Bangla Love Bani – বাংলা প্রেমের বাণী

ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে ভালোবেসে  বেশি আনন্দ অনুভূত হয়। ভালোবাসার মানুষটিকে অদেয় কিছু নেই। তার জন্য এক পৃথিবী ভালোবাসা অকৃপণের মতো উজাড় করে দেওয়া যায়। ভালোবাসার সঙ্গ না পেলে মানুষের জীবন অসম্পূর্ণ। কবি কীটস বলেছেন,যে ভালোবাসা পেলো না, যে কাউকে ভালোবাসতে পারলো না সংসারে তার মতো হতভাগা কেউ নেই।সত্যিই তাই, প্রেমের মাধুরী ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। আর আমরা বাঙালী জাতি তো প্রেমে বাঁচি। আমাদের শিরায় শিরায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে উত্তম-সুচিত্রা বয়ে চলে। নজরুলের বিদ্রোহী প্রেম কিংবা আজকের কবীর সুমনকে নিয়ে আমরা বড় হয়েছি। আর এখন তো আপামোর বাঙালী ”ক্রাশ টু প্রেম”, ”হোটেলের বিল টু দর্দে দিল” সবের সমাধান অনুপম রায়, অরিজিৎ সিং-এর গানে খুঁজে পায়। বাঙালীর নতুন ‘দাদা’ অনুপম রায় যদি মনের অলিগলির সন্ধান দেয়, তো ‘গুরু’ অরিজিৎ আমাদের প্রেমের ভাষা। গানের কথায় নিজেদের জীবন খুঁজে পেলে সেই কোটস্‌, কবিতার লাইন নিয়ে স্ট্যাটাস আপলোড করাই বর্তমানে ”ইন”। তবে প্রেমে পড়া যত সোজা, প্রেমের গভীর অর্থ, প্রকৃত ভাব বোঝা ততই কঠিন। প্রেমিকের উষ্ণ হাত কি প্রেমিকার অভিমানের চাউনি — হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া, চায়ের ভাঁড়ে জীবন ভাগ করে নেওয়াই ভালোবাসা। কোনো আবেগঘন মুহূর্তে প্রেমিকার চোখে তাকিয়ে দু’লাইন প্রেমের বাণী শোনালে কিংবা অফিসফেরত ক্লান্ত প্রেমিকের ফোনে ভেসে আসা প্রেমিকার ‘লাভ লাইনস্‌’, সে প্রেম জমে ক্ষীর। সেরকমই কিছু প্রেমময় বাণী ছড়ানো হল এখানে। পড়ো, মনের মানুষের সাথে ভাগ করে নাও, আর সবার মধ্যে ছড়িয়ে দাও।

Bangla Love Bani – বাংলা প্রেমের বাণী

সম্পর্ক এগিয়ে চলার সাথেই ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। প্রেমে পড়া যতটা সহজ সম্পর্কের বোঝাপড়ার পথটা ততটাই কঠিন। আজ ১০ টি প্রেমের বাণী রইল, সম্পর্কের বিভিন্ন ধাপকে সহজ সরলভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।

1. সম্পর্কের বোঝাপড়া

মান অভিমান বিষাদ ক্লান্তি,

বুঝে যাও তুমি চোখের পাতায়,

রেখে এ মন।

যোগ বিয়োগের গুণ ভাগে

হিসেব নিকেশে টিকে থাকে,

ভালোবাসা যখন।

সম্পর্ক শুধুমাত্র ঘুরে বেড়ানো বা হোটেলে খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক দায়িত্ব পালন থাকে। শব্দ উচ্চারণ না করেও পরস্পরের মনের অবস্থা বুঝে নেওয়ার থাকে। কঠিন সময়ে পাশে থেকে ভরসা জোগানোয় সম্পর্কের মূল্যবোধ নিহিত রয়েছে।  

2. মনের মানুষ

আমার বেঁচে থাকার প্রার্থনাতে

বৃদ্ধ হতে চাই তোমার সাথে

অনেক খুঁজে তোমায় নিলাম চিনে

ভালোবাসার এই দিনে।

প্রিয় মানুষটির হাত ধরে সারাজীবন হাঁটতে চাওয়া বা তা সম্পূর্ণ করতে পারায় প্রেমের সার্থকতা। কোনো স্বপ্নালু চোখ তার পছন্দের মানুষটির সঙ্গে একজীবনের স্বপ্ন দেখেছে, যে ছন্দে জীবন কাটাতে চায় তারা। মনে পড়ে ‘নোটবুক’এর শেষের সেই বিখ্যাত দৃশ্য যেখানে বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ নোয়া আর অ্যালি হাতে হাত রেখে একসাথে মৃত্যুকে মেনে নিল। শুধু জীবনের বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষের সেদিন অব্দি পাশে থাকার উপযুক্ত মানুষটিকে খুঁযে নেওয়ার অপেক্ষা।  

3. তুই বললে… তুই বললে

তুমি বললেই মরে যাবো

কিন্তু একটি শর্তে

শুধু কাফনের কাপড়ের জন্য

তোমার আঁচলটুকু চাই।

ভালোবাসায় এক অদ্ভুত সাহস থাকে। প্রেমে পড়লে অসম্ভব রকমের দুঃসাহসী হয়ে পড়ে মানুষ। প্রিয় মানুষটির জন্য আকাশের চাঁদ পেড়ে আনার সাধ জাগে। নিজের প্রাণ দেওয়াটাও নিতান্তই সরল ব্যাপার হয়ে যায় আর কি! ভালোবাসা প্রমাণের জন্য জীবন অতি তুচ্ছ লাগে। সে বললে প্রাণটাকে বোধহয় তার চরণে উৎসর্গ করা যায়।

4. হৃদয়ের গোপনতম চুক্তি

যে ভালোবাসা যত গোপন, সেই ভালোবাসা তত গভীর।

আমাদের মনের অলিগলি জুড়ে ভালোবাসা বিরাজ করে। মনের অনুভূতি সবসময় প্রকাশ পায় না। ক্লাসের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকা ছেলেটাও তার সহপাঠী প্রেমে কখন পড়েছে কেউ বুঝতে পারে না। অথবা মাথা নীচু পাড়ায় যাতায়াত করা মেয়েটা মোড়ের মাথার রকবাজ ছেলেটার দিকে সবার অলক্ষ্যে চেয়ে থাকে, কেননা গোপনে তাকে মন দিয়ে ফেলেছে যে।

5. প্রেমের মহিমা

জীবনে ভালোবাসা আসার পূর্বে হাজার বছর একা থাকা যায়, কিন্তু ভালোবাসার পর এক মুহূর্তও একা থাকা যায় না। আর ভালোবাসার মানুষটি কিছু সময়ের জন্য কাছে না থাকলে মনটা কেমন ব্যাকুল হয়ে থাকে তাকে কাছে পাবার জন্য, এটাই ভালোবাসা।

আমাদের জীবনের বহু বসন্ত হয়তো অবহেলায় বিনা প্রেমে কেটে যায়। অথচ একবার ভালোবাসার টান লাগলে সেই অনুভূতিকে ছাড়া থাকা যায় না। অনেকেই আছে বা বলা যায় প্রায় প্রত্যেকেই প্রথম প্রেমে ব্যর্থ হয়েছে। প্রথমেই একেবারে যোগ্য মানুষটিকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু ভালোবাসায় পড়তে ইচ্ছে করে বারবার। মনের অনুভূতিগুলি প্রেম চায়। বাধনহারা মন ভালোবাসার প্রতি ঝুঁকে যায় বারবার।

6. ভালোবাসার ভাষা

“I Love You” যত সহজে বলা যায়- “আমি তোমাকে ভালোবাসি” তত সহজে বলা যায় না।

প্রেমে পড়া আর প্রেম নিবেদনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। নিজের মনের অনুভূতি জড়ো করে প্রিয় মানুষটিকে বলার জন্য মনের মাধুরীর সঙ্গে ভাষার আবেগ মিশিয়ে তা আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়।

7. সম্পর্কের পরিণতি

“ভালবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধহয় ভালো। বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালবাসা থাকে না। আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়ত ভালবাসাটা থাকে, শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালবাসাই হয়ত বেশি প্রিয়।”

হুমায়ূন আহমেদ

ভালোবাসা পরিণতি পায় বিয়ের মধ্যে দিয়ে। যুগ যুগ ধরে এই ধারণাই সংষ্কারের মতো চলে এসছে সকলের মধ্যে। কিন্তু সম্পর্ক যে ভিন্নধর্মী। প্রত্যেকটি সম্পর্কের নিজস্ব সত্ত্বা রয়েছে। কিছু সম্পর্ক রেললাইনের মতো, পাশাপাশি চলে চিরকাল, কিন্তু কখনও একরেখায় মিলে যায় না।

 8. প্রেমের প্রতি

চমকি দেখিনু আমার প্রেমের জোয়ারও তোমারই মাঝে

হৃদয় দোলায় দোলাও আমারে তোমারও হিয়ারিই মাঝে

তোমারও প্রানের পুলকও প্রবাহ নিশীথে চাহিয়া মাতে

যত মোর নাম গাহ মোর গান আমারই একতারাতে

‘গোপনে ভালোবাসি যারে, সে যদি কখনও বলে’ এই অপেক্ষায় ছেলেটা আজও দাঁড়িয়ে। কিংবা ‘এমন প্রেমিক জুটলো কপালে, বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না তার’ সবসময় অনুযোগ প্রেমিকার। এরা হঠাৎ যদি একদিন জানতে বা বুঝতে পারে প্রিয় মানুষটির মনে তাদেরই প্রতিচ্ছবি, এই বিশেষ অনুভূতিটি অমূল্য।

9. বৃষ্টিভেজা ভালোবাসা

এই চল না বৃষ্টিতে ভিজি

চল না কন্যা যাই ছাদে,

আজ আমরা বৃষ্টি বন্দি

ভালোবাসার অপরাধে।

প্রেমের প্রতিটা মুহূর্তই অন্তরঙ্গ হয়। বৃষ্টির সাথে ভালোবাসার  মনের আত্মীয়তা রয়েছে। ভালোবাসা যদি মনের গোপন অনুভূতি হয়, বৃষ্টির অঝোর ধারা তার প্রকাশ।

10. ভালোবাসার ধর্ম

গির্জার ঘণ্টায় মিলে যাওয়া দূরের আজান

প্রতি আহ্বানে খোঁজা তোমার যোগ্য কোনও গান

যে গানে শ্যামের সুর রাধিকার বিরহে মানায়

খোদার কসম জান, আমি ভালোবেসেছি তোমায়…

হৃদয়ের রঙ-ধর্ম হয় না। হৃদয়ের প্রেমের সুরে সব মানুষকে যুক্ত করে। যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতের ভেদাভেদ নেই, সেখানেই ভালোবাসার প্রকৃত রূপটি স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

প্রেমের কথা

প্রেমের অজস্র অনুভূতির কথা লিপিবদ্ধ করা অতো সহজ নয়। প্রেমের বাণীর মর্ম প্রেমের সাগরে ডুব দিলে উপলব্ধি করা যায়। তাই যারা এখনও কাউকে ভালোবাসোনি, সবাই প্রেমে পড়ুক। জোড়ায় থাকায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের আরও বেশি করে ‘প্রেম পাক’ একে অপরের প্রতি। দু’কলি প্রেমের বাণী শোনাও ‘সেই বিশেষ’এর হাত ধরে। প্রেমের বাণী সার্থক হোক প্রিয় মানুষগুলির চোখের তারার ঝলকে, মনের চিলেকোঠায়।

লেখিকা – রুবি পাল