থাইরয়েডের চিকিৎসা – Thyroid Treatment In Bengali

এই রোগটা সমন্ধে লিখছি কারণ আমরা অনেক সময় এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হই যে বুঝতে পারিনা যে সমস্যা টা কেন হচ্ছে। ভালো মত টেস্ট করে জানা যায় যে এটা আসলে থাইরয়েড এর সমস্যা। তাই থাইরয়েড এর সমস্যার লক্ষন গুলো আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই, যাতে আপনারা নিজের সাথে মিলিয়ে নিতে পারেন।

থাইরয়েড বলতে কী বোঝায়?

থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের গলার কাছে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে অনেকগুলো হরমোন উৎপন্ন হয়, যাদের বলা হয় থাইরয়েড হরমোন। এই হরমোন আমাদের শরীরের মেটাবলিক হার ও প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে থাকে। এই হরমোন নিঃসরণের ভারসাম্যহীনতার প্রভাব মানুষের দৈহিক স্বাস্থ্য এমনকী তার মানসিক ও অনুভূতিগত স্বাস্থ্যের উপরেও পড়ে।

একটু বিস্তারিত ভাবে জানতে গেলে থাইরয়েড হল আমাদের গলায় অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রন্থি। এই গ্রন্থি থাইরয়েড হরমোন তৈরীর জন্য দায়ী। প্রথমে ব্রেনের হাইপোথালামাস থেকে TRH নামে একটি হরমোন তৈরী হয়। TRH তারপর পিটুইটারি নামের অন্য একটি গ্রন্থি কে উদ্দিপীত করলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে TSH নামে একটি হরমোন তৈরী হয়। এই হরমোন আবার থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করলে, খাবার থেকে প্রাপ্ত আয়োডিন কে ব্যবহার করে থাইরয়েড হরমোন তৈরী হয়। থাইরয়েড হরমোন দুই প্রকার-T3(০.১%) এবং T4(৯৯.৯%), এই হরমোন দুটি আমাদের শরীরের অনেক গুরত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পাদনে ভূমিকা রাখে। হাইপোথালামাস, পিটুইটারি ও থাইরয়েড গ্রন্থি এই তিনটার যে কোন একটাতে সমস্যা থাকলেই, শরীরে থাইরয়েড হরমোন এর পরিমাণে বেশকম হয়ে যাবে। তাছাড়া আয়োডিন এর অভাব হলেও, থাইরয়েড হরমোনের পরিমান কমে যাবে। যদি শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে যায় তবে তাকে বলে “হাইপোথাইরয়েডিসম” আর যদি বেড়ে যায়, তাকে বলে “হাইপারথাইরয়েডিসম”।

থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলো হল —–

১. হাইপোথাইরয়েডিজম বা অপর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ। ভারতীয় পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েডের সমস্যার মধ্যে এটা প্রায়শই দেখা দেয়।

২. হাইপারথাইরয়েডিজম বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণ থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ।

৩. থাইরয়েড ক্যানসার

৪. গয়টার বা গলগন্ড (থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া)।

এগুলোর মধ্যে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণের ভারসাম্যহীনতাজনিত সমস্যা (হাইপারথাইরয়েডিজম এবং হাইপোথাইপোথাইরয়েডিজম) অধিকাংশ সময়ে বিশেষত মহিলাদের মধ্যেই দেখা দেয়।

থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে মানুষ মানসিক দিক থেকে খুব বিষণ্ণ থাকে। এর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা যেমন- অবসাদ ও উদ্বেগের মিল রয়েছে। তাই যেকোনও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা নির্ধারণের সময়ে প্রথমে থাইরয়েডের সমস্যার বিষয়ে জেনে নেওয়া জরুরি।

থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা

গত শতকের আশির দশকেও থাইরয়েডের চিকিৎসায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সার্বজনীন ছিল না। চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও পুরনো কয়েকটি টেস্টের মাধ্যমেই থাইরয়েডের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হতো।

