বাবা একটা শব্দ যা আমাদের মনকে ব্যাকুল করে দেবার মতো। যেকোনো মানুষের জীবনের বাবার ভূমিকা অনসীকার্য. মা ও বাবার ভালোবাসা এর মধ্যে কোনো ভেজাল নেই, নেই কোনো মলিনতা যে কোনো পরিস্থিতি হোক না কেন বাবারা সবসময় তাদের সবকিছু বিলিয়ে দেয়। সেই বাবার জাত তার জন্যেই আজ নিয়ে এসেছি কয়েকটি বিখ্যাত লেখক এর লেখা বাবা বিষয়ক কিছু বাণী, কিছু উক্তি আমরা সংগ্রহ করেছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমি একটা কথা সবার উদ্দেশে একটাই কথা বলবো যে বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারেনা। পরিবারের মেরুদন্ড হয়ে দায়িত্ব পালনে, সন্তান-সংসার পরিচালনায় ব্রতি যিনি। শাসনে কঠোর, ভালোবাসায় কোমল, স্নেহে উদার, ত্যাগে অগ্রগামী বাবা, যিনি জন্মদাতা। বাবার প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শনে একদিন কিছু নয়। তবুও শুধুই তার জন্য একটি দিন, একটু আলাদা করে উদযাপন করতেই `বাবা দিবস` যাকে ইংরেজিতে বলে Fathers Day ।
বন্ধুরা বাবা হলেন অদ্বিতীয় আলো, যার আলোয় আলোকিত হয়েই আমাদের সারাজীবন পথ চলতে হয় বা পথচলা শুরু করি। তবু সন্তানরা বড় হয়ে কর্মব্যস্ততায়, লেখাপড়া ও নানা কাজের চাপে বাবা-মাকে সময় দিতে পারে না। কেউ বা প্রবাসে, কেউবা বাবাকে গ্রামে রেখে শহরে পাড়ি জমাই। অনেক সময় ভুলতে বসি বাবাকে। আর তাই বাবার জন্য বিশেষ একটা দিনমাত্র।
বাবারা যেকোন ধরনের দুঃখ-কষ্ট একাই সহ্য করেন। সব সময় চেষ্টা করেন দুঃখ-কষ্ট যেন সন্তানদের স্পর্শ না করে। সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
যাদের বাবা আমাদের মাঝে নেই, তাদের বাবারাও সন্তানের শুভকামনা করেন। বাবারা সব সময় আমাদের মাঝেই আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। যদিও বাবার অনুপস্থিতি কোনো কিছু দিয়েই পূরণ হবার নয়।
‘বাবা দিবস’ বা Fathers Day পালন শুরু হয় গত শতাব্দীর প্রথমদিকে। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু।
একটা ছোট্ট গল্প মনে পরে যাচ্ছে যেটা আমি তোমাদের কাছে শেয়ার করতে চাইছি – আমেরিকার ওয়াশিংটনের স্পোকান শহরে সোনোরা লুইস ডডের মা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। তখন ডডের বয়স ছিল ১৬ বছর। আর ডডের বাবা উইলিয়াম জ্যাকসন সবেমাত্র যুদ্ধ থেকে ফিরেছে। তারপর থেকে ডড দেখেছে তার বাবা ছয় ভাই- বোনকে মানুষ করার জন্য রাত দিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের স্বার্থে সে আর বিবাহ করেনি। বাবা তাদেরকে মায়েব অভাব বুঝতে দেয়নি। যেন বাবাই তাদের মা। বাবাই ছিল তাদের সবকিছু। ঘটনাটি সত্য।
‘বাবা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সোনারের চিন্তায় আসে ১৯১০ সালে। মা দিবসের মতো বাবাদের জন্যও একটি দিবস করা প্রয়োজন, যেখানে বাবাদের জন্য থাকবে হৃদয় নৈবেদ্যের ছোঁয়া। দেশটির মন্ত্রীসভা জুন মাসের তৃতীয় রোব বারকে বাবা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।
তখন একটি স্থানীয় পত্রিকা সেদিন ছুটি ঘোষণা করে এবং বিভিন্ন দোকানিরা বাবাদের জন্য নানা রকমের উপহার সামগ্রী সাজিয়ে রাখেন।
বাবা নিয়ে কিছু উক্তি – Father And Son Quotes In Bengali
1. আমি আমার ছেলেদের স্বাধীনতা দিয়েঠিলাম। তবে উচ্ছৃংখলতা শেখার সুযোগ দেইনি। আমি বলবো সবাই বাবাকে ভালোবাসুন।
2. আমি আমার সন্তানদের বলিনি, তোমাকে এটা হতে হবে, ওটা হতে হবে। তাই তারা নিজেদের মতোই বেড়ে উঠেছে। বাবার কাজ সন্তানকে বন্ধুর মতো পথ দেখানো।
3. বাবা দিবস যদিও পশ্চিমা সংস্কৃতির অংশ। তারপরও এটি পরিবর্তমান বিশ্বে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের এখানে প্রত্যেকটি দিনই বাবা দিবস।
4. পৃথিবীতে সবাই তোমাকে ভালবাসবে, সেই ভালোবাসা মাঝে যে কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকে। কিন্তু একজন ব্যক্তি কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তোমাকে ভালো বাসবে সে হলো বাবা ।
5. বাবা হল আমাদের সকলের চোখের মনি, অসিম তোমার দান., অসিম তোমার ত্যাগ, ভগবানের আগেই তোমার আসন.. ত্রিভুবনে তোমার মত হয়না কারো মান।
6. দুনিয়ার সব কিছুই বদলাতে পারে, কিন্তু বাবার ভালবাসা কখনো বদলাবার নয়..!!
7. বাবার আদর যে কত বড় জিনিস তা একজন যোগ্য সন্তান ছাড়া আর কেউ জানে না । শত চিন্তা আপনার মাথায়, একবার বাবার সাথে আপনার চিন্তার বিষয় আলোচনা করুন দেখবেন সব চিন্তা দূর হয়ে যাবে । দুনিয়ার যেখানেই যান না কেন বাবার আদরের যে শান্তি তা কোথাও খুজে পাবেন না ।
8. সকাল দুপুর রাত্রী বেলা পেয়েছি সবার অবহেলা । সকল দুঃখ যেতাম ভুলে বাবার কাছে মাথা তুলে! বাবা যে আমার শেষ্ট বন্ধু , বাবার কাছে সুখের সিন্দু ।
9. প্রথম স্পর্শ বাবা প্রথম পাওয়া বাবা প্রথম শব্দ বাবা প্রথম দেখা বাবা আমার ভগবান তুমি বাবা।
গাম্ভীর্য আর অনুশাসনের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা কোমল স্নেহময় রূপ বাবা। তিনিই তো সন্তানদের শেখান কীভাবে পাড়ি দিতে হয় জীবনের অলিগলি আর আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ। তারপরও হাজারো জড়তা ভেঙে হয়তো বাবাকে বলে ওঠা হয় না, ‘বাবা, তোমায় খুব ভালবাসি’।
শেষ কথা
১৯ জুন, ১৯১০। প্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হচ্ছে স্পোকেনস শহরে। শহরের যুবক য্বুতীরা দুটি করে গোলাপ নিয়ে যাচ্ছিলেন চার্চে। একটি লাল, অন্যটি সাদা। লাল গোলাপ জীবিত পিতাদের শুভেচ্ছার জন্য, আর সাদা গোলাপ মৃত পিতাদের আত্মার তুষ্টির জন্য। বিষয়টি পুরো মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় এবং বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। ১৯১৯ সালে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘বাবা দিবস’ পালন করা শুরু হয়। অবশেষে ১৯৬৬ সালে ৫৬ বছর পর বাবা দিবসকে দেওয়া হয় জাতীয় মর্যাদা । আপনার বাবাকে আপনি অকৃত্রিম আন্তরিক ভালোবাসা জানাতে উপহার দিতে পারেন। যদিও বাবারা উপহার পেতে নয় দিতেই ভালোবাসেন। উপহার সামগ্রীর দোকান হলমার্ক বাবা দিবসে বিশেষ আয়োজন করেছে। বিভিন্ন দামের ও ডিজাইনের কার্ড তৈরি করেছে। আছে মগ ও ছবির ফ্রেম। বাবাকে ভালোবাসা জানিয়ে বিভিন্ন বাণী রয়েছে এসব উপহারে।