স্বামী বিবেকানন্দের বাণী

স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতাকর্মযোগরাজযোগজ্ঞানযোগহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্তভারতে বিবেকানন্দভাববার কথাপরিব্রাজকপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবর্তমান ভারতবীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ ছিলেন সংগীতজ্ঞ ও গায়ক। তাঁর রচিত দুটি বিখ্যাত গান হল “খণ্ডন-ভব-বন্ধন” (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও “নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি”। এছাড়া “নাচুক তাহাতে শ্যামা”, “৪ জুলাইয়ের প্রতি”, “সন্ন্যাসীর গীতি” ও “সখার প্রতি” তার রচিত কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা। “সখার প্রতি” কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ– “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? / জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” – বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত একটি উক্তি। 

স্বামী বিবেকানন্দ শুধু বাঙালির জীবনের এক আদর্শ মহামানবই নন, তিনি যুগাবতার। তাঁর দেখানো আদর্শের রাস্তা যুক্তিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষকে। আধ্যত্মকে এক অন্য পর্যায়ে উন্নতি করে স্বামীজী সকলের জীবনকে আরও বেশি করে আলোর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। নেতিবাচক ভাবনার অন্ধকার দিকটির পর্দা সরিয়ে তিনি বাঙালির জীবনবোধকে আরও বেশি করে অনুপ্রাণিত করেছেন। উদ্বুদ্ধ হয়েছে যুব সমাজ, আর সেজন্যই তার জন্মদিন ১২ জানুয়ারি যুব দিবস বলে খ্যাত। দেখে নেওয়া যাক, স্বামীজির কিছু অমর বাণী।

১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি উৎসবের দিন উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে ৩ নম্বর গৌরমোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন নরেন্দ্র নাথ দত্ত। ছোট থেকেই মেধাবী নরেন্দ্র নাথ স্কটিশ চার্চ কেলেজে পড়াকালীন যুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী হন। যে যুক্তিবোধ আর আধাত্ম ফুটে ওঠে তাঁর বাণীতে। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য নরেন ,১৮৮৬ সালে সন্ন্যাস গ্রহণ করে হয়ে ওঠেন স্বামী বিবেকানন্দ। 


স্বামীজি সমগ্র আমেরিকা এবং ইউরোপে বেদান্তর দর্শন শিক্ষা (phylosaphy) প্রচার করেছিলেন | শিকাগোতে দেওয়া তাঁর সেই অমূল্য ভাষণ আজ সারা জগৎ বিখ্যাত, এর মাধ্যমে স্বামীজি সারা দুনিয়ায় হিন্দুত্ব তথা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেন |শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রিয় শিষ্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ এবং তাঁর গুরুর নামে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের স্থাপন করেন যা বর্তমানে হাওড়া জেলার বেলুড়ে অবস্থিত |

স্বামী বিবেকানন্দের শিক্ষামূলক বাণী

“যখন আপনি ব্যস্ত থাকেন তখন সব কিছুই সহজ বলে মনে হয় কিন্তু অলস হলে কোনো কিছুই সহজ বলে মনে হয়না” – Swami Vivekananda

“নিজের জীবনে ঝুঁকি নিন, যদি আপনি জেতেন তাহলে নেতৃত্ব করবেন আর যদি হারেন তাহলে আপনি অন্যদের সঠিক পথ দেখাতে পারবেন” – Swami Vivekananda

“কখনো না বলোনা, কখনো বলোনা আমি করতে পারবোনা | তুমি অনন্ত এবং সব শক্তি তোমার ভিতরে আছে, তুমি সব কিছুই করতে পারো”  – Swami Vivekananda

“যা কিছু আপনাকে শারীরিক, বৌদ্ধিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল করে তোলে সেটাকে বিষ ভেবে প্রত্যাখ্যান করুন” – Swami Vivekananda

“দুনিয়া আপনার সম্বন্ধে কি ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দিন | আপনি আপনার লক্ষ্যগুলিতে দৃঢ় থাকুন, দুনিয়া আপনার একদিন পায়ের সম্মুখে হবে” – Swami Vivekananda

“কখনও বড় পরিকল্পনার হিসাব করবেন না, ধীরে ধীরে আগে শুরু করুন, আপনার ভূমি নির্মাণ করুন তারপর ধীরে ধীরে এটিকে  প্রসার করুন” – Swami Vivekananda

“ইচ্ছা, অজ্ঞতা এবং বৈষম্য – এই তিনটিই হলো বন্ধনের ত্রিমূর্তি” – Swami Vivekananda

“মানুষের সেবাই হলো ভগবানের সেবা” – Swami Vivekananda

“মহাবিশ্বের সীমাহীন পুস্তকালয় আপনার মনের ভীতর অবস্থিত” – Swami Vivekananda

“ওঠো এবং ততক্ষণ অবধি থেমো না, যতক্ষণ না তুমি সফল হচ্ছ” – Swami Vivekananda

“যতক্ষণ না আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবেন, ততক্ষন আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবেন না” – Swami Vivekananda

 “মনের শক্তি সূর্যের কিরণের মত, যখন এটি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয় তখনই এটি চকচক করে ওঠে” – Swami Vivekananda

জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর

তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রি়য়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার এক উচ্চবিত্ত হিন্দু বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি তিনি আকর্ষিত হতেন। তার গুরু রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের প্রতিভূ; তাই মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয়। রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভালোভাবে ঘুরে দেখেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের বিশ্ব ধর্ম মহাসভায় ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন।১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে, নরেন্দ্রনাথের গুরুভ্রাতা বাবুরামের মা নরেন্দ্রনাথ ও অন্যান্য সন্ন্যাসীদের আঁটপুর গ্রামে আমন্ত্রণ জানান। তাঁরা সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করে হুগলি জেলার আঁটপুরে যান এবং কিছুদিন সেখানে থাকেন।

আঁটপুরেই বড়দিনের পূর্বসন্ধ্যায় নরেন্দ্রনাথ ও আটজন শিষ্য আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।তারা রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মতো করে জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। নরেন্দ্রনাথ “স্বামী বিবেকানন্দ” নাম গ্রহণ করেন।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপে তিনি হিন্দু দর্শনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অসংখ্য সাধারণ ও ঘরোয়া বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং ক্লাস নিয়েছিলেন। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি।”সখার প্রতি” কবিতার অন্তিম দুইটি চরণ- “বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর? / জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।” – বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত একটি উক্তি

উনিশ শতকের চোখধাঁধানো ধর্ম ও সমাজ ভাবনা। শতাব্দী বদলালেও, বদল হয়নি সেই প্রেক্ষাপটের।১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি। সেদিনের ইতিহাস তখন নতুন ভবিষ্যতের অপেক্ষায়। ভারতীয় সমাজ জীবনে জোর ধাক্কা দিয়েছিলেন তরুণ সন্ন্যাসী। ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বেদান্তদর্শনের মোড়।ভারতে বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।