সবুজ আপেলের উপকারিতা – Health Benefits Of Apples

আপেলের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তবে লাল আপেলের চেয়ে সবুজ আপেলের গুণ কিন্তু অনেক বেশি। সবুজ আপেল লাল আপেলের মতো তেমন স্বাদযুক্ত না হলেও এই আপেলের রয়েছে অনেক উপকারিতা। তাইতো প্রবাদে আছে, প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া লাগে না।

এই সুস্বাদু ফল আমাদের সবারই খেতে কমবেশি ভালো লাগে এবং নারী-পুরুষ সবার জন্যই আপেল খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। ডাক্তারদের মতামত অনুযায়ী প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না খুব একটা। আপেল সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, লাল ও সবুজ। লাল আপেলের গুণাবলি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু সবুজ আপেলের বিশেষ গুণগুলো সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই ধারনা নেই। তাই চলুন আজ জেনে নিই আমাদের দেহের সুস্থতায় সবুজ আপেলের গুনাবলি সম্পর্কে কিছু তথ্য।

দিনে একটা আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে!!! একটা যথেষ্ট প্রচলিত প্রবাদ। আপনি কি একটা অপ্রচলিত জিনিষ জানেন? এটা যদি দিনে একটা গ্রিন অ্যাপেল বা সবুজ আপেল হয়, তাহলে প্রাপ্ত উপকারিতা দ্বিগুণ হয়। সবুজ আপেল, পুষ্টির ভারসাম্য সহ, খাদ্যতালিকায় যোগ করার জন্য সেরা, তা সে স্বাস্থ্য কিংবা  ওজন কমানোর জন্য হোক। এখানে সবুজ আপেলে ৫টা দারুণ উপকারিতার কথা বলা হল যা খাদ্যতালিকার ভারসাম্য বজায় রাখবার জন্য জানা দরকার। আপেলে কোন ভিটামিন থাকে

 

আপেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা – Green Apple Benefits

 

সবুজ আপেলে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার

সবুজ আপেলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপদান হল ফাইবার, যা সবুজ আপেলে আছে প্রচুর পরিমাণে। সবুজ আপেলের এই ফাইবার উপাদান আমাদের পেটের যে কোন সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে ও পরিপাক প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে হতে সহায়তা করে।

কোলন ক্যানসার রোধ করে

সবুজ আপেলের ফাইবার উপদান আমাদের দেহকে কোলন ক্যানসার রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করে ও সবুজ আপেলের আঁশ কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে।

ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই

সবুজ আপেল আমাদের পেটের সুস্থতায় অনেক সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া সবুজ আপেলের মধ্যে কোন ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই যা আমাদের দেহের জন্য খারাপ। তাই আপনি নিশ্চিন্তে ডায়েট করতে পারেন সবুজ আপেল খেয়ে।

কোলেস্টেরল মাত্রা খুব কম ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে

বলাই হয়েছে কে সবুজ আপেলে কোন ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই এবং যতটুকু আছে তাও মাত্রায় খুব কম। যেহেতু সবুজ আপেলে প্রচুর পরিমানে ফাইবার উপাদান আছে তা দেহের কোলেস্টেরল মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে। আমরা যে সমস্ত ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল খাই বাঁ আমাদের শরীর তৈরি করে সেটা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে। গ্রিন আপেল তার ফাইবার উপাদান সহ আমাদের কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করার সাথে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমায়। জুস হিসেবে কিংবা কাঁচা খেলে, গ্রিন আপেল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের সাহায্য আর্টারিতে কোলেস্টেরলের মুক্তি প্রতিরোধ করে। ফাইবারও ব্লাড সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখে।

সহজেই হজম হয় বা হজমে সাহায্য করে

আপনি খুব ভারী কোন খাবার খেয়েছেন। চিন্তা করছেন হজম হবে কিনা ঠিকমত। কিন্তু চিন্তার কোন কারণ নেই ,আপনি একটি সবুজ আপেল খেয়ে নিন। কারণ সবুজ আপেলে আছে এনজাইম উপাদান যা খুব দ্রুত খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে। সবুজ আপেলে রয়েছে আঁশ। আঁশ হজমে সাহায্য করে। এটি বাউয়েল মুভমেন্ট ঠিক রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

লিভার ও নালীর সমস্যা রোধ করে ও  লিভার সুস্থ রাখে

সবুজ আপেল আমাদের দেহের লিভারের যে কোন সমস্যা দূর করে ও পাশাপাশি খাদ্য নালী, পরিপাক নালী ও অন্যান্য নালীর সমস্যা দূর করে। সবুজ আপেলের মধ্যে থাকা উপাদান লিভারকে ভালো রাখে। এটি বিভিন্ন ধরনের লিভারের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

