সি ভি রমন রচনা ও অনুচ্ছেদ – C. V. Raman Essay & Paragraph

ভূমিকা :

ভারতবর্ষ আদিকাল থেকেই বিজ্ঞানের দুনিয়াতে আলোড়ন জাগানো নাম। এই দেশের মাটি জন্ম দিয়েছে নাগার্জুন, ধন্বন্তরি, বরাহমিহির নামের বিজ্ঞানীদের। তাঁরা আদিকাল থেকেই বিজ্ঞানচর্চার দ্বারা মানবকল্যাণে নিযুক্ত  হয়েছিলেন। সেই ধারাকে অব্যহত রেখেছিলেন উনবিংশ শতকে মেঘনাদ সাহা , জগদীশ চন্দ্র বসুরা। সেই বিজ্ঞানীদের ভিড়ে ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল রয়েছেন একজন, তাঁর নাম সি.ভি. রমন। তাঁর বৈজ্ঞানিক আলোকে আলোকিত হয়েছে সমগ্র দুনিয়া। সেইসময়ে দাঁড়িয়ে তাঁর আবিস্কার বিজ্ঞানচিন্তাকে এগিয়ে দিয়েছে কয়েক দশক। তাঁর পারিবারিক বোধ তাঁকে সাহস দিয়েছে এগিয়ে যাওয়ার।তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয়।

জন্ম ও ছেলেবেলা :

১৮৮৮ সালে ৭ই নভেম্বর বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষের মাদ্রাস প্রেসিডেন্সীর অন্তর্গত তিরুচিরাপল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন শিক্ষক তিনি পরবর্তীকালে অধ্যাপকের ভূমিকায় এ.ভি.নরসিমা কলেজে অধ্যাপনা করেন। তাঁর পুরো নাম চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর মেধা ছিল তাক লাগানো। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বিশাখাপত্তনমের সেন্ট আলোসিয়াস অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হাই স্কুলে।

শিক্ষাজীবন:

মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৩ বছর বয়সে তিনি  এফ.এ পাশ করেন। যার ফলে তিনি বৃত্তি পান। ১৯০২ সালে তিনি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। ১৯০৪ সালে তিনি সেখান থেকে বি.এ পরীক্ষাতে প্রথম হন এবং স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯০৭ সালে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন। মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্নাতকোত্তরের পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাশ করেন। এরপর তিনি সরকারী চাকরী নিয়ে সেই চাকরী করতে থাকেন।

বৈবাহিক জীবন :

১৯০৭ সালের ৬ই মে তিনি লোকসুন্দরী আম্মালের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুটি সন্তান ছিল। তাঁরা হলেন চন্দ্রশেখর এবং রাধাকৃষ্ণন । দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন।

কর্মজীবন :

তিনি সরকারী চাকরী করতেন। কিন্তু ১৯১৭ সালে তিনি সেই চাকরী ছেড়ে দেন। পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রূপে যোগদান করেন। সেই সময়ই তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কালটিভেশন অফ সায়েন্সে তিনি গবেষণার কাজ চালিয়ে যান। এই গবেষণার জন্য কলেজ কতৃপক্ষ তাঁকে সাহায্য  করতে থাকেন। ১৯২৬ সালে তিনি ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ফিজিক্স নামের কাগজটির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন তার প্রথম সম্পাদক। রমন নিজেও এই সময়কে তাঁর জীবনের সেরা অধ্যায় বলে বর্ণনা করেছেন। এই পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে তাঁর আবিস্কার প্রকাশ পায় নাম ছিল ‘এ নিউ রেডিয়েশন’  প্রথমবার তাঁর আবিষ্কার রমন এফেক্ট নিয়ে লেখা প্রকাশ পায়। সেই আবিষ্কারে তাঁর সহযোগী ছিলেন কে. এস. কৃষ্ণা । এই রমন এফেক্ট নিয়ে পরবর্তীকালে রমন স্প্রেক্টোস্কপি নামে খ্যাত। এই আবিষ্কারের ফলে রাদারফোর্ড তাঁকে সম্মান জানান। ১৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান সম্মেলনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। তাঁর বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে জি.এন.রামচন্দ্রন, বিক্রম সারাভাই প্রমুখেরা ভবিষ্যতে ভারতবর্ষকে বিশ্বমঞ্চে উন্নীত করেন।১৯৩৩সালে তিনি  বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে তাঁর প্রথম ডিরেক্টার রূপে যোগদান করেন । তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল তরঙ্গ এবং তার প্রকৃতি।তিনি যেমন আলোর তরঙ্গ নিয়ে গবেষনা করেন তেমনই তাঁর কাজ ছিল শব্দতরঙ্গ নিয়েও। বেঙ্গালুরুতে থাকাকালীন সময়ে তিনি বহু পদার্থের স্প্রেক্টোস্কপিক ধর্ম নিয়ে গবেষণা ক্রেন.১৯৪৮ সালে তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিউট সায়েন্স থেকে অবসর নেন। সেই বছরেই রমন রিসার্চ ইনস্টিউট স্থাপন করেন। সেখানেই আমৃত্যু কাজ করে যান। ১৯৪৩ সালে  তিনি একটি কোম্পানী স্থাপন করেন। তাঁর নাম ত্রিবাঙ্কুর কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানী লিমিটেড। যারা পটাশিয়াম ক্লোরেট তৈরী করেন, যা দেশলাই কাঠিতে ব্যবহৃত হত।

