হেপাটাইটিস বি এর চিকিৎসা – Hepatitis B Treatment In Bengali

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে বা আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সাথে বা আপনাদের পাশে থাকতে।

ভাইরাল হেপাটাইটিস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ভাইরাল হেপাটাইটিসের মধ্যে হেপাটাইটিস বি অন্যতম। কারো কারো ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয় যা থেকে যকৃতের কার্যক্ষমতা হ্রাস,যকৃতের ক্যান্সার অথবা সিরোসিসও হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি কি?

হেপাটাইটিস বি একটি সংক্রামক রোগ। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি দেখা দেয় যা যকৃতে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। রক্ত, বীর্য অথবা শরীরের অন্যান্য তরল পদার্থের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। বড়দের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হয়।

হেপাটাইটিস বা লিভারের একিউট এবং ক্রনিক সংক্রমণের জন্য দায়ী লিভার ভাইরাসগুলো হচ্ছে হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, হেপাটাইটিস-ডি এবং হেপাটাইটিস-ই।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে লিভারে প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে এই রোগ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

রোগের বিস্তার

অনিরাপদ যৌনতা/অবাধ যৌনতা, একই সিরিঞ্জ, সুঁই বারবার ব্যবহার করা, শরীরে উল্কি আঁকা, স্যালুনে ব্যবহৃত ক্ষুর, রেজর, ব্লেড, কাঁচি হতে হাসপাতালে হেপাটাইটিস বি আক্রান্তদের পরিচর্যার কারণে, ডেন্টিষ্টের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত(অনিরাপদ) যন্ত্রপাতি, সিরিঞ্জ এ মাদক নেয়া, হেপাটাইটিস ‘বি’ বাহকের সিগারেট, লালা, তার সংস্পর্শে থাকা, আক্রান্তের রক্ত নেয়া, নবজাতকের আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে মায়ের বুকের বুকের দুধ থেকে,যদি মা হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমিত থাকেন।

(বাবা মায়ের যেকোনো একজন আক্রান্ত থাকলে তাদের নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে)

মূলত দুইভাবে হেপাটাইটিস-বি মানব শরীরে বিস্তার ঘটে

1.  উলম্ব ভাবে

2. আনুভূমিক ভাবে

রোগ ছড়াতে পারে সামাজিক মেলামেশায়

সামাজিক মেলামেশায় (হ্যান্ড শেক, কোলাকুলি) এই রোগ ছড়ায় না। এমনকি রোগীর ব্যবহার্য দ্রব্যাদি যেমন- গ্লাস, চামচ, জামা কাপড়ের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায় না।।

শুধুমাত্র যে সমস্ত দ্রব্য রোগীর রক্তের সংস্পর্শে আসে যেমন: ক্ষুর, ব্লেড, রেজার, টুথব্রাশ, সূচ) সেগুলোর  মাধ্যমেই এই রোগ ছড়াতে পারে।

উপসর্গ

আক্রান্ত রোগীর কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে।

এই রোগের সুপ্তবস্থা (ভাইরাস সংক্রমন থেকে রোগের লক্ষণ পর্যন্ত) প্রায় ৪ সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লাগে।

এক্ষেত্রে ফ্লু-এর মত জ্বর, ক্লান্তিবোধ, শরীর টনটন করা, ব্যাথা, বমি ভাব এবং ক্ষুধামন্দা-এই রোগের লক্ষণ।

রোগের প্রতিরোধ করা

যৌন মিলনের সময় প্রটেকশন ( CONDOM ) ব্যবহার করুন। কাচা সালাদ, ফল-মূল বেশি খাবেন। তেল-চর্বি যুক্ত খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। লাল মাংস খাবেন না। লবণ বা সোডিয়াম সল্ট একেবারেই খাবেন না। ভিটামিন বি, এন্টি-অক্সিডেন্ট যথা বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার বেশি খাবেন। প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটবেন। ব্যায়ামের অভ্যাস করবেন। দিনে একবেলার বেশি ভাত খাবেন না, দুই বেলা রুটি খাবেন। ধূমপান, মদ্যপান নিষিদ্ধ।

অযথা কোন Multivitamin খাবেন না। প্রচুর বিশ্রাম নিন। শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করুন।

পাঠকের উদ্দেশ্যে বলি, “আপনি আজ-ই HBsAG পরীক্ষা করে নিন। নিজের এবং পরিবারের সবার। যদি এখনও সংক্রমিত না হয়ে থাকেন তবে অতি দ্রুত হেপাটাইটিস-বি এর প্রতিষেধক টীকা নিন। হেপাটাইটিস ‘বি’ সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে প্রতিরোধ-ই একমাত্র উপায়।

1. ব্যক্তিগত পদক্ষেপ

  • ব্যক্তিগত দ্রব্যাদির সহব্যবহার্য বর্জন করা
  • একবার ব্যবহার্য সিরিঞ্জ ও সূচ ব্যবহার করা
  • নিরাপদ রক্তসঞ্চালন
  • নিরাপদ যৌন চর্চা

2. টিকা গ্রহণের মাধ্যমে

টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস-বি প্রতিরোধ করা সম্ভব। টিকা গ্রহণের আগে অবশ্যই হেপাটাইটিস-বি স্ক্রিনিং করে নেওয়া উচিত।

হেপাটাইটিস বি হলে করনীয়

হেপাটাইটিস বি পজেটিভ রোগীদের অহেতুক ঘাবড়ানোর কারণ নেই। তবে জেনে নিতে হবে যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের কারণে লিভার কোন ক্ষতি হয়েছে কিনা অথবা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। এর জন্য HBeAg, AST (SGOT), ALT (SGPT), HBV-DNA, পেটের আলট্রাসাইন্ড (Ultrasound) এবং এন্ডোসকপি (Endoscopy of upper GIT) পরীক্ষা করে নেওয়া দরকার। এই সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল এবং রোগীর শারীরিক উপসর্গ বিবেচনা করে সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা আরম্ভ করতে হয়।

হেপাটাইটিস বি এর লক্ষন

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন মাস পর এর লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ দেখা দিতে শুরু করে। হেপাটাইটিস বি এর লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ হাল্কা থেকে মারাত্মক হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের অ্যাকিউট সংক্রমণের লক্ষনগুলো নিম্নরুপঃ

1. খাদ্যে অরুচি।

2. ক্ষুধা মন্দা এবং বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।

3. মাংসপেশি এবং হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয়।

4. পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে হালকা জ্বর।

5. প্রশ্রাবের রং হলুদ হয়। চোখ হলুদ হয়ে যায়, একে জন্ডিস বলে।

6. গা চুলকানো।

7. গায়ের চামরার উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যায়।

8. অবসাদ বোধ করা।

9. বেশীরভাগ সময়েই মাথা ব্যথা থাকা।

সাধারনত এক তৃতীয়াংশ লোক লক্ষণ ও উপসর্গসমূহের কিছুই বুঝতে পারেন না, এক তৃতীয়াংশ লোকের মাথাব্যথা, গা শিরশির এবং জ্বর হয় এবং এক তৃতীয়াংশ লোকের, ক্ষুধামন্দা, জন্ডিস, জ্বর, ডায়রিয়া ও বমি দেখা দেয়।