করলার বিচির উপকারিতা

আগেই বলে নিচ্ছি কেননা আপনারা পরে ভুলে যান। বাকি বন্ধুদের সাহায্যের উদ্দেশে লাইক আর শেয়ারটা  মনে করে করে দেবেন। শুরু করছি আজকের বিষয় –

বন্ধুরা করলা নিয়ে মানে করলার উপকার, করলার জুসের উপকার ইত্যাদি নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। তবে আজ করলার বিচিও আমাদের কি কি কাজে লাগে বা কি কি উপকার সেটা নিয়েই কথা বলবো। নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে আমার এই chalokolkata.com এ স্বাগতম।   আশা করি সবাই আপনারা ভালোই আছেন আর  সুস্থ আছেন।  আমরা আরও জন্য যে –  করলা উপকারিতা, করলার জুসের উপকারিতা, করলার পাতার উপকারিতা, করলার উপকারিতা ও অপকারিতা, উচ্ছে পাতার উপকারিতা, তিতা করলা, করলা ফুল, উচ্ছে ও করলা। শুরু করা যাক।

করলার গুণাগুণ ও উপকারিতা .

গরমের সবজি তরকারি –  অগ্ন্যাশয় ক্যানসার প্রতিরোধে করলা

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায়, করলা ডায়াবেটিস ও কয়েক প্রকার ক্যানসারের চিকিৎসায় কার্যকরী। করলা ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এন্টিভাইরাল এ সবজিটি ফ্যাট কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ধারণা অনুযায়ী, ফল ও সবজির মধ্যে করলা সবচেয়ে তিতা। এটি পেটে ব্যথা, জ্বর, চর্মরোগপোড়া ক্ষত সারিয়ে তুলতে প্রাকৃতিক নিরাময়ক হিসেবে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, গর্ভবতী নারীদের করলা খাওয়া ঠিক নয়। এটি গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।

 

তেতো করলা

করলা স্বাদে তিতা হলেও স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারি। ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে করলার ভেষজ গুণ বেশি। জ্বর ও শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে সে ক্ষেত্রে করলা ভালো পথ্য। তা ছাড়া করলার তরকারি বায়ুবৃদ্ধিতে, বাতে, লিভারে ও প্লীহার রোগে এবং ত্বকের অসুখে উপকার দেয়। নিয়মিত খেলে এটি জ্বর , হাম ও বসন্ত হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। করলা এ উচ্ছে আকারে বড় ও ছোট হলেও গুণের দিক থেকে একই। তাই ভেষজ হিসেবে ব্যবহারের কথা উভয়ের ক্ষেত্রে একসাথে দেয়া হলো।


বাতরক্ত

এ ক্ষেত্রে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে সেই সাথে এক-দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সাথে খেতে হয়।


পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত রোগ

অনেক সময় ম্যালেরিয়া জ্বরেও পিত্ত শ্লেষ্মার বিকার হয়। এর প্রধান উপসর্গ হলো, শরীর কামড়ানি, পিপাসা ও বমি; এ ক্ষেত্রে উচ্ছে বা করলার পাতার রস এক চা চামচ একটু গরম করে অথবা গরমজলের সাথে মিশিয়ে সারা দিনে ২-৩ বার করে খেলে জ্বরের উপসর্গগুলো চলে যাবে ও জ্বরের প্রকোপও কমে যাবে।

কৃমি

গুঁড়ো কৃমি এ ক্ষেত্রে উচ্ছে বা করলার পাতার রস বয়স্ক হলে ১-২ চা চামচ এবং শিশু হলে আধা চা চামচ সকালে ও বিকেলে অল্পজল মিশিয়ে খেতে হয়।

 বাত

পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত এ বাত রোগের লক্ষণ হলো অমাবস্যা, পূর্ণিমা এবং একাদশী এলে হাত-পা-কোমর, সারা শরীরে ব্যথা যন্ত্রণা হয়; ব্যথা নিবারক বড়ি খেয়ে চলাফেরা করতে হয়; শীতকাল এলে কথাই নেই, তবে গরম বেশি পড়লে ব্যথা-বেদনা ও যন্ত্রণা একটু কম হয়। এ ক্ষেত্রে করলা বা উচ্ছে পাতার রস ৩ চা চামচ গরম করে অল্প জলে মিশিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে এ অসুবিধা চলে যায়।


