নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে ও আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। বন্ধুরা আমরা অনেকেই বেশির ভাগ করলা নামটা শুধু শুনলেই নাক মুখ ঠোঁট কুঁচকেফেলি । করলার তেঁতো স্বাদ অনেকেই পছন্দ করেন আবার অনেকেই একেবারেই মুখে তুলতে পারেন না এই সবজিটি। তিতা করলার স্বাদ সবার পছন্দের না হলেও এর আছে অনেক গুণ।
নিয়মিত তিতা করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর পুষ্টি উপাদান যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি১– ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২– ০.০২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৮ ক্যালরি। করলা (করলা , উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। এলার্জি প্রতিরোধে এর রস দারুণ উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উত্তম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে করলার রস খেলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। করলায় যথেষ্ট পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ছাড়াও এতে রয়েছে বহু গুণ। এবার জেনে নিন, করলার আরো পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-
ভিটামিন ও প্রোটিন
ভিটামিন সি আমাদের দেহে প্রোটিন ও আয়রন যোগায় এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তোলে। ফাইবার সমৃদ্ধ করলা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমায়। করলায় রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, জিঙ্ক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম।
রক্তের সমস্যা
করলা রক্তকে বিশুদ্ধ করে। দুই আউন্স করলার রসের সাথে অল্প লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে একবার পান করুন। ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে রক্তের দূষিত উপাদান দূর হয়ে যাবে এবং এলার্জি জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
ডায়াবেটিস
করলা এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক একধরনের এনজাইম বৃদ্ধি করে শরীরের কোষগুলোর চিনি গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। করলার রস শরীরের কোষের ভিতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের চিনির পরিমাণ কমে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত করলার রস খেলে উপকার পাবেন।
চোখের সমস্যা
করলায় আছে প্রচুর পরিমানে বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে বিটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী। তাই যাদের চোখের সমস্যা আছে তাঁরা নিয়মিত করলা খেলে চোখ ভালো থাকবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত করলা খেলে সর্দি,কাশি, মৌসুমী জ্বর ও অন্যান্য ছোটখাটো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অরুচি
করলা একটি রুচি বর্ধক সবজি। বদহজম কিংবা জ্বর হলে অনেক সময় মুখের রুচি চলে যায়। রুচি চলে গেলে করলা খেলে মুখের অরুচি ভাব চলে যায়।
শ্বাস কষ্ট দূর করে
করলার রসে আছে বহু গুণ। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের দূষণ দূর করে। হজমের গতি বাড়ায়। জলের সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।
তারুণ্য ধরে রাখে
করলা রক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এর রস কৃমিনাশক। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এ ছাড়া এটি ভাইরাসনাশকও। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন- তবে রোগীর উত্তম পথ্য করলা। করলা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে শরীরে রক্তের উপাদান বাড়ায়। করলার ভিটামিন সি ত্বক ও চুল ভালো রাখে এবং ম্যালেরিয়া জ্বরের জন্য খুব উপকারী। মাথাব্যথার উপশম করে করলা। এটি শরীর হতে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্ত পরিষ্কার করে। স্ক্যাভিজের মতো রক্তরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। করলার সবচেয়ে বড় গুণ এটি বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই করলা খেয়ে ধরে রাখুন তারুণ্য।
সুগার নিয়ন্ত্রণ
করলা অ্যাডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ নামক এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্ত থেকে শরীরের সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষের গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়া বাড়ায় ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা কমে।
ক্যানসার প্রতিরোধ
এটাতে যথেষ্ট লৌহ, ভিটামিন এ, সি এবং আঁশ। এন্টি অক্সিডেন্ট-ভিটামিন এ এবং সি বার্ধক্য বিলম্বিত করে। এছাড়াও করলায় রয়েছে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টিকারী লুটিন এবং ক্যানসার প্রতিরোধকারী লাইকোপিন।
হার্ট অ্যাটাক রোধে
করলা রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড বা টিজি কমায় আর বাড়ায় ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল। এতে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন করলা গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিরোধ হয় রক্তনালিতে চর্বি জমার কারণে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা।
খাবারে রুচি বাড়াতে
খাবারে রুচি বাড়ায়, অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে ফলের রস সকাল ও বিকালে খেলে খাবারে রুচি বাড়বে।
ম্যালেরিয়া রোগীর
ম্যালেরিয়ায় করলা পাতার রস খেলে খুব উপকারী। এছাড়াও ম্যালেরিয়ার রোগীকে দিনে তিনটে করলার পাতা ও সাড়ে তিনটি আস্ত গোলমরিচ এক সঙ্গে থেঁতো করে নিয়ম করে ৭ দিন খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। করলার পাতার রস খেলে জ্বর সেরে যায়। শরীর থেকে কৃমি দূর করতেও করলা কাজ করে।
বাতের ব্যাথা
বাতব্যাথা তাড়াতে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে হবে। এছাড়া্ও কামড়ানি, জল পিপাসা বেড়ে যাওয়া, বমিভাব হওয়া থেকে মুক্তি পেতে উচ্ছে বা করলার পাতার রস উপকারী। এক চা চামচ করলা পাতর রস একটু গরম করে অথবা গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
করলার পাতার উপকারিতা
করলা পাতার রস খুবই উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, নানা ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এনার্জি ও স্টেমিনা বাড়িয়ে তুলতেও করলা পাতার রস সাহায্য করে। অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার অভ্যাস থেকে লিভার ড্যামেজড হলে , সে সমস্যায় করলা পাতার রস দারুন কাজে দেয়। ব্লাড ডিজঅর্ডার সমস্যায় লেবুর রস ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন। করলা পাতার রসে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফেরেনজাইটিসের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে সোরিয়াসিসের সমস্যা, ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।