ইউরিক এসিড দূর করার উপায় – How To Reduce Uric Acid In Bengali

ইউরিক এসিডের লক্ষণ – Uric Acid Problem

নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে বা আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। বন্ধুরা আমরা ইউরিক এসিড এর ব্যাপারে  সমন্ধে মোটামুটি সবাই জানি কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে ইউরিক এসিড বাড়ে কোন খাবারে বা ইউরিক এসিড দূর করার উপায় “ইউরিক এসিড এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া” এই সমস্যাটি কমবেশি সবাই জানেন এবং অনেকের এর সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই বলে খাবার বাছাই নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পরেন। তাই আজ এই বিষয়ে বিশদ ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। আমরা আজকে সেই ইউরিক এসিড এর ব্যাপারে আপনাদের জন্য আলোচনা করবো।

ইউরিক এসিড কি

প্রথমেই জানতে হবে ইউরিক এসিড কি এবং কেন এর মাত্রা বেড়ে যায়? আমাদের দেহে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, বাইকার্বনেট বা এলকালাইন অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইটস এর ব্যালেন্স রক্ষায় ইউরিক এসিড এর ভুমিকা আছে। সবার রক্তে এটি খুব অল্প পরিমানে থাকে যা মূলতঃ দেহের ডেড সেল এবং খাদ্যের উপাদান পিউরিন থেকে উৎপন্ন হয়। তবে এটি আমাদের দেহের একটি টক্সিক উপাদান।

আমরা যা খাই তার যতটুকু পুষ্টি উপাদান দেহের প্রয়োজন, শোষন ও বিপাক এর মাধ্যমে তার চাহিদা পূরণের পর বাকিটা দেহ থেকে বর্জ্য হিসাবে মল,মূত্র, ঘাম, শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ইউরিক এসিড ও এমন একটি উপাদান যা দেহের নির্দিষ্ট পরিমানের বেশি হলে দেহ থেকে অপসারণের মাধ্যমে আমাদের দেহে সামঞ্জস্যতা থাকে।

স্বাভাবিকভাবে ইউরিক এসিড, পিউরিন সমৃদ্ধ গৃহীত খাদ্য থেকে আমাদের দেহের যকৃতে উৎপন্ন হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে কিডনিতে পৌছায়। কিডনি একে দেহ থেকে বের করে দেয়।

মূলতঃ আমাদের দেহের অভ্যন্তরে তিন ভাগের দুই ভাগ ইউরিক এসিডই যকৃত বা লিভারে তৈরি হয়। বাকিটা অর্থাৎ এক ভাগ খাবার থেকে গৃহীত হয়। যকৃতে উৎপন্ন বাড়তি ইউরিক এসিড কিডনির কার্যকারিতায় মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারণ হয়। কিন্তু মূত্রের মাধ্যমে যা বের হয় এবং যকৃতে যা উৎপন্ন হয়, খাবার থেকে অতিমাত্রায় পিউরিন গৃহীত হলে, এর ঘনত্ব বেড়ে, বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হলে তখন রক্তে ইউরিক এসিড এর মাত্রা বেড়ে যায়।

ইউরিক এসিড বাড়ে কোন খাবারে

 অধিক চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবে না। যেমন : গরুর মাংস খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মহিষের মাংস ইত্যাদি।

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জাতীয় মাংস (অর্গান মিট) খাওয়া যাবে না। যেমন : লিভার, কলিজা, মগজ, জিহ্বা ইত্যাদি।

খোসাযুক্ত প্রাণী পরিহার করতে হবে। যেমন : চিংড়ি মাছ, শামুক, কাকড়া। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুটি, সিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।

কিছু কিছু শাকসবজি খাওয়া যাবে না। যেমন : পালং শাক,পুঁই শাক, ফুল কপি ব্রকোলি, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়শ , পাকা টমেটো ইত্যাদি। এছাড়া মাশরুমও খাওয়া যাবে না।

এলকোহোল, ক্যাফেন জাতীয় বেভারেজ খাওয়া যাবে না। যেমন : চা, কফি, কোমল পানীয়, কারো ক্ষেত্রে চকোলেট খাওয়া যাবে না।

মিষ্টি ফলে ফ্রুকটোস থাকে যা ইউরিক এসিড স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্ফটিককে বড় করে দেয়। তাই মিষ্টি ফল পরিহার করাই ভালো।

যেসব খাবারে বাধা নেই

চর্বিহীন মাংস খেতে হবে। যেমন : মুরগির মাংস। মাছ, কুসুম ছাড়া ডিম পরিমাণ মতো খাওয়া যাবে।

