ক্যালরি কি, ক্যালরি কাকে বলে

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে ও আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আগে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম ওজন বাড়ানোর বা কমানোর জন্যে দৈনিক ক্যালরি গ্রহনের হিসাবের উপর।  ওই পোস্টের পরে আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন খাদ্যের ক্যালরি কি, কোন খাদ্যে কত ক্যালরি ইত্যাদি| খুব ভালো লাগছে যে, ফিটনেস পাঠকেরা এখন খাদ্যের ক্যালরি এবং ক্যালরি মেপে খাবারের সম্পর্কেও সচেতন হয়েছেন।

খাদ্যের ক্যালরি, অর্থাৎ প্রতিদিন কত ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তার সাথে কত ক্যালরি ব্যায়ামের মাধ্যমে বার্ন করবেন, তা কিন্তু খুব গভীর ভাবে জড়িত| তাই, এই পোস্টে আপনাদের জন্যে খাদ্যের ক্যালরি ও আমাদের শরীরে এর প্রভাব দেয়া হলো:

খাদ্যের ক্যালরি কি

ক্যালরি হচ্ছে শক্তির একক, যা দিয়ে কোনো খাদ্য হতে  আমাদের শরীরে কত শক্তি পাওয়া যায়, তা পরিমাপ করা হয়।

শর্করা, স্নেহ ও আমিষ জাতীয় খাদ্য পরিপাক হওয়ার পর শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়। অথবা, খাদ্যের পুষ্টি উপাদান গুলো যখন আমাদের শরীরের কোষের রক্তের সংস্পর্শে আসে, তখন শক্তি উৎপন্ন হয়।

খাদ্য থেকে উৎপন্ন তাপশক্তি পরিমাপ করে খাদ্যের ক্যালরি মান নির্ণয় করা হয়।

আমরা জানি, আমাদের শরীরে শক্তির জন্যে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। খাদ্যের ক্যালরি আমাদের শরীরকে শক্তি, পুষ্টি, ভিটামিন, মিনারেলস, শর্করা, আমিষ, ফ্যাট ইত্যাদি সরবরাহ করে।  তাই খাদ্যের ক্যালরি, আমাদের শরীরে জ্বালানি শক্তির মত কাজ করে এবং আমরা সারাদিন কাজ করার শক্তি পাই।

আমাদের খাদ্যের ক্যালরি আসে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান, যেমন:- শর্করা, আমিষ, ফ্যাট, ফাইবার ইত্যাদি থেকে।  যেমন: এক গ্রাম শর্করায় ৪ ক্যালরি,  এক গ্রাম আমিষে ৪ ক্যালরি, এক গ্রাম ফ্যাটে ৯ ক্যালরি থাকে।  তাই কোন খাদ্যে কত ক্যালরি, তা জেনে খেলে একবারে বেশি ক্যালরি খাওয়া হয় না, আবার এক দিনের ক্যালরির চাহিদাও বেশি হয় না।

ক্যালরি না কিলোক্যালরি?

আমরা সচরাচর খাদ্যের ক্যালরি বলতে কিলোক্যালরি বুঝি।  খাদ্যের ক্যালরি মূল্য সাধারণত: কিলোক্যালরিতে প্রকাশ করা হয়। যেমন: কেউ যদি বলেন যে, আজকে তিনি ১৫০০ ক্যালরি খেয়েছেন, তার মানে তিনি ১৫০০ কিলোক্যালরি খেয়েছেন।  আবার কোনো খাদ্যের লেবেলে যদি লেখা থাকে, ৯৫ ক্যালরি, তার মানে সেটির ক্যালরি মান ৯৫×১০০০=৯৫০০০ ক্যালরি = ৯৫ কিলোক্যালরি।

সেভাবেই, ব্যায়ামে ক্যালরি বার্ন বলতেও কিলোক্যালরি বুঝায়। জেনে রাখা ভালো যে, ১০০০ ক্যালরি=  এক কিলোক্যালরি। এবং ৩৫০০ ক্যালরি = এক পাউন্ড/ এক কেজি শরীরের ওজন বা ফ্যাট।

