নরেন্দ্র মোদী শিল্পোদ্যোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে উদার দৃষ্টিভঙ্গি

আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ভারতে শিল্পোদ্যোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে রয়েছে অফুরন্ত শক্তি ও উৎসাহ। এই বিষয় দুটিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর এইভাবেই আমাদের জাতি হয়ে উঠবে কর্মপ্রার্থী নয়, কর্মদাতা। – নরেন্দ্র মোদী

শিল্পোদ্যোগ কি

শিল্পোদ্যোগের বিষয়টিকে উৎসাহিত করতে এনডিএ সরকার বিশেষভাবে সচেষ্ট। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিটি গড়ে উঠেছে চারটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে। শুধুমাত্র নির্মাণ বা উৎপাদন ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহ যোগানো এই কর্মসূচিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

নতুন প্রক্রিয়া

শিল্পোদ্যোগ সংক্রান্ত কাজকর্মে উৎসাহযোগানোর লক্ষ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক কাজকর্ম সহজতর করে তোলার ওপর।

নতুন পরিকাঠামো

দেশের বিকাশ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক এবং সহায়ক পরিকাঠামো গড়ে তোলা একান্ত জরুরি। পরিকাঠামোভিত্তিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব করে তুলতে সরকার শিল্প করিডর এবং স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে আগ্রহী। এই লক্ষ্যে উচ্চ গতিসম্পন্নআধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সংহত ও সার্বিক এক পদ্ধতি অনুসরণের মধ্য দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে।

নতুন নতুন ক্ষেত্র

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির আওতায় নির্মাণ ও উৎপাদন, পরিকাঠামো এবং পরিষেবা সংক্রান্ত কর্মপ্রচেষ্টার ক্ষেত্রে ২৫টি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ ও অংশীদারদের মধ্যে এ সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়ের সুযোগও সম্প্রসারিত হয়েছে।

নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

সরকারকে শিল্পের নিয়ন্ত্রক হিসেবে এতদিন ভাবা হত। কিন্তু ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি এই ধারণায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এখানে সরকার শিল্পের নিয়ন্ত্রক মাত্র নয়, শিল্প-বান্ধবও বটে। তাই, সরকার তার কর্মপ্রচেষ্টাকে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে আগ্রহী নয়, বরং, সরকারের ভূমিকা এখানে শিল্পের উপযোগী সুযোগ-সুবিধার নিয়ামক হিসাবে।

শিল্পোদ্যোগকে তিনটি উপায়ে উৎসাহদানের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এই তিনটি কৌশলসূত্র হল নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজকর্ম চালু রাখা, মূলধনের সুযোগ সম্প্রসারণ এবং বরাত দেওয়ার ব্যবস্থাকে দ্রুত বাস্তবায়িত করা।

নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে কাজকর্ম চালু রাখা

বাণিজ্যিক কাজকর্মকে সহজতর করে তোলার কাজে ভারত যে দ্রুত সাফল্য অর্জন করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় তা প্রমাণিত। বাণিজ্যিক উদ্যোগ সহজতর করে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের স্থান এখন ১৩০-এ। নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করার বিষয়টি এখন আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। অনাবশ্যক বাধ্যবাধকতার যাবতীয় খুঁটিনাটি বাতিল করে এখন অনলাইন প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় অনুমতি বা অনুমোদনলাভের বিষয়টি সম্ভব করে তোলা হয়েছে।

শিল্প লাইসেন্স এবং শিল্পোদ্যোগ সংক্রান্ত স্মারকপত্রলাভের বিষয়টি এখন অনলাইনেই সম্পন্ন হচ্ছে। শিল্পোদ্যোগীরা সপ্তাহে সাতদিন, ২৪ ঘন্টাই অনলাইনের এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। ২০টির মতো পরিষেবাকে একত্রিত করে একটি সিঙ্গল উইন্ডো পোর্টালের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলি থেকে ছাড়পত্র লাভের জন্য ঐ সিঙ্গল উইন্ডো পোর্টালটিতেই যাবতীয় কাজকর্ম সেরে ফেলা যাবে।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক গোষ্ঠী এবং কেপিএমজি-র সাহায্য ও সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলির বাণিজ্যিক সংস্কার রূপায়ণ সম্পর্কিতকাজকর্মেরমান নিরূপণ করেছে। এই র‍্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় একটি রাজ্য অন্যটির কাছ থেকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারবে। আর এইভাবেই সারা দেশে দ্রুত বাণিজ্যিক কাজকর্মের উপযোগীউন্নত পরিবেশ গড়ে উঠবে। ভারতে বিনিয়োগের প্রসারে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ সম্পর্কিত নিয়ম-নীতিকে আরও উদার করে তুলেছে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার।

মূলধন কি,কাকে বলে ?

কর্পোরেট বহির্ভুত ৫ কোটি ৮০ লক্ষ সংস্থা ভারতে ১২ কোটি ৮০ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কর্মসংস্থানের ৬০ শতাংশই প্রসারিত হয়েছে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে। এর মধ্যে আবার ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করেছে অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ এবং ১৫ শতাংশ সুযোগ পেয়েছে তপশিলি জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়। কিন্তু এই শিল্প সংস্থাগুলির অধিকাংশই ব্যাঙ্ক ঋণের সুযোগ থেকে ছিল বঞ্চিত। অন্যভাবে বলতে গেলে, কর্মসংস্থানমুখী ভারতীয় অর্থনীতির এই ক্ষেত্রটিতে ঋণের সুযোগ সম্প্রসারণের হার ছিল খুবই নগণ্য। এই অবস্থা ও পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা এবং মুদ্রা ব্যাঙ্ক নামে দুটি কর্মসূচি চালু করে কেন্দ্রীয় সরকার।

ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীরা যাতে কোনরকম হয়রানি ছাড়াই সুবিধাজনক শর্তে ঋণের সুযোগ লাভ করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই এই দুটি কর্মসূচি চালু হয়েছে। এযাবৎ শিল্পোদ্যোগীদের অস্বাভাবিক হারে ঋণের ওপর সুদ গুনতে হত। এই কর্মসূচি চালু হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই ১ কোটি ১৮ লক্ষ ঋণ আবেদনের ক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যার মোট পরিমাণ প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ৫০ হাজার টাকার কম পরিমাণ অর্থ ঋণ সাহায্য হিসেবে পেয়েছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা গত বছরের সমতুল সময়কালের তুলনায় ২০১৫-র এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর – এই সময়কালে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৫৫ শতাংশ।