আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্ন ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন ক্ষতির কারণ হতে পারে। আজকাল অনেকের মাঝেই রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে যখন-তখন, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করার প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিত হবে ভিটামিন ট্যাবলেটের পরিবর্তে তাজা অথবা সঠিক উপায়ে রান্না করা ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তোলা। Vitamin A Tablets
ভিটামিন এক ধরনের জৈব পদার্থ যা খুব অল্প পরিমাণে হলেও আমাদের শরীরের বৃদ্ধি এবং পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এগুলো আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে তৈরি হয় না বলে দৈনন্দিন খাবারের সাথে বাইরে থেকে গ্রহণ করার প্রয়োজন পরে। বিশ্বের উন্নত এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশেই ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত খাদ্যে ভিটামিনের ঘাটতির ফলে ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয়। আবার কোনো কোনো রোগব্যাধি বা ওষুধও ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে। আজকাল রোগীদের মধ্যে (কখনো বা সুস্থ ব্যক্তির মধ্যেও) অকারণে ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করার প্রবণতা দেখা যায়। কিছু কিছু চিকিৎসকও রোগীদের ভিটামিন থেরাপি দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন ভিটামিনের উপকারিতা যেমন রয়েছে, ওভারডোজ বা পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার মারাত্মক ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি-৬’ এবং ভিটামিন ‘ডি’ অধিক মাত্রায় গ্রহণ করলে মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাক-সবজি, লতাপাতা, চাল, ডাল ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। ট্যাবলেটের পরিবর্তে এসব থেকে অতি সহজেই আমরা প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলো পেতে পারি।
ভিটামিন ‘এ’
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভিটামিন ‘এ’-এর বিপুল ভাণ্ডার রয়েছে। ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ দেশীয় খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে কলিজা, দুধ, ডিম, কালো কচু শাক, সবুজ কচু শাক, মুলা শাক, ডাঁটা শাক, কাঁচামরিচ, মিষ্টিকুমড়া, কাঁঠাল, আনারস, ধনেপাতা, পালং শাক, পাট শাক, লাল শাক, কলমি শাক, শিম, গাঁজর, পেয়ারা, আমড়া, পাকা পেঁপে প্রভৃতি বেশ সহজলভ্য। ভিটামিন ‘এ’ আমাদের শরীরের আবরণী কলাকে সুস্থ রাখে এবং জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। শিশুর দৃষ্টিশক্তি বিকাশে ভিটামিন ‘এ’-এর ভূমিকা অপরিহার্য। এর অভাবে শিশুদের রাতকানা রোগ হয়। অন্ধত্বের একটি বড় কারণ হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব। ক্যান্সারের ওপর বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে , খাদ্যে ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’-এর অভাব থাকলে মুখের ভিতরে, গলবীল এবং শ্বাসনালীর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। অধিক মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল গ্রহণ করলে মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ত্বকের খসখসে ভাব এমনকি ত্বকের উপরিভাগ খসে পরা, যকৃতের ক্ষতি, গর্ভস্থ শিশুর বিকলাঙ্গতার মতো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
শুধু রাতকানা রোগ থেকেই নয়, ভিটামিন ‘এ’ শিশুদের আরো বহু উপকার করে। ভিটামিন ‘এ’ দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোসহ সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। আমাদের দেশে সরকারিভাবে শিশুদের প্রতি বছর দুবার এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এ পদক্ষেপের কারণে দেশে শিশুস্বাস্থ্যের উন্নতির সঙ্গে রাতকানা রোগের প্রকোপ অনেক কমে গেছে। এ হিসাবে এ কার্যক্রমকে সরকারের অন্যতম সফল উদ্যোগ হিসেবে ধরা যেতে পারে।