ভিটামিন ই উপকারিতা – Vitamin E Benefits

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছো তোমরা ? আমি খুব ভালো আছি তোমাদের জন্য। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো। ভালো থাকার কারণ তা হল তোমাদের অনেক ভালোবাসা আর অনেকটাই সাপোর্ট পেয়ে আমি সত্যি অনেক আনন্দিত। আজকে আমরা আলোচনা করবো ভিটামিন ই – Vitamine E ব্যাপারে। আশা করবো অনেকটাই আপনাদের উপকার হবে তার সাথে অনেক কিছু অজানা তথ্য আপনারা জানতে পারবেন। চলুন শুরু করা যাক আজকের মূল বিষয় বস্তু।

শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন হলো ‘ই’ E । এর অভাবে চুল পড়ে যাওয়া, পেশি দুর্বল হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি সমস্যা হয়। এসব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ই’ –  Vitamine E সমৃদ্ধ খাবার রাখা জরুরি। ভিটামিন ‘ই’-এর অভাব পূরণে সয়াবিন, বাদাম, ব্রকোলি, মাছ, শাক, অ্যাভোক্যাডো ইত্যাদি খেতে পারেন।

খাবারের গুরুত্ব

সুস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল সুষম এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার খাওয়া। আপনি যদি খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিশেষ কোনো ভিটামিন বা মিনারেল পেতে চান তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে আপনার খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিন। আপনি যদি মনে করেন খাবারের মাধ্যমে আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন বা মিনারেল পাচ্ছেন না তাহলে একটি পথ্যবিধি মেনে চলুন।

বিভিন্ন খাবারে ভিটামিন-ই পাওয়া যায়। তা হচ্ছে- * উদ্ভিজ্জ তেল (কর্ন, কার্পাস তুলার বীজ, সয়াবিন) * গমের ভ্রুণ
সমগ্র খাদ্যশস্য * সবুজ শাকসবজি প্রভৃতি। খাবার রান্না করলে এবং সংরক্ষণ করে রাখলে ভিটামিন-ই কিছুটা নষ্ট হয়। শুধু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে সেটি সুন্দর খাবারের বিকল্প হতে পারে না এবং সেটি শরীরে শক্তিও উৎপন্ন করতে পারবে না। অন্যান্য খাদ্যের উপস্থিতি ছাড়া ভিটামিনগুলো নিজেরা কাজ করতে পারে না। