হাঁটুর ব্যাথার চিকিৎসা – Home Remedies for Knee Pain

আগেই বলে নিচ্ছি কেননা আপনারা পরে ভুলে যান। বাকি বন্ধুদের সাহায্যের উদ্দেশে লাইক আর শেয়ারটা  মনে করে করে দেবেন। শুরু করছি আজকের বিষয় –

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম। আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন।  আমাদের শরীরে একটি কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২০৬ টি হাড়ের কাঠামো দিয়ে আমাদের শরীর গঠিত। সেখানে আছে তরুণাস্থি অনেক রকম সন্ধি, সেখানেই রয়েছে  অনেক রকমের লিগামেন্ট, টেন্ডনি।আমাদের এই হুড়োহুড়ি রোজের ট্রাম বাস যাতায়াতের মাঝে আমরা ধাক্কা খাই। আমরা চোট পাই। কিন্তু তাকে পাত্তা না দিয়ে আমরা আমাদের গতিময় জীবনে এগিয়ে চলি। এই এগিয়ে চলা জীবনে আমাদের ছুটে চলতে হয় সমস্ত সময়। আর এই চলার পথে আমাদের এড়িয়ে যাওয়া চোট গুলো ফিরে আসে অসময়ে, আমাদের বার্ধক্যে তারা ফিরে আসে । বেশির ভাগ ঘরেই এই সমস্যা বিদ্যমান।

মানবদেহে অস্থি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাগ। আমাদের দেহের মূল কাঠামোই গড়ে তোলে আমাদের অস্থিসমূহ। এই অস্থিগুলি অস্থিমজ্জা এবং কাঠামো দিয়ে নির্মিত। অস্থিমজ্জা থেকেই লোহিত রক্তকণিকা  তৈরি হয়। এই কাঠামো ক্যালসিয়াম দ্বারা নির্মিত। তাই দেহে ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্থিক্ষয় দেখা যায়। আমাদের দেহের অস্থিগুলি বিশেষত নির্দিষ্ট ভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে এগুলিকে বলা হয় জয়েন্ট। এই জয়েন্টগুলি পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে লিগামেন্টের দ্বারা। এছাড়াও বারসা, মেনিসকাস, বিভিন্ন তরুণাস্থি, মাংসপেশি আমাদের দেহের স্বাভাবিক গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের এগিয়ে চলতে সাহায্য করে।

হাঁটুর ব্যাথার চিকিৎসা – Home Remedies for Knee Pain


হাঁটু আমাদের শরীরে এক বিশেষ অংশ। আমাদের শরীর দাঁড়িয়ে আছে এই হাঁটুর সাহায্যে। হাঁটুর ব্যাথা যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে। ৪০ বছরের বেশি বয়সে এই রোগের প্রবণতা বেশি থাকে। হাঁটুর ব্যাথার কারণ আমাদের সবার কাছেই চিন্তার বিষয়। তাই সেই ব্যাথার কারণগুলো জেনে নেওয়া দরকার। তাই আসুন জেনে নিই হাঁটুর ব্যাথার কারণসমূহ।

1. নী-স্ট্রেইন- .আমাদের শরীরের লিগামেন্ট আংশিক ছিঁড়ে যেতে পারে নানান আঘাতজনিত কারণে। তাই এই ঘটনার দরুন হাঁটুতে প্রচন্ড যন্ত্রণা দেখা যায়।


2. লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া-  হাঁটুতে অনেক প্রকার লিগামেন্ট দেখা যায়। হাঁটুর বাইরের দিকে দুইপাশে মিডিয়াল কোলেটারাল লিগামেন্ট, লেটারাল কোলেটারাল লিগামেন্ট। হাঁটুর ভেতরের অংশে এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট, এবং পস্টেরিয়র লিগামেন্ট দেখা যায়। খেলাধুলার সময় চোট পেলে, বা নানাবিধ আঘাতজনিত কারণে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাথা হয় প্রচন্ড। এই ব্যাথার ফলে হাঁটু ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যাথা হয়। এই ব্যাথা একবার ঠিক হয়ে গেলেও বৃদ্ধ বয়সে নানান সমস্যার কারণ হিসাবে দেখা যায়।

