারা মুখে সমানভাবে লাগান।
4. অন্তত আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।ব্ল্যাকহেডস কমাতে নারকেল তেল ও বেকিং সোডার প্যাক
এই ফেসমাস্কটি ক্লেনজ়ারের মতো কাজ করে। ত্বকে জমে যাওয়া ধুলোময়লা ও মৃত কোষ সরিয়ে ও রোমছিদ্র পরিষ্কার করে ত্বক উজ্জ্বল রাখতে জুড়ি নেই এই প্যাকটির!কী লাগবে
1 টেবিলচামচ নারকেল তেল
1 চাচামচ বেকিং সোডা

পদ্ধতি

1. বেকিং সোডা আর তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে নিন
2. ব্ল্যাকহেডসের উপর লাগিয়ে হালকা হাতে মিনিট দশেক মাসাজ করুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার করলেই ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা বিদায় নেবে।

ব্রণ কমাতে নারকেল তেল ও দারচিনি
নারকেল তেল আর দারচিনি, দুইয়েরই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা ব্রণ কমাতে সহায়ক।

কী লাগবে

1 চাচামচ নারকেল তেল
1 চাচামচ দারচিনি গুঁড়ো (বাজার থেকে স্টিক কিনে বাড়িতে গুঁড়িয়ে নিতে পারেন)

পদ্ধতি

1. দারচিনি গুঁড়ো আর নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্টের মতো করে নিন।
2. ব্রণর উপর লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিন।
3. আধঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিনবার করতে হবে।
সতর্কতা: দারচিনি গুঁড়ো ব্যবহার করার আগে ত্বকে প্যাচ টেস্ট করে নেওয়া দরকার। দারচিনির কারণে ত্বকে জ্বালা করতে পারে। আপনার ত্বকের সহনক্ষমতা অনুসারে দারচিনির পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারেন।

তারুণ্যে ঝলমল ত্বকের জন্য নারকেল তেল আর অ্যাভোকাডো
নারকেল তেল আর অ্যাভোকাডো আপনার ত্বককে ফ্রি রাডিক্যালের হাত থেকে রক্ষা করে, ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

কী লাগবে

1 টেবিলচামচ নারকেল তেল
সিকি টেবিলচামচ পাকা অ্যাভোকাডো
আধ চাচামচ জায়ফল গুঁড়ো

পদ্ধতি

1. পাত্রে অ্যাভোকাডো চটকে নিন।
2. তাতে জায়ফল গুঁড়ো আর নারকেল তেল মিশিয়ে পেস্টের মতো করুন।
3. মুখে প্যাকের মতো করে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন।
4. ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’বার কি তিনবার করলেই ফল পাবেন।
সতর্কতা: জায়ফল ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে ভুলবেন না!

ত্বকে ফরসাভাব আনতে নারকেল তেল আর হলুদ

হলুদ ত্বকের দাগছোপ দূর করে উজ্জ্বলভাব আনতে সাহায্য করে, লেবুর অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ত্বক তেলতেলে হতে দেয় না। মধু আর নারকেল তেল ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

কী লাগবে

3 টেবিলচামচ নারকেল তেল
আধ চাচামচ হলুদ গুঁড়ো
আধ চাচামচ লেবুর রস
1 টেবিলচামচ মধু

পদ্ধতি

1. পাত্রে সমস্ত উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে নিন
2. পরিষ্কার মুখে ফেস মাস্কটি লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’ থেকে তিনবার করতে হবে।

খাঁটি নারকেল তেল চেনার উপায়সমূহ

1. নারিকেল তেলের সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে এটি ঠান্ডা হলে জমে যায়। নারিকেল তেল খাঁটি কিনা তা বোঝার জন্য ৩০ মিনিট ফ্রিজে জমতে দিন। তেল যদি পুরোপুরি জমে গিয়ে থাকে, তাহলে বুঝবেন আপনার তেল একদম খাঁটি খাঁটি নারকেল তেল একদম পানির কালার হয়ে থাকে।

2. নারকেল তেল যদি হলুদ বা গ্রে কালারের হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এতে কেমিক্যাল মেশানো আছে। এই সকল ভেজাল তেল ব্যবহার করার কারণে পড়তে থাকে চুল।

3. তাছাড়া নারিকেল তেলে আছে লরিক এসিড নামের এক ধরনের ফ্যাটি এসিড, যার দরুণ অন্য যেকোন তেলের চেয়ে এই তেলকে চুল সবচেয়ে দ্রুত শুষে নেয়। এতে চুলও হয়ে ওঠে মসৃণ ও মজবুত। অনেকেরই অন্যান্য তেল চুলে স্যুট করে না। অনেক সময় আঠালো হয়ে থাকে কয়েকবার শ্যাম্পু করেও তেল ওঠানো যায় না। কিংবা চুল পড়ে!

4. অতিরিক্ত চুল ধোঁয়ায় চুল রাফ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে নারিকেল তেল খুব সুন্দর কাজ করে। পরিমাণমত দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর খুব সহজেই ধুয়ে ফেলা যায়। তাছাড়া এই এক তেলেই চুলের যাবতীয় প্রায় সব প্রব্লেমের সমাধান আছে। খুশকি, চুলের আগা ফাটা, চুলকে ময়েশ্চারাইজড করা, চুলের গোঁড়া মজবুত করা ইত্যাদি।