কোলেস্টেরল কী, লক্ষণ, সমস্যা ও সমাধান

আগেই বলে নিচ্ছি কেননা আপনারা পরে ভুলে যান। বাকি বন্ধুদের সাহায্যের উদ্দেশে লাইক আর শেয়ারটা  মনে করে করে দেবেন। শুরু করছি আজকের বিষয় 

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন। বন্ধুরা কোলেস্টেরল এর ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি, আবার অনেকেই জানিনা। কি এই কোলেস্টেরল, আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল  এর মাত্রা বেশি থাকেল কি হয় , ইত্যাদি ইত্যাদি আমরা আরও জানবো যে – কোলেস্টেরল এর ঔষধ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা, ldl কোলেস্টেরল কি, রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির লক্ষণ, কোলেস্টেরল কাকে বলে ইত্যাদি ইত্যাদি।

বন্ধুরা কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। এটি আমাদের কোষের দেয়ালে থাকে। কোলেস্টেরল সাধারণত চার ধরনের হয়। এগুলো হলো : টোটাল কোলেস্টেরল,  লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এলডিএল,  হাইডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল ও  ট্রাইগ্লিসারাইড।

এদের মধ্যে এইচডিএল ভালো কোলেস্টেরল, আর বাকি সব খারাপ কোলেস্টেল। সবচেয়ে খারাপ কোলেস্টেরল হলো এলডিএল। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা হয়। রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে কী ক্ষতি হয়

শরীরে উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল হলে কী ক্ষতি হতে পারে ?

রক্তে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল যখন থাকে, এই কোলেস্টেলগুলো রক্তনালিতে জমাট বাঁধে। রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট ডায়ামিটার রয়েছে। যখন এটি জমা হয় ডায়ামিটারটি আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে যায়। রক্তনালির ভেতর তো রক্ত যায়। কোলেস্টেরল জমাট বাঁধলে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ রক্ত যাওয়ার কথা, সে পরিমাণ রক্ততো যেতে পারবে না। এই রক্তের একটি কাজ রয়েছে। এই রক্ত আমাদের টিস্যুতে অক্সিজেন ও খাবার পরিবহন করে। এটি সব জায়গার টিস্যুতে। হার্টের রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা হলে হার্ট ব্লক হয়ে যাবে। আরো সহজ করে বললে চর পড়বে।  আসলে রক্তে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। স্ট্রোকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

কোলেস্টেরলের লক্ষণ 

1. চোখের নীচে বা চোখের পাতায় সাদাটে বা হলদেটে ব্যথাহীন ফোলাঅংশ দেখা দিলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করান। এতে চোখের কোনও সমস্যা দেখা না দিলেও এটি রক্তে কোলেস্টেরল থাকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।

2. কিছু দিন ধরে মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা হচ্ছে, অথচ ইসিজি রিপোর্টে তেমন কিছু সমস্যা খুঁজে পাননি? এমন হলে এক বার রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিন রক্তে কোলেস্টেরল প্রবেশ করেছে কি না। আসলে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে রক্তনালীতে অক্সিজেন সরবরাহ কমে। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে হৃদযন্ত্রে চাপ পড়ে বুকে ব্যথা হতে পারে।

3. কোলেস্টেরল জমলে মস্তিষ্কেও রক্ত সঞ্চালন কমে। এই কারণে ঘাড়ে ও মস্তিষ্কের পিছনের দিকে মাঝে মাঝে একটানা ব্যথা হয়।

4. শারীরিক পরিশ্রম করলে বা কোনও উদ্বেগের কারণে হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যেতেই পারে। কিন্তু কোনও কারণ ছাড়া মাঝে মাঝেই কি হৃদগতি বেড়ে যায়। এমনটা হলে আর সময় নষ্ট না করে রক্ত পরীক্ষা করান। কোলেস্টেরল হৃদগতিকে বাড়িয়ে দ‌েয়।

5. খুব ভাল করে লক্ষ্য করে দেখুন তো, চোখের মণির চারপাশে ধূসর রঙের কোনও গোল দাগ দেখা যাচ্ছে? তা হলে জানবেন, তা চোখের সমস্যা নয়, বরং কোলেস্টেরলের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে খাদ্যতালিকা

 

