নমস্কার বন্ধুরা আমি শান্তনু আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ও স্বাগতম আমার এই পেজ এ। আশা করবো আমার প্রত্যেক লেখা আপনাদের অনেকটাই উপকার করতে সাহায্য করবে বা আশা করবো ভালো লাগবে আপনাদের। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করি। আজ আমি আপনাদর শসার রস বা শসার জুস কতটা উপকারী সেটা বলবো। আর বলবো শসার জুস বা শসার রস কতটা কাজে লাগে আর কি কি কাজে লাগে সেটাও আপনাদের জানাবো। বন্ধুরা আমরা শসা কম বেশি সবাই খেয়ে থাকি বা সালাদ এও আমরা ব্যাবহার করে থাকি। তবে খাবারের সাথে অনুষঙ্গ হিসেবে শসার কদর বেশি হলেও পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে শসা মোটেও পিছিয়ে নেই।
শসা গোর্ড পরিবারের কিউকারবিটাসের অন্তর্গত একটি অতি পরিচিত উদ্ভিদ। শসা এক প্রকারের ফল। লতানো উদ্ভিদে জন্মানো ফলটি লম্বাটে আকৃতির এবং প্রায় ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এর বাইরের রং সবুজ। তবে পাকলে হলুদ হয়। ভেতরে সাদাটে সবুজ রঙের হয়, এবং মধ্যভাগে বিচি থাকে। এর উত্পত্তি ভারতবর্ষে হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই জন্মে। এটি সাধারণত গরমের সময় বেশি পাওয়া যায়। বেশ কয়েক জাতের শসা রয়েছে। এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং জলের পরিমাণ বেশি থাকে। খোসাসহ একটি কাঁচা শশা’র প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালোরির পরিমাণ ২০ কিলো ক্যালোরি। বাংলাদেশে শশা প্রধানত সালাদ হিসেবে ব্যবহূত হয়। শসা যতটাই সাদাসিধে হোক না কেন খাদ্যগুণ বিচারে এটি অনন্য।
স্বাস্থ্যকর ও সহজলভ্য বলে আমরা সারা বছরই শসা খেতে পছন্দ করি। প্রচুর পরিমাণ পানি, ভিটামিন কে, সিলিকা, ভিটামিন এ, সি, ক্লোরোফিল থাকে বলে শসাকে দারুণ উপকারী সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়। কাঁচা এবং রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির জন্য জুস হিসেবেও খাওয়া যায়। নিয়মিত শসার জুস খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে।
কিন্তু এই শসা রস কতটা আমাদের ত্বকের পক্ষে উপকারী সেটাই একটু আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। শসায় প্রায় ৯০ শতাংশ জল , ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে ও ক্যাফিক এসিড রয়েছে, যা ত্বককে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। এ ছাড়া ত্বকের জলশুন্যতা দূর করতে এই উপাদান বেশ কার্যকর। আর ত্বকের চুলকানি ও অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত শসার রস ব্যবহার করতে পারেন। আমরা দেখে নেবো শসার জুসের উপকারিতা।
1. ওজন কমাতে
যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসার জুস দারুণ কার্যকর। এতে ক্যালরি কম থাকে এবং প্রচুর পানি থাকে, যা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে পারে।
2. হজম ভালো হয়
ডায়েটারি ফাইবার ও প্রচুর পানি থাকায় শসার জুস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পরিপাকতন্ত্র থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে হজমে সাহায্য করে শসার জুস।
3. মাথার ব্যাথা কমায়।
ঝিমঝিম ভাব কাটানোর জুস হিসেবে দারুণ কার্যকর। এ ছাড়া মাথা ব্যথা কমাতে পারে শসার জুস।
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর এ জুস খেলে মারাত্মক ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। শসাতে যে ল্যারিকিরেসিনোল, পিনোরিসিনোল ও সিকোইসো ল্যারিকিরেসিনোল নামের উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
5. দেহের ভেতর–বাইরের তাপ শোষক
কখনো কখনো আপনি শরীরের ভেতর-বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ অনুভব করেন। দেহে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। এ অবস্থায় একটি শসা খেয়ে নিন।এ ছাড়া সূর্যের তাপে ত্বকে জ্বালা অনুভব করলে শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিন। নিশ্চিত ফল পাবেন।
6. প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে
প্রতিদিন আমাদের দেহে যেসব ভিটামিনের দরকার হয়, তার বেশির ভাগই শসার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ, বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়। সবুজ শাক ও গাজরের সঙ্গে শসা পিষে রস করে খেলে এই তিন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
7. ত্বক বান্ধব খনিজের সরবরাহকারী
শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন আছে, যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়।
8. হজম ও ওজন হ্রাসে সহায়ক
শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যাঁরা দেহের ওজন কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা স্যুপ ও সালাদে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলে তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর হয়।
9. শরীরকে আর্দ্র রাখে
প্রতিদিন এক গ্লাস করে শসার জুস খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। শসায় প্রচুর পানি থাকায় শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
10. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়, কোলস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
11. চোখের জ্যোতি বাড়ায়
সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন।এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে।চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে।
12. দেহের জলশুন্যতা দূর করে
ধরুন আপনি এমন কোথাও আছেন, যেখানে হাতের কাছে পানি নেই, কিন্তু শসা আছে। বড়সড় একটা শসা চিবিয়ে খেয়ে নিন। পিপাসা মিটে যাবে। আপনি হয়ে উঠবেন চনমনে।কারণ, শসার ৯০ শতাংশই পানি।
13. ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে
শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল—এ তিনটি আয়ুর্বেদিক উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে।
14. বিষাক্ততা দূর করে
শসার মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায়।
আরও পড়ুন – শসা ত্বকের কী কী উপকার করে – Cucumber Benefits For Skin
15. মুখরোচক শসার জুস।
উপকরন
১. শসা কুচি ১ কাপ
২. জল ২ কাপ
৩. পুদিনাপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ
৪. কাঁচামরিচ ১ টি মিহিকুচি
৫. বিট লবন আধা চা চামচ
৬. লবন স্বাদমত
৭. সবুজ ফুড কালার সামান্য (ইচ্ছে হলে)
৮. লেবুর রস ১ টেবিল চামচ
প্রনালী :
সবগুলো উপকরন ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। এরপর গ্লাসে ছেকে নিয়ে বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করুন মুখরোচক শসার জুস।
শেষ কথা
“প্রচুর পরিমাণ জল , ভিটামিন কে, সিলিকা, ভিটামিন এ, সি, ক্লোরোফিল থাকে বলে শসাকে দারুণ উপকারী সবজি হিসেবে গণ্য করা হয়।” ——– দুঃখের বিষয় এই যে এতসব ভালো জিনিষের সাথে সামান্য পরিমানে চাষের সময় প্রয়োগ করা কীট নাশক ও থেকে যায়।