আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের শিরায় শিরায় রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, জয় গোঁসাই দের নিত্য আনাগোনা। আমাদের শহরের নিয়ন আলো সাক্ষী আছে এশহর পদ্য কথা বলে। এ শহর অলিতে গলিতে, ভিড় বাসে, চায়ের ভাঁড়ে, কোচিং ক্লাসে আমাদের প্রেম গজিয়ে ওঠে। আমরা মানুষের থেকেও সেই মানুষের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলোকে ভালবাসি বেশি। এই শহরের প্রেমের এটাই ম্যাজিক আজ যে ছেলে সদ্য কলার তোলা শিখেছে, বা যে ভদ্রলোক তার একমাস পর রিটায়ারমেন্ট জেনে সব কলিগদের নিয়ে আজ লাঞ্চে গেছেন তারা সবাই দুমদাম প্রেমে পড়েন। আর প্রেমে পড়লে রকি থেকে শুরু করে রথিন দু চার কলি সবাই ঝড়িয়ে দেয়। আমাদের মধ্যেকার কবিরা ঝড়ে পড়ে বৃষ্টি হয়ে, বাঙালিরা কবিতার মেকানিসম টা জানে। তারা জানে, যে কথা মুখে বলা যায় না তার একমাত্র আউটলেট কবিতাই হতে পারে। bangla love sms pic পাবেন এখানে।
-
1
Bangla Love Kobita -সেরা ১০ টি প্রেমের কবিতা
- 1.1 1. বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাস
- 1.2 2. তুই কি আমার দুঃখ হবি? – আনিসুল হক
- 1.3 3. আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লাহ
- 1.4 4. প্রেমিক – জয় গোস্বামী
- 1.5 5. বাগানে কি ধরেছিলে হাত – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
- 1.6 6. কৃষ্ণকলি – রবি ঠাকুর
- 1.7 7.তালাকনামা – তসলিমা নাসরিন
- 1.8 8. বর্ষার কবিতা -শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়
- 1.9 প্রেমের পরিনতি কি বিয়ে, এ নিয়ে তর্ক বহু দিনের এই তর্কের মাঝেও যারা হেরে যায় যাদের সমস্ত পথ টা হাটা হয় না তাদের কবিতাও প্রেমের কবিতা। 9. কথোপকথন – পুর্ণেন্দু পত্রী
- 1.10 প্রেমের দায় থাকে না উভমুখীতার প্রেমের দায় প্রেমে থাকার ও প্রেমে বাঁচার। 10. শুভম তোমাকে – মল্লিকা সেনগুপ্ত
- 2 শেষ কথা
Bangla Love Kobita -সেরা ১০ টি প্রেমের কবিতা
বাংলা প্রেমের কবিতা, বলে আদতে কিছু হয় না । সব কবিতাই একদিক দিয়ে প্রেমের কবিতা । সে প্রেমের কোন দায় নেই যে তাকে একটা পারটিকুলার মানুষের প্রতিই হতে হবে, তার উদ্দেশ্য যা কিছু হতে পারে। তবু বাঙালি গদগদ প্রেমের কবিতা ভালোবাসে। কোন এক পড়ার ব্যাচে, রাস্তা ঘাটে গলির মোড়ে, কিংবা সাইকেলে, ময়দানে যে প্রেমগুলো জন্ম নেয়, তাদের জন্য বাঙালি আজীবন বায়াসড। আমরা প্রেমে পড়া থেকে শুরু করে তার মুহুর্ত গুলো নিয়ে কবিতার জোয়ারে ভাসতে ভালোবাসি। আমরা বাঙালিজাতি, আবেগ প্রবণ খুবই, আমাদের প্রেমে হাত ছড়াতে হয় না সরষে ক্ষেতে, কিংবা প্লেন ছাড়ার দশ মিনিট আগে এয়ারপোর্টে দৌড়তেও হয় না। আমরা কাগজ কলমে, চ্যাপ্টা গোলাপে, ছাতা ছাড়া বৃষ্টিতে, আমরা লিখতে পারি আমাদের মহব্বতের উপন্যাস। আমরা শব্দ দিয়ে গড়তে পারি আমাদের তাজমহল। আমরা প্রেমের নামে দিব্যি দিয়ে লিখতে পারি, আস্ত একটা আরব্য রজনী। আমরা জানি পদ্য গুলো ঝড়িয়ে দিতে পারি প্রেমিকার আঁচলে। সুযোগ মত আদর পেলে আমরা প্রেমের পদ্য লিখতে পারি।এরকম কিছু বাংলা কবিতা দেওয়া হলো, যা আপনাকে মনে করাবে “লাল ফিতে সাদা মোজা”, কিংবা মাধবীলতা দের। আপনাকে নিয়ে পাড়ি দেবে সেই প্রেম ঠিকানায় যেখানে আজও পলাশ ফুলে ভরা মাঠে আপনার সে দাঁড়িয়ে আছে, যে আপনাকে বলবে,
“চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন,
আর কবিতায় শুয়ে কাপ্লেট।”
1. বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাস
“হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি–দ্বীপের ভিতর,
তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে চাওয়া নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ–জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।”
প্রেমিকার চুলে একরকম গন্ধ থাকে, সে গন্ধে শান্তি থাকে একজীবনের। তাতে গল্প থাকে অনেকটা। সে পাশে এসে বসলে কষ্ট কমে ম্যাজিকের মতো। প্রেমের ছন্দ সেটাই বলেছে এখানে জীবনানন্দ দাস।
2. তুই কি আমার দুঃখ হবি? – আনিসুল হক
“তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউ
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
সবটা দিয়ে ভালবাসলে ভালোবাসা ঘন হয়। জীবন দিয়ে আগলাতে হয় তাকে ,যার কাছে মনের খবর থাকে। যে তার সবটা দিয়ে শুধু তোমায় ভালোবাসে।
3. আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে – রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লাহ
”আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে , আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক , খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।
ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে।।”
আমাদের মনের মানুষ আমাদের সবটা জুড়ে থাকে জামার কলার , শাড়ির আঁচল, অলিন্দ- নিলয়, সবখানে তাদের নিত্য আনাগোনা । তারাই আমাদের শীতের কম্বল , খুব গরমে ঠান্ডা কোকা-কোলা।
4. প্রেমিক – জয় গোস্বামী
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা–ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ–মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
আমরা প্রেমে পড়ি বটে, কিন্তু প্রেমে আসলে আত্মার উন্নতি হয়। প্রেমে জেগে ওঠে মানুষ প্রেম মানুষকে শক্ত করে। মানুষের চেতনার জাগরণ হয়।
5. বাগানে কি ধরেছিলে হাত – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
যবে হাত ধরেছিলে হাতে
এ-প্রাণ ভরেছে অকস্মাতে
সকল বিস্ময়
তখনই তো ধ্বংসের সময়,
তখনই তো নির্মাণের জয়।
তোমার হাতের মাঝে আছে পর্যটন-
একথা কি খুশি করে মন?
একথা কি দেশ ঘুরে আসে
স্মরণীয় বসন্তবাতাসে!
এবার হলো না তবু ছুটি
দুলে ওঠে মোরগের ঝুঁটি
বেলা গেলো – বুকে রক্তপাত
বাগানে কি ধরেছিলে হাত
বাগানে কি ধরেছিলে হাত?
প্রেম জীবনে মানুষ আঁকড়ে ধরা প্রেমিক মন বেঁচে থাকে স্মৃতির পাতা আঁকড়ে ধরে। হাতে রাখা হাত কে জড়িয়ে নিয়ে বুকের কাছে বাঁচে সারাটা জীবন।
6. কৃষ্ণকলি – রবি ঠাকুর
“কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,
কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিন- চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,
মুক্তবেণী মাথার ওপর লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক
দেখেছি তার কালো হরিন-চোখ।”
প্রেমে গায়ের রং রুপ ম্যাটার করে না, প্রেমে শুধু প্রেমটাই ম্যাটার করে।
7.তালাকনামা – তসলিমা নাসরিন
যে কোনও দূরত্বে গেলে তুমি আর আমার থাকো না
তুমি হও যার-তার খেলুড়ে পুরুষ।
যে কোনও শরীরে গিয়ে
শকুনের মতো খুঁটে খুঁটে রূপ ও মাংস তুমি আহার করো
গণিকা ও প্রেমিকার শরীরে কোনও পার্থক্য বোঝো না।
কবিতার চে’ চাতুর্য বোঝো ভাল,
রাত্রি এলে রক্তের ভেতর টকাশ-টকাশ দৌড়ে যায়
একশো একটা লাগামহীন ঘোড়া,
রোমকূপে পূর্বপুরুষ নেচে উঠে তাধিন-তাধিন।
আমি জোস্নার কথা তোমাকে অনেক বলেছি
তুমি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কোনও পার্থক্য বোঝো না।
ভালবাসার চে’ প্রাচুর্য বোঝো বেশি
যে কারও গোড়ালির নীচ থেকে চেটে খাও
এক ফোঁটা মদ, লক্ষ গ্যালন মদে আমুণ্ডু ডুবে
তবু তোমার তৃষ্ণা ঘোচে না।
তোমাকে স্বপ্নের অথা অনেক বলেছি
সমুদ্র ও নর্দমার ভেতরে তুমি কোনও পার্থক্য বোঝো না।
যে কোনও দূরত্বে গেলে তুমি হও যার-তার খেলুড়ে পুরুষ।
যার-তার পুরুষকে আমি আমার বলি না।
অভিমান প্রেমের একটা অংশ, অভিমান আছে মানে প্রেমটা কোন কণায় আজও বেঁচে আছে।অভিমান, রাগ, ঝগড়া না থাকলে প্রেম বড্ড ম্যাড়ম্যাড়ে।
8. বর্ষার কবিতা -শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়
সোনা, তোমায় সাহস করে লিখছি। জানি বকবে
প্রিপারেশন হয়নি কিচ্ছু। বসছি না পার্ট টুতে
মাথার মধ্যে হাজারখানেক লাইন ঘুরছে, লাইন
এক্ষুনি খুব ইচ্ছে করছে তোমার সঙ্গে শুতে
চুল কেটে ফেলেছ? নাকি লম্বা বিনুনিটাই
এপাশ ওপাশ সময় জানায় পেন্ডুলামের মতো
দেখতে পাচ্ছি স্কুলের পথে রেলওয়ে ক্রসিং-এ
ব্যাগ ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছ শান্ত, অবনত
এখানে ঝড় হয়ে গেল কাল। জানলার কাচ ভেঙে
ছড়িয়ে পড়েছিল সবার নোংরা বিছানায়
তুলতে গিয়ে হাত কেটেছে। আমার না, অঞ্জনের
একেকজনের রক্ত আসে একেক ঝাপটায়
সবাই বলছে আজও নাকি দেদার হাঙ্গামা
বাসে আগুন, টিয়ার গ্যাস, দোকান ভাঙচুর
কিন্তু আমি কোনও আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না
বৃষ্টি এসে টিনের ছাদে বাজাচ্ছে সন্তুর…
ঝালা চলছে। ঘোড়া যেমন সমুদ্রে দৌড়য়
ভেতর-ভেতর পাগল, কিন্তু সংলাপে পোশাকি…
তুমিই উড়ান দিও, আমার ওড়ার গল্প শেষ
পালক বেচি, আমিও এখন এই শহরের পাখি
প্রেমের পরিনতি কি বিয়ে, এ নিয়ে তর্ক বহু দিনের এই তর্কের মাঝেও যারা হেরে যায় যাদের সমস্ত পথ টা হাটা হয় না তাদের কবিতাও প্রেমের কবিতা।
9. কথোপকথন – পুর্ণেন্দু পত্রী
কালকে এলে না, আজ চলে গেল দিন
এখন মেঘলা, বৃষ্টি অনতিদূরে।
ভয়াল বৃষ্টি, কলকাতা ডুবে যাবে।
এখনো কি তুমি খুঁজছো নেলপালিশ?
শাড়ি পরা ছিল? তাহলে এলে না কেন?
