গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া নিষেধ

গর্ভাবস্থায়  কি কি খাবার খাবেন না সেটা নিয়ে বহু মানুষের  চিন্তা। কোনো এই চিন্তা কারণ তারা জানেন না সঠিক কি কি জিনিস খেতে নেই বা খাওয়া উচিত না। আমি এর আগে গর্ভাবস্থায় কি কি খাবার উচিত সেটা লিখে দিয়েছি এই লিংক এই লিংক এ ক্লিক করে দেখে নিন। সত্যি কথা বলতে সাধারণ হোক বা অসাধারণ এই বিষয়ে অনেকেরই অজানা যে গর্ভাবস্থায় কোন কোন জিনিস আছে যা গর্ভবতী নারীদের ক্ষতি করে থাকে বা একদম দূরে থাকা উচিত। আজ আমি আপনাদের সেই সব জিনিস নিয়েই জানাবো। সঙ্গে থাকুন।

আমাদের দেশে প্রত্যেক দিনে হাজার হাজার লক্ষ্য লক্ষ্য মহিলারা মা হন। তার জন্য অনেক সময় ধরে  অপেক্ষা করতে হয়। মোটামুটি  ৮ থেকে ১০ মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে এখন আর এত্ত সময় লাগে না কারোর ৭, কারোর ৮, আবার কারোর ৯ মাসেই মা হয়ে যান। আর এই সময় ধরে থাকে নানানা সাবধানতা থেকে শুরু করে খাবার দাবার এর ভালো  পরিচর্চা। তার থেকে উঠে আসে ভালো বিশ্রাম আর নানান ধরণের খাবারের কথা। আগেই আলোচনা হয়েছে যে কি কি খাবার এই সময় খাওয়া উচিত।

বন্ধুরা আজ আমি একটা কথা দায়িত্ব গর্ভাবস্থায় নারীদের খুব সচেতন থাকতে হয় কি তাই তো নাকি ? এ সময় চলাফেরা, জীবনধারণ ও খাদ্যের ব্যাপারে সচেতন হলে অনেক ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তথা সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। কিন্তু আপনি পুষ্টি ভেবে যদি ক্ষতিকর খাবার খেয়ে নেন তাহলে আপনাকে পস্তাতে হতে পারে। জেনে নেবো তাই আজকের আর্টিকেল এ জানাবো যে কি কি খাবার এই সময় উচিত না।

গর্ভাবস্থায় খাবেন না এমন খাবারের তালিকা

আনারস – Pineapple

আপনি জৎক্ষনাৎ জানতে পারবেন যে আপনি সন্তান সম্ভবা বা আপনি গর্ভবতী তৎক্ষণাৎ আপনার এই আনারসের প্রতি লোভ ত্যাগ করতে হবে। বেশি না ওই ১০ মাস বা ১ বছর। প্রথম ত্রৈমাসিকের গর্ভাবস্থায় এড়ানোর ফলের তালিকায় আনারসগুলি উচ্চ স্থানে থাকে। কিন্তু আমি এখানে বলবো যে আপনি একদম আনারসের কথা ভুলে যান যখন আপন ই জানতে পারবেন যে আপনি সন্তান সম্ভব। কারণ আনারস খাওয়ার ফলে জরায়ুতে তীব্র সংকোচন হতে পারে, যার ফলস্বরূপ একটি গর্ভপাত ঘটতে পারে। আনারসে ব্রোমেলাইন থাকে, এটি একটি এনজাইম যা প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। এটি জরায়ু নরম করতে পারে এবং অকাল প্রসব শ্রমের কারণ হতে পারে। এজন্য আপনার গর্ভাবস্থায় অবশ্যই আনারস খাওয়া এড়াতে হবে। 

আঙুর – Grapes 

এই সময় ভালো মন্দ খাওয়া তো খুব ভালো তার মধ্যে ফল এর থেকে আর ভালো কি হতে পারে। কিন্তু এই সময় আঙ্গুর কিছু ক্ষতি করতে পারে আপনার। তাই গর্ভাবস্থায় আঙুর বাদ দেওয়া  ভাল এবং এটি সবুজ ও কালো উভয় আঙুরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনার অবশ্যই কোন রকম ওয়াইন সেটা রেড হোক বা হোয়াইট হোক বা অন্য কিছু একদম পান করা উচিত নয়। যদিও গর্ভাবস্থায় আঙুর খাওয়া সম্পর্কে মিশ্র মতামত রয়েছে, তবে এটি বিশ্বাস করা হয় যে আঙুরের মধ্যে থাকা যৌগিক রেজভেরট্রোল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায়, কালো আঙুরের ত্বক হজম করতে আপনার পক্ষে অসুবিধা হতে পারে কারণ এই সময় হজম ব্যবস্থা দুর্বল থাকে। তাও আপনার যদি খেতে খুব ইচ্ছা করে বা আপনার যদি খেতেই হয় তাহলে একবার ডাক্তার এর সাথে কথা বলেই খাওয়া ভালো। কান্না আপনার তৎক্ষণাৎ কি কি সমস্যা আছে সেটা আপনি আর আপনার ডাক্তার জানবেন।

তেঁতুল – Tamarind

গর্ভাবস্থায় টক জাতীয় খওয়ার অভ্যাস হওয়া স্বাভাবিক, এবং আপনি তাৎক্ষণিক ভাবেই তেঁতুলের কথা ভাবতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় তেঁতুল খাওয়া ভাল হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। হ্যা হয়তো আপনি অবাক হবেন কিন্তু কথাটা সত্যি। তেঁতুল দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাবের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে তেঁতুল খাওয়ার ক্ষেত্রে সংযম হল মূল বিষয়। তেঁতুল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, এবং গর্ভবতী হওয়ার সময় এড়ানোর ফলগুলির তালিকায় এটি প্রদর্শিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল এটি। যেহেতু তেঁতুলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এটি আপনার দেহে প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনকে দমন করতে পারে। তাই একটু সাবধান হয় ভালো। কারণ জিনিসটাই খুব সেনসেটিভ।

পেঁপে – Papaya

দায়িত্ব নিয়ে বলছি একদম খাবেন না। পেঁপেগুলিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি এবং ভিটামিন রয়েছে যা আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, তবুও, এগুলি এমন একটি ফল যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপযুক্ত নয়। পেঁপে আপনার দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে, আপনি যখন গর্ভবতী হন তখন তা ভাল না। এগুলি ছাড়াও ফলটি ল্যাটেক্স সমৃদ্ধ যা জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত এবং এমনকি গর্ভপাত ঘটাতে পারে। এটি ভ্রূণের বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করতে পারে তাই আপনি আপনার গর্ভাবস্থার সময়কালে পাকা ও কাঁচা পেঁপে খাওয়া বন্ধ করুন।

কলা – Banana

না কোলা খোয়া কিন্তু একদম খারাপ না কিন্তু জেনে নিতে হবে যে কেন, কি জন্য,কাদের কাদের জন্য এটা খারাপ ?গর্ভাবস্থায় এড়াতে হবে এমন ফলের এই তালিকাতে এই ফলটি অনেকেই খেয়ে থাকেন বা খান। যদিও গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়া নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এগুলি এড়ানো উচিত। যেসব মহিলারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন এবং ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের কলা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কলাতে চিটিনেস থাকে, একটি ল্যাটেক্স জাতীয় উপাদান যা একটি পরিচিত অ্যালার্জেন। এটি শরীরের উত্তাপ বাড়ায়। তাই চিটিনেসে অ্যালার্জিযুক্ত মহিলাদের কলা থেকে দূরে থাকা উচিত। এছাড়াও, কলাগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের উচিত কোনও মূল্যে কলা খাওয়া এড়ানো।

তরমুজ – Watermelon

তরমুজ মানব দেহের পক্ষে সাধারণত ভাল কারণ হাইড্রেশন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি তারা দেহ থেকে সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সক্ষম করে। তবে এটির খারাপ দিকও রয়েছে, কারণ আপনি যদি গর্ভাবস্থাকালীন তরমুজ খান তবে আপনি বাচ্চাকে বিভিন্ন ধরণের টক্সিনের সংস্পর্শে আনতে পারেন যা তরমুজটি থেকে বেরিয়ে আসে। এই ফলটি সাধারণত গর্ভবতী মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, তবে এটির কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব থাকতে পারে। যদি অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা হয় তবে এতে চিনিযুক্ত উপাদানগুলি আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।  এছাড়াও এটি হল ঠাণ্ডা প্ররোচিতকারী খাবার, এজন্যই আপনি গর্ভবতী হওয়ার সময় এটি না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাও যদি খেতে ইচ্ছে হয় তাহলে জাস্ট একবার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিয়ে তবেই খাবেন।

খেজুর – Dates

না ২,৪ টি করে খেজুর খাওয়া খারাপ না তবে খেজুর ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ, তবে গর্ভবতী মহিলাদের প্রায়শই খেজুর গ্রহণ এড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভাবস্থায় নিষিদ্ধ ফলের তালিকায় খেজুরকে রাখার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি হল এগুলি আপনার শরীরকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং আপনার জরায়ুর পেশীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে জরায়ুতে সংকোচনের কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন এক বা দুইটি খেজুর খাওয়ায় ঠিক থাকা উচিত, আর বেশি খেলে কিছু জটিলতা হতে পারে। তাই এটা খারাপ যদি আপনি বেশি খান। খুব বেশি হলে ৩ তে খেলতে পারেন।

 টমেটো – Tomato

যখন আপনি শিশু প্রত্যাশা করছেন, সর্বদা যে সমস্ত টিনজাত খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। এবং এর সংরক্ষণকারী উপাদানগুলি আপনার ও আপনার শিশু উভয়ের পক্ষেই বিষাক্ত এবং সেগুলি সেবন করায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কাঁচা ডিম ও দুধ

ছেলেদের তুলনায় কম হলেও এমন অনেক মেয়েরাও আছে যারা কাঁচা বা কম সিদ্ধ করা ডিম ও ফুটানো ছাড়া দুধ খায় বা হয়তো ভালোবসে কিন্তু একদম খাওয়া ঠিক না। এইগুলো থেকে জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার আশংকা থাকে। ডিম প্রোটিনের প্রধান উত্‍স। গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি ডিম রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কাঁচা ডিমে আছে সালমোনেলা নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার যা জ্বর,বমি বমি ভাব,ডায়রিয়া্র মত রোগের কারণ হতে পারে। ডিম ভালভাবে রান্না করে খেতে হবে যাতে ব্যাকটেরিয়ার ধবংস হয়ে যায়।

এলকোহল বা মদ 

খুব খতরনাক একটা জিনিস। এটি আপনার আনাগত সন্তানের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ব্রেইন,নার্ভ ইত্যাদি তৈরিতে বাধাঁ সৃষ্টি করে। শুধু মদ নয়, যে সকল খাবারে এলকোহল থাকে তা খাওয়া থেকে ও বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকায় তাজা খাদ্য রাখতে চেষ্টা করুন। রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষিত বা অতিরিক্ত গরম খাবার না খাওয়াই ভাল। গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভাসে যেকোনো খাবার গ্রহণ বা বর্জনের পূর্বে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নেওয়া ভাল।

গর্ভাবস্থায় কোন ফলগুলি নিরাপদ?

গর্ভবতী অবস্থায়, আপনি খেতে পারেন এমন কয়েকটি ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, ডালিম, নাশপাতি, আম, কমলালেবু, অ্যাভোকাডো এবং পেয়ারা। তবে আপনার যদি কোনও স্বাস্থ্যের সমস্যা থাকে তবে আপনার এগুলি সংযতভাবে গ্রাস করা উচিত। আরও ভাল বিকল্প হল যে কোনও খাবার শুরু করার আগে একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করা।

গর্ভাবস্থায় আপনার কত পরিমাণ ফল খাওয়া উচিত?

আপনি প্রতিদিন একটি পুষ্টিকর ফলের দুটি থেকে চারটি পরিবেশন গ্রহণ করতে পারেন। সাধারণত, ফলের একটি পরিবেশনে এক কাপ কাটা ফল বা গোটা ফলের মাঝারি টুকরা অন্তর্ভুক্ত থাকে। অনেক্ষন ধরে কেটে রাখা ফল খাবেন না। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।