অধিক আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন : সবজি-শাক ইত্যাদি। এই আঁশ স্ফটিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীর থেকে মল আকারে বের হয়ে যায়।

এন্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন : লেবু চা, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল (পেয়ারা, আমলকি, কমলা, মাল্টা), গ্রিন-টি ইত্যাদি খেতে হবে।

এই সময় চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ জল পান করতে হবে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান করতে হবে।

কারা ইউরিক এসিডে বেশি আক্রান্ত হন

যাদের বংশে বাতের সমস্যা আছে তারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

যারা এলকোহল গ্রহণ করে।

যারা প্রোটিন জাতীয় খাবার চাহিদার তুলনায় বেশি খেয়ে থাকে এবং শাক সবজি কম খায়।

কিছু কিছু ওষুধ রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেমন : ডাই ইউরেটিক মেডিসিন।

যাদের উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।

যাদের ওজনাধিক্য রয়েছে তারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

যারা জল কম পান করে তাদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে উল্লিখিত শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ইউরিক এসিড দূর করার উপায়

1. গবেষণা মতে, উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এসিডিক উপজাত তৈরি করে। মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্য যেমন- মাখন এ ধরণের খাবার, এছাড়াও কর্ণ, অ্যালকোহল, চিনি, তেল ইত্যাদি খাবারগুলো ও শরীরে এসিডিক উপজাত তৈরি করে। অন্যদিকে কিছু খাবার যেমন- সবুজ শাকসবজি, মিষ্টিকুমড়া, পুদিনা, শশা, বাঁধাকপি, কিউই, আনারস, মাশরুম, আখরোট, ক্যাপসিকাম শরীরে ক্ষারীয় অবস্থা তৈরি করে। তাই গেঁটেবাত থেকে মুক্ত থাকার জন্য এই খাবারগুলো খাওয়া উচিৎ।

2. ইউরিক এসিড জমে থাকার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরী। অনেক বেশি পানি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং কম পিউরিন যুক্ত খাবার যেমন- শশা খেতে হবে। ১০০ গ্রাম শশায় ৭.৩ মিলিগ্রাম পিউরিন থাকে। তাই শশা ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতে এবং গেঁটেবাত প্রতিরোধে সাহায্য করে।

3. প্রাকৃতিক ভাবে ইউরিক এসিডের ক্রিস্টাল দূর করার জন্য জুস তৈরি করতে যা যা লাগবে – একটি মাঝারি আকারের শশা, ২টি সেলেরি ডাঁটা, এক টুকরো লেবু, ১ চা চামচ আদা কুঁচি।  সবগুলো উপাদান ভালো করে ধুয়ে নিন। শশা ও সেলেরি পাতা টুকরো করে কেটে নিয়ে ফুড প্রসেসরে বা ব্লেন্ডারে রাখুন। এর সাথে লেবুর টুকরো ও আদা কুঁচি যোগ করে মসৃণ জুস তৈরি  করুন। এই জুসটি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। সন্ধ্যায়ও এক গ্লাস পান করতে পারেন।

4. ৪ টি গাজর, ১ টি আম, ১ টুকরো আনারস, স্ট্রবেরি ৩০ গ্রাম এবং ১ টি লেবু দিয়ে জুস তৈরি করুন। সকালে এই পানীয়টি পান করুন।

5. ৩ টেবিলচামচ রোজমেরির তেল ও ৩ টেবিলচামচ সয়াবিন তেল মিশিয়ে জয়েন্টে মালিশ করলে গেঁটেবাতের ব্যথা দূর হয়।

6.  বেকিং সোডার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা ও প্রদাহ কমবে।

 শেষ কথা 

শেষ কথা বলতে আমি একটাই কথা বলবো যে আপনার যে কোনো সমস্যা অর্থাৎ যে কোনো শারীরিক সমস্যা যদি ভোগেন তাহলে ঘরোয়া উপায় তো আছেই সেটা আপনি করে দেখতে পারেন কমে গেলে বা সমস্যা সমাধান হলে তো আর কোনো কোথায় নেই। তবে আমি বলবো প্রত্যেক ক্ষেত্রে কমুক বা না কমুক সমস্যা সমাধান হোক বা না হোক আপনি অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে ক্লিয়ার হয়ে নেবেন। কান্না এটা আপনার শরীরের ব্যাপার কোনো রকম রিস্ক নেবেন না। সে সমস্যা ছোট্ট হোক বা বোরো বা মাঝারি। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।