এলাচ আমরা সবাই চিনি কি তাই তো ? রান্নায় খাবারের স্বাদ এর জন্য এর অনেক কেরামতি। কিন্তু আমরা এই এলাচ শুধুমাত্র রান্নায় স্বাদ আনার এক সৈনিক হিসাবে জানি বা ব্যবহার করে থাকি। আজ আমরা জন্য যে কি এমন গুন্ আছে যা আমাদের সত্যি অনেক উপকার করে।
বন্ধুরা এলাচ এমন একটি মশলা যা মোটামুটি সকলের রান্নাঘরেই উপস্থিত থাকে এবং নানারকমের খাদ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হল এই যে এলাচ শুধুমাত্র খাদ্যে বিশেষ সুগন্ধ ও স্বাদই বাড়ায় না, তার সাথে এলাচের উপকারিতা রয়েছে নানারকমের যা স্বাস্থ্যের জন্যে বেশ প্রয়োজনীয়। কিন্তু সাধারণত আমরা শুধুমাত্র এর স্বাদের জন্য খেয়ে থাকি বা রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। না বন্ধুরা শুধু তাই নয় এলাচের মধ্যে আছে এমন অনেক গুণাবলী যা আপনাকে তাজ্জব করে দেবে। আজ আমরা সেগুলোই আলোচনা করবো।
সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে এলাচ নানা নামে পরিচিত। এই বিশেষ মশলাটি সাধারণত ভারত, ভুটান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলিতে বেশি করে চাষ হয়। দেখতে ক্ষুদ্র এই মশলাকে তার বিশদ গুনাগুনের জন্য সমস্ত মশলার সেরা আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। এলাচ এর গুনাগুন ও এলাচের স্বাস্থ উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
সবুজ এলাচ- এই ধরণের এলাচ সব থেকে বেশী প্রচলিত ও আপেক্ষিকভাবে এই সবুজ এলাচই সকলের রান্নাঘরে উপস্থিত থাকে। ভারতবর্ষে এই সবুজ এলাচের চাষ হয়ে থাকে ও মালেশিয়ার মত দেশে এই এলাচ ভারত থেকে পাঠানো হয়। সবুজ এলাচ আপনি নানারকমের মিষ্টি অথবা নোনতা স্বাদের খাদ্যে ব্যবহার করতে পারেন। এর অসাধারণ সুগন্ধের জন্যে একে তরকারি অথবা বিভিন্ন দুগ্ধ জাতীয় খাদ্যেও ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় চা বা কফি বানানোর সময়ও এলাচের ব্যবহার করা হয় যার ফলে একটি বিশেষ ফ্লেভার পাওয়া যায়। মানুষের রোজকার জীবনে এলাচ হল একটি অতি প্রয়োজনীয় মশলা। আপনি নিশ্চই ‘গরম মশলা-র’ কথা শুনেছেন ও ব্যবহার করে থাকেন। গরম মশলা হল আসলে নানা রকমের মশলার মিশ্রনে তৈরী হওয়া একটি গুঁড়ো বা গোটা মশলা। এই গরম মশলার অন্যতম একটি মশলা হল এলাচ। আসুন দেখা যাক এলাচের নানা রকমের উপকারিতার ব্যাখ্যা।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এলাচের উপকারী গুণ সম্পর্কে
1. এলাচ এবং আদা সমগোত্রীয়। আদার মতোই পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এলাচ অনেক কার্যকরী। বুক জ্বালাপোড়া, বমি ভাব, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির হাত থেকে মুক্তি পেতে এলাচ মুখে দিন।
2. দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের জুড়ি নেই। এলাচের ডিউরেটিক উপাদান দেহের ক্ষতিকর টক্সিন পরিষ্কারে সহায়তা করে।
3. রক্তনালীতে রক্ত জমে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। এলাচের রক্ত পাতলা করার দারুণ গুনটি এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।
4. এলাচের ডিউরেটিক উপাদান উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম। দেহের বাড়তি ফ্লুইড দূর করে এলাচ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে।
5. মুখে খুব বেশি দুর্গন্ধ হয়? একটি এলাচ নিয়ে চুষতে থাকুন। এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
6. নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি মাড়ির ইনফেকশন, মুখের ফোঁড়া সহ দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
7. গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এলাচ দেহে ক্যান্সারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
8. এলাচের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকে বয়সের ছাপ, রিংকেল, ফ্রি র্যাহডিকেল ইত্যাদি পড়তে বাঁধা প্রদান করে। এলাচ ত্বকের ক্ষতি পূরণেও বেশ সহায়ক।

এলাচ এর গুণাগুণ ও এলাচের উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর একথা বলতে আর বাকি রাখেনা যে এই বিশেষ ধরণের গরম মশলাটি খাদ্য তালিকায় ও প্রতিদিনের জীবনে কতখানি প্রয়োজন। এর ফলে এলাচের দামও অন্যান্য মশলার তুলনায় অনেকটাই বেশি। এলাচ ব্যবহার করার কিছু বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এমনকি এলাচ খাওয়ার নিয়ম ও সঠিকভাবে মেনে চলা প্রয়োজন। এটি আপনি ডাল, তরকারি, মিষ্টি কোনো খাদ্যে বা অন্য যে কোনো পদে অনায়াসে ব্যবহার করতে পারেন। এলাচের খোসা ছাড়িয়ে শুধু এর বীজও যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনই খোসা সমেতও আপনি এটিকে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। এলাচ আপনি কোথায় কিভাবে ব্যবহার করতে পারবেন তা বিস্তারিতভাবে নিচে আলোচনা করা হল।
1. আমাদের দেশে আমিষ ও নিরামিষ যে কোনো রান্নায় এলাচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নানারকম ভারতীয় তরকারি বা সবজি রান্নার সময় এলাচ ফোড়ন দেওয়া হয়। রান্নার প্রয়োজন অনুযায়ী এটি গোটা অথবা গুঁড়ো হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
2. চা বা কফি বানানোর সময় এলাচ মেশালে তাতে দারুন সুগন্ধ ফুটে ওঠে। এতে মেজাজও বেশ ফুরফুরে থাকে।
3. পোলাও, কাবাব বা বিরিয়ানি বানানোর সময় এলাচ একটি অতি আবশ্যক মশলার মধ্যে পড়ে। এছাড়া, ক্ষির, পায়েস, মিষ্টি, হালুয়া, বা যেকোনো মিষ্টান্ন পদের জন্যে এলাচ দারুন একটি মশলা।
4. বাড়িতে আইস ক্রিম, পুডিং বা কাস্টার্ড বানানোর সময় এলাচ যোগ করতে ভুলবেন না।
5. মাংস রান্না করার আগে সেটিকে এলাচ, মধু ও লবঙ্গ দিয়ে মাখিয়ে রাখলে তার একটি বিশেষ স্বাদ ফুটে ওঠে।
6. সুস্বাদু ফলের স্যালাডে এলাচ যোগ করলে স্বাদ ও পুষ্টি দুইই বাড়ে। এতে এলাচ ছাড়া প্রয়োজন কমলা লেবু, আঙ্গুর, ও পাতিলেবুর রস।
7. এলাচের সাহায্যে আপনি লেবু সংরক্ষণ করতে পারেন। লেবু টুকরো টুকরো করে কেটে তাতে একটু নুন, এলাচ গুঁড়ো ও তেজ পাতা মাখিয়ে একটি বয়ামে রেখে দিন। প্রতিদিন একবার করে এই বয়ামটি ভালো করে ঝাকিয়ে রেখে দেবেন। এভাবে আপনি ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত লেবু টাটকা অবস্থায় রাখতে পারবেন।
8. লস্যি, দুধ বা দই-এর মধ্যে এলাচের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে বিশেষভাবে এলাচের স্বাস্থ উপকারিতা পাওয়া যায়।
এলাচ সংরক্ষনের সঠিক পদ্ধতি
এলাচ সংরক্ষণ করারও কিছু বিশেষ পদ্ধতি আছে। রান্নাঘরে কিভাবে এলাচ রাখলে তার পুষ্টিগুণ ও গন্ধ বজায় থাকে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
এলাচ কখনওই খোসা ছাড়িয়ে রাখবেন না কারণ খোসার ভেতরে থাকলেই এর আসল সুগন্ধ বজায় থাকে। একবার খোসা ছাড়ালেই এর সুগন্ধ আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করে। তাই একমাত্র রান্নায় ব্যবহার করার মুহূর্তেই প্রয়োজনে খোসা ছাড়ান।
বায়ু নিরোধক মুখ বন্ধ কোনো পাত্র যেখানে কোনো জল বা সূর্যের আলো প্রবেশ করে না, সেখানে এলাচ রাখলে আপনি প্রায় এক বছর তা টাটকা অবস্থায় পাবেন।
কাঠের ছোট পাত্রে এলাচ রাখলে তার সবুজ রং দীর্ঘদিন বজায় থাকে। তবে যেই পাত্রেই রাখুন না কেন, তা যেন কোনোভাবেই ভেজা বা আর্দ্র না হয়।
পোকামাকড় বা কোনো বিষাক্ত কীটনাশকের আশেপাশে এলাচের কৌটো রাখা উচিত নয়।
কোনো কড়া গন্ধের সাবান, রঙ, বা পারফিউমের পাশেও এলাচ রাখা ঠিক নয়। এতে এলাচের সুগন্ধে প্রভাব পড়ে।