যীশু খ্রিস্টের জীবনী

জগতে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি রয়েছে। কেউ কেউ তাদের নিজেদের সমাজ, শহর বা দেশে সুপরিচিত। অন্যেরা সারা বিশ্বে পরিচিত। কিন্তু, কেবল বিখ্যাত কারো নাম জানা থাকলেই তা বোঝায় না যে, আপনি সত্যি সত্যি তাকে জানেন। এটা বোঝায় না যে, আপনি তার পটভূমি এবং ব্যক্তি হিসেবে তিনি কেমন, তা বিস্তারিতভাবে জানেন।

নাজরতীয় যীশুর জন্মের তারিখ গসপেল বা কোন ধর্মনিরপেক্ষ পাঠে উল্লেখ করা হয়নি, কিন্তু বেশিরভাগ পন্ডিতই খ্রীষ্টর্পূব ৬ এবং খ্রীষ্টর্পূব ৪ মধ্যে জন্মের একটি তারিখ অনুমান করেন। ঐতিহাসিক প্রমাণসমূহ র্নিদিষ্ট তারিখ র্নিধারনরে ক্ষেত্রে দ্ব্যর্থক ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে তারিখটি দুটি ভিন্ন পন্থা দ্বারা অনুমান করা হয় – লূক ও মথিের সুসমাচারে খৃষ্টীয় খৃস্টানদের উল্লেখ করা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির উল্লেখ বিশ্লেষণ করে এবং দ্বিতীয়টি যিশুর মন্ত্রণালয়ের শুরু থেকে প্রাক্কালের ওপর গবেষনা করে।

যিশু খ্রিস্টের জন্ম – জন্মস্থান

 সারা পৃথিবীর লোকেরা যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে কিছু-না-কিছু শুনেছে, যদিও তিনি প্রায় ২,০০০ বছর আগে পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিশু আসলে কে ছিলেন, তা নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। কেউ কেউ বলে যে, তিনি নিতান্তই একজন ভালো মানুষ ছিলেন। অন্যেরা দাবি করে যে, তিনি একজন ভাববাদী ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, যিশু হলেন ঈশ্বর এবং তাঁকে উপাসনা করা উচিত। আসলেই কি তাঁকে উপাসনা করা উচিত?যিশু সম্বন্ধে সত্য জানা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেন? কারণ বাইবেল বলে: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” ) হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টকে প্রকৃতরূপে জানা, এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করতে পারে।  অধিকন্তু, কীভাবে জীবনযাপন করতে হয় ও অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার  করতে হয়, সেই সম্বন্ধে যিশু সর্বোত্তম উদাহরণস্থাপন করেন।

যিশুর জন্মের অনেক আগে, বাইবেল এমন একজন ব্যক্তির আগমনের বিষয় ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল, ঈশ্বর যাঁকে মশীহ বা খ্রিস্ট হিসেবে পাঠাবেন। “মশীহ” (এক ইব্রীয় শব্দ থেকে) এবং “খ্রিস্ট” (এক গ্রিক শব্দ থেকে), দুটো উপাধিরই অর্থ হচ্ছে “অভিষিক্ত ব্যক্তি।” এই প্রতিজ্ঞাত ব্যক্তি  হবেন অভিষিক্ত অর্থাৎ তিনি এক বিশেষ পদমর্যাদায় ঈশ্বরের দ্বারা নিযুক্ত হবেন। এই বইয়ের পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতায় মশীহের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু শিখব। এ ছাড়া, আমরা সেই আশীর্বাদগুলো সম্বন্ধেও আরও বেশি কিছু শিখব, যেগুলো যিশু এমনকী এখনই আনতে পারেন। তবে, যিশু জন্মগ্রহণ করার আগে, নিঃসন্দেহে অনেকেই ভেবেছিল যে, ‘কে সেই মশীহ হিসেবে প্রমাণিত হবেন?

 প্রথম শতাব্দীতে, নাসরতের যিশুর শিষ্যরা সম্পূর্ণ দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন যে, তিনিই ছিলেন ভবিষ্যদ্‌বাণীকৃত সেই মশীহ।  শিমোন পিতর নামে, শিষ্যদের মধ্যে একজন খোলাখুলিভাবে যিশুকে বলেছিলেন: “আপনি সেই খ্রীষ্ট।”  কিন্তু, কীভাবে সেই শিষ্যরা নিশ্চিত হতে পেরেছিলেন এবং কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, প্রকৃতপক্ষে যিশুই হচ্ছেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ?

বর্তমান কালে পৃথিবীতে সবচেয়ে জাঁকজমকভাবে যে ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় নিঃসন্দেহে সেটাক্রিসমাস। বড়দিন।ক্রিসমাস উপলক্ষে আজকের এই নোট। ক্রিসমাস (Christmas) শব্দটা এসেছে Christ’s Mass থেকে। আক্ষরিক অর্থ খ্রিস্টের সার্ভিস। “মেরি ক্রিসমাস” অর্থ তাই “শুভ হোক খ্রিস্টের সার্ভিস”; যদিও এ অর্থ মাথায় রাখে না মানুষ বলার সময়। সংক্ষেপে X-Masও লিখা হয় ক্রিসমাস বুঝাতে। কারন, গ্রিক ভাষায় খ্রিস্ট লেখার শুরু হয় X দিয়ে  ক্রিসমাস উদযাপন মূলত যীশুর জন্মদিন পালন। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে এ দিন যীশু জন্ম নেন এ পৃথিবীতে মা মেরীর গর্ভ থেকে। বিশ্বব্যাপী পালিত এ জন্মদিন কি আসলেই জন্মদিন?  জন্মতারিখটা ইতিহাস নাকি মিথ সে আলোচনায় যাওয়ার আগে কিছু হালকা বিষয় জেনে নেয়া যাক।

বেশিরভাগ দেশেই এ দিনটি ছুটির দিন। এ দিনটার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হল সান্তা ক্লজ এর লিজেন্ড। Santa Claus শব্দটা এসেছে Saint Nicholas থেকে। ফাদার ক্রিসমাস বা শুধু সান্তা নামেও ডাকা হয়। শিশুদের বিশ্বাস করানো হয়, সান্তা ক্রিসমাস এর আগের রাতে সবাইকে গিফট দিয়ে যান “মোজা”য় ভরে। সাদা দাঁড়ির মোটাসোটা লাল পোশাকের এ লোক থাকেন উত্তর মেরুতে। তাঁর সাথে আছে অসংখ্য জাদুকরি এলফ আর নয়টা (বা ৮টা) উড়ন্ত বল্গা হরিণ। এলফ-রা গিফট প্রস্তুত করে। তিনি সেটা তাঁর স্লেজ এ করে উড়ে উড়ে দিয়ে আসেন।

যীশুর মৃত্যু


ঈশ্বরের কাছে আমাদের নিয়ে যাবার জন্য সেই নির্দোষ লোকটি পাপীদের জন্য, অর্থাৎ আমাদের জন্য মরেছিলেন। দেহে তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু আত্মায় তাঁকে জীবিত করা হয়েছিল এবং তিনি বন্দী আত্মাদের কাছে গিয়ে প্রচার করেছিলেন।” ১৮ পদে উল্লেখিত “আত্মায়” বলতে যে বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে তা ঠিক একইভাবে ব্যবহৃত বাক্য “দেহের” সাথে সম্পর্কিত। তাই, দেহ এবং আত্মা একই ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই দেহ এবং আত্মা হচ্ছে খ্রীষ্টের দেহ এবং আত্মা। আবার, “আত্মায় জীবিত করা হয়েছিল” এই কথাটি বলে যে, খ্রীষ্টের পাপ বহন ও মৃত্যু তাঁর মানবীয় আত্মাকে তাঁর পিতার কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছিল । মথি  পদ এবং রোমীয়  পদে দেহ ও আত্মার তুলনার কথা বলা হয়েছে তা খ্রীষ্টের দেহ এবং পবিত্র আত্মার সাথে নয়। যখন খ্রীষ্ট আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ব কাজটি শেষ করেছিলেন, তখন তাঁর আত্মা আবার তাঁর ভেংগে যাওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেছিল।

১ পিতর পদে খ্রীষ্টের কষ্টভোগ(১৮ পদ) এবং তাঁর স্বর্গে যাবার বিষয়টি দরকারী বলে যুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনার মাঝখানে কি ঘটেছিল তার নির্দিষ্ট বর্ণনা শুধুমাত্র পিতর দিয়েছেন। ১৯ পদে বলা “প্রচার করেছিলেন” কথাটি নতুন নিয়মে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয় না, কিন্তু সুসমাচার প্রচার করা ব্যবহার করা হয়। আক্ষরিক অর্থে এই কথার মানে কোন বিশেষ সংবাদ ঘোষণা করা বুঝায়। যীশু কষ্টভোগ করে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাঁর দেহকে মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করা হয়েছিল এবং পাপের কারণে তাঁকে আত্মায় মরতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর আত্মা আবার জীবিত হয়ে উঠেছিল এবং তাঁর আত্মা পিতার কাছে গিয়েছিল। পিতরের কথা অনুসারে, যীশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাঝামাঝি সময়ে “বন্দী আত্মাদের কাছে” এক বিশেষ বাণী প্রচার করেছিলেন।

এই বিষয়ে পিতর যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তা “আত্মা” নয় কিন্তু “প্রাণ” বলতে চেয়েছেন। নতুন নিয়মে “আত্মা” শব্দটি দিয়ে স্বর্গদূত বা মন্দ আত্মাদের বুঝানো হয়েছে, মানুষের ক্ষেত্রে নয়। সম্ভবত, ২২ পদে এই অর্থই বোঝানো হয়েছে। তাছাড়া, বাইবেলের কোথাও উল্লেখ নাই, যীশু নরক পরিদর্শন করেছেন। প্রেরিত  পদে বলা হয়েছে, তিনি “মৃতস্থানে” গিয়েছিলেন এবং “মৃতস্থান” এবং “নরক” এক নয়। “মৃতস্থান” বলতে মূলত মৃত লোকদের জন্য সাময়িক স্থান বুঝায় যেখানে তারা পুনরুত্থানের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রকাশিত বাক্য  পদে এই দুটো স্থানের পার্থক্য সম্পর্কে এক সুস্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। বিচারের পর নরক হচ্ছে পাপীদের জন্য চুড়ান্তভাবে নির্দিষ্ট থাকার স্থান, আর মৃতস্থান হচ্ছে সাময়িক থাকার স্থান।

আমাদের প্রভু তাঁর আত্মা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেছেন, মারা গিয়েছেন এবং তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাঝামাঝি কোন এক সময় মৃতদের স্থান পরিদর্শন করে মৃত আত্মাদের কাছে সুসমাচারের বাণী ঘোষণা করেছেন (যিহূদা ৬ পদ অনুসারে পতিত স্বগর্দূতদের কাছেও হতে পারে), যারা কোনভাবে নোহের সময়ে ঘটে যাওয়া বন্যার আগেকার আত্মাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ২০ পদ অনুসারে স্পষ্ট এটাই বোঝা যায়। খ্রীষ্ট বন্দী আত্মাদের কাছে ঠিক কি বাণী প্রচার করেছিলেন তা পিতর আমাদের বলেন নাই, কিন্তু তা মুক্তির সুসমাচার নয়, কারণ পতিত স্বর্গদূতেরা উদ্ধার পাবে না । সম্ভবত, এই বাণী ছিল শয়তান ও তার দলবলের উপরে চুড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা । একইভাবে ইফিষীয়  পদে এটা ইংগীত করা হয়েছে যে, খ্রীষ্ট “স্বর্গে” উঠে গিয়েছিলেন  এবং তাঁর মৃত্যুর পরে যারা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল, তিনি তাদের স্বর্গে নিয়ে যান। এই শাস্ত্র অংশে ব্যাপক বর্ণনা করা নাই সেই সময় কি ঘটেছিল; তবে অধিকাংশ বাইবেল পন্ডিতেরা স্বীকার করে থাকেন যে, এর মানে- খ্রীষ্ট “বন্দীদের বন্দিদশা থেকে বের করে আনলেন।”

তাই, বলা যায় যে, খ্রীষ্ট তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাঝখানের ঐ সময়ে ঠিক কি করেছিলেন তা বাইবেল খুব পরিষ্কার করে বলে নাই। তবু মনে হয়, তিনি অবিশ্বাসী আত্মাদের কাছে, এবং পতিত স্বর্গদূতদের উপরে তাঁর বিজয় ঘোষণা করতে গিয়েছিলেন। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে, যীশু কাউকেই দ্বিতীয়বার পরিত্রাণ বা উদ্ধারের সুযোগ দেবেন না। বাইবেল আমাদের বলে যে, মৃত্যুর পরে আমাদের বিচারের সামনে দাঁড়াতে হবে আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ নাই। সেজন্য বলতে হয়, যীশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাঝখানের সময়ে ঠিক কি করেছিলেন তা একেবারে নিশ্চিত সুস্পষ্ট নয়। সম্ভবত, এটা এমন এক রহস্য, যা আমরা মহিমা প্রাপ্তির পর (মৃত্যুর পর) বুঝতে পারব।