হিমোগ্লোবিন কম থাকলে কি কি খাবার খাওয়া উচিত

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে ও আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। হিমোগ্লোবিন মানব শরীরের অত্যন্ত জরুরি উপাদান। এটি একধরনের প্রোটিন যা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন আমাদের দেহের সমস্ত কোষ গুলিকে সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বহন করে আবার ফুসফুসে পৌছে দেয়। ফলত আমাদের দেহের কোষ গুলিকে সক্রিয় ও কর্মক্ষম রাখার জন্য আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান স্বাভাবিক থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

সাধারণত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের রক্তে ১৪ -১৮ g/dl ও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী দেহে ১২ -১৬ g/dl পরিমান হিমোগ্লোবিন থাকা প্রয়োজন। দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, শ্বাস-প্রশ্বাস এর অসুবিধা, মাথাব্যথা, হৃদকম্প বেড়ে যাওয়া এবং খিদে না পাওয়া ইত্যাদি রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হয়ে যাওয়ার লক্ষণ। ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি১২ ইত্যাদি জরুরি উপাদান গুলির অভাব আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে কমিয়ে দেয়। আসুন আজ জেনেনি কোন ধরনের খাবার আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিনর পরিমান বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

1.ফলিক অ্যাসিড 

ফলিক অ্যাসিড আমাদের রক্তে লোহিত রক্ত কনিকা তৈরী হওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। সুতরাং হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে তোলার জন্য আমাদের ফলিক অ্যাসিড পূর্ণ খাবার খাওয়া জরুরি। আসুন দেখেনি কি কি খাবারে ফলিক অ্যাসিড থাকে।
প্রতিদিনের খাবারের সাথে সবুজ শাক সবজি খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পরিমানে ফলিক অ্যাসিড থাকে। যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে বাড়িয়ে তোলে।
চিকেন লিভার, মটন লিভার, ব্রকলি, কলা, বাদাম, স্প্রাউট, এগুলি আমাদের দেহে ফলিক অ্যাসিড যোগান দেয়। ফলত শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে উপরিউক্ত খাবার গুলি আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে বাড়িয়ে তোলে।

2.আয়রন 

আয়রণের অভাব আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আয়রন যুক্ত খাবার আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব পূরণ করে।
খেজুর, বেদনা, আপেল তরমুজ, আমলকি ইত্যাদি ফলগুলিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে।

এই ফলগুলি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে খুব সহজে বাড়িয়ে তোলা যায়। বিশেষ করে রোজ একটি করে আপেল বা বেদনা খেলে আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে কম হতে দেয় না।
ড্রাই ফ্রুটস যেমন কিসমিস, আলমন্ড, শুকনো খেজুর আয়রনের ভান্ডার। সুতরাং হিমোগ্লোবিন কম থাকলে এগুলি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
পালংশাকে অফুরন্ত আয়রন থাকে।এটি শুধু আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে আমাদের দেহে ক্যান্সার সংক্রামনকেও রোধ করে।এছাড়া কুমড়োর বীজেও প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে।১০০ গ্রাম কুমড়োর বীজ আমাদের শরীরে ৮৩% আয়রনের যোগান দিতে পারে। সুতরাং হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়িয়ে তোলার জন্য এই দুটি খাবারই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া চিকেন লিভার,মটন লিভার,সী ফুড, টোফু,  ব্রাউন রাইস, ব্রকলি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। তাই হিমোগ্লোবিন কমে গেলে এগুলি খাওয়া উচিত।

3. ভিটামিন C

ভিটামিন C এর সাহায্য ছাড়া আমাদের শরীর পুরোমাত্রায় প্রয়োজনীয় আয়রন গ্রহণ করতে পারেনা। আর আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম মূল কারণ। তাই শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমানকে বাড়িয়ে তোলার জন্য ভিটামিন C যুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ব্রকলি, টমেটো, ক্যাপসিকাম, পালংশাক এগুলি প্রত্যেকটিতে ভিটামিন C থাকে। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে এগুলি হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
পাকাপেপে, কমলালেবু, পাতিলেবু, স্ট্রবেরী, আঙ্গুর এগুলি প্রত্যেকটি ভিটামিন C তে পরিপূর্ণ। হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে এগুলি খাওয়া উচিত।

4. বীট 

বীট একটি সুপার ফুড। এতে পটাসিয়াম, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন প্রচুর পরিমানে থাকে। এটি আমাদের শরীরে লোহিত রক্ত কনিকার পরিমান বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

5. আলু  

শরীরে হিমোগ্লোবিন র অভাব হলে আলু খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পরিমানে আয়রন ও ভিটামিন C বর্তমান। তাই এটি শরীরে হিমোগ্লোবিনর পরিমান বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এইসমস্ত খাবারগুলি হিমোগ্লোবিনের অভাব পূরণ করে, তবে এমত অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ মতই খাবার ও প্রয়োজনে ওষুধ খাওয়া দরকার।