বিল গেটস রচনা ও অনুচ্ছেদ – Bill Gates Essay & Paragraph

ভূমিকা:

আজ আমাদের দুনিয়া যন্ত্রচালিত। এই দুনিয়াতে কম্পিউটার নামের যন্ত্র আজ আমাদের গোটা পৃথিবী চালাচ্ছে। চার্লস ব্যাবেজের হাত ধরে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ সুন্দর পিচাইদের হাত ধরে তা অন্য মাত্রা পেয়েছে। এই যাত্রা পথ খুব সহজ ছিল না।  একসময় একটা ঘরের সমান থাকা কম্পিউটার আজ আমাদের ঘরের টেবিলে ।এই কম্পিউটারকে আমাদের ঘরের টেবিলে আনতে পারার কারিগরের নাম বিল গেটস। পৃথিবীর অন্যতম ধনী মানুষ। আমাদের এই যন্ত্রচালিত দুনিয়াতে আমাদের শিখিয়ে দেয় লড়াই করার জেহাদের কথা। অর্থ মানুষকে সু্যোগ দেয় মানুষের কাছে আসার তাঁর প্রমাণ বিল গেটস। ব্যবসায়িক বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে  নিজ ক্ষমতায় যে শিখরে তিনি পৌঁছে গেছেন , তার জন্য তাঁকে দুনিয়া আজ নত মস্তকে প্রণাম করে।

জন্ম ও ছেলেবেলা :

১৯৫৫ সালে ২৮ শে অক্টোবর ওয়াশিংটনে জন্মগ্রহণ করেন বিল গেটস। তাঁর পিতা উইলিয়াম গেটস। পেশায় একজন আইনজীবী। তাঁর মাতা মেরী ম্যাক্সওয়েল গেটস। তিনি পেশায় একজন চাকুরীজীবি। বিল গেটসের আসল নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। ছোট থেকেই তাঁর বাব মা চাইতেন গেটস যাতে একজন আইনজীবী হন। কিন্তু তাঁর ঝোঁক ছিল কম্পিউটারের প্রতি।তাঁকে ভর্তি করা হয় লেক্সাইড হাই স্কুলে। সেখানে প্রত্যেক ছাত্রকে নিজস্ব ব্যবহারের  জন্য একটি কম্পিউটার দেওয়া হত। লেকসাইড স্কুলে পড়াকালীন তিনি “টিক-ট্যাক-টো” নামে একটি সফটওয়্যার তৈরী করেন। এছাড়াও তিনি “ক্লাস সিডিউল” নামে আরেকটি সফটওয়্যার তৈরি করেন। এই চমকে দেওয়া আবিষ্কার সারা শহরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। এই সময় থেকেই বিল গেটস বিস্ময় বালক রূপে পরিচিত হন।

ছাত্রজীবন:

তাঁর ছাত্রজীবনে প্রথম দিক থেকেই চমকপূর্ণ। স্যাট পরীক্ষাতে ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ পেয়ে হার্ভার্ড ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হন। সেই খানে তাঁর আলাপ হয় তাঁর কলেজের বন্ধু পল অ্যালেনের সঙ্গে। তাঁরা ‘ট্র্যাফ-ও-ডাটা’  নামে একটি সফটওয়্যার বানিয়ে ফেলেন । এই সফটওয়্যার সারা শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করত। তাঁরা এই কাজের জন্য প্রায় ৫০০০ ডলার পান। এরপরেই বিল গেটস কলেজ ছেড়ে দেন। তাঁর বাবা মা অবশ্য এতে বেশ ক্ষুণ্ণ হন। কিন্তু বিল গেটস তাঁর লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল। তাঁর সঙ্গী ছিলেন তাঁর সেই বন্ধু পল অ্যালেন।

কর্মজীবন :

১৯৭৫ সালে পল অ্যালেন এবং বিল গেটস মাইক্রোসফট নামের একটি কোম্পানি তৈরী করেন।তাঁরা আই বি এম কোম্পানীর কম্পিউটারের জন্য অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেন। তাঁর নাম এম এস ডস। । এই স্বত্ব বিক্রি করে তাঁরা লাভের মুখ দেখতে থাকেন । সে সময় হ্যাকারদের প্রকোপ বাড়লে তাঁরা সচেতন হন। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন, পারসোনাল কম্পিউটার ভবিষ্যতে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ১৯৮৫ সালে ২০ শে নভেম্বর উইন্ডোজ ১.০ প্রকাশ পায়। শুধুমাত্র মাউসের মাধ্যমে গোটা কম্পিউটার নিয়ন্ত্রনের কাজ বিপ্লব এনে দেয় প্রযুক্তিবিদ্যাতে। এই অপারেটিং সিস্টেমের স্বত্ব কিনতে থাকে প্রচুর কোম্পানি খুব কম সময়েই বিশ্বের অন্যতম ধনীদের তালিকাতে তাঁর নাম উঠে আসে।

মানবসেবক বিল গেটস:

১৯৯৪ সালের ১লা  জানুয়ারী বিল গেটস, মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিবাহ করেন। সেই বছরেই তাঁর মা মেরী গেটস মারা যান। এই শোকে ভারাক্রান্ত ছিলেন অনেকদিন। শেষে তিনি ঠিক করেন তাঁর অর্থ তিনি মানবসেবায় দান করবেন। তিনি ২০০০ সালে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা তাঁদের অর্থের  ৯০% সেই ফাউন্ডেশনে দান করেন। এইই ফাউন্ডেশন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের, শিশুদের সাহায্য করে। তিনি “ দা গিভিং প্লেজ” নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন। যার মধ্যে সমস্ত ধনী ব্যাক্তিরা তাঁদের আয়ের ৫০% দান করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতেন। এই দুই সংস্থা মানুষকে শিক্ষা দেয়, “ মানুষ মানুষেরই জন্য।”


জীবনমুখী শিক্ষা:

বিল গেটস পৃথিবীর অন্যতম মোটিভেশনাল স্পিকারও বটে। তিনি বলেন, “ সফলতা উদযাপন করার থেকে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া বেশি প্রয়োজন।” তাঁর ব্যবসায়িক পন্থা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন সেই সব প্রশ্নকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি এসেছেন মানুষের কাছে। তিনি বলেন, “ তুমি গরীব হয়ে জন্মাতেই পারো তাতে লজ্জার কিছু নেই, কিন্তু তুমি যদি গরীব হয়ে মারা যাও সেটা লজ্জার।” তিনি যন্ত্রের উন্নতির মাধ্যমে জায়গা করেছেন মানুষের মনে।

সম্মান ও স্বীকৃতি:

বিশ্বের ধনীদের তালিকাতে তিনি চিরকালই ছিলেন প্রথম সারিতে।  ১৭ বছর এই তালিকাতে ধরে রেখেছেন প্রথম স্থান। বিশ্বের নামীদামি সব ইউনিভার্সিটি তাঁকে জানিয়েছে কুর্নিশ , দিয়েছে সাম্মানিক ডক্টরেট। তার মধ্যে কেমব্রিজ , হার্ভার্ড, ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য। মনে করা হয় তিনি এই দুনিয়ার প্রথম ট্রিলিনিয়ার হবেন। তিনি ভারতে এসেছেন এবং ভারতবর্ষের প্রতি তাঁর রয়েছে গভীর ভালোবাসা।

 

 বর্তমান কর্মকাণ্ড :

তাঁর সম্পত্তি পরিমাণে যেমন বেড়েছে তেমনই তিনি মানুষের আবেগে জড়িয়েছেন আরো বেশি করে। ২০০৬ সালে “মাইক্রোসফট”থেকে তিনি আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকেন। ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে সময় দিয়েছেন বেশি করে। ২০১৪ সালে তিনি সত্য নাডেলার হাতে তুলে দেন কোম্পানির রাশ। এবং নিজে টেকনিকাল অ্যাডভাইসর এর পদ নেন। এই পদে তিনি এখনো আছেন।  প্রসঙ্গত বলা উচিত সত্য নাডেলা একজন ভারতীয়।

 

উপসংহার :

বিল গেটস একজন উদাহরণ। এই ইঁদুর দৌড়ের যুগে নিজের মনের কথা শুনে নিজের রাস্তা নিজে বানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নাম বিল গেটস। বিল গেটস আমাদের শিখিয়েছেন মানুষ কোন কাজ মন থেকে করলে তার সফলতা খালি সময়ের অপেক্ষা। তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন জীবনে উন্নতি করতে গেলে বড় ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসই মানুষকে জীবনে এনে দেয় সাফল্য। তিনি এই একবিংশ শতকের মানুষের কাছে একজন অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধে লড়াই করবার, শিক্ষা দেয় মনের কথা শুনে এগিয়ে যাওয়ার।

বিল গেটস  অনুচ্ছেদ

আমরা আজ যে কম্পিউটার ব্যবহার করি, সেই যন্ত্রে উইন্ডোস নামে এক বহুল প্রচলিত  অপারেটিং সিস্টেমের কথা মোটামুটি সবাই জানি।এই অপারেটিং সিস্টেম যে সংস্থা তৈরি করে সেই মাইক্রোসফট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার নাম বিল গেটস। আসল নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস।পিতা উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র এবং মাতা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস, বড় বোন ক্রিস্টিয়েন, ছোট বোন লিব্বি। পিতা ছিলেন পেশায় বিখ্যাত আইনজীবী। ছোট বয়স থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন বিল গেটস। ১৯৭৩ সালে ১৩ বছর বয়সে লেকসাইড হাইস্কুলের লেখাপড়া শেষ করেন। এই সময়ই তাঁর মধ্যে কারিগরি বিদ্যার প্রতি যে আগ্রহ ছিল , তা ছিল চোখে পড়ার মতো।  ১৯৭৩ সালে স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ এর মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়ে ভর্তি হন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়তে।দুবছর সেখানে লেখাপড়া করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন ।তাঁর বাল্যবন্ধু পল এলেন এর সাথে ১৯৭৫ সালে মাইক্রোসফট কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৫ সালের ২০ শে নভেম্বর উইন্ডোজ ১.০ প্রকাশ পায়,যা কারিগরি প্রযুক্তিতে বিপ্লব এনে দেয়। এরপরের পথচলা দুনিয়ার প্রযুক্তিবিজ্ঞানের ধারায় লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে।১৯৯৬ সালে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন । বিশ্বের ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যে তিনি টানা দশ বছর প্রথমে নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁর ব্যাবসায়িক নীতি নিয়ে বহু সময়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সেই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়েছেন ফুঁৎকারে। এখনো তিনি বিশ্বের ধনীদের তালিকাতে প্রথম সারিতে অবস্থান করেন। ২০১৪ সালে সত্য নাডেলার হাতে তাঁর পদ ছেড়ে দেন। এবিষয়ে উল্লেখ্য সত্য নাডেলা  একজন ভারতীয়। তিনি গরীব দুঃস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চিরকাল।নিজের মনের কথা শোনার প্রবণতা, এবং দুনিয়া বদলানো কিছু করতে গেলে যে ডিগ্রির দরকার পড়ে না তা আমরা তাঁর জীবন দেখে বুঝতে পারি। তাঁকে কেমব্রিজ ,হার্ভার্ডের মতো পৃথিবীর প্রায় সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলি সাম্মানিক ডক্টরেট প্রদান করেছে। তাঁর হার না মানা মানসিকতা আমাদের শিক্ষা দেয় জীবনের পথে থেমে যেতে নেই, এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। একবিংশ শতকের মানুষের কাছে তিনি একজন অনুপ্রেরণা।

লেখক – রাহুল পাঠক