জন ধন যোজনা – Pradhan Mantri Jon Dhan Yojana West Bengal

নমস্কার বন্ধুরা আমরা কিন্তু অনেকেই অনেক ধরণের লেখা লিখে থাকি, কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমরা লিখতে ভালোবাসি আপনাদের মনোরঞ্জন ছাড়াও  আর যেটা সব থেকে বেশি ভালোবাশি  বা লাভজনক হবে এমন কিছু লিখতে। আজ তেমনি একটি বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো ও সকলকে জানাবো যে জন ধন যোজনা বা Pradhan Mantri Awas Yojana West Bengal ব্যাপারটা কি। স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরও ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশের কাছে ব্যাঙ্কের পরিষেবার সুযোগ অধরা ছিল । তার মানে, সঞ্চয়ের কোনো পথ তাদের কাছে খোলা ছিল না । এমনকি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঋণ পাওয়ারও কোনো সুযোগ তাদের সামনে নেই। আর এই বাস্তব ও প্রাথমিক সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গত ২৮ শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার সূচনা করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই এই প্রকল্প লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর জীবনের মান ও তাদের ভবিষ্যতে একটা বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এই কয়েক মাসেই পনেরো কোটি ব্যাঙ্কের খাতা খোলা হয়েছে, সাড়ে তেরো কোটি ‘রুপে’ কার্ড দেওয়া হয়েছে। টাকার অঙ্কে জমা পড়েছে ১৫,৭৯৮ কোটি টাকা। ব্যাঙ্ক মিত্র (ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি) নিযুক্ত করা হয়েছে ১,২৫,৬৯৭ জন, যা একটা রেকর্ড। এর মধ্যে এক সপ্তাহে ১ কোটি ৮০ লক্ষ ৯৬ হাজার ১৩০ টি ব্যাঙ্কের খাতা খোলা হয়েছে, যা গিনেস বিশ্ব রেকর্ড। Pradhan Mantri Awas Yojana West Bengal

এই সমস্ত কিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রবল আগ্রহে ও জনগণের হৃদয় ও সরকারী ব্যবস্থায় তাঁর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতার জন্য | এই বিপুল উদ্যোগকে একটা মিশনের আকারে গ্রহণ করা হয়েছিল এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় তা সফলতা লাভ করে |ব্যাঙ্কে খাতা খোলার ফলে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী যেমন ব্যাঙ্কের পরিষেবা গ্রহণের সুযোগ পেলেন তেমনি দুর্নীতি দমনেও তা বড় ভূমিকা নিয়েছে | বর্তমানে সমস্তরকম ভর্তুকির অর্থ সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। ফলে ওই অর্থের কোনরকম অপব্যবহার ও কারচুপি হওয়ার সুযোগ দূরীভূত হয়েছে | পহল যোজনায় এল পি জি’র ভর্তুকি এখন সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্কের খাতায় চলে যাচ্ছে। এই প্রকল্পে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ সরাসরি নগদ ভর্তুকি পাবেন। এর ফলে ৪,০০০ কোটি টাকার ভর্তুকির অর্থ সঞ্চয় হবে।ন্যূনতম ও সাধারণ ব্যাঙ্কের সুযোগ সুবিধা যখন মানুষের নাগালে চলে এল, তখন এনডিএ সরকার জনগণের জন্য বীমা ও পেনশনের সুযোগ করে দিতে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নেয় । প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা বছরে মাত্র বারো টাকার কিস্তিতে ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বীমার সুযোগ এনে দিয়েছে ।

কিছু প্রাসঙ্গিক কথা

আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে আর্থিক ব্য‌বস্থার মধ্য‌ে নিয়ে আসার চেষ্টা ধরেই শুরু হয়েছে। কিন্তু তেমন ভাবে সমাজের প্রত্য‌ন্ত স্তরে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। ২০০৫ সালে রিজার্ভ ব্য‌াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া প্রথম এ ধরনের মানুষজনকে ব্য‌াঙ্ক অ্য‌াকাউন্ট খোলার ব্য‌াপারে আকৃষ্ট করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কেওয়াইসি সংক্রান্ত নিয়ম খানিকটা শিথিল করে ‘জিরো ব্য‌ালান্স’ ব্য‌াঙ্ক অ্য‌াকাউন্টের সুবিধা দেওয়া হয়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার এই আন্দোলনকে আরও বিস্তৃত করে প্রতিটি বাড়িতে ব্য‌াঙ্ক অ্য‌াকাউন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

