থাইরয়েডের রোগীদের যা কখনোই করা উচিত নয়

আমাদের শরীরের একটি গ্রন্থির নাম থাইরয়েড। এটি থাকে আমাদের গলার স্বরযন্ত্রের দুই পাশে। দেখতে প্রজাপতির ডানার মত। আর এর রঙ বাদামী। এই গ্রন্থির কাজ হলো আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমন উৎপাদন করা। যদি কোন কারনে এই গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণে কোন প্রকার বাতিক্রম হয় তখন তাকে থাইরয়েড রোগ বলে।

পুরুষের চেয়ে নারীরাই থাইরয়েডের সমস্যায় ভোগেন বেশি। থাইরয়েডের সাধারণ সমস্যাগুলো হচ্ছে – হাইপারথাইরয়ডিজম, হাইপোথাইরয়ডিজম, থাইরয়ডিটিস, থাইরয়েড নডিউল ইত্যাদি। বেশীরভাগ থাইরয়েডের সমস্যাই সারা জীবন থাকে। তবে এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর সে জন্য কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। চলুন জেনে নেই সে কাজগুলো সম্পর্কে।

 ধূমপান

থাইরয়েডের রোগীদের জন্য ধূমপান করা এবং পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শ ক্ষতিকর। সিগারেটের ধোঁয়ায় সায়ানাইড থাকে যা অ্যান্টিথাইরয়েড এজেন্ট রূপে কাজ করে। এই যৌগটি সরাসরি আয়োডিন গ্রহণ এবং হরমোনের সংশ্লেষণে বাধা দেয়। এছাড়াও ধোঁয়ার অন্যান্য উপাদানও থাইরয়েডের কাজের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্তদের টোব্যাকো থেকে দূরে থাকা উচিত থাইরয়েডের লক্ষণের বৃদ্ধি প্রতিরোধের জন্য।

স্ট্রেস

থাইরয়েডের রোগীদের জন্য স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরী। বস্তুত অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে থাইরয়েডের সমস্যা বৃদ্ধি বা প্রকাশিত হতে পারে। স্ট্রেসে ভুগলে শরীরে কর্টিসল হরমোন নিঃসৃত হয় যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে হস্তক্ষেপ করে।

সকালে কফির সাথে থাইরক্সিন ট্যাবলেট গ্রহণ করা

থাইরক্সিন ট্যাবলেট সকালে খালি পেটে গ্রহণ করলে ভালোভাবে শোষিত হয়। সকালের টিফিন খাবার ৩০-৬০ মিনিট আগে থাইরক্সিন ট্যাবলেট সেবন করুন। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর ২-৩ ঘন্টা আগে গ্রহণ করতে পারেন এই ঔষধ। মনে রাখবেন ফাইবারযুক্ত ও দুধের তৈরি খাবারের সাথে, প্রোবায়োটিকের সাথে, ক্যালসিয়াম ফরটিফায়েড ফ্রুট জুস, ক্যালসিয়াম, আয়রন বা অন্য কোন খনিজের সাপ্লিমেন্ট এবং কফির মত পানীয়ের সাথে থাইরেডের ঔষধ গ্রহণ করা ঠিক নয়। সবচেয়ে ভালো উপায়টি হচ্ছে ১ গ্লাস জলের সাথে এই ঔষধ গ্রহণ করা। একটি নির্দিষ্ট সময়ে বা চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই ঔষধ গ্রহণ করা উচিত।

ঔষধ গ্রহণে অবহেলা এবং নিয়মিত চেকআপ না করা

থাইরয়েডের সমস্যা নিরাময়ের জন্য নিয়মিত ঔষধ সেবন করা জরুরী। ভালো অনুভব করলেও নিজে নিজে ঔষধ গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়া ঠিক নয়। নিজে নিজে ভুল মাত্রার ঔষধ গ্রহণ করাও থাইরয়েডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) ব্লাড টেস্ট নামক রক্ত পরীক্ষাটি বছরে ১/২ বার করানো উচিত।

 সয়া খাদ্য

যদি আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকে তাহলে ক্রুসিফেরি পরিবারের সবজির মত সয়া খাদ্য খাওয়ার বিষয়েও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সয়া পণ্যে ফাইটোইস্ট্রোজেন এবং গয়ট্রোজেনিক উপাদান থাকে যা থাইরয়েডের কাজে এবং থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের শোষণে হস্তক্ষেপ করে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা আছে যাদের তাদের সয়া সাপ্লিমেন্ট, জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড সয়া খাদ্য, সয়া চিজ, সয়াবিন তেল, সয়া আইসক্রিম এবং সয়া বার্গার খাওয়া উচিত নয়।

কাঁচা ক্রুসিফেরি সবজি খাওয়া

অতিরিক্ত কাঁচা ক্রুসিফেরি সবজি খাওয়া থাইরয়েডের রোগীদের জন্য খারাপ, বিশেষ করে যাদের আয়োডিনের ঘাটতি আছে তাদের ক্ষেত্রে। এ ধরণের সবজিগুলোতে গ্লুকোসায়ানোলেডস নামক যৌগ থাকে যা থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষণে হস্তক্ষেপ করে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, পালংশাক, এবং মিষ্টি আলু এ ধরণের কয়েকটি সবজি যা কাঁচা খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরী থাইরয়েডের রোগীদের।

 অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট

চর্বিযুক্ত রেড মিট, প্রোসেসড ফুড, দুধ এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে দিন। মাছ, ফল, সবজি, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া শুরু করুন। ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় রাখুন।

দুধ

থাইর‍য়েডের সমস্যা থাকলে দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে স্কিমড দুধ খাওয়া যেতে পারে। এটি স্বাস্থ্যকর এবং সহজে হজম হয়ে যায়। ফুল ফ্যাট দুধের সাথে সাথে দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ, আইসক্রিম, দই ইত্যাদি খাবার খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত।

চিনিযুক্ত খাবার

হাইপোথাইরয়েডিজম শরীরের মেটাবলিজমকে স্লো করে দিয়ে থাকে। তাই এইসময় দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়। এইসময় খাবার গ্রহণে একটু বেশি সচেতন হতে হয়। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে চিনিযুক্ত সকল খাবার খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিন।

সমৃদ্ধ শস্য

সমৃদ্ধ ময়দা অথবা ময়দা জাতীয় খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। এতে উচ্চ গ্লাইসেমিক উপাদান আছে যা রক্তে হরমোনের স্তর বৃদ্ধি করে থাকে। থাইরয়েড সমস্যায় লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।