জলপাইয়ের তেল এবং জলপাইয়ের তৈরি খাদ্য

অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলে রয়েছে মনো-আনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন ই। গবেষণায় দেখা গেছে, মনো-আনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড দেহের খারাপ কলেস্টেরল এলডিএলকে কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলকে বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যদি কেউ দেহের ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরলকে কমাতে চায়, তার জলপাইয়ের তেল বা জলপাইয়ের তৈরি খাবার অবশ্যই খেতে হবে।

সবজি  

সবজি দেহের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এ জাতীয় খাবার যেমন: শুষ্ক সোয়া প্রোডাক্ট, মটরশুটি, টফু ইত্যাদি।

ননি ছাড়া দই এবং দুগ্ধজাত খাদ্য

যদি আপনি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণকে কমাতে চান, তাহলে ননিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিতে হবে। এর মানে এই নয় যে আপনি দুধের তৈরি খাবার খাবেন না। যদি দুগ্ধজাত খাবার না খাওয়া হয় তবে ক্যালসিয়াম, মিনারেল এ ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান থেকে শরীর বঞ্চিত হবে। এগুলো মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতাকে সক্রিয় রাখে।  দুধের তৈরি খাবার অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় প্রতিরোধেও দারুণ সাহায্য করে।

 অ্যান্টি অক্সিডেন্ট-সম্বৃদ্ধ ফল ও সবজি 

সব ধরনের সবজি ও ফল আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত যেসব সবজিতে ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন রয়েছে সেগুলো বেশি খেতে হবে।

ভিটামিন সি

ভিটামিন সি  রয়েছে সব ধরনের সাইট্রাস ফলে। যেমন : কমলা, গ্রেপফল, লেবু ইত্যাদি। সব ধরনের বেরি জাতীয় ফল। যেমন : ক্র্যানবেরি, স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি  ইত্যাদি। পেয়ারা ও আমের মধ্যেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ক্যাবেজ বা পাতাকপি পরিবারের খাবারেও আছে ভিটামিন সি। যেমন : সবুজ বা চায়নিজ পাতাকপি, ব্রকোলি ইত্যাদি। ভিটামিন সি-এর আরেকটি ভালো উৎস হচ্ছে মরিচ।

বিটা ক্যারোটিন

গাঢ় হলুদ ফলে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। যেমন : আম, হলুদ পিচফল, কাঁঠাল ইত্যাদি। সবজির মধ্যে যেমন : কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাঠবাদাম, গাজর ইত্যাদির মধ্যেও বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। এ ছাড়া গাঢ় সবুজ সবজি যেমন : ব্রকোলি, ইত্যাদি খেতে হবে শরীরে বিটা ক্যারোটিনের চাহিদা পূরণ করার জন্য।  যদি আপনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন এবং কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় তবে অবশ্যই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এগুলো রাখতে হবে।

রসুন এবং অন্যান্য পেঁয়াজ পরিবারের সদস্য 

সুস্বাস্থ্যের জন্য রসুন খাওয়ার  ইতিহাস বহু পুরোনো। গবেষকরা বলছেন, রসুন , পেঁয়াজ ও পেঁয়াজ জাতীয় খাবার শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখে। তরকারি ও সালাদে আমরা এটি ব্যবহার করতে পারি। এগুলো বেশ  হৃৎপিণ্ড বান্ধব খাদ্য।

অপ্রক্রিয়াজাত দানাজাতীয় খাবার

সব ধরনের অপ্রক্রিয়াজাত দানাজাতীয় খাবারে ভিটামিন বি ও মিনারেলস রয়েছে। এগুলো চর্বি ও কোলেস্টেরল কমায়। এ ধরনের খাদ্য যেমন : রুটি, গম, ভুট্টা, ওটমিলস ইত্যাদি। ওটস-এর মধ্যে রয়েছে হাই সলিউবল ফাইবার যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর।

মাছ 

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে তিনদিন অথবা এর বেশি সময় মাছ খায়, তাদের শরীরে খারাপ কলেস্টেরল কম থাকে। যারা উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন হৃদরোগে ভুগছেন তাদের জন্য মাছ খুব উপকারী। এর মধ্যে হাই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড-জাতীয় খাদ্য 

আগেই বলা হয়েছে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে দুর্ভাগ্যবশত অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণে এই খাবার খাই না। এখন বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ব্যবহার করা হয়। শিমজাতীয় খাদ্য, ওয়ালনাট, জলপাই ইত্যাদির মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।

এই খাবারগুলো নিয়মিত আপনার খাদ্য তালিকায় রেখে শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।