এতে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বিলম্বিত ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকতো। আধুনিক পদ্ধতিতে থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন নির্ণয়ের প্রচলন ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। থাইরয়েডের রোগের ধরনও তখন ভিন্ন ছিল। আয়োডিনের অভাবজনিত থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ গলগ- ও এর জটিলতার সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, এই গ্রন্থির অন্যান্য রোগ; যেমন গ্রেভস ডিজিস, হাশিমোটো ডিজিস, হাইপো ও হাইপার থাইরয়েড রোগসমূহ, থাইরয়েডের ক্যান্সার জাতীয় রোগ ইত্যাদীর আনুপাতিক হার তুলনামূলকভাবে কম মনে হতো। বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায় যে, ঐ সময়ে আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে আয়োডিনের অভাবজনিত গলগ- রোগের প্রকোপ ছিল প্রায় শতকরা ৩৫ জনের কাছাকাছি। এসব রোগের সঠিক পরিসংখ্যাণ বিজ্ঞানসম্মত জার্নালে প্রকাশিত ছিল না বলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দেশের পরিসংখ্যান ছিল অনেকটাই অনুমান নির্ভর। জন বি স্টানবারী নামক এক বিশেষজ্ঞ আয়োডিনজনিত রোগ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ১৯৮১ সালেও বাংলাদেশে থাইরয়েড রোগের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান বা রিপোর্ট না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

1. থাইরয়েডের সমস্যা নির্ধারণের জন্য ব্লাড টেস্ট করান।

2. হাইপোথাইরয়ডিজমের চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা হয়। হাইপারথাইরয়ডিজমের চিকিৎসায় ওষুধ দেয়া হয়। ওষুধে কাজ না করলে সার্জারি বা রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন থেরাপির কথা ভাবা হয়।

হাইপোথাইরয়ডিজমে যে লক্ষনগুলো দেখা দেয়

অবসাদগ্রস্থ হওয়া, সাথে অলসতা, ঘুম, ঘুম ভাব।

ত্বক খসখসে হয়ে যায়।

পা অল্প ফুলে যায়।

ক্ষুধা মন্দা শুরু হয়।

 চুল পড়তে শুরু করে।

 ওজন অল্প বেড়ে যায়, ৫-৬ কিলো বেড়ে যেতে পারে।

স্মৃতিশক্তি কমে যায়।

মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়।

ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে।

বন্ধ্যাত্বর সমস্যা হতে পারে।

গর্ভধারণকালে গর্ভপাত হতে পারে।

 কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজমে শিশুর ব্রেনের বিকাশ হয়না।

শীত শীত ভাব দেখা যায়।

পিরিয়ডের সমস্যা হতে পারে।

3.গয়টারের সমস্যা হলে ফোলা অংশ মেলিগনেন্ট কি না তা নির্ণয় করা হয়। FNAC টেস্ট করা হয়। মেলিগনেন্ট নির্ধারিত হলে ও শুরুর দিকে ধরা পড়লে রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন পদ্ধতির মাধ্যমে থাইরয়েড ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।

4. আয়োডিনের অভাব জনিত কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হলে আয়োডাইজড সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সমস্যার মোকাবিলা- নিজের যত্ন নেওয়া

থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এমন এক দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন এবং যথাযথ চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবহার। যদিও এই চিকিৎসা মানুষের মানসিক অসুস্থতা দূর করতে সাহায্য করলেও, চিকিৎসার পরেও তার মানসিক বিষণ্ণতা বজায় থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে তার করণীয় হল-

1.নিজের মেজাজ-মর্জির বদল সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে কথাবার্তা বলা

2.এবিষয়ে বিশ্বাসভাজন কারও সঙ্গে কথা বলা

3.শারীরিক কসরত বা যোগব্যায়াম করা

4.নিজের সহযোগী দলে যোগদান করা

5.একজন মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া