আমাদের শরীরে ক্যালরির প্রভাব

1. শারীরিক চাহিদার চাইতে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন বাড়বে, কম ক্যালরি নিলে ওজন কমবে, আর সমান ক্যালরি গ্রহণ করলে ওজন ঠিক থাকবে।

2. ব্যায়াম করলে বা শারীরিক কাজ করলে, শরীরে তাপ উৎপন্ন হয়ে শক্তি খরচ হয়, ফলে ক্যালরি বার্ন হয়।

3. কম ক্যালরি খাওয়া ছাড়াও, ক্যালরি বার্ন করার একটি সহজ উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা।  এছাড়া ও হাঁটা চলা করা, মানে শরীরটাকে কর্মঠ রাখা ইত্যাদি। এছাড়াও ঘরের কাজ বা নিজের কাজ করলেও কিছু ক্যালরি বার্ন হয়।

4. মাঝে মাঝেই আমরা অনেক ক্যালরির খাবার খেয়ে থাকি, যা ওজন বাড়ার কারণ।  অতিরিক্ত ওজন বাড়লে, অনেক স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে হতে পারে, যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ২ ডায়বেটিস, হৃদরোগ, হাইপারটেনশন, আর্থ্রাইটিস ক্যান্সার, অবসাদ,ও মহিলাদের বিভিন্ন রকমের অসুখ ইত্যাদি।

5. তাই এই অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে জমে, ফ্যাট হয়ে যাতে ওজন না বাড়ে, তাই আমাদের উচিত কিছু ক্যালরি বার্ন করা, মানে শরীরচর্চা করা।

6. এছাড়া নিয়মিত বেশি ক্যালরি যুক্ত খাবার, যেমন: চিনিযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল, ঘি,মাখন যুক্ত খাবার ইত্যাদি বেশি খেলেও ওজন বাড়ে, বা ব্যায়াম করলেও ঠিক মতো ব্যায়ামের ফল পাওয়া যায় না বা ওজন কমে না

7 .গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে, নিয়মিত কম ক্যালোরির খাবার খেলে, আয়ু বাড়ে, দেখতে কম বয়স্ক মনে হয়, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে,শারীরিক ফিটনেস বজায় থাকে এবং মনও প্রফুল্ল থাকে।

8. দৈনিক ১২০০ ক্যালোরির কম খাবার খাওয়া ঠিক নয়, এতে শরীরের কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়, মেটাবলিজম কমে যায়, শরীর ঠিক মতো পুষ্টি পায় না, ইত্যাদি।

9. শারীরিক চাহিদার চাইতে খুব কম ক্যালরি অনেক দিন ধরে খেলে, শরীরের ওজন কমে যাবে, শরীর দুর্বল হবে, অঙ্গ-প্রত্বঙ্গ গুলো ঠিক মতো কাজ করবে না এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।

10. আমরা যে খাবারের মাধ্যমে ক্যালরি পাই, তা আমরা সবই ব্যায়ামের মাধ্যমে বার্ন করবো না, আমাদের শরীরকে কাজ করার জন্য, যেমন: হৃদকম্পনের জন্য, শ্বাস নেয়ার জন্যও আমাদের কিছু ক্যালোরির দরকার।

11. তাছাড়া দৈনন্দিন অন্যান্য কাজের জন্যও, যেমন: হাঁটা চলা করা, ঘরের কাজ করা, ব্রেইনের কাজ করা, ইত্যাদির জন্যেও আমাদের কিছু ক্যালরি দরকার।  আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্বঙ্গ গুলোর কাজ করার জন্যই অনেক ক্যালরি দরকার।

ক্যালরি গ্রহণ করবেন কিভাবে?