3. মেনিসকাস ইনজুরি – আমাদের হাঁটুতে তরুণাস্থি নির্মিত দুটি কুশনের মতো অংশ দেখা যায় আমাদের হাঁটুর উপরের চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই মেনিসকাস গুলি রাবারের ন্যায় এবং তারা অত্যন্ত স্থিথিস্থাপক। বিভিন্ন আঘাতজনিত এবং ক্ষয়জনিত কারণে এই অংশে চোট দেখা যায়। এই চোটের ফলে হাঁটু ফুলে যায় এবং হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যাথা হয়ে পারে।

4. বারসাইটিস – হাঁটুর চারপাশে অনেক বারসা থাকে । বারসা হলো একপ্রকারের থলি যার মধ্যে তরল থাকে। এই তরল হাঁটুর চারদিকে অবস্থিত টেন্ডন গুলিকে সচল রাখতে সাহায্য করে। তবে বারংবার ঘর্ষণের ফলে টেন্ডনগুলি আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এবং বারসাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে হাঁটুতে  প্রদাহজনিত ব্যাথার সৃষ্টি হয়।

5. টেন্ডনাইটিস- হাঁটুর পেটেলার টেন্ডন ক্ষতিগ্রস্ত হলে টেন্ডনাইটিস দেখা যায়। এর ফলে প্রদাহ জনিত ব্যাথা হতে পারে।

6. লোজ বডি- আঘাতজনিত কারনে দেহের হাড় ভেঙে গেলে তা হাড়ের জোড়ার ভেতরে ঢুকে যায়। এই ভেঙে যাওয়া অংশ বা লোজবডি নানান সমস্যার সৃষ্টি করে, হাঁটুর স্বাভাবিকত্বকে নষ্ট করে।

7. গাউট ও সিউডো গাউট- দেহে ইউরিক অ্যাসিড জমা হলে ক্রিস্টাল তৈরি হয়। এই ক্রিস্টাল ক্যালসিয়াম জাতীয় হলে তাকে সিউডো গাউট বলে। গাউট বা বাতের ব্যাথা একটি অতিপ্রাচীন সমস্যা। এর ফলে হাঁটু ফুলে যায় এবং প্রদাহজনিত ব্যাথা দেখা যায়।

8. অস্টিও আরথারাইটিস ও রিউমাটয়েড আরথারাইটিস- অস্টিওআরথারাইটিস একটি বৃদ্ধিজনিত রোগ । মূলত অস্থি এবং তরুণাস্থির ক্ষয়ের ফলে এই রোগ দেখা যায়। সাধারণত বৃদ্ধবয়সে এই রোগ দেখা যায়। অপরদিকে রিউমাটয়েড আরথারাইটিস একটি প্রদাহজনিত রোগ।

9.অস্টিওপোরোসিস- ক্যালসিয়ামের ঘাটতির জন্য এই রোগ দেখা যায়। বৃদ্ধবয়সে সাধারণত এই রোগ দেখা যায়। মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। হাড়ের ক্ষয় দেখা যায় যার ফলে চোট পাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

10. অন্যান্য কারণ – সেপটিক ,যক্ষ্মা, গনোরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি রোগের ক্ষেত্রে হাঁটু ফুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
এছাড়াও কন্ড্রোম্যালেসিয়া, গুসগুড স্লাটার ডিজিস ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রেও হাঁটুর ব্যাথা দেখাযাতে পারে।

উপসর্গ –

1.চলাফেরার সময় হাঁটুতে ব্যাথা হওয়া।
2.হাঁটুতে জল জমা [ পেশিক্লান্তির ফলস্বরূপ ]
3. হাঁটুতে ব্যাথার ফলে হিপজয়েন্ট এবং গোড়ালিতে ব্যাথা অনুভূত হয়।
4. হাঁটু ফুলে যাওয়া।

প্রতিরোধ –

নিয়মিত ডাক্তারী পরীক্ষার মধ্যে থেকে, এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে   এই রোগ প্রকোপ বসানোর আগেই তাঁকে প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলে এই রোগ দূরে থাকবে অনেকটাই। বয়স বাড়লে ধূমপান এবং অ্যালকোহল বর্জন করা।  দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা এই সময় খুবই জরুরি। কারণ ওজন বৃদ্ধিতে দেহের নানান অংশে চাপ পড়ে।

প্রতিকার


1. আঘাতজনিত কারণে ব্যাথার চিকিৎসা- পরিমিত বিশ্রাম, নিয়মিত পায়ে বরফপ্যাক দেওয়া, নিয়মিত ক্রেপ ব্যান্ডেজ, নী ক্যাপ ব্যবহার করার মাধ্যমে হাঁটুর ব্যাথা কমে যায় অনেকটা।

2. লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়া ব্যাথা- এই ব্যাথার ক্ষেত্রে এমসিএল, এলসিএল ছিঁড়ে গেলে ৩-৪ সপ্তাহ প্লাস্টার করে রাখতে হয়। মাঝে মাঝে অপারেশানও করতে হতে পারে। এসিএল, পিসিএল ছিঁড়ে গেলে অরথোস্কোপির দ্বারা লিগামেন্ট রিকন্সট্রাকশন
করা হয়।
3. মেনিসকাস ইনজুরি- মেনিসকাসে চোট লাগলে অরথোস্কোপির দ্বারা মেনিসকাস মেরামত করা হয়।
4. বারসাইটিস- বারসাতে যাতে আঘাত না লাগে তার দিকে নজর দেওয়া।সিরিঞ্জ দিয়ে বারসার তরল বের করা হয়। বারসাতে স্টেরয়েড দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
5. টেন্ডনাইটিস- পরিমিত বিশ্রাম এবং ডাক্তারি রক্ষণাবেক্ষণই এই রোগের একমাত্র সুচিকিৎসা।
6. লোজ বডির ক্ষেত্রে অপারেশানই একমাত্র চিকিৎসা।
7. প্রদাহজনিত কারণ- অস্টিওয়ারথারাইটিসের ক্ষেত্রে  বিশ্রামের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম গ্লুকোজঅ্যামাইন, কন্ড্রিয়টিন সালফেট ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও হাঁটুতে হায়ালোরোনিক অ্যাসিড  ইঞ্জেকশান দেওয়া হয় যার ফলে ব্যাথা ও ফোলা কমে। এছাড়াও গাউট, সিউডো গাউট, রিউমাটয়েড আরথারাইটিসের ক্ষেত্রে তার মূল কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করা দরকার।
8. অস্টিওপোরোসিস- পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ , বয়স্ক পুরুষ ,মহিলা, এবং মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডিএবং ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনু্যায়ী হাড়ক্ষয় প্রতিরোধক ওষুধ খাওয়া উচিত।
9. কন্ড্রোমেলেসিয়া পেটেলি বা গুসগুড স্লাটার ডিসিজ- এই রোগের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত। পরিমিত বিশ্রাম এই রোগের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।প্রয়োজনে প্লাস্টার করা যাতে পারে।

10.  অস্ত্রোপচার- মাঝে মাঝে হাতুর ব্যাথা গুরুতর হলে হাঁটু প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে । এই অস্ত্রোপচার বর্তমানে ভারতবর্ষে মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে এসে পড়েছে।   

ডাক্তারি পরামর্শ- বয়সভেদে হাঁটুর ব্যাথা ভিন্ন। সেই কারণে ডাক্তারের পরামর্শ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাথা জীবনের অঙ্গ। তাই সেই ব্যাথাকে জয় করে জীবনের লড়াইতে আবার ফিরে আসাটাই চ্যালেঞ্জ।তাই সুস্থ থাকুন। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। জীবন বাঁচুন হাসিমুখে।