লক্ষ্য‌মাত্রা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৫ আগস্ট লালকেল্লার ভাষণে পিছিয়ে পড়া ব্য‌ক্তিদের আর্থিক ব্য‌বস্থার মধ্য‌ে আনার জাতীয় মিশন—‘প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার’ কথা ঘোষণা করেন। এই প্রকল্পের ৬টি মূল স্তম্ভ রয়েছে। প্রথম বছর চারটি স্তম্ভ রূপায়িত হবে।

1. এর মধ্য‌ে আছে—প্রত্য‌েকের জন্য‌ ব্য‌াঙ্কিং পরিষেবা উন্মুক্ত করা।

2. আর্থিক সাক্ষরতার কর্মসূচি গ্রহণ

3. ওভারড্রাফটের সুবিধা এবং ‘রূপে’ ডেবিট কার্ডের সুবিধা সহ ব্য‌াঙ্ক অ্য‌াকাউন্ট খোলার সুযোগ।

4. প্রাথমিক স্তরের ক্রেডিট গ্য‌ারান্টি তহবিল গঠন।

শুরু হলো ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’

দেশের প্রতিটি পরিবারকে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনতে নরেন্দ্র মোদী ২৮শে আগস্ট নতুন দিল্লিতে শুরু করেন উচ্চাকাঙ্খামূলক ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’৷ প্রথম দিনেই এক কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়৷

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম স্বাধীনতা দিবসের  ভাষণে‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৷ উদ্দেশ্য, প্রতিটি পরিবারকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করা৷ দূর দুরান্তের দুর্গম এলাকার মানুষকেও ব্যাংক পরিষেবার আওতায় আনা৷

এই উচ্চাকাঙ্খামূলক ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’ প্রকল্প যাতে সফল হয়, তার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, মোবাইল ফোন পরিষেবা সংস্থাগুলিকেআগেই এই কাজে নামিয়ে কেওয়াইসি, অর্থাৎ ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের প্রাথমিক কাজ শেষ করা হয়৷ বৃহস্পতিবার ২৮শে আগস্ট নতুন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন৷

প্রথম দিনেই এক কোটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়৷ এ জন্য খোলা হয় ৬০ হাজার ব্যাংক শিবির৷ প্রকল্পে যাতে অগ্রগতি হয়, তার জন্য রিজার্ভ ব্যাংক প্রকরণগত পরিচয়পত্র দাখিলের শর্তাদি শিথিল করে৷ যাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নথিপত্র নেই, তাঁরাও অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন৷ তারপর ছয় মাসের মধ্যে নথিপত্র জমা দিলেই চলবে৷ পরিচয় সংক্রান্ত নথিপত্রের মধ্যে আছে, বায়োমেট্রিক আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ১০০ দিনের জব-কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাশপোর্ট ইত্যাদি৷ যাঁদের নথিপত্র নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে নিজের ছবি ও আবেদনপত্র ব্যাংক অফিসারের সামনে সই করে দিলেই হবে৷ যাঁরা রুজি রোজগারের জন্য এক রাজ্য থেকে অন্য রাজে যান এবং নথিতে থাকা ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা আলাদা হলে নিজের সই করা হলফনামা দাখিল করলেই হবে৷

অন্যান্য যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে আছে, অ্যাকাউন্ট ‘জিরো-ব্যালান্স’ হলেও ক্ষতি নেই৷ গ্রামীণ উপভোক্তাদের দেয়া হবে বিনামূল্যে ডেবিট কার্ড, যার মধ্যে থাকবে এক লাখ টাকার দুর্ঘটনা বিমা৷ সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে তা জানা যাবে মোবাইল ফোনে৷ তার জন্য ইন্টারনেটের দরকার হবে না৷ উল্লেখ্য, ভারতে যত মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি লোকের আছে মোবাইল ফোন৷ সবথেকে বড় সুফল হবে ভারতের ১২৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই গরিব৷ তাঁদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ চাষি ও মজুর৷ তাঁরা বিপদকালে টাকা ধার করতে ছুটে যান মহাজনদের কাছে৷ সেই সুযোগে মহাজনরা ঋণ দেয় ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি সুদে৷ পরে যখন তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারেন না, তখন মহাজনদের কাছে সর্বস্ব বন্ধক রাখতে হয়৷ নাহলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় তাঁদের৷ প্রায় ১০ কোটি পরিবার টাকা রাখে চিটফান্ডে অল্প সময়ে বেশি লাভের আশায়৷ পরে তাঁদের হা হুতাশ করতে হয়৷ তবে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো, গরিবি রেখার নীচে বসবাসকারীদের নিয়ে, যাঁদের ‘নুন আনতে পান্তা’ ফুরায় অবস্থা৷ সঞ্চয় এঁদের কাছে বিলাস মাত্র৷ ব্যাংকও এঁদের মাইক্রো-ঋণ দিতে চাইবে না৷ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা না পড়ে হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট হয়ে থাকবে নিষ্ক্রিয়৷ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এঁদের সামিল করা কতটা সম্ভব হবে, তাই নিয়ে সংশয় আছে সমাজ বিজ্ঞানী এবং অর্থনীতিক মহলে৷ তার জন্য দরকার গরিব ও নিরক্ষরদের এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল করে তোলা৷

