কি খাবার খেলে মোটা হওয়া যায় – Food to Get in Shape

আমরা আমাদের জীবনে কোনো কিছুতেই শান্তি পাইনা। বেশি মোটা হয়ে গেলে যেমন চিন্তা তেমন আবার প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত রোগাটাও একটা চিন্তার কারণ। গ্ল্যামার এর দুনিয়াতে সব চেয়ে ইম্পরট্যান্ট জিনিস হল আমাদের লুক, শরীর,রোগ বা মোটা। এই সব ব্যাপারটাই আমাদের  দিন দিন অনেক চিন্তায় পড়তে হয় এমনকি অনেক সময় আমাদের লোকসমাজে লজ্জায় পড়তে হয়। খুব রোগা-পাতলা এবং অনেক খাওয়ার পরেও ওজন বাড়ে না, তাদেরকে ইংরেজিতে হার্ডগেইনার (Hardgainer) বলে। সাধারণত এদের হাড় চিকন এবং মেটাবলিজম (সোজা বাংলায় হজম শক্তি) খুব দ্রুত হওয়ার ফলে যতই খান না কেন, সেটা গায়ে লাগে না। এখনকার দুনিয়ায় জিরো ফিগারে থাকতে চায় অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন,যারা না চাইতেও রোগা। প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি রোগা। ঠিক আমাদের আজকের বিষয় হল যে অতিরিক্ত রোগা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়। তাহলে চলুন আজকে আমরা আলোচনার  কি কি করতে পারলে আমাদের অতিরিক্ত রোগ থেকে মুক্তিপেতে পারি।

অতিরিক্ত রোগ থেকে মোটা হবার কিছু সহজ উপায় 

 খাওয়ার অভ্যাস

 অনেকেই ভাবেন বারবার অল্প অল্প করে  খেলে মোটা হওয়া যায় সহজে। কিন্তু তা সঠিক নয়। বারবার না খেয়ে বরং নিয়ম মাফিক পেট পুরে খান। বারবার অল্প অল্প খেলে শরীরের মেটাবলিজাম বেড়ে যায় ফলে ওজন কমে আসে। কিন্তু সময় মেনে পেট ভরে খাওয়ার খেলে মেটাবলিজাম শরীরে জমতে পারে না। খাওয়ারে থাকা ক্যালরি শরীরে জমে ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

শরীর চর্চা বা জিম যাওয়া 

রোগা হওয়ার জন্য জিম যেতে হয়। সাধারণত সবাই তাই ভাবে। কিন্তু মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে জিম সাহায্য করে। আসলে মোটা হওয়া না বলে শরীরের সুন্দর গঠন বানাতে জিম যাওয়া জরুরী বলাটা ঠিক হবে। তাছাড়া মোটা থেকে অতিরিক্ত বেশি চর্বি দূর করতে জিম করা উচিত।

 কোন কোন খাবার বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত  

উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার একটু বেশি করে খাওয়ার চেষ্টা করুন। শরীরে ক্যালরি বাড়লে সহজেই ওজন বাড়বে। প্রচুর পরিমানে শাকসবজি খাওয়া শুরু করুন। যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা না থাকে তাহলে ফ্যাট জাতীয় খাবার খান একটু বেশি। সেক্ষেত্রে হালকা এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করা উচিত যাতে চর্বি অধিক মাত্রায় শরীরে না জমে। প্রতিদিন সকালে উঠে ৬ থেকে ৭ টা কাজুবাদাম ও কিসমিস খালি পেটে খান। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আগের দিন রাতে এক গ্লাস জলে কাজুকিসমিস ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে ঐ জল খাওয়া যায়। ওজন বাড়াতে ফ্যানভাত বা যাকে আমরা ভাতের মাড় বলি তা খাওয়া যেতে পারে। ফ্যানভাত ভীষণ সাহায্য করে ওজন বৃদ্ধি করতে। সাধারণত ভাতের ফ্যানে বেশির ভাগ পুষ্টি ও ফ্যাট থাকে যা মাড় ফেলে দেওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে যায়। যদি এই ভাতের মাড় একমাস নিয়ম করে খেতে পারেন তাহলে অবশ্যই ওজন বেড়ে যাবে। চকলেট, মেয়নিজ মাখন, দুধ ডিম একটু বেশি করে খেতে হবে। এসব খাবারে থাকা ফ্যাট, ক্যালরি ওজন বৃদ্ধির জন্য খুবই জরুরী। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এসব না খাওয়া ভালো শরীরের জন্য। চেষ্টা করুন রোজ রাতে ঘুমনোর আগে এক গ্লাস ঘন দুধে একচা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে। ওজন বাড়ানোর এক মোক্ষম উপায় এটা। নিয়মিত রাতে খেলে ওজন বাড়তে বাধ্য।

 মেটাবলিজাম কমানো 

সাধারণত মানুষের দেহের ওজন কম হওয়ার ব্যাপারে উচ্চ মেটাবলিজাম দায়ী। উচ্চমাত্রায় মেটাবলিজাম থাকলে শরীরে তা ক্যালরিকে বাড়তে দেয় না। ফলে ওজন কম থাকে। তাই মোটা হতে গেলে সবার প্রথম এই মেটাবলিজাম হার কমাতে হবে। ফলে যা খাওয়ার খাওয়া হবে তা বারতি ওজন আকারে শরীরে জমা হতে থাকবে। মেটাবলিজাম কম রাখতে হলে রোজ দুপুরে খাওয়ার পর কিছুক্ষণ ঘুমনো যেতে পারে। যারা কাজে ব্যস্ত থাকেন তারা লাঞ্চের পর ১ ঘণ্টা রেস্ট নিন। কোন কাজ করবেন না এই সময়।

 খাবারের পরিমান 

খাবারের পরিমাণ বাড়ালেই মোটা হওয়া যায় এ ধারণা অনেকেরই আছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। প্রয়োজন অনুযায়ী খাবারে পরিমান নির্ধারণ করা উচিত। আপনি যদি কম পরিমান খাওয়ার জন্য রোগা হয়ে থাকেন, তাহলে খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি করা ভালো। স্বাভাবিকভাবে যে পরিমান খাবার খেয়ে থাকেন, তার ৪ ভাগের ১ভাগ পরিমাণ খাবার বেশি খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত রোগা হওয়া যেমন ভালো না তেমন অতিরিক্ত মোটা হওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তাই শারীরিক ভারসাম্য বজায় রেখে ডায়েট চার্ট মেণ্টেন করা উচিত।

রোগা থেকে মোটা হবার আরও কিছু টিপস 

  •  যদি নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান এবং রাতের ঘুম ঠিক রাখেন, তাহলে আপনি তাড়াতাড়ি আপনার স্বাস্থ্য মোটা করতে পারবেন। না ঘুমাতে পারলে আপনার শরীর ক্যালরী ধরে রাখতে পারে না। রাতে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন।
  • একটা নিদিষ্ট সময় ধরে খাবেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক ঘন্টার মধ্যে সকালের নাস্তা শেষ করুন। সকালে প্রচুর পরিমাণে খেয়ে নিতে পারেন। হ্যাম বার্গার, ভাজা খাবার, চিকেন ব্রেস্ট খেলেও ক্ষতি নেই।
  • সফ্ট ড্রিংকস্ এবং ফ্যাটি খাবার খেলে স্বাস্থ্য মোটা হয়। এতে বেশি পরিমানে ইন্সুলিন থাকে। ইন্সুলিন হরমোন তৈরি করে। যার সাহায্যে শরীরে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট জমে। যখন ফ্যাটি ফুডস্ খাবেন, তখন পানি পান করুন; সফ্ট ড্রিংকস্ নয়। এমনকি ডায়েট সফ্ট ড্রিংকস্ও নয়। এটা খেলে আপনি ফ্যাটি ফুড খেতে পারবেন না।
  • এনার্জি ফুড খেলেও আপনি মোটা হবেন। শরীরে যদি এনার্জি ফুড না থাকে তাহলে শরীরে শক্তিই থাকে না মোটা হওয়া তো দূরের কথা। উদাহরণে বলি: আপনি কখনো ব্যাটারিতে ল্যাপটপ কম্পিউটার চালাতে পারবেন না যদি প্লাগ না দেন। শরীরও তার ব্যতিক্রম নয়।
  • টেনশনমুক্ত থাকুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম করলে ক্ষুধা বেড়ে যায় টেনশন দূর করে।
  • প্রচুর ফল খান। ফল পুষ্টিকর খাবার এতে প্রচুর ক্যালরি পাওয়া যায়। প্রতিদিন ফল এবং ফলের রস খান। ফলের তৈরি বিভিন্ন সিরাপ, কুবিথ, গাম, জ্যাম, জ্যালি খান এতে ফ্যাট আছে যা আপনার স্বাস্থ্য মোটা করবে।

শেষ কথা 

ওপরের লেখা গুলো পুরোটা ;ভালো করে পরে অনুসরণ করতে হবে। দেখবেন আপনি খুব দ্রুত মোটা হয়ে যাবেন। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না কিভাবে এত দ্রুত মোটা হওয়া সম্ভব। তবে মোটা হতে গিয়ে যেন আবার অসুস্থ হয়ে না পড়েন সেদিকে নজর রাখবেন কিন্তু!  তাড়াতাড়ি কোন কিছুই ভালো নয়। উপরে লেখাগুলো অনুসরণ করুন, পাশাপাশি খাবারে প্রত্যেকটা ভিটামিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করুন এবং বিশ্রাম তথা ঘুমের পরিমাণ বাড়ান, তাহলে আশা করি হয়ে যাবে বা পেয়ে যাবেন আপানার সমস্যার সমাধান। প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। ভালো থাকবেন আর সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ। 

লেখক – শান্তনু পাল