জীবন বীমা কি ও কত প্রকার

বীমা হল অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।

জীবন বীমা কি ?

জীবন বীমা পলিসি মূলত বীমা  কোম্পানির সঙ্গে এক প্রকার চুক্তি। প্রিমিয়াম পেমেন্টের
বিনিময়ে বীমা কোম্পানি এককালীন পেমেন্ট প্রদান করে যা ‘ডেথ বেনিফিট’ নামে পরিচিত। এ পেমেন্ট বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবার ভোগ করতে পারে।
জীবন বীমা আপনাকে ও আপনার পরিবারকে ভবিষ্যতের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করবে। এবং এটি আপনার অবসর বা মৃত্যুর পর আপনার পরিবারের ভবিষ্যত ব্যয় প্রদান করবে। সেক্ষেত্রে জীবন বীমা একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বটে।

আপনার ক্রয়কৃত বীমার শ্রেণির উপর নির্ভর করবে বীমা প্রদত্ত টাকার পরিমাণ। তাছাড়া আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এ টাকা কিভাবে খরচ হবে, বা তা কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে (বন্ধকী,ভাড়া) প্রয়োগ হবে কিনা।

জীবন বীমার জন্য আপনাকে যে অর্থ প্রদান করতে হয়, তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন কি পরিমাণ অর্থ আপনি পরিবারের জন্য রাখতে চাইছেন বা জীবন বীমা নীতির স্থায়িত্তের পরিমাণ কতটুকু। এমনকি তা আপনার বয়স,স্বাস্থ্য ও জীবনধারার উপরও নির্ভর করে।
জীবন বীমা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। সাধারণত ব্যক্তি তার প্রয়োজন ও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে জীবন বীমা নির্বাচন করেন। আসুন জেনে নেই প্রচলিত দুই ধরণের জীবন বীমা সর্ম্পকে।

উদাহারণ     

মানুষ সবসময় ঝুকির মধ্যে চলে । যেকোনো সময় অনাকাংখিত দুর্ঘটনা বা অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি বা ডাক্তার এর কাছে যেতে হয় চিকিৎসার জন্যে। এমনকি অকালমৃত্যু ও ঘটে। তেমনি কোনো দুর্যোগ বা অনাকাংখিত দুর্ঘটনা কষ্টে অর্জিত স্বপনের গাড়ি, বাড়ী বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতির হতেপারে। এমন কি ধংস হয়েযেতে পারে। এ সমস্তো  দঃসময়ে অর্থাৎ (দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, অকালমৃত্যু গাড়ি, বাড়ী বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতি, ধংস)  অর্থনৈতিক ক্ষতি পুরনের পুর্ব পরিকল্পনাকেই বীমা নিরাপত্তা (Insurance Plan) বলে।

বীমা কম্পানি কোন ব্যক্তিকে সুস্থতা দিতে পারেনা বা কোনো পরিবারকে অভিবাবক ফিরিয়ে দিতে পারেনা । কিন্তু অর্থনৈতিক যোগান দিয়ে পরোক্ষ ভাবে অভিবাবক এর দ্বায়িত্ত পালন করে থাকে। তেমনি স্বপনের গাড়ি, বাড়ী বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে না দিলেও অর্থনৈতিক যোগান দিয়ে পুঃনগঠনে সহযোীগতা করে থাকে ।

বীমা প্রধানত দুই প্রকার।

1. সাধারণ বীমা।

2. জীবন বীমা।

লাইফ ইনস্যুরেন্স বা জীবন বীমা করা

লাইফ ইনস্যুরেন্স বা জীবন বীমা মানেই হল জীবিতাবস্থায় জীবনের এবং মৃত্যু বরণ করার তার পরিবারের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। এই যুক্তিটি নীতি বাক্যের মাধ্যমে অনেক পূর্ব থেকেই বিশ্বের দরবারে প্রচলিত আছে। এই পদ্ধতিতে সাধারণ ব্যক্তিদেরকে যে কোন ভাবে বুঝিয়ে তাকে লাইফ ইনস্যুরেন্স তালিকাভুক্ত করে তার কাছে থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করাই হল নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীদের কাজ। প্রান্তিক পর্যায়ের কর্মচারীদের কোন বেতন নির্ধারিত না থাকলেও চাপার জোরে কাউকে লাইফ ইনস্যুরেন্সে অংশ গ্রহণ করিয়ে সংগৃহীত সেই সদস্যদের জমা-কৃত টাকার একটা বৃহত্তম অংশই সেই নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারী-গনই পেয়ে থাকে। যাহোক অন্যান্য কোম্পানির দেখা-দেখি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সর্বপ্রথম একটি ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি হিসাবে প্রকাশ পায়। মুলতঃ কোম্পানিটির নামের সাথে ইসলামী সংযুক্ত থাকাতে খুব অল্প দিনেই তারা বাজার পেয়ে বসে। তাদের এই ব্যবস্থার প্রতি অনেক লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের কোম্পানির সাথেও ইসলাম জুরে দেয়। তার কারণ: বাংলাদেশের ধূর্ত জনগণ জানেন যে,যে কোন নামের সাথে ইসলাম লাগিয়ে দিলেই মূর্খ লোকগুলো হুমড়ি খেয়ে সেই দিকেই ধাবিত হয়। এর মধ্যে সব থেকে যে বিষয়টি কাজ করে, তাহলো মুসলমান হয়েও ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে সাধারণ মানুষদের ধারনা একেবারেই কম থাকা। যার কারণে কোথাও ইসলাম লেখা দেখলেই মনে করে যে,এটাই সবথেকে ভেজালমুক্ত এবং এখানে কোন প্রকার ভুল থাকার সম্ভাবনাই নেই। এদেরকেই বলা হয় অবুঝ ধর্মভীরু,যারা নিজেরা কখনোই নিজেদেরকে শিরক-কুফর থেকে বাচাতে পারে না।

ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সব থেকে যে বিষয়টি ফলাও করে বেড়ায়, তাহলো “আল্লহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন”। আমার কথা হল,লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি কোথায় কোন ব্যবসা করেন? তারা ব্যবসা করে কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন? তাদের ব্যবসায় কি ক্ষতি হওয়ার নীতিমালা সম্বন্ধে কোন তথ্য লিপিবদ্ধ আছে? তাদের ব্যবসায় কোন কাঁচামাল আছে কি? তাদের ব্যবসার সামগ্রী ক্রয়ের যায়গা কোনটি আর বিক্রয়ের যায়গাই বা কোনটি? সকল উত্তর দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের নিজেরই। যাহোক আমার মনে হয় তাদের দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়ের বাজার হল সাধারণ জনগণ,আর বিক্রয়ের বাজার হল ব্যাংক বা ধনি ব্যক্তি-গন। প্রশ্নানুসারে একজন মানুষ ১,০০,০০০/ টাকার চার কিস্তি বীমায় ১,৪০,০০০/ টাকা জমা করে চতুর্থ কিস্তিতে সে সর্বমোট ১,০০,০০০/ পায়। লাভের কথা না হয় পরেই থাকল,তাহলে নগদ জমা-কৃত টাকার বাকি ৪০,০০০/ কোথায় যায়? মনে রাখা দরকার যে,এই টাকাগুলোই হল চাকুরী-পাপ্ত কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের মুখের আহার,যা তারা মিলে মিশে ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে থাকে।

একজন মানুষকে নতুনভাবে ইনস্যুরেন্স করানোর জন্য যে কত প্রকার কৌশলই ব্যবহার করা হয়,সেগুলোর আর কোন ইয়ত্তা নেই। হয়ত কখনো একজন মানুষ মৃত্যু বরন করলে তাকে সেই টাকা দেয়ার জন্য বিশাল সেমিনার বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়,যাতে করে তাদের সকল ভাল দিকগুলো জন সম্মুখে প্রকাশ পায় এবং বেশি বেশি করে মানুষ মৃত্যুর পরে তার উত্তরসূরিদের নিরাপত্তার জন্য লোভে পরে লাইফ ইনস্যুরেন্স করে। কিন্তু একজন মানুষ বিশ বছরের হিসাবে লাইফ ইনস্যুরেন্স করে পাঁচ বৎসর টাকা জমা করার পর যদি বন্ধ করে দেয়,তাহলে যে তার পূর্বের জমা-কৃত সকল টাকাই বাতিল হয়ে যায়,এই তথ্যগুলো কিন্তু একেবারেই বলে না। ইসলামী শব্দ যুক্ত কোন রাজনৈতিক দলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন অমুসলিম না থাকলেও ইসলামি লাইফ ইনস্যুরেন্সে কিন্তু অমুসলিমদের চাকুরী বা অংশগ্রহণ মোটেও নিষিদ্ধ নেই। কারণ হল এই ক্ষেত্রে লাভের ব্যবস্থা থাকায় ইসলাম হল গৌণ বিষয়।

সব থেকে বড় কথা হল মানুষ মৃত্যু বরন করার পর তার পরিবার কেমন ভাবে চলবে,তার সিদ্ধান্ত আল্লহ রব্বুল আলামিন নিজেই করে রেখেছেন। সুতরাং প্রত্যেক মানুষ মৃত্যু বরন করার পর একমাত্র একমাত্র লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি সকল প্রকার সাহায্য তথা যে কয়টি টাকা তার পাওয়ার কথা,তা দিলেই সেই পরিবারের সকল প্রকার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে,এই কথা বিশ্বাস করা একেবারেই শিরকি গুনাহ এবং লাইফ ইনস্যুরেন্স কর্মীদের কর্তৃক একপ্রকার বিশেষ রকমের প্রতারণা মাত্র। এই ধরনের লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে যারা মৃত্যু বরন করেছেন,তাদের পরিবার ছাড়া সবাইই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া সকল নীতিমালা ইংরেজি ভাষায় লিখা থাকাতে আসল সর্ত সম্বন্ধে কোন গ্রাহকই তেমন কিছুই জানে না যে,সে কোন বিধানের উপর স্বাক্ষর করল। তাই এই ধরনের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ফতোয়াবিদ-গন লাইফ ইনস্যুরেন্সকে হারাম হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। মোট কথা হল কোন মুসলমানেরই লাইফ ইনস্যুরেন্স করা উচিত নয়। তকদীরের উপর বিশ্বাস রাখা ফরজ। তাই তকদিরের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রিজিকের সন্ধানে তদ্বির করতে হবে; আর এটাই মু’মিনের দায়িত্ব।