যেহেতু, খাদ্যে বিদ্যমান তাপ বা ক্যালরি দেহযন্ত্রকে সচল রাখে। দেহের কাজ করার শক্তি যোগায়, তাই কিভাবে ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তা জানা ও বুঝা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।

 

1. একজন মানুষ দৈনিক কত ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তা নির্ভর করে তার উচ্চতা, বয়স, লিঙ্গ, তিনি কত কর্মঠ, এবং তার শরীরের মাসেলের ঘনত্ব কত, BMR, তিনি ওজন বাড়াতে, কমাতে, না ঠিক রাখতে চান, এবং তিনি ব্যায়ামের মাধ্যমে কত ক্যালরি বার্ন করেন, তার ওপর।

2. তাই প্রতিদিন, প্রতি বেলা ক্যালরি মেপে খাবার খেতে হবে।

3. ওজন ঠিক রাখতে বা কমাতে,নিয়মিত খেতে হবে কম ক্যালরির খাবার।  আর মাঝে মাঝে অল্প পরিমানে বেশি ক্যালোরির খাবার খেলেও ক্ষতি নেই। তবে সেদিন একটু বেশি ব্যায়াম করা যেতে পারে। তাহলে, সেদিনের মোট ক্যালরির চাহিদার সমতা বজায় থাকবে।

4. আর অধিক ক্যালোরির খাবার খেলে, সেটা দিনের প্রথম ভাগে খেলে ভালো, কারণ, তাহলে তা সারাদিনের কাজের মাধ্যমে বার্ন হয়ে যাবে। রাতে যেহেতু কম কাজ করা হয়, তাই তা রাতে খেলে শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমতে পারে।

5. খাদ্যের ক্যালরি জানার অন্যতম উপায় হচ্ছে: খাদ্যের প্যাকেটের লেবেল পড়া ও পুষ্টি তথ্য পড়া।

6. একবারে বেশি ক্যালোরির খাবার না খেয়ে, বারে বারে ২০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরির খাবার খাওয়া ভালো, এতে একবারে বেশি ক্যালরি শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমে যাবার ভয় থাকে না।

7. অধি 5. ক ফাইবার যুক্ত খাবার, যেমন: শাক-সবজি,ফল, বিনস, বাদাম ইত্যাদি, খেলে তা হজমেও সাহায্য করে। আর এগুলোর অন্যান্য উপকারিতা তো আছেই। এগুলোতে ক্যালোরিও কম থাকে। 

8. একবেলা বেশি ক্যালরি খেলে অন্য বেলা চেষ্টা করা উচিত যাতে কম ক্যালরি খাওয়া হয়।

9. অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবারগুলো হচ্ছে: লাল মাংশ: গরু বা খাসির মাংশ, মাখন,তেল, চর্বি, ফাস্ট ফুড, তেলে ভাজা খাবার, সালাদ ড্রেসিং, কেক, অধিকাংশ বিস্কিট, পনির, মেয়নেইস, বাদাম, চকলেট, আইসক্রিম, ক্রিম, চিনি যুক্ত খাবার, বিরিয়ানি, তেহারি, ফ্রাইড রাইস, কোমল পানীয় ইত্যাদি।

10. অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তির খাদ্যতালিকায় তাই তেল, চর্বি, ভাত, রুটি, শর্করা জাতীয় খাদ্য, তেলে ভাজা খাবার এবং মিষ্টি খাবারের পরিমাণ কম থাকলে, ওজন কমবে। আর ওজন ঠিক রাখতেও এগুলো মেপে খেতে হবে।

11. বেশি ক্যালরি হলেই যে সেটা খাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়|কিছু ক্যালরি বহুল খাবার, যেমন: বাদাম, চকলেট,পিনাট বাটার, মধু,পনির অল্প পরিমানে খেলে এগুলোর উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়।

12. কম ক্যালোরির খাবার হতে পারে: ডাল,সালাদ, ফল, শাক-সবজি, লাল আটা বা লাল চাল, সাদা মাছ বা কম তৈলাক্ত মাছ, মুরগির মাংশ, গমের পাস্তা বা নুডুলস, লো ফ্যাট দুধ, লো ফ্যাট টক দই, লো ফ্যাট পনির, চিনি ছাড়া যে কোনো খাবার,ইত্যাদি।

13. জলে কোনো ক্যালরি নেই,তাই যত ইচ্ছা পান করুনজল।