ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কাজ, উৎস এবং অভাবজনিত রোগ – Vitamin B Diseases

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে বা আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। আমি চেষ্টা করবো আপনাদের সাথে বা আপনাদের পাশে থাকতে। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের কাছেএমন একটা জিনিসের ব্যাপারে আলোচনা করবো সেটা আমি জানি আপনাদের অনেকটাই ভালো লাগবে। আর পারবেন অনেক অজানা তথ্য। বন্ধুরা ‘বি’ কমপ্লেক্স বলতে বোঝানো হয় ভিটামিন ‘বি’ গোত্রের ৮ টি দ্রবণীয় বি ভিটামিনের যৌগ যা একসাথে শক্তির উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। তারা খাদ্যকে এনার্জিতে রূপান্তরিত হতে সাহায্য করে। দেহের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভিটামিন বি। মানবদেহের অত্যন্ত জরুরী কিছু ফাংশন নিয়ন্ত্রণে এটি সাহায্য করে। শরীরকে চাঙ্গা রাখতে ভিটামিন বি-এর জুড়ি মেলা ভার। সারা দিনে শরীরের ভেতরে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, তার চিকিৎসা মূলত এই ভিটামিনটিই করে থাকে। সেইসঙ্গে আরও নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব রয়েছে ভিটামিন বি-এর উপর। তাই প্রতিদিনই আমাদের শরীরে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর প্রয়োজন রয়েছে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ৮ টি ভিটামিন হচ্ছে- থায়ামিন(বি১), রিবোফ্লাবিন(বি২), নায়াসিন(বি৩), পেন্টোথেনিক এসিড(বি৫), পাইরিডক্সিন(বি৬), বায়োটিন(বি৭), ফোলেট(বি৯) এবং  কোবালামিন(বি১২)। এগুলোকে একসঙ্গে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স বলা হয়।

ভিটামিন বি1 (থায়ামিন)

বি১ ভিটামিনটিকে থায়ামিন নামেও ডাকা হয়। এর প্রধান কাজ হলো শর্করা বিপাকে অংশগ্রহণ করে শক্তিমুক্ত করা। তাছাড়া স্বাভাবিক ক্ষুধা বজায় রাখতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করা। সেইসঙ্গে কোষেদের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা নেয় বি১। প্রসঙ্গত, ডাল এবং হোল গ্রেন খাবারে এই ভিটামনটি প্রচুর পরিমাণে থাকে।

ভিটামিন বি2 (রিবোফ্লাবিন)

এটা অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড ও কার্বহাইড্রেডের বিপাকে অংশ নিয়ে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করা। হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ কমাতে এবং ব্লাড সেলের সংখ্যা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে বি২। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চুল এবং ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও এই বি২ বিশেষ কাজে আসে। তাইতো প্রতিদিন বি২ ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- বিনস, দুধ, দই এবং ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

ভিটামিন বি3

হার্ট অ্যাটাকের কারণে যদি মরতে না চান, তাহলে বি৩ এর ঘাটতি যাতে কোন সময় না হয়, সেদিকে খেয়ালরাখুন। কারণ বি৩ শরীরে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ভাসকুলার ডিজঅর্ডার এবং শ্বাসকষ্টজনিত নানাবিধ সমস্যাকে দূর রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেইসঙ্গে হাড়কে শক্তপোক্ত করতেও সাহায্য করে। সাধারণত সামুদ্রিক মাছ, মাংস এবং বাদামে ভিটামিন বি৩ পাওয়া যায়।

ভিটামিন বি5

নিয়মিত ডিম, বাদাম, দুগ্ধজাত খাবার, ব্রকলি, হোল গ্রেন এবং বিনস খেলে শরীরে এই ভিটামিনটির ঘাটতি দূর হয়। বি৫ কোষের গঠনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন বি6 (পাইরিডক্সিন)

এটা শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। প্রায় ১০০ ধরনের এনজাইম রিঅ্যাকশন যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে ভিটামিন বি৬। সেইসঙ্গে প্রোটিন মেটাবলিজম প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করে। প্রসঙ্গত, দুধ, দই, ডিম, মাংস এবং সবুজ শাক-সবজিতে এই ভিটামিনটি প্রচুর পরিমাণে থাকে।

ভিটামিন বি7

চুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বক এবং নখকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব রয়েছে বি৭ এর উপর। শুধু তাই নয়, মেটাবলিজম প্রক্রিয়া যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে ভিটামিন বি৭। মাংস, সয়াবিন এবং পনিরে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।

ভিটামিন বি9

প্রেগন্যান্সির সময় বি৯ ভিটামিনটির প্রয়োজন বেড়ে যায়। কারণ চিকিৎসক মহলে ফলেট নামে পরিচিত এই পুষ্টিকর উপাদানটি, শরীর যাতে ঠিক মতো প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে নজর রাখে। সেই সঙ্গে গর্ভাবস্থায় যাতে কোন ধরনের জটিলতা প্রকাশ না পায়, সে ব্যাপারেও সাহায্য করে। সেই কারণেই তো ভাবি মায়েদের নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি, হোল গ্রেন খাবার, বিনস, ডাল এবং কলা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

ভিটামিন বি12 (সায়ানোকোবালামিন)

এটা লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি ও উৎপাদনে সহায়তা করে। শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকার সংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।সেইসঙ্গে ব্রেন ফাংশনে যাতে কোন ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকেও নজর রাখে। এই ভিটামিনটির খোঁজ মেলে মূলত দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মাংস, সামুদ্রিক মাছ এবং সবজিতে।

ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর কিছু অভাবজনিত রোগ 

1. ভিটামিন বি 1 – এর অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়। দূর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, হাত পা ব্যাথা করা ইত্যাদি এই ভিটামিন বি 1 এর অভাবে হয়ে থাকে।

2. ভিটামিন বি 2 – ঠোঁট এবং তালু ফাটা, ঠোঁটের কোনায় ঘা, গলা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি এই ভিটামিন বি ২ এর অভাবে হয়ে থাকে।

3. ভিটামিন বি 3 – চুলকানি, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, দূর্বলতা এবং ডাইরিয়া বি ৩ এর অভাবে হয়ে থাকে।

4. ভিটামিন বি 5 – এর অভাবে ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

5. ভিটামিন বি 6 – উচ্চ রক্তচাপ,রক্ত স্বল্পতা,বিষন্নতা এবং ত্বকের সমস্যা ভিটামিন বি ৬ এর অভাবে অভাবে হয়ে থাকে।

6. ভিটামিন বি 7 – শিশুদের বৃদ্ধি এবং মানসিক বৃদ্ধি ভিটামিন বি ৭ এর অভাবে ব্যাহত হয়।

7. ভিটামিন বি 9 – অভাবে রক্ত স্বল্পতা হয়। গর্ভবতি মায়েদের ভিটামিন বি ৯ এর অভাবে গর্ভস্থ শিশুর জন্মবিকৃতি ঘটে থাকে।

8. ভিটামিন বি 12 – এর অভাবে রক্তস্বল্পতা এবং মানসিক সমস্যা দেখা যায়।