জেনে নিন ঢেঁড়সের ১০ উপকারিতা – The Benefits of Ladies Finger

আগেই বলে নিচ্ছি কেননা আপনারা পরে ভুলে যান। বাকি বন্ধুদের সাহায্যের উদ্দেশে লাইক আর শেয়ারটা  মনে করে করে দেবেন। শুরু করছি আজকের বিষয় –

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম।   আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন। বন্ধুরা আজ আমি ঢেঁড়সের ব্যাপারে বলবো। আজ আমরা সবাই জেনে নেবো যে ঢেঁড়সের কি কি উপকার বা গুনাগুন আছে। আমরা আরো জানবো যে – ঢেরস এর উপকারিতা, ঢেঁড়স এর পুষ্টিগুণ,  ডায়াবেটিসে ঢেঁড়স ইত্যাদি ইত্যাদি।

ঢেঁড়স ভাজি, ঢেঁড়সের তরকারি আরো কতভাবে আমরা ঢেঁরস খেয়েথাকি। গ্রীষ্মকালে এই সবজিটি আমাদের দেশে প্রচুর উৎপাদিত হয়। ঢেঁড়স’কে ‘লেডিস ফিঙ্গার’ ডাকা হলেও এর প্রকৃত ইংরেজি নাম ‘ওঁকরা’। ঢেঁড়স অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ওষুধিগুণ সম্পন্ন। আমরা অনেকেই হয়তো জানিনা ঢেঁরস সুস্বাস্থ্যের জন্য কতোটুকু গুরুত্ব রাখতে পারে। অনেকেই ঢেঁড়স সামক সবজিটি খেতে পছন্দ করেনা। বিশেষ করে বাচ্চারা জোর করে না খাওয়ালে ঢেঁড়স খেতেই চায়না।

ঢেঁড়স এমন একটি সবজি যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। ঢেঁড়স অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি সবজি। এর ক্যালরির পরিমান ৩০। এতে আরও রয়েছে- ভিটামিন সি ২১ মিলিগ্রাম, ডায়েট্রি ফাইবার ৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭.৬ গ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ফলেট ৮০ মাইক্রোগ্রামম্যাগনেসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম।

অনেকে ঢেঁড়স একেবারেই পছন্দ করেন না। কিন্তু ঢেঁড়স আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সবজি। নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে প্রায় ১০ ধরণের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম।

1. ঢেঁড়সের ঔষধি গুণাগুণ

ঢেঁড়সের কিছু ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে। এটি কোলেস্টেরল কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, কিডনি রোগঅ্যাজমার সমস্যা প্রতিরোধ করে। একইসঙ্গে এটি শরীরকে খাবার থেকে গ্লুকোজ শোষণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষভাবে বলতে গেলে, ঢেঁড়স ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সহায়ক একটি ভেষজ উপাদান। প্রতিদিন ঢেঁড়স ভেজানো জল খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

যা যা লাগবে ঢেঁড়স- দু’টি। জল – ২/৩ গ্লাস।

প্রস্তুত প্রণালী

ঢেঁড়সের বোঁটা কেটে নিন। এবার ছোট ছোট করে টুকরো করে জলে  সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকাল বেলা ছেঁকে খালিপেটে পান করুন। সাকলের টিফিনের আধঘণ্টা আগে পান করা ভালো।

2. কাশি সারাতে

ঢেঁড়স খেলে খুসখুসে কাশি উপশম হয়। সেক্ষেত্রে বীজ ফেলে দিয়ে কয়েকটি কাঁচা ঢেঁড়স রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখুন। পাঁচ/ছয় গ্রাম ঢেড়সের শুকনা গুঁড়া আর চিনি দিয়ে বড়ি বানাতে হবে। বড়ি চুষে খেলে অল্প সময়ের মধ্যেই উপকার পাওয়া যাবে।

3. কোষ্ঠকাঠিন্য দুর

ঢেঁড়সে রাইবোফ্লাভিনের পরিমাণ এতো বেশি যা বেগুন, মুলা, টমেটো আর শিমের থেকেও বেশি। কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী। এজন্য বীজ ফেলে দিয়ে দু’তিনটা কাঁচা ঢেঁড়স প্রায় ৪৫০ গ্রাম জলে এমনভাবে সেদ্ধ করুন যাতে এক কাপ পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে। এবার জলটা ছেঁকে নিয়ে দুবার খাবেন একঘন্টা পর পর। এতে প্রস্রাব-পায়খানা উভয়ই পরিস্কার হবে।

4. ব্লাড সুগার কমায়

ঢেঁড়স ব্লাড-সুগার কমাতে সাহায্য করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে থাকলে কালো জামের বীজ চূর্ণ করে এক গ্রাম পরিমাণ চূর্ণের সাথে তিন-চারটে কচি ঢেঁড়স সেদ্ধ জলের সাথে ক’দিন খেলে ব্লাড সুগার কমে যাবে।

5. প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর

ঢেঁড়স প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর করতেও সহায়ক। প্রচুর পরিমাণ জল পান করলেও অনেক সময় প্রস্রাবের পরিমাণ কম হতে পারে। এমনটি হলে বীজ ফেলে দিয়ে ৩/৪টা কাঁচা ঢেঁড়স আধা সের পরিমাণ জলে সেদ্ধ করুন। জল অর্ধেক পরিমাণ থাকতেই নামিয়ে ছেঁকে নিন। এই পিচ্ছিল জল খেলে প্রস্রাব সরল হয় এবং পরিমাণেও বেড়ে যায়। কয়েকদিন এই জল খেলে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণের সমস্যা দূর হয়।

6. লোহিত রক্ত কণিকা তৈরী করে 

ঢেঁড়স দেহে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। এতে করে অ্যানিমিয়া অর্থাৎ রক্তস্বল্পতা দূর করে। অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।

7. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের মিউটেশন প্রতিরোধ করে

ঢেঁড়সের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের মিউটেশন প্রতিরোধ করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করে। এতে করে দেহে ক্যান্সারের কোষ জন্মাতে পারে না। নিয়মিত ঢেঁড়স খাওয়ার অভ্যাস ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।

8. হাড়ের গঠন মজবুত করে

ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফোলায়েট যা হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।

9. ভিটামিন সি

ঢেঁড়সের ভিটামিন সি ও এ অ্যাজমার প্রকোপ কমায় এবং অ্যাজমা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

10. কোলেস্টরল কমাতে

ঢেঁড়সে রয়েছে স্যলুবল ফাইবার যা দেহের খারাপ কোলেস্টরল কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এতে করে কার্ডিও ভ্যস্কুলার সমস্যা ও হৃদপিন্ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বীজ বপন

বীজ বোনার আগে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হয়। সারি করে বীজ বপণ করা হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪৫ সে.মি. এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩০ সে.মি. রাখতে হয়। অর্থাৎ লাইনে ৩০ সেমি. দূরে দূরে ২ টি করে বীজ বুনতে হয়। বীজ মাটির ২-৩ সেমি গভীরে বুনতে হয়। জাত অনুযায়ী চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারির দুরত্ব ১৫ সেমি. কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। শীতকালে গাছ ছোট হয় বলে দূরত্ব কমানো যেতে পারে। চারা গজানোর ৭ দিন পর প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ সবল চারা রেখে বাকি চারা গর্ত থেকে তুলে ফেলতে হবে।

শেষ কথা 

ঢেঁড়স আমাদের দেশে বৃহৎ পরিসরে চাষ করা হয় কেননা এটি একটি জনপ্রিয় সবজি। ঢেঁড়স মূলত শীতকালীন সবজী হলেও বর্তমানে এটি সারা বছরই চাষ করা যায়। ঢেঁড়শে প্রচুর পরিমাসে ভিটামিন এ, ভিটামিন বিভিটামিন  সি এবং এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়োজিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম  ও বিভিন্ন  খনিজ পদার্থ রয়েছে। ঢেঁড়শ নিয়মিত খেলে গলাফোলা রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে না, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করে, এছাড়াও  এটা হজম শক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।