আগমনী কবিতা

আগমনী কথা বা আগমনী এই শব্দটা শুনলেই যেন শরীরের মধ্যে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পরে আনন্দের। এই আগমনীর মধ্যে বাঙালির শীর্ষ আনন্দ লুকিয়ে থাকে যা ঠিক স্রোত কালের এই সময় প্রস্ফুটিত হয়।  বর্ষা অন্তে আসন্ন শরতের শিউলি ঝরা ভোর আমাদের অন্তর জুড়ে স্নিগ্ধতার প্রলেপ ছড়িয়ে দেয়। যদিও কিছুক্ষনের অতিথি এই শরৎ। শরৎ প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে সাজিয়ে যায় যার আবেশে অতি সাধারণ মানুষ ও ভাবাবেগে আনন্দিত হহয়ে ওঠে।  শরৎ অবসাদগ্রস্ত মনেও নতুন প্রেরণার সঞ্চার করে।  শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি থাকে নির্মল স্নিগ্ধ।  শরতে আকাশের মতো আকাশ আর কোন ঋতুতে দেখা যায় না।  শরৎকালের রাতে জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ।  মেঘমুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে।  চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। শরতের এ সময়টা শস্যপূর্ণা। ধানক্ষেত এ সময় ফল সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।  মাস দু–এক পরেই কৃষকের গোলা ভরবে ধানে। কিষাণীর নোলক দোলানো হাসি বলে দেবে পরিতৃপ্তির কথা।  শরৎ আনন্দের ঋতু।  শরৎপূর্ণতার ঋতু, প্রাচুর্যের ঋতু।  এমনি ঋতুকে কি ভুলে থাকা যায়?

শরৎ মানেই সকাল-সন্ধ্যা ঘাসের ডগায়, ধানের শীষে শিশির বিন্দু জমে ওঠা। বাতাসে হিমেল অনুভূতি। এ ঋতু নিয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘এসেছে শরৎ, হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার পরে।’ শরতকালে হিমেল হাওয়ার অনুভূতি ও শিউলি ফুলের ঘ্রাণ কম পাওয়া গেলেও স্বচ্ছ নীল আকাশে চলছে তুলার মতো সাদা মেঘের আনাগোনা। নদীর তীরে তীরে ফুটে উঠেছে কাশফুল। অপরূপ বিভাও সৌন্দর্যের কারণে শরৎকালকে বলা হয়ে থাকে ঋতু রাণী।  মানুষ মাত্রই শরৎ কালে প্রকৃতির রূপ–লাবণ্য দেখে মোহিত না হয়ে পারে না।   শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়।  ভাদ্র আশ্বিন এ দু’মাস শরৎ ঋতু।  বর্ষার পরের ঋতুই শরৎ।  তাই শরতের আগমনে সবার হৃদয় আনন্দে নেচে ওঠে। আমরা আজ দেখে নেবো যে আগমনী কবিতার মূলভাব।

শরতের আগমনী কবিতা – বাংলা আগমনী কবিতা

 

1. মাগো তুমি আসবে বলে.. হৃদয় জুড়ে খুশির লহর ;
ও মা তোমার পথ চেয়ে আমি শুধুই গুনি প্রহর ,
জানি মা তুমি আসছ তাই তো মেঘেদের আনাগোনা .
মাঠে মাঠে তাই কাশফুল ফোটেmভোরের ঘাসে শিশিরকনা …

2. সুধীরে নিশার আঁধার ভেদিয়া ফুটিল প্রভাততারা।

হেথা হোথা হতে পাখিরা গাহিল ঢালিয়া সুধার ধারা।
মৃদুল প্রভাতসমীর পরশে কমল নয়ন খুলিল হরষে,
হিমালয় শিরে অমল আভায় শোভিল ধবল তুষারজটা।
3. আগমনে প্রফুল্ল হৃদয়, পূরব দিশায় হয় অরুণ উদয়।
রাঙিল ভুবন আজি অরুণ আভায়, ফুলের সৌরভ ভাসে বাতাসের গায়।
ফুল বনে ফুল শাখে ফুটে ফুলকলি, মধু আহরণে আসে গুঞ্জরিয়া অলি।
ভোরের আলোয় মুক্ত নিশির শিশির দূর্বাদল-বৃন্ত হতে ঝরে ঝির ঝির।
4.মাগো  তোমার আগমনী সুর তোলে প্রানে এক হিল্লোল –
খুশিতে বিভোর বসুন্ধরা আবেগে বিহ্বল !
মাগো তোমার মধুর রূপে মজে যায় ত্রিভূবন !
মৃন্ময়ী তুমি কৃপা কর সবে এই বলি সারাক্ষণ !
অশুভ থেকে শুভ’র দিকে আঁধার থেকে আলোকে …
মৃত্যুর থেকে অমৃতের পথে ! নিয়ে চল মাগো তব জয়রথে।

5. সবুজ তরুর শাখে পাখি সব বসে থাকে প্রভাতের আগমনী গায়,
সোনা ঝরা রোদদুরে বাজে বাঁশি মিঠে সুরে মাঝি সব মাদল বাজায়।
সবুজ ধানের খেতে প্রভাত হাওয়া মেতে ঢেউ লাগে দিয়ে যায় দোলা,
অজয়ের নদীজলে বৈঠা বেয়ে মাঝি চলে নৌকাখানি সাদাপাল তোলা।
দেবীর মন্দির মাঝে ঢাক ঢোল কাঁসি বাজে পূজোর সময় এল কাছে,
চতুর্দিকে হাঁক ডাক ঢাকীরা বাজায় ঢাক আনন্দে হৃদয় মোর নাচে।

আগমনী নিয়ে কবিতা – ছোটদের আগমনী কবিতা

6. আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গল গাও জননী এসেছে দ্বারে
সপ্তসিন্ধু কল্লোলরোল বেজেছে সপ্ততারে।
সুর সপ্তক তুলেছে তান সপ্ত ঋষির গানে
সপ্তসর্গে দুন্দুভি ঘোষে সপ্তগ্রহের টানে।
অন্তরে আজ সপ্তদলের নবজাগরণ সারে।
ওগো জননী এসেছে দ্বারে। সাতরাঙা রবি রামধনু হাতে
পরণের বাণ হানেসপ্তকোটি সুসন্তান বিজয়মাল‍্য আনে
সপ্ততীর্থ এক ই সাথ হয়ে রীতিমন্দির দ্বারে
তুলে নাও বুকে তারে ওগো জননী এসেছে দ্বারে।

7. তটিনী চলেছে নাচিয়া ছুটিয়া, কলরব উঠে আকাশে ফুটিয়া,

ঝর ঝর ঝর করিয়া ধ্বনি ঝরিছে নিঝরধারা।
তুলিয়া কুসুম গাঁথিয়া মালা, চলিয়াছে গিরিবাসিনী বালা,
অধর ভরিয়া সুখের হাসিতে মাতিয়া সুখের গানে।
মুখে একটিও নাহিকো বাণী শবদচকিতা মেনকারানী
তৃষিত নয়নে আকুল হৃদয়ে, চাহিয়া পথের পানে।
আজ মেনকার আদরিণী উমা আসিবে বরষ-পরে।

8. তরুশাখে পাখি সব করিছে কূজন,
শারদ আকাশে শুভ্র মেঘের গমন,
শুভ্র মেঘপুঞ্জ ভাসে আকাশের গায়,
দুই ধারে কাশ ফুল নদী কিনারায়।
শরতের আগমন হেরি বসুধায়,
লিখেন লক্ষ্মণকবি তার কবিতায়।

9. আজি এ সুপ্রভাতে অজস্ৰ শঙ্খনিনাদে .
আমার নয়নপাতে অমলমুরতি ধরি ..
এলে মাগো দশভূজা কোন্ অপরূপ সাজে …
আকুল মনপবনে ..তব পদধ্বনি বাজে ;
এলে সুনয়না মধুর বেশে ভরালে এ মন অধীর আবেশে !
শিশিরকণায় শেফালীকা ফুলে.তোমার সে রূপে সবই গেছি ভুলে !
পরমা প্রকৃতি শক্তিস্বরূপা.ভবানী মা তুমি জগদম্বিকা !
মৃণ্ময়ী নও চিন্ময়ী মাগোনা প্রকৃতির মাঝে তুমি সদা জাগো !
হৃদয় আলয়ে তোমার শোভা তোমার মূর্তি বড় মনোলোভা !
মনের অসুর দমন করে ,তোমায় প্রণমি ও মা করজোড়ে !
দেবীপক্ষের এ মহাতিথিতে এসো এসো মাগো এই ধরণীতে …
তোমার ধেয়ানে তোমার স্তুতিতেহল মহালয়া এই পৃথিবীতে।

10. আমার আনন্দিনী উমা আজো এলো না তার মায়ের কাছে।
হে গিরিরাজ! দেখে এসো কৈলাসে মা কেমন আছে॥
আমার মা যে প্রতি আশ্বিন মাসে
মা মা ব’লে ছুটে আসে,
‘মা আসেনি’ ব’লে আজও ফুল ফোটেনি লতায় গাছে ॥
তত্ত্ব-তলাশ নিইনি মায়ের তাই বুঝি মা অভিমানে,
না এসে তার মায়ের কোলে ফিরিছে শ্মশান মশানে।
ক্ষীর নবনী ল’য়ে থালায়
কেদে ডাকি, ‘আয় উমা আয়’।
যে কন্যারে চায় ত্রিভুবন তাকে ছেড়ে মা কি বাঁচে॥

শেষ কিছু কথা 

আমি আগেও বলেছি যে আগমনী এমন একটা শব্দ যা শুনলে আমাদের সারা শরীর ও মন শিওরে ওঠে আনন্দে। কারণ টা আমরা সবাই জানি যে আগমনীর কথার অর্থ হচ্ছে আমাদের বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গা উৎসব যার আগমনী দিয়ে শুরু হয়। আর এই আগমনী থেকে লেগে পরে নানান অনুষ্ঠান ও নানা ধর্পনের নিয়ম ও নীতি। আজ হটাৎ কেমন পুজো পুজো গন্ধ বাতাসে মোই মোই করছে। জানিনা কোনো হটাৎ মনে হচ্ছে। বেশি দিন নেই আর হাতে গোনা কটা দিন মাত্র। সাবধানে সব নিয়ম মেনে আনন্দ করুন। আপনার আনন্দ যেন কারোর কোনো ক্ষত না হয় সেটা মাথায় রাখবেন। ভালো থাকবেন আপনারা সবাই।