পুরষ্কার এবং সম্মাননা :

১৯২৪ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির সদস্যপদে নির্বাচিত হন। ১৯২৯ সালে তিনি নাইট উপাধী লাভ করেন।  ১৯৩০ সালে তিনি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ভারতরত্ন পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি ফ্র্যাঙ্কলিন পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি লেনিন শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর আবিষ্কারের কথা কে সম্মান জানাতে, প্রতি বছর ২৮ শে ফেব্রুয়ারী জাতীয় বিজ্ঞান দিবস পালিত হয়।

 

শেষের দিনগুলি :

জীবনের শেষের দিন পর্যন্ত তিনি রমন ইনস্টিটিউটেই কাজ করে গেছেন। তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ ছেড়ে দেন। ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁকে জাতীয় অধ্যাপকের পদে আসিন করা হয়। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু তাকে ভারাক্রান্ত করলেও তিনি বিজ্ঞান সাধনাকেই জীবনের ব্রত বলে ঠিক করেছিলেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি নিজের ল্যাবরেটরিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি বলেন তিনি নিজের বাগানেই নিজের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান। ২১ শে নভেম্বর ১৯৭০ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

উপসংহার :

 বিজ্ঞানের প্রসারে সি.ভি.রমন এর অবদান অনস্বীকার্য  তাঁর আবিস্কারের উপর ভিত্তি করেই আজ আলক তরঙ্গের গবেষণা এত্রদুর পৌছেছে। তিনি সুগবেষকই নন তিনি একজন সুশিক্ষকও বটে। তাঁর ছাত্র বিক্রম সারাভাই মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতবর্ষ দিশা দেখিয়েছিলেন। তাঁর নিজের পুত্র তেজস্ক্রিয়তার উপর কাজগুলি ভারতবর্ষকে নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। তিনি বলে গেছিলেন জীবনবোধী অনেক কথা। তাঁর জীবন আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। তাঁর আবিস্কার ,তাঁর কথা, তাঁর তৈরী সংস্থাগুলি আজও অনেক ছাত্রকে বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করতে আগ্রহী করে, সুযোগ দেয় স্বপ্ন দেখার । ভারতীয় বিজ্ঞানে সি. ভি. রমন নামটি চিরস্মরণীয় ।  

 

সি ভি রমন অনুচ্ছেদ 

ভারতবর্ষের বিজ্ঞানচর্চাতে চিরকালীন নিয়মে  এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে সেই গতিকে আরও কয়েক দশক এগিয়ে দিয়েচ্ছিলেন যিনি তাঁর না চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন ওরফে সি ভি রমন। ১৮৮৮ সালের ৭ই নভেম্বর  অধুনা তামিলনাডুর তিরুচিরাপল্লীতে। তাঁর পিতা ছিলেন সেখানকার এ.ভি.নরসিমা রাও কলেজের শিক্ষক। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় সেন্ট অ্যালোসিয়াস অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হাই স্কুলে। সেখান থেকে মাত্র ১১ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন তারপর ১৩ বছর বয়সে এফ.এ পাশ করেন। ১৯০৪ সালে বি.এ পাশ করেন মাদ্রাজ প্রেসীডেন্সী কলেজ থেকে, ১৯০৭ সালে তিনি স্নাতকোত্তর  পাশ করে তিনি সরকারী চাকরী করতে যান। কিন্তু চাকরী ছেড়ে দিয়ে প্রেসীডেন্সী কলেজে অধ্যাপনার কাজ করেন। ১৯২৮ সালে তাঁর রামন এফেক্ট সারা দুনিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টি করে দেয়। এই কাজের জন্য তিনি ১৯৩০ সালে নোবেল পুরষ্কার পান। ১৯৩৩ সালে তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের প্রথম ডিরেক্টার রূপে যোগদান করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন পদার্থের স্প্রেক্টোস্কপিক ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন। ১৯৪৮ সালে সেখান থেকে অবসর নিয়ে তিনি রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানেই আমৃত্যু তিনি ডিরেক্টার ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ভারতরত্ন পান।তাঁর কৃতী ছাত্রদের মধ্যে বিক্রম সারাভাই মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতকে এনে দিয়েছেন সোনালী দিন। তিনি স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে জাতীয় অধ্যাপকের পদ অলংকৃত করেন। ১৯৭০ সালের ২১ শে নভেম্বর তিনি তাঁর বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৮ শে ফেব্রুয়ারী রমন এফেক্ট এর আবিষ্কারের দিনটিকে স্মরণে রেখে এই দিনে জাতীয় বিজ্ঞান দিবস পালিত হয়। তাঁর প্রতিভা তাঁর কাজ আমাদের বিজ্ঞানচর্চাকে কয়েক দশক এগিয়ে দিয়েছে। তিনি একটি রাসায়নিক কারখানাও স্থাপন করেন। তাঁর প্রতিষ্টিত সংস্থাগুলো আজও ভারতের বিজ্ঞানচর্চার প্রধান কেন্দ্র। ভারতের বিজ্ঞানচর্চার অগ্রসরে এবং ভারত গঠনে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম।

লেখক – রাহুল পাঠক