জুতো ছেঁড়া ছিল? জুতো ছেঁড়া ছিল নাকো?
কাজল ছিল না? কি হবে কাজল পরে
তোমার চোখের হরিণকে আমি চিনি।
কালকে এলে না, আজ চলে গেল দিন
এখন গোধূলি, এখুনি বোরখা পরে
কলকাতা দুবে যাবে গাঢ়তর হিমে।
এখনো কি তুমি খুঁজছো সেফটিপিন?
প্রেমের দায় থাকে না উভমুখীতার প্রেমের দায় প্রেমে থাকার ও প্রেমে বাঁচার।
10. শুভম তোমাকে – মল্লিকা সেনগুপ্ত
শুভম তোমাকে অনেকদিন পরে
হটাত দেখেছি বইমেলার মাঠে
গতজন্মের স্মৃতির মতন
ভুলে যাওয়া গানের মতন
ঠিক সেই মুখ, ঠিক সেই ভুরু
শুধুই ঈষৎ পাক ধরা চুল
চোখ মুখ নাক অল্প ফুলেছে
ঠোঁটের কোনায় দামি সিগারেট
শুভম, তুমি কি সত্যি শুভম!
মনে পড়ে সেই কলেজ মাঠে
দিনের পর দিন কাটত
কীভাবে সবুজ ঘাসের মধ্যে
অন্তবিহীন সোহাগ ঝগড়া!
ক্রমশই যেন রাগ বাড়ছিল
তুমি চাইতে ছায়ার মতন
তোমার সঙ্গে উঠব বসব
আমি ভাবতাম এতদিন ধরে
যা কিছু শিখেছি, সবই ফেলনা!
সব মুছে দেব তোমার জন্য?
তুমি উত্তম-ফ্যান তাই আমি
সৌমিত্রের ভক্ত হব না!
তোমার গোষ্ঠী ইস্টবেঙ্গল
আমি ভুলে যাব মোহনবাগান!
তুমি সুচিত্রা, আমি কণিকার
তোমার কপিল, আমার তো সানি!
তোমার স্বপ্নে বিপ্লব তাই
আমি ভোট দিতে যেতে পারব না!
এমন তরজা চলত দুজনে
তবুও তোমার ঘাম গন্ধ
সস্তা তামাক স্বপ্নের চোখ
আমাকে টানত অবুঝ মায়ায়
আমার মতো জেদি মেয়েটিও
তোমাকে টানতো প্রতি সন্ধ্যায়
ফাঁকা ট্রাম আর গঙ্গার ঘাটে
তারপর তুমি কম্পিউটার
শেখার জন্য জাপান চললে
আমিও পুণের ফিলমি কোর্সে
প্রথম প্রথম খুব চিঠি লেখা
সাত দিনে লেখা সাতটা চিঠি
ক্রমশ কমল চিঠির সংখ্যা
সপ্তাহে এক, মাসে একটা
ন মাসে ছ মাসে, একটা বছরে
একটাও না… একটাও না…
ডাক বাক্সের বুক খাঁ খাঁ করে
ভুলেই গেছি কতদিন হল,
তুমিও ভুলেছ ঠিক ততদিন
তারপর সেই পৌষের মাঠে
হটাত সেদিন বইমেলাতে
দূরে ফেলে আসা গ্রামের মতো
তোমার মুখটা দেখতে পেলাম
শুভম, তুমি কি সত্যি শুভম!
শেষ কথা
প্রেমে পড়ুন, আত্মার উন্নতি হোক। জীবন খানিক মধুর হোক। যাকে ভালোবাসেন তার ভালোবাসা কে আঁকড়ে বাচুন। প্রেমে থাকুন প্রেমের পদ্যে থাকুন। এই পদ্যের ডালি থাকল আপনার জন্য।বাংলা সাহিত্য আমাদের কবিতা তাদের মধ্যে সেরা কিছু যা আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে, এর মধ্যে কিছু কবিতা বা ছবি আপনারা ভালবাসার মেসেজ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন ও অভিমান ভাঙাতে পারেন প্রেমিকার।কাজে এলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
লেখক – রাহুল পাঠক