বন্ধুরা কেমন আছো তোমরা, আশা করি সবাই ভালোই আছো। বন্ধুরা আজকে আমরা এমন একটা জিনিস নিয়ে আলোচনা করবো যেটা আমাদের সবার বেঁচে থাকার বা শান্তিতে বেঁচে থাকার একটা জিনিস আর সেটা হল সুস্থতা আর সাস্থ নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার (পিএমএসএসওয়াই) লক্ষ্য হল সাধারণ ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধ্যায়ত্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অসমতা দূর করা এবং বিশেষ করে পরিষেবা-বঞ্চিত রাজ্যগুলিতে উন্নত মানের মেডিক্যাল এডুকেশনের সুযোগসুবিধা তৈরি করা। এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০০৬ সালে।
বাস্তবায়নের প্রথম দফা
পিএমএসএসওয়াই-এর দু’টি মূল উপাদান ছিল – এইমসের ধাঁচে ৬ প্রতিষ্ঠান তৈরি করা এবং ১৩টি চালু সরকারি মেডিক্যাল কলেজের উন্নয়ন।
সিদ্ধান্ত হয় এইমসের মতো ৬ প্রতিষ্ঠান বিহার (পাটনা), ছত্তিসগড় (রায়পুর), মধ্যপ্রদেশ (ভূপাল), ওড়িশা (ভুবনেশ্বর), রাজস্থান (যোধপুর) এবং উত্তরাঞ্চল (হৃশিকেশ) গড়ে তোলা হবে। এর জন্য প্রতিটা প্রতিষ্ঠান বাবদ ব্যয় হবে ৮৪০ কোটি টাকা। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচক যেমন, মানব উন্নয়ন সূচক, সাক্ষরতার হার, দারিদ্র্যসীমার নীচে জনসংখ্যা ও মাথাপিছু আয় এবং স্বাস্থ্য সূচক যেমন জনসংখ্যার অনুপাতে শয্যাসংখ্যা, শিশুর মৃত্যুর হার, সংক্রামক রোগের হার ইত্যাদি যাচাই করে এই রাজ্যগুলিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে থাকবে ৯৬০ শয্যার হাসপাতাল (৫০০ শয্যা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ৩০০ শয্যা স্পেশালিটি/সুপার স্পেশালিটি, ১০০ শয্যা আইসিইউ/অ্যাক্সিডেন্ট ট্রমা, ৩০ শয্যা ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং পুনর্বাসন এবং ৩০ শয্যা আয়ুশের জন্য) এবং এর লক্ষ্য হল ৪২ বিভাগে স্পেশালিটি/সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা দেওয়া। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার নিয়ন মেনে স্নাতক কোর্সে ১০০ জনের ভর্তির সুবিধা সহ বিভিন্ন বিভাগে স্নাতকোত্তর এবং ডক্টোরাল কোর্স করার ব্যবস্থা থাকবে। পাশপাশি নার্সিং কাউন্সিলের নিয়ম মেনে নার্সিং কলেজও থাকবে।
১০ রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা এখনকার ১৩টি মেডিক্যাল কলেজের মানোন্নয়ন ঘটনো হবে। এর জন্য ১২০ কোটি (কেন্দ্রের ১০০ কোটি এবং রাজ্যে ২০ কোটি) বরাদ্দ করা হয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রয়েছে
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, জম্মু, জম্মু ও কাশ্মীর
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, শ্রীনগর, জম্মু ও কাশ্মীর
- কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ
- সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট গ্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, লখনউ, উত্তরপ্র্দেশ
- ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, বিএইচইউ বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ
- নিজাম ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, হায়দরাবাদ, তেলঙ্গানা
- শ্রী ভেঙ্কটেশরা ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, তিরুপতি, অন্ধ্রপ্রদেশ
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, সালেম, তামিলনাড়ু
- বিজে মেডিক্যাল কলেজ, আহমেদাবাদ, গুজরাত
- ব্যাঙ্গালোর মেডিক্যাল কলেজ, বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, তিরুঅনন্তপুরম, কেরল
- রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (আরআইএমএস), রাঁচি
- গ্রান্টস মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড স্যার জেজে গ্রুপ অফ হাসপাতাল, মুম্বই মহারাষ্ট্র
দ্বিতীয় দফা
দ্বিতীয় দফায় এইমসের মতো আরও দু’টি প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এই দু’টি হল পশ্চিমবঙ্গে এবং উত্তরপ্রদেশে। এর পাশাপাশি যে ছ’টি মেডিক্যাল কলেজের মানোন্নয়ন ঘটানো হবে সেগুলি হল:
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, অমৃতসর, পঞ্জাব
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, টান্ডা, হিমাচলপ্রদেশ
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, মাদুরাই, তামিলনাড়ু
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, নাগপুর, মহারাষ্ট্র
- জহওরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ অফ আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি
- পণ্ডিত বিডি শর্মা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস, রোহতক
এইমসের ধাঁচের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৮২৩ কোটি টাকা। অন্য ছ’টি মেডিক্যাল কলেজের মানোন্নয়নে প্রতিটির জন্য ১২৫ কেটি টাকা দেবে কেন্দ্র।
তৃতীয় দফা
তৃতীয় দফায় নিম্নলিখিত মেডিক্যাল কলেজগুলির মানোন্নয়ন করা হবে :
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, ঝাঁসি, উত্তরপ্রদেশ
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, রেওয়া, মধ্যপ্রদেশ
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, গোরখপুর, উত্তরপ্রদেশ
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, দ্বারভাঙা, বিহার
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, কোঝিকোড়, কেরল
- বিজয়নগর ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স, বেলারি, কর্ণাটক
- গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ, মুজফফরপুর, বিহার
এই মেডিক্যাল কলেজগুলির মানোন্নয়ন প্রকল্পের খরচ হিসাবে প্রতিটার জন্য ১৫০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১২৫ কোটি দেবে কেন্দ্র, বাকি ২৫ কোটি দেবে রাজ্য।
শেষ কথা
কেন্দ্রীয় সরকার আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার (আরএসবিওয়াই) অন্তর্গত করেছে। গোটা দেশ জুড়ে এ ব্যাপারে জনমত সরকারের কাছে পৌঁছনোর পর সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশের আয়ুশ আঞ্চলিক কোঅর্ডিনেটর আনন্দ চৌধুরির বক্তব্য, ‘‘অ্যালোপ্যাথি মেডিসিনের দাম বৃদ্ধি অল্প সামর্থের মধ্যে ভালো গুণগত চিকিৎসা দেওয়ার অন্তরায়। আয়ুর্বেদ এর একটা বিকল্প হতে পারে। এতে কম পয়সায় সবাইকে ভাল গুণগতমানের চিকিৎসা দেওয়া যায়।’’ ডবলুএইচও-র লক্ষ্যমাত্রাকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার চিরায়ত চিকিৎসার জন্যও এক জন ড্রাগ কন্ট্রোলারকে তালিকাভুক্ত করেছে। নতুন ড্রাগ কন্ট্রোলারের কাজ হল, গুণগতমান ও উন্নত ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করা। বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে কিছু চিরায়ত ওষুধের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে। এক ধরনের আয়ুর্বেদিক ওষুধ থেকে তো লেড পয়জনিং হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। সোসাইটি ফর নিউট্রিশন, এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ অ্যাকশন নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আর্মিতা ফার্নান্ডেজের বক্তব্য, “চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে ভালোর সঙ্গে কিছু খারাপ ব্যাপারও রয়েছে।’’ তাঁরা যেমন শিশুদের যক্ষ্মার মতো কিছু কিছু রোগের জন্য অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্য নেন। আবার মায়েদের প্রসব-পরবর্তী অবস্থায় দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির করার ক্ষেত্রে চিরায়ত চিকিৎসা ব্যবস্থার শরণাপন্ন হন।