প্রস্তুতি

এই যোজনার অঙ্গ হিসাবে ব্য‌াঙ্কগুলি কিছুদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শিবির শুরু করেছে। এর মাধ্য‌মে ব্য‌াঙ্ক অ্য‌াকাউন্ট নেই এমন বাড়িতে অ্য‌াকাউন্ট খোলার কাজ ও ডেবিট কার্ড বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল শ্রেণির মধ্য‌ে আর্থিক সাক্ষরতা প্রসারের কাজও শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনার প্রয়োজন মেটাতে ৫০ হাজার ব্য‌বসা সহায়ক নিয়োজিত হবেন। এঁরা ব্য‌াঙ্কিং পরিষেবার আওতাভুক্ত হননি এমন ৭কোটি বাড়িতে পৌঁছবেন। নতুন গ্রহকদের জন্য‌ সহজ পদ্ধতিতে অ্য‌াকাউন্ট খোলা হবে এবং প্রত্য‌েক গ্রাহকই ‘রূপে’ ডেবিট কার্ড পাবেন। গ্রাহকরা এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি তাঁরা ওভারড্রাফট নেওয়ার সুযোগও গ্রহণ করতে পারবেন।

শেষ কথা 

কী করতে হবে
  • রাষ্ট্রায়ত্ত ব্য‌াঙ্ক এবং গ্রামীণ ব্য‌াঙ্ক মিলিয়ে এখনও ৫ কোটি ৯২ লক্ষ গ্রামীণ বাড়ি ব্য‌াঙ্কের আওতার বাইরে রয়েছে। মোটামুটি হিসাব অনুযায়ী ৬ কোটি গ্রামীণ বাড়িতে পৌঁছনো প্রয়োজন।
  • প্রতি পরিবার পিছু দু’টি অ্য‌াকাউন্ট খুলতে হবে, একটি স্বামীর অন্য‌টি স্ত্রীর— এই হিসাব ধরলে গ্রামে এখনও ১২ কোটি অ্য‌াকাউন্ট খোলা বাকি।
  • শহরাঞ্চলেও কিছু বাড়িতে এখনও ব্য‌াঙ্ক পরিষেবা পৌঁছয়নি। জনগণনা অনুযায়ী, শহরাঞ্চলে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ বাড়ি ব্য‌াঙ্কের আওতার বাইরে আছে। মোটামুটি হিসাব অনুযায়ী শহরাঞ্চলে প্রায় ৩ কোটি অ্য‌াকাউন্ট খোলার কাজ বাকি আছে।
  • যে সব বাড়িতে ব্য‌াঙ্ক পৌঁছেছে সেখানেও বহুস্থানে কেবলমাত্র একটি করে অ্য‌াকাউন্ট হয়েছে। কিন্তু সেই সব জায়গাতেও একটি স্বামীর ও একটি স্ত্রীর ধরে বাড়ি পিছু দু’টি করে অ্য‌াকাউন্ট করা দরকার।
বর্তমান পরিকল্পনা

আগের আর্থিক বৃদ্ধির পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনার সঙ্গে এ বারের পরিকল্পনার তিনটি বড় ফারাক রয়েছে।

  • ক) আগের পরিকল্পনায় অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামকে ইউনিট ধরা হয়েছিল। এ বার প্রতিটি বাড়িকে ইউনিট ধরা হয়েছে।
  • খ) আগে কেবলমাত্র গ্রামীণ এলাকায় জোর দেওয়া হয়েছিল। এ বার শহর ও গ্রাম- দু’টির উপরই জোর দেওয়া হয়েছে।
  • গ) বর্তমান পরিকল্পনা ‘মিশন’ হিসাবে গণ্য‌ করে রূপায়ণ করার কাজ চলছে। এই মিশনে সর্বত্র পৌঁছনোর অঙ্গীকার করা হয়েছে। ছ’টি স্তম্ভের মাধ্য‌মে দু’টি পর্যায়ে মিশন পরিপূর্ণ করা হবে।