সকাল ৭টার আগে কি কি ৭টি কাজ করা উচিত

এই যে বন্ধুরা কেমন আছেন আপনারা ভালো তো ? আর শুধু কি ঘুমালেই চলবে নাকি ঘুম থেকে উঠে কাজ গুলোও ঠিক থাকে করতে হবে। না না আমার জন্য না আপনার জন্য আপনার ভালোর জন্যই বলছি। শুনলে আপনারই লাভ। আর আপনিও অন্য কাউকে সোনাতে বা বলতে বা ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন। আমাদের অনেকেই আছে সকাল সাতটা বাজে ঘুম থেকে উঠার কথা শুনে চোখ কপালে উঠে যায়, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার মতো বিরক্তিকর কাজ আর হয় না! তাদের জন্য একটি মজার তথ্য জানাচ্ছি। একবার একটি গবেষণা করা হয়েছে পৃথিবীর বাঘা বাঘা সফল মানুষগুলোর উপর এবং সেখানে একটি মজার ব্যাপার উঠে এসেছে- মানুষগুলোর প্রায় সবাই খুব ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে পড়েন।

‘ভোরবেলা’ বলতে একদম রাত সাড়ে তিনটা বা চারটায়! গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা মতামত দিলেন- মানুষগুলোর সাফল্যের রহস্য আসলে খুব সহজ, একজন সাধারণ মানুষ সকাল আটটায় ঘুম থেকে উঠছে, সফল মানুষটি উঠছে রাত চারটায়। এই যে দিনের শুরুতেই মানুষটি চার ঘণ্টা এগিয়ে থাকছে অন্যদের চেয়ে, সময় বেশি কাজে লাগাচ্ছে, এই বিষয়টিই গড়ে দিচ্ছে আর দশজনের সাথে তাঁর ব্যবধান!

তাই আর আলসেমি নয়, এখন থেকে তুমিও এগিয়ে থাকো আর দশজনের চেয়ে। চলো, জেনে নেওয়া যাক সকাল সাতটা বাজার আগেই যেই সাতটি কাজ সেরে ফেলতে পারো তুমি।

1. সারাদিনে কী কী করবে সেটির একটি তালিকা করে ফেলো

সারাদিন নানা রকম কাজে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় দৌড়-ঝাঁপ করতে হয়, হঠাৎ করে সবগুলোর কথা একসাথে ভাবতে গেলে মাথায় জগাখিচুড়ি পাকিয়ে যায়! অনেক সময় দেখা যায় জরুরী কাজগুলো করাই হয়ে উঠে না, পরে মনের ভেতর সেটি খচখচ করতে থাকে। তাই একদম সকালেই যদি লিস্ট করে ফেলো সারাদিনে কী কী কাজ রয়েছে এবং সেগুলোকে একটি রুটিনে নিয়ে আসো, দেখবে অনেক সহজ হয়ে গেছে দিনটি। সবরকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর হয়ে যাবে মন থেকে, ঝরঝরে মনে কাজ করতে পারবে সারাদিন।

2. তোমার স্বপ্ন পূরণের পথে একধাপ হলেও এগিয়ে যাও

মৃত্যু বলতে কিন্তু সবসময় প্রাণত্যাগ করা বোঝায় না, আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ আছে তারা দিব্যি হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছে কিন্তু ভেতরটা তাদের একদম শূন্য! জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হচ্ছে একটি স্বপ্ন দেখতে জানা, কারও যদি সেই স্বপ্নটি ধ্বংস হয়ে যায় তার চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।

বেশিরভাগ মানুষ স্বপ্ন কেবল দেখেই যায় সেটি সত্যি করার জন্য যেই কষ্টটুকু করা দরকার সেটি কখনো করে না। তোমার যদি একটি স্বপ্ন থাকে, কখনো সেটির কথা ভুলে যেয়ো না। প্রতিদিন ভোরে পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকে, তুমি নীরবে ছুটে চলো সেই স্বপ্নের পেছনে। অল্প হলেও কিছু না কিছু শেখো, জানো, অনুশীলন করো প্রতিদিন।

3. ব্যায়াম

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল- এর চেয়ে খাঁটি কথা আর হয় না! প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করার অভ্যাস- হোক সেটি দৌড়ানো বা ঘরে বসে ব্যায়াম- তোমাকে কতভাবে উপকৃত করবে সেটি কল্পনাও করতে পারবে না! ব্যায়াম করলে শরীরে নানারকম হরমোনের নিঃসরণ হয়, সেগুলোর কারণে দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ এমন নেতিবাচক অনুভূতিগুলো দমে যায়, মনে রাখার ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেক বেশি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর মন থাকে চনমনে, দিন শুরু করার জন্য এরচেয়ে চমৎকার কিছু আর হতে পারে না। দিনের শুরুটা নাহয় বাস্তব দুনিয়াতেই কাটুক নিজেকে নিয়ে, পরিবারের সাথে

4. গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সেরে ফেলো সবার আগে

সারাদিনে অনেক রকম কাজ থাকে আমাদের, সবগুলো ঠিকমত করা হয়ে উঠে খুব কম সময়ই। অনেক সময় দেখা যায় খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ পড়ে রয়েছে যেটি তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা ভীষণ জরুরী, কিন্তু কাজটি করতে বেশ পরিশ্রমের প্রয়োজন। তোমার আলসেমির কারণে দিনের পর দিন পড়ে রয়েছে কাজটি!

ইংরেজিতে একটি মজার কথা রয়েছে, “Start the day by eating a frog”

সত্যিই তো, একটি আস্ত ব্যাঙ গিলে খাওয়ার চেয়ে কষ্টকর কিছু নিশ্চয়ই আর হতে পারে না তোমার সাথে! ঠিক সেরকম যেই কাজগুলো করতে আলসেমি লাগছে কিন্তু সেরে ফেলা প্রয়োজন সেগুলো একদম দিনের শুরুতেই ঝটপট সেরে ফেলবে! মাথা থেকে বোঝাটা নেমে গেলে দেখবে দিনটা হয়ে যাবে অনেক আনন্দের!

5.পড়তে বসো

ঘুম থেকে উঠার পর মন একদম সতেজ থাকে, তাই কোন কিছু শেখার জন্য তার থেকে চমৎকার সময় আর হয় না। সারাদিনে আমরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকি, পড়তে বসলে অনেক রকম চিন্তা ভিড় করে মাথায়। একদম ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ মনে পড়তে বসলে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয় অনেক, একদম ম্যাজিকের মতো এগিয়ে যায় পড়া!

6. ফোন থেকে দূরে থাকো

স্মার্টফোন জিনিসটি আমাদের জীবনে একদম অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ, এটি যেন শরীরের একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে! সমস্যা হচ্ছে স্মার্টফোনে কাজের কাজ আসলে খুব কমই করি আমরা। অন্তর্জালে একটি ভার্চুয়াল জগত আছে, সারাদিন সেখানে বিশাল একটি সময় কাটিয়ে দেই আমরা। অনেকে আছে ঘুম থেকে উঠে সবার প্রথম যেই কাজটি করে সেটি হচ্ছে ফেসবুক ব্রাউজিং!

দিনের শুরুটা নাহয় বাস্তব দুনিয়াতেই কাটুক নিজেকে নিয়ে, পরিবারের সাথে। নেহাত প্রয়োজন না থাকলে ভোরবেলাটা অন্তত ভার্চুয়াল জগত থেকে দূরে কাটাও, দেখবে মনটা সতেজ হয়ে উঠবে অনেক।

7. নিজেকে অনুপ্রাণিত করো

সারাদিন কিছু না খেলে তোমার শরীরটি কেমন ভেঙ্গে পড়বে, তাই না? শরীরে শক্তি যোগানোর জন্য প্রয়োজন খাদ্য। তেমনি মনকে চাঙ্গা রাখার জন্যও প্রয়োজন রয়েছে অনুপ্রেরণার। অনেকসময় বিভিন্ন কারণে আমাদের মন বিপর্যস্ত থাকে, হতাশায় ডুবে থাকে হৃদয়। প্রতিদিন যদি অনুপ্রেরণামূলক কিছু পড়ো, শুনো বা দেখো- তোমার মনের শক্তি রাতারাতি বেড়ে যাবে বহুগুণ!

মানুষ মনের জোরে অসাধ্য সাধন করে ফেলতে পারে, মনকে যদি চাঙ্গা রাখতে পারো আমি বাজি ধরে বলতে পারি পৃথিবীর কারও সাধ্য নেই তোমাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে! দিনের শুরুতে অনুপ্রেরণামূলক কিছু অভিজ্ঞতা সারাদিনের কাজের ধকলের জন্য তোমাকে করে তুলবে প্রস্তুত।

শেষ কোথা 

অন্য কারোর জন্য না, আমি আপনার কথা চিন্তা করেই বলছি কিন্তু। চেষ্টা করবেন যে সকাল ৭টার আগে ঘুম থেকে উঠে আমায় কি কি ৭টি কাজ করা উচিত সেগুলো করা। ওপরের লেখা গুলো যদি সঠিক ভাবে পালন করতে পারেন তাহলে দেখবেন কিছু দিন পরে আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে, আর তার পরে দেখবেন আপনার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে অনেক কাজে। একটু চেষ্টা করে দেখুন না পারেন কিনা। অনেকতো ভেবেছেন মানুষের জন্য আজ একটু নিজের জন্য ভাববো না তাই হয় নাকি। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।