আপেলের উপকারিতা – Apple Benefits In Bengali

নমস্কার বন্ধুরা কেমন আছো তোমরা ? আজকে একটু একটা ফলের ব্যাপারে জেনে নি। আমরা মোটামুটি প্রায় সবাই জানি আপেল এর ব্যাপারে। আমরা জানি যে আপেল এক প্রকারের ফল। খিদে পেলেই তো হাতে তুলে নিচ্ছি বার্গার অথবা পিৎজা বা আরও অন্নান্ন কিছু বাইরের বা রাস্তার খাবার যেটা আমাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করে বিষের মতন। পেট ভরলেই ভেবে নেই শরীরও ভরলো। যদিও, এটি খুবই ভুল ধারণা। আসলে এই ধরনের খাবারগুলো আমাদের শরীরকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই, শরীরে বাসা বাঁধছে হাজারো সমস্যা।

আমরা দৈনন্দিন জীবনে খালি খাবার দরকার তাই খাই। আমরা অর্ধেকের বেশি জিনিস না জেনেই খাই যে এটা আমাদের উপকার হবে না অপকার  হবে না কিছুই হবে না। তাই আজকে একটা বিষয়ের ওপর অর্থাৎ আপেলকে নিয়ে বলবো কি কি গুণাগুণ রয়েছে।

মূলত, খাদ্যগুলোর মধ্যে কতটা পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, তা জানতেই এই গবেষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে লাল এবং সবুজ আপেল যথাক্রমে ১২ এবং ১৩ তম স্থানে রয়েছে। তো দেখে নেওয়া যাক, আপেলের কোন কোন গুণ আমাদের কিভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আসুন আমরা দেখে নেবো আপেলের কি কি গুনাগুন রয়েছে নেবো।

আপেলে কোন ভিটামিন থাকে

ভিটামিন—– K
ভিটামিন…..C
ভিটামিন —–বি ৬ – B 6
খাদ্যশক্তি—– ৫২ কিলোক্যালরি 
শর্করা—– ১৩.৮১ গ্রাম 
চিনি—– ১০.৩৯ গ্রাম 
খাদ্যআঁশ—– ২.৪ গ্রাম 
চর্বি—– ০.১৭ গ্রাম 
আমিষ—– ০.২৬ গ্রাম 
জলীয় অংশ—– ৮৫.৫৬ গ্রাম 
ভিটামিন এ—– ৩ আইইউবিটা 
ক্যারোটিন—– ২৭ আইইউ 
লুটেইন—– ২৯ আইইউ 
থায়ামিন—– ০.০১৭ মিলিগ্রাম 
রিবোফ্লেভিন—– ০.০২৬ মিলিগ্রাম 
নিয়াসিন—– ০.০৯১ মিলিগ্রাম 
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড—– ০.০৬১ মিলিগ্রাম 
ফোলেট—– ৩ আইইউ 
ভিটামিন সি—– ৪.৬ মিলিগ্রাম 
ভিটামিন ই—– ০.১৮ মিলিগ্রাম 
ভিটামিন কে—– ২.২ আইইউ 
ক্যালসিয়াম—– ৬ মিলিগ্রাম 
আয়রন—– ০.১২ মিলিগ্রাম 
ম্যাগনেসিয়াম—– ৫ মিলিগ্রাম 
ম্যাংগানিজ—– ০.০৩৫ মিলিগ্রাম 
ফসফরাস—– ১১ মিলিগ্রাম 
পটাশিয়াম—– ১০৭ মিলিগ্রাম 
সোডিয়াম—– ১ মিলিগ্রাম 
জিংক—– ০.০৪ মিলিগ্রাম 
ফ্লোরাইড—– ৩.৩ আইইউ

1.সাদা ঝকঝকে দাঁত

আপেল খেলে দাঁতের দারুণ উপকার হয়। তার কারণ, আপেলে কামড় দিয়ে যখন আমরা চিবোতে শুরু করিই, তখন আমাদের মুখের ভিতর লালার সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতিতে দাঁতের কোণা থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে আসে। এর ফলে সেই ব্যাকটেরিয়া আর দাঁতের কোনও ক্ষতি করতে পারেনা। তাই বলে, শুধু আপেল খেয়ে দাঁতের যত্ন নিতে যাবেন না যেন! মনে করে, পেস্ট ব্রাশ ব্যবহার করে দাঁতের যত্ন নেবেন।

2.ক্যান্সার দূর করে

আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপেল খেলে অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সারের সম্ভাবনা প্রায় ২৩% হারে কমে। কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনল থাকে। এছাড়াও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা আপেলের মধ্যে এমন কিছু উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন, যা ট্রিটারপেনয়েডস নামে পরিচিত। এই উপাদানটি লিভার, স্তন এবং কোলোনের মধ্যে ক্যান্সারের কোষ বেড়ে উঠতে বাঁধা দেয়। ন্যাশানাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ইন দ্য ইউ এস- এর গবেষণা থেকে জানা যায় যে, আপেলের মধ্যে যে পরিমাণে ফাইবার থাকে, তা মলাশয়ের ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে।

3.ডায়াবেটিসের সমস্যা কমায়

যে সকল মেয়েরা প্রতিদিন আপেল খান, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ২৮% কমে যায়। তার কারণ, আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা রক্তে শর্করার পরিমাণ সঠিক রাখতে সাহায্য করে।

4.কোলেস্টেরল কমায়

আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা অন্ত্রের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক থাকে। আর একবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করলে হার্টের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।

5.হার্ট ভালো রাখে

আগেই বলা হয়েছে যে, আপেলের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, আপেলের খোসার মধ্যে যে ফেনলিক উপাদান থাকে, তা রক্তনালিকার থেকে কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। এর ফলে হার্টে রক্তচলাচলা স্বাভাবিক থাকতে। ফলে হৃদযন্ত্রের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে।

6.গলস্টোন সারাতে সাহায্য করে

পিত্তথলির মধ্যে অতি পরিমাণে কোলেস্টেরল জমে গেলে তখন গলস্টোন হয়। গলস্টোন কমানোর জন্য ডাক্তাররা সব সময় ফাইবার সমৃদ্ধ ফল বা খাদ্য খাওয়ার উপদেশ দেন। সেই সঙ্গে গলস্টোন সারাতে ওজন এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এই সবকটি কাজ যাতে ঠিক মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে আপেলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

7.ডায়ারিয়া এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

আপনি কি সারাদিনে বারে বারে বাথরুমেই যেতে থাকেন? কোনও কিছু খেলেই বাথরুমে দৌড়াতে হয়? আবার এমনও কি হয়, যখন বাথরুমে গেলেন তখন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়? অথচ কিছুতেই পেট পরিষ্কার হয় না। তাহলে এই দুই সমস্যারই একটাই ওষুধ। তা হল, আপেল, যা প্রয়োজন অনুযায়ী বর্জ্য থেকে অতিরিক্ত জল টেনে রাখতে পারে। ফলে একদিকে যেমন অতিরিক্ত বার বাথরুমে যেতে হয় না, তেমনিই হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, সেই সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে।

8.ওজন কমাতে সাহায্য করে

কত মানুষই তো আছেন, যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে জর্জরিত। আবার শুধুমাত্র এই কারণে, নানারকম রোগও শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। এমনকি, ডায়াবেটিস, হাড়ের রোগ কত কিছুই না হয়। তাই সেই সমস্ত রোগকে যদি বিদায় জানাতে চান, তাহলে নিয়ম করে আপেল খান। ফলটিতে উপস্থিত ফাইবার আপনার পেট ভরাতে সাহায্য করে কোনও ক্যালরি ছাড়াই। এর ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

9.লিভার সুস্থ থাকে

আমরা যা কিছু খাই, তার মধ্যে কিছু না কিছু ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। ফলে আমাদের লিভারের ক্ষতি হতে শুরু করে। যে কারণে লিভারকে সুস্থ রাখাটা খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তবে লিভারকে ১০০ শতাংশ সুস্থ রাখতে পারে আপেল। এটি খুব সহজেই লিভারে জমা হওয়া ক্ষতিকারক উপাদানদের বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।

10.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আপেলের মধ্যে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যা কুয়েরসেটিন নামে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে।