আদার উপকারিতা – Benefits Of Ginger In Bengali

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে বা আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। বন্ধুরা আমরা আদার ব্যাপারে বা আদার সমন্ধে সবাই জানি কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে আদার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম। আমরা আজকে সেই আমাদের আদি পরিচিত ও বেশির ভাগ বা বলাই যেতে পারে প্রতিটি রান্নার অন্যতম সঙ্গী আদার আমি আদার উপকারিতা জানবো।

আপনার জানেন আদা বমিরোধী। কিন্তু এটাই আদার একমাত্র পাকস্থলীজাত উপকারিতা নয়। আদা আপনার হজম শক্তি বাড়াবে এবং আপনাকে কষ্টকর এবং অস্বস্তিদায়ক পেট ফাঁপা থেকে রক্ষা করবে। বায়ুনাশক ঔষধি উপাদান হিসেবে আদা পাচক রস এবং হজম প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা বাড়ায়।

একঝলকে দেখে নেওয়া যাক hide

আদা কি কি উপকার – আদার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আদাতে রয়েছে বেশিরভাগ ঠাণ্ডা-সর্দিজনিত রোগের পেছনে দায়ী রাইনো ভাইরাস দমনের শক্তিশালি রাসায়নিক উপাদান। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যাথা-নাশক এবং জর প্রতিরোধী হিসেবেও কাজ করে।

আর্থ্রাইটিসের ব্যাথা দূর করে

আদা শরীরের জোড়াগুলোতে সৃষ্ট ব্যাথা এবং আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের প্রদাহ দূর করে। কারণ আদাতে রয়েছে জিঞ্জারোল নামের একটি উপাদান। যা প্রদাহরোধী উপাদান। এটি প্রদাহজনক সাইটোকিন গঠন প্রক্রিয়াকে দমন করে। আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউম্যাটোলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটুর অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো ব্যাপকহারে কমিয়ে আনে আদার নির্যাস।

মাংসপেশির ব্যাথা লাঘব করে

জিমে যাওয়ার আগে আদা খান। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা একটি প্রাকৃতিক ব্যাথা উপশমকারী এবং প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভারী ব্যায়াম করার পর মাংসপেশিতে যে ব্যাথা সৃষ্টি হয় তা দূর করে আদা। জার্নাল অফ পেইনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ২ গ্রাম আদা খান তারা ব্যায়াম করার ২৪ ঘন্টা পর মাংসপেশিতে অনেক কম ব্যাথা অনুভব করেন। দৌড়বিদ সহ অন্যান্য ক্রীড়াবিদরাও আদা থেকে উপকৃত হতে পারেন। প্রদাহ এবং মাংসপেশির ব্যাথায় ট্যাবলেটের চেয়েও বেশি কার্যকর আদা।

পেটফাঁপা দূর করে

আপনার জানেন আদা বমিরোধী। কিন্তু এটাই আদার একমাত্র পাকস্থলীজাত উপকারিতা নয়। আদা আপনার হজম শক্তি বাড়াবে এবং আপনাকে কষ্টকর এবং অস্বস্তিদায়ক পেট ফাঁপা থেকে রক্ষা করবে। বায়ুনাশক ঔষধি উপাদান হিসেবে আদা পাচক রস এবং হজম প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা বাড়ায়। পাশাপাশি এতে রয়েছে জিনজিয়াবিন এনজাইম যা প্রোটিন ভাঙ্গতে সহায়ক।

নারীদের ঋতুস্রাবকালীন ব্যাথা লাঘব করে

আদার সবচেয়ে বিস্ময়কর উপকারিতা হলো এটি নারীদের ঋতুস্রাবকালীন ব্যাথা লাঘব করে। জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঋতুস্রাবকালীন ব্যাথা উপশমের ক্ষেত্রে আদা ইবুপ্রোফেন ওষুধের মতোই কার্যকর।

মাইগ্রেনের ব্যাথাও দূর করে

মাইগ্রেনের ব্যাথা সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাথা। আদার রয়েছে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সংশ্লেষণ দমনের ক্ষমতা। যা রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে স্ফীত হওয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইগ্রেনের ব্যাথার চিকিৎসায় আদা ওষুধের মতোই কার্যকর। আর কি চাই? এছাড়া আদা বমির উদ্রেককারী পাকস্থলির মোচড়ানোও দূর করে। যা থেকে অনেক সময় মাইগ্রেনের ব্যথার উৎপত্তি হয়।

শ্বেতী রোগ কমাতে

শ্বেতী রোগ নিয়ে আমাদের অনেক বাছ-বিচার আছে। এই রোগ হলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, তা অনেকসময় সামাজিক অসম্মানের কারণও হয়ে থাকে। কিন্তু জানেন কি কাঁচা আদা খুব সুন্দরভাবে এই শ্বেতীকে কমিয়ে আনতে পারে।

স্মৃতি শক্তির সংরক্ষণ করে

আদা আপনার মস্তিষ্ককে আলঝেইমার থেকে রক্ষা করবে। এই স্নায়ুক্ষয়ী রোগটি সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে অপ্রয়োজনীয় অ্যামিলয়েড প্রোটিন জমা হওয়ার মাধ্যমে। পরীক্ষাগারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদা এই স্নায়ুক্ষয়ী প্রোটিন থেকে আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রতিরক্ষা দিতে সক্ষম। এবং এভাবে আলঝেইমার রোগও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তবে মানুষের ওপর এ ব্যাপারে এখনো কোনো গবেষণা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়নি। তবে আদাকে মস্তিষ্কের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকাভুক্ত করাটাই শ্রেয়।

বয়সের ছাপ হতে দেয় না

এখন আমাদের কাজের চাপ, চিন্তা, ব্যস্ততা এইসবের জন্য অল্পবয়সেই মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে থাকে। অনেক কিছু মেখে হয়তো বাইরে থেকে সাময়িক ফল পেতে পারেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান কিছু হবে না। এক্ষেত্রে আপনি কাঁচা আদা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান টক্সিন বের করে দেয়। মুখে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ায়।

চুলের জন্য

ত্বকের জন্য যে আদা খুবই ভালো সেটা তো জানলেনই। এবার চুলের জন্যও যে কাঁচা আদা খুবই জরুরী তা দেখে নিন। তবে এক্ষেত্রে লাগাতে পারলে বেশী উপকার পাওয়া যাবে।

খুশকি কমাতে সাহায্য করে

খুশকি নিয়ে অনেক আর্টিকেলই তো পড়েছেন আমাদেরই সাইটে। আজ জেনে নিন আদা কীভাবে খুশকি দূর করতে পারে।৪ চামচ আদার রস, ২ চামচ পাতিলেবুর রস। এই দুটো উপকরণ মিশিয়ে চুলে থুপে থুপে লাগান তুলো দিয়ে। রাখুন ৩০ মিনিট মতো। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলে আজ থেকেই আদা জল খেয়ে আদা ত্বক আর চুলের যত্নে ব্যবহার শুরু করুন। দেখবেন হতাশ হবেন না। আর আমাদের জানাবেন কিন্তু।

আদা বেশি খেলে কি হয় – আদা খেলে কি ক্ষতি হয় 

আমরা জানি যে কোনো জিনিসই অতিরিক্ত ভালো নয়। সব কিছুতেই যেমন উপকার আছে আবার বেশি হলে অপকারও আছে। তাই আদরও এমন অনেক কিছু আছে যা আপনাদের জানা উচিত যে কাদের জন্য আদা খাওয়াই উচিত না

যাদের ব্লিডিং ডিসঅর্ডার বা হেমোফিলিয়া আছে

আদা রক্ত সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে রক্তের প্রবাহকে বৃদ্ধি করে রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে যার ফলে রক্তপাতের গতি বাড়িয়ে দিতে পারে বিশেষ করে রক্ত জমাট বাঁধাকে ধীর গতি করার ঔষধের সাথে মিশে গিয়ে হলেও।

পিত্তথলিতে পাথর আছে যাদের

আদা পিত্তথলিতে অবস্থিত বাইল সল্টের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে।সুতরাং যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা একদমই আদা খাবেন না।

যাদের জ্বালাপোড়া/ঘা রয়েছে

যাদের খাদ্যনালীর নিম্নাংশে ব্লক, ঘা বা কোন ধরনের জ্বালা পোড়া রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশী পরিমান টাটকা আদা খেলে খারাপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে এমনকি খাদ্য নালীর নিম্নাংশে বাধারও সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভবতী নারীদের জন্য

আদার রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্টের জন্য গর্ভবতী নারীদের এটা না খাওয়াই ভালো।এটা জরায়ু সঙ্কোচন করে এবং সেই সাথে আয়রন ও পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো শোষনে বাধা দেয়। বেশি পরিমান আদা মিসক্যারেজের সম্ভাবনাও থাকে। তবে যদি খেতেই হয় তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ডায়টারী সাপ্লিমেন্ট ক্যাপসুল/ট্যাবলেট হিসেবে আদা গ্রহন করতে পারেন।বিশেষ করে গর্ভবস্থার শেষ সপ্তাহে কোন ভাবেই খাওয়া উচিত না।

ডায়াবেটিস / উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে

যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত আদা চা খেলে এটা এর বিভিন্ন ঔষধের সাথে মিশে রক্তচাপ ও রক্তের সুগার কমাতে সাহায্য করে কিন্তু অবশ্যই যারা অ্যাসপিরিন ও ওয়ারফিন জাতীয় রক্ত সংকোচন ও তরলীকরনের জন্য ঔষধ খান তাদের জন্য খাওয়া ঠিক না কারন তাতে উল্টো ফল হতে পারে।

অপারেশনের আগে

২০০৭ সালে “Der Anaesthetist” নামক একটি আর্টিকেলে প্রকাশিত হয় যে অপারেশনের আগে আদা খেলে বেশী রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। সুতরাং যেকোনো ধরনের অপারেশনের কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে থেকে আদা না খাওয়াই ভালো।

সম্ভাব্য ভেষজ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার জন্য

যখন কিছু ভেষজ উপাদান যেমন হলুদ, রসুন,লবঙ্গ,গিংকো,জিনসেং,বিলবা ইত্যাদি রক্ত জমাট বাধাকে ধীর ও সঙ্কুচিত করে তখন সেগুলোর সাথে যদি আদা মিশে তাহলে এর গুনাগুন বেড়ে যায় এবং রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আদার এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো যায় যদি আদার সাপ্লিমেণ্ট ট্যাবলেট খাওয়া যায়, যা দেহে হজমের গতিকে ধীর করে রাখে পরিপাকতন্ত্রে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। কিন্তু আদার সাপ্লিমেণ্ট ট্যাবলেট আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। তবে যাই হোক আদা যদি কম পরিমানে খাওয়া হয় বা Food & Drug Administration (FDA)কর্তৃক স্বীকৃত পরিমানে গ্রহন করা হয় তাহলে এর তেমন কোন খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।