রোগ প্রতিরোধ করে

সবুজ আপেল ডায়রিয়ার সমস্যা রোধ করে ও পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য ও বাতের সমস্যা দূর করে এবং বদ হজমের সমস্যাও দূর করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ

সবুজ আপেলে আছে ফ্লেভনয়েড ও পলিফেনল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আর এই উপদান দুটি আমাদের দেহের DNA এর ক্ষতি রোধ করে এবং ক্যানসারও রোধ করে।

ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন করে 

সবুজ আপেলের জৈব এসিড উপাদান আমাদের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে রাখে। তাই যদি আপনার বার বার ক্ষুধা লেগে থাকার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সবুজ আপেল খেয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেন।

দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে

সবুজ আপেল আমাদের দেহে শক্তি যোগায়। সবুজ আপেলের অন্যতম উপদান কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের দেহের জন্য খুব উপকারি। বিশেষ করে যারা খেলাধুলা করেন, কঠোর পরিশ্রম করেন তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ আপেল অবশ্যই রাখুন।

অকালে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে

সবুজ আপেল ভিটামিন এ, সি এমনকি অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ও ভালো উৎস। তাই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখতে সাহায্য করে সবুজ আপেল।

 

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ওজন কমাতে আগ্রহী কিন্তু বেশী খাওয়া কমাতে পারছেন না? গ্রিন আপেল দিয়ে খিদে কমান কারণ এটা অনেক তাড়াতাড়ি পেট ভরিয়ে দেয়। আপেলের ফাইবার হজম হতে অনেক বেশী সময় নেয় এবং পাকস্থলীতে অনেক বেশী জায়গা নেয়। কম ক্যালোরির পরিমাণ ডায়াট বজায় রাখতে সাহায্য করে, জলের অধিক পরিমাণ পেট ভরিয়ে রাখে এবং পলিফেনল ওজন বাড়া নিয়ন্ত্রণ করার সাথে সার্বিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজমের উন্নতি ঘটায়।

বৈজ্ঞানিকদের কথা অনুযায়ী, আপনি যদি ওজন কমাতে চান অথবা সুস্থ ওজন ধরে রাখতে চান সেক্ষেত্রে সবুজ আপেলের মধ্যের ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেটের কম পরিমাণ (১০% মতন) বিরাট পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

ডিটক্সিফায়ার 

জাঙ্ক ফুডের সাথে বিনামূল্যে যে সব টক্সিন এবং ফুড অ্যাডিক্টিভ যায় সেটা আমাদের কষিয়ে দেয় কি? ক্ষতিকারক টক্সিন বের করে গ্রিন আপেল লিভারকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এই সব আপেলের মধ্যে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা পিত্তের উৎপাদন বাড়ায় যা লিভারে পৌঁছানোর আগেই টক্সিন বের করে দেয়।

সবুজ আপেলেও আরসোলিক অ্যাসিড থাকে, যা লিভারের রোগ হবার ঝুঁকি কমায়। বিশেষকরে আপেলের খোসা উপকারিতায় ভরপুর।

হাড় মজবুত করে ও হাড় শক্ত করে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের শক্তি কমে যায় এবং ভেঙে গেলে সেরে ওঠা কষ্টকর। গ্রিন আপেলের ভিটামিন সি কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গ্রিন আপেল পরোক্ষ ভাবে অস্টিওপোরেসিসের সম্ভাবনা কমায় ঘটনাচক্রে যার অর্থ হল হাড় ভাঙবার সম্ভাবনা কম।

সবুজ আপেলের মধ্যে রয়েছে আয়রন, কপার, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজম পটাশিয়াম ইত্যাদি। এই মিনারেলগুলো হাড়কে শক্ত রাখে। এটি থাইরয়েড গ্রন্থির সঠিক কার্যক্রমে সাহায্য করে।

চুলের মান উন্নত করে

শুষ্ক ত্বক থেকেই অধিকাংশ সময়ে খুশকি হয়। গ্রিন আপেল যুক্ত শ্যাম্পু অথবা সবুজ আপেলের পেস্ট লাগালে সেটা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করার সাথে খুশকি কমায়। তাছাড়াও, আপেলের ভিটামিন সি অস্বাস্থ্যকর, শুষ্ক চুলের মোকাবিলা করতে সাহায্য করে যা প্রধানত ভিটামিন সি-র অভাব থেকে হয়।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে

যদি আপনি আপনার চোখ ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে চান তাহলে সবুজ আপেল খাওয়া শুরু করুন। যেহেতু সবুজ আপেলে ভিটামিন এ থাকে তাই এটি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে।

আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করে

সবজু আপেলে থাকা উপাদান মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এটি প্রবীণ বয়সে আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে কাজ করে।