অরুচি রোগ 

বৈদিক শাস্ত্র মতে, পিত্ত শ্লেষ্মার বিকার না হলে অরুচি রোগ হয় না। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে ফলের রস সকাল ও বিকেলে খেলে দোষটা চলে যায়।


 রক্তপিত্ত 

যাদের কোনো জ্বালা-যন্ত্রণা ছাড়াই পায়খানার সাথে টাটকা রক্ত পড়ে, অথচ অর্শ্বরোগ নেই এ ক্ষেত্রে রক্ত পিত্ত যে আছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এতে করলা বা উচ্ছের ফুল ৮-১০টা নিয়ে দিনে ৩ বার খেতে হয়। পুরাতন বৈদ্যরা ফুলের রস আধা চা চামচ করে খাবার বিধান দিতেন।

 এলার্জি

এ ক্ষেত্রে ফলের রস ২ চা চামচ করে দিনে ২ বেলা খেতে হয়।

মাথাব্যথা

পাতার রস রগড়ে নিয়ে একটু ন্যাকড়ায় পুরে যে দিকে যন্ত্রণা হচ্ছে সে নাকে রসটা ফোঁটায় ফেলে টানলে কয়েক মিনিটেই ব্যথা সেরে যায়।

ভিটামিনের অভাব

 ভিটামিনের অভাব পাকা করলা বা উচ্ছের বীজ শুকিয়ে রেখে প্রতিদিন প্রায় ১ চা চামচ (৩/৪ গ্রাম) মাখনের মতো বেটে তাতে ৭/৮ চা চামচ জল মিশিয়ে চা ছাঁকনিতে ছেঁকে সে জল প্রতিদিন একবার করে খেতে হয়। তাতে এ অভাব পূরণ হবে। এটি পুরনো কালের ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স।


 ডায়াবেটিস

1. প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত করলার রস খেলে ও খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম মেনে চললে এ রোগ সারে।

2. তেতো বের না করে তরকারি হিসেবে ভাজি, ভর্তা হিসেবেও খেলে রোগ সারে।

3.  কচি করলা টুকরো করে কেটে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে মিহি করে পিষে নিতে হবে। এ গুঁড়ো সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত 
দুই চা চামচ করে চার মাস খেলে এ রোগ নিশ্চয় সারবে। তবে নিয়মকানুন মানতেই হবে। এতে প্রস্রাবের সাথে শর্করা বের হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।

4.  একটি করে শসা, টমেটোকরলা নিয়ে রস বের করে সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


 শিশুদের বমি

তিনটি করলা বিচি ও তিনটি গোলমরিচের গুঁড়ো সামান্য জল মিশিয়ে খেলে শিশুর বমি বন্ধ হয়।

অর্শ্ব

করলার পাতা বা ফলের রস এক চা চামচ অল্প চিনিসহ খেলে অর্শ্ব ও তা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

 চর্মরোগ

করলা পাতার রস মালিশ করলে চর্মরোগ সারে। তা ছাড়া এ রস শুকনো ত্বকের জন্য উপকারি।
শিকড় পিষে চুলকানি ও ফুসকুঁড়িতে লাগলে তা সারে।


আগুনে পোড়া

পোড়া ঘায়ে করলা পাতার রস লাগালে তা সারে।


রক্তদুষ্টি

করলার রস খেলে রক্তের দূষিত বর্জ্য বের হয়ে যায়।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান অঞ্চলের আদিবাসীরা বহু বছর ধরেই করলাকে ডায়াবেটিস, পেটের গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, জন্ডিস ইত্যাদিতে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

শেষ কথা  

প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে খাদ্যশক্তি ১৭ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেটস ৩.৭০ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, ফাইবার ২.৮০ গ্রাম, ফোলেট ৭২ মাইক্রো গ্রাম, নিয়াসিন ০.৪০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৪৭১ আইইউ, ভিটামিন সি ৮৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৫ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ২৯৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম।