বাংলা কবিতা

বাংলা কবিতা এর উৎপত্তি হয়েছিলো মূলত পালি এবং প্রাকৃত সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতি থেকে। এটি বৈদিক ধর্মীয় ধর্মানুষ্ঠান এবং বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম এর রীতিনীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং পরস্পর বিরোধি ছিলো। তবে আধুনিক বাংলার সংস্কৃত ভাষা ভাষার উপর ভিত্তি করেই তৈরী হয় নি। চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্য তথা সাহিত্য নিদর্শন। নব্য ভারতীয় আর্যভাষারও প্রাচীনতম রচনা এটি। খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গীতিপদাবলির রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। চর্যাপদের ২৪ জন পদকর্তা হচ্ছেন লই পা, কুক্কুরীপা, বিরুআপা, গুণ্ডরীপা, চাটিলপা, ভুসুক পা, কাহ্নপাদ, কাম্বলাম্বরপা, ডোম্বীপা, শান্তিপা ,মহিত্তাপা, বীণাপা, সরহপা, শবর পা, আজদেবপা, ঢেণ্ঢণপা, দারিকপা, ভাদেপা, তাড়কপা, কঙ্কণপা , জঅনন্দিপা, ধামপা, তান্তীপা, লাড়ীডোম্বীপা।

বাংলা কবিতা স্ট্যাটাস

বাংলা কবিতা নিয়ে আমাদের সেই স্বর্ণ যুগ থেকে এর কৌতূহলের শেষ নেই। সেই সময় থেকে কবিতা পড়া, কবিতা বলা, কবিতা পথ করা, কবিতা লেখা, কবিতা বানানো, সব কিছুই যেন কবিতার মাধ্যমেই হতো।  আমাদের জীবনে কবিতা কিন্তু অনেকটা প্রেমের মতো। কারণ টা বলতে গেলে আমাকে এখন প্রেম নিয়ে বলতে হয়। প্রেম মানে কবিতা আবার কবিতা মানেই প্রেম। বাংলা কবিতা স্ট্যাটাস বলতে গেলে আমাদের বর্তমান সমাজে বা বর্তমান জীববে বা আগেও অনেকবার বহু বার বহু মানুষেরা নানান বিষয়ে কবিতার ব্যাবহার করে এসেছে, সেটা প্রেম হোক বা বিরহ হোক বা অন্যকিছু। কিছু কবিতার  স্ট্যাটাস সংক্ষেপে দেওয়া হল।

1. এ নীরব নয় ঢোল বাজিয়ে 

সরব প্রস্থান বজ্রবৃষ্টি সেজে নতুন পৃথিবী 

আমেজ থাকুক নতুন ভালো থাকার

ভাঁটা পড়ুক সকল দুঃখ গাঁথার 

2.  কবিতা তোমাকে করেছি ক্ষত বিক্ষত

ছুঁয়েও দেখিনি কখনো 

কি বিশন ভালোবাসা উপেক্ষা করেছি 

অবহেলায় তাকাইনি কখনো

আজ ফিরে এসেছি অপূর্ণকে পূর্ণতা দিতে 

কবিতা তুমি আমাকে ক্ষমা করো আমায় গ্রহণ করো। 

3. এতটা ছলনা বুঝিনি কভু 

আসবে ভেবে অপেক্ষায় তবু

অসীম দূরপাড়ে চলে যাবো আজ 

পাবেনা খুঁজে খুলে সময়ের তাজ 

4. বাড়ে বাড়ে কেন ফিরে পেতে চাই 

আমার ছিলেন আমার হবেনা জানি আমি সবই 

তবুও কিছু বিশ্বাস ঘিরে থাকে আমায় 

5. ছন্দ হীন মোদের ছন্দ দাও 

এ ছিল মোদের প্রার্থনা 

প্রেমিকা আর প্রেমের তর্কে

.হলুদ কবিরা হল ছন্দ হারা। 

6. সমগ্র পৃথিবী চাইলেও সে আর আসবে না 

সকল সৃষ্টিকে মিথ্যে করবে আজ 

হীনতা আর দীনতা

অথবা মিথ্যে কোলাহল 

অসম্ভব কিছু ভনিতা 

7. সত্যের জয় হোক

অকারণ ভনিতার মৃত্যু হোক

সত্য শোনার অবকাশ হোক 

অকারণ মূর্খতা শিক্ষিত হোক 

8. তোমরা কি শুনবে কেউ
আমার কিছু কথা?
আমার ভাল-মন্দ লাগা
কিংবা দুঃখ ব্যথা?
মাঝে মাঝে নিজেকে
লাগে বড় একা,
মনের মত বন্ধুর দেখা
পাবো আমি কোথা?

9. চোখের সামনে ভাসে যে
কত রঙ্গীন স্বপ্ন,
মনের মাঝে জাগে কত
হাজারো জটিল প্রশ্ন।
মাঝে মধ্যে লিখে ফেলি
ছড়া কিংবা কবিতা,
কখনো পড়তে ভাল লাগে
রূপকথার গল্প কথিকা।

10 .মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে
বই নিয়ে বসি,
কি আর পড়বো? এখন তো
লাগছে সবই বাসি।
কখনো কখনো মনে হয়
কিছু একটা লেখি,
কখনো বা জানালা দিয়ে
দূরে তাকায়ে দেখি।

ফেসবুক এখন আমাদের কাছে বিনোদনের অনেক বড় একটা জায়গা হয়ে উঠেছে। অনেকেই এখন দিনের অনেকটা সময় ফেসবুক এ ব্যয় করে থাকে। আবার অনেকেই হয়তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতেও পছন্দ করেন। কিন্তু ঠিক ভাবে গুছিয়ে লিখতে না পারায় অনেকেই হয়তো status দিতে পারে না বা বিলম্ব বোধ করে ।
বাংলা কবিতার মধ্যে রয়েছে , ভালোবাসার কবিতা, রোমান্টিক কবিতা, প্রেমের কবিতা, মজার এবং হাসির কবিতাসহ আরও অনেক কিছু। আর বাংলা কবিতা বলতে গেলে সবার আগে যার কথা মনে পরে সে হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের অসামান্য কবিতা যা আজও অমর। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কিছু কবিতা যেটা না দিলে ব্যাপারটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ব্যাপারটা।

সোনার তরী – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা–
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু-ধারে–
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।

যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।
আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে–
এখন আমারে লহ করুণা করে।

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি–
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,
আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,
কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনায়েছে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

ওই ডাকে শোনো ধেনু ঘনঘন, ধবলীরে আনো গোহালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্ দেখি
মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি,
রাখালবালক কী জানি কোথায় সারা দিন আজি খোয়ালে।
এখনি আঁধার হবে বেলাটুকু পোহালে।।

শোনো শোনো ওই পারে যাবে বলে কে ডাকিছে বুঝি মাঝিরে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।
পুবে হাওয়া বয়, কূলে নেই কেউ,
দু কূল বাহিয়া উঠে পড়ে ঢেউ,
দরদর বেগে জলে পড়ি জল ছলছল উঠে বাজি রে।
খেয়া-পারাপার বন্ধ হয়েছে আজি রে।।

ওগো, আজ তোরা যাস নে গো, তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
আকাশ আঁধার, বেলা বেশি আর নাহি রে।
ঝরঝর ধারে ভিজিবে নিচোল,
ঘাটে যেতে পথ হয়েছে পিছল,
ওই বেণুবন দুলে ঘনঘন পথপাশে দেখ্ চাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।।

বৃক্ষবন্দনা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অন্ধ ভূমিগর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ,
ঊর্ধ্বশীর্ষে উচ্চারিলে আলোকের প্রথম বন্দনা
ছন্দোহীন পাষাণের বক্ষ-’পরে; আনিলে বেদনা
নিঃসাড় নিষ্ঠুর মরুস্থলে।

সেদিন অম্বর-মাঝে
শ্যামে নীলে মিশ্রমন্ত্রে স্বর্গলোকে জ্যোতিষ্কসমাজে
মর্তের মাহাত্ম্যগান করিলে ঘোষণা। যে জীবন
মরণতোরণদ্বার বারম্বার করি উত্তরণ
যাত্রা করে যুগে যুগে অনন্তকালের তীর্থপথে
নব নব পান্থশালে বিচিত্র নূতন দেহরথে,
তাহারি বিজয়ধ্বজা উড়াইলে নিঃশঙ্ক গৌরবে
অজ্ঞাতের সম্মুখে দাঁড়ায়ে। তোমার নিঃশব্দ রবে
প্রথম ভেঙেছে স্বপ্ন ধরিত্রীর, চমকি উল্লসি
নিজেরে পড়েছে তার মনে– দেবকন্যা দুঃসাহসী
কবে যাত্রা করেছিল জ্যোতিঃস্বর্গ ছাড়ি দীনবেশে
পাংশুম্লান গৈরিকবসন-পরা,খণ্ড কালে দেশে
অমরার আনন্দেরে খণ্ড খণ্ড ভোগ করিবারে,
দুঃখের সংঘাতে তারে বিদীর্ণ করিয়া বারে বারে
নিবিড় করিয়া পেতে।

মৃত্তিকার হে বীর সন্তান,
সংগ্রাম ঘোষিলে তুমি মৃত্তিকারে দিতে মুক্তিদান
মরুর দারুণ দুর্গ হতে;যুদ্ধ চলে ফিরে ফিরে;
সন্তরি সমুদ্র-ঊর্মি দুর্গম দ্বীপের শূন্য তীরে
শ্যামলের সিংহাসন প্রতিষ্ঠিলে অদম্য নিষ্ঠায়,
দুস্তর শৈলের বক্ষে প্রস্তরের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়
বিজয়-আখ্যানলিপি লিখি দিলে পল্লব-অক্ষরে
ধূলিরে করিয়া মু্‌গ্ধ, চিহ্নহীন প্রান্তরে প্রান্তরে
ব্যাপিলে আপন পন্থা।

বাণীশূন্য ছিল একদিন
জলস্থল শূন্যতল, ঋতুর উৎসবমন্ত্রহীন–
শাখায় রচিলে তব সংগীতের আদিম আশ্রয়,
যে গানে চঞ্চল বায়ু নিজের লভিল পরিচয়,
সুরের বিচিত্র বর্ণে আপনার দৃশ্যহীন তনু
রঞ্জিত করিয়া নিল, অঙ্কিল গানের ইন্দ্রধনু
উত্তরীর প্রান্তে প্রান্তে । সুন্দরের প্রাণমূর্তিখানি
মৃত্তিকার মর্তপটে দিলে তুমি প্রথম বাখানি
টানিয়া আপন প্রাণে রূপশক্তি সূর্যলোক হতে,
আলোকের গুপ্তধন বর্ণে বর্ণে বর্ণিলে আলোতে।
ইন্দ্রের অপ্সরী আসি মেঘে হানিয়া কঙ্কণ
বাষ্পপাত্র চূর্ণ করি লীলানৃত্যে করেছে বর্ষণ
যৌবন অমৃতরস, তুমি তাই নিলে ভরি ভরি
আপনার পুত্রপুষ্পপুটে, অনন্তযৌবনা করি
সাজাইলে বসুন্ধরা।

হে নিস্তব্ধ, হে মহাগম্ভীর,
বীর্যেরে বাঁধিয়া ধৈর্যে শান্তিরূপ দেখালে শক্তির;
তাই আসি তোমার আশ্রয়ে শান্তিদীক্ষা লভিবারে
শুনিতে মৌনের মহাবানী; দুশ্চিন্তার গুরুভারে
নতশীর্ষ বিলুণ্ঠিতে শ্যামসৌম্যচ্ছায়াতলে তব–
প্রাণের উদার রূপ,রসরূপ নিত্য নব নব,
বিশ্বজয়ী বীররূপ ধরণীর, বাণীরূপ তার
লভিতে আপন প্রাণে। ধ্যানবলে তোমার মাঝার
গেছি আমি, জেনেছি, সূর্যের বক্ষে জ্বলে বহ্নিরূপে
সৃষ্টিযজ্ঞে যেই হোম, তোমার সত্তায় চুপে চুপে
ধরে তাই শ্যামস্নিগ্ধরূপ; ওগো সূর্যরশ্মিপায়ী,
শত শত শতাব্দীর দিনধেনু দুহিয়া সদাই
যে তেজে ভরিলে মজ্জা, মানবেরে তাই করি দান
করেছ জগৎজয়ী; দিলে তারে পরম সম্মান;
হয়েছে সে দেবতার প্রতিস্পর্ধী– সে অগ্নিচ্ছটায়
প্রদীপ্ত তাহার শক্তি বিশ্বতলে বিস্ময় ঘটায়
ভেদিয়া দুঃসাধ্য বিঘ্নবাধা। তব প্রাণে প্রাণবান,
তব স্নেহচ্ছায়ায় শীতল, তব তেজে তেজীয়মান,
সজ্জিত তোমার মাল্যে যে মানব, তারি দূত হয়ে
ওগো মানবের বন্ধু, আজি এই কাব্য-অর্ঘ্য ল’য়ে
শ্যামের বাঁশির তানে মুগ্ধ কবি আমি
অর্পিলাম তোমায় প্রণামী।

শেষ কথা
বাংলা কবিতা ছাড়া বাঙালি জাতির কথা ভাবাই যায় না। আর সত্যি কথা বলতে বাঙালিরা সব থেকে বেশি বাংলা কবিতা বলো আর যেই কবিতা বলো কবিতা ছাড়া যেন বাঙালিরা অসম্পূর্ণ। প্রত্যেকটি বাংলার মানুষের জীবনের কথা বলে বাংলা কবিতা। আজ আমাদের লেখার মাধ্যমে সাড়াজাগানো সকল বাংলা কবিতাকে কেন্দ্র করে আর সম্মান জানিয়ে ও সমস্ত বাংলা কবিতা লেখক সে চটি হোক বা বড়োই হোক তাদের সকলকে কুর্নিশ জানাই। তেনারা আছেন তাই আমাদের কবিতাও আছে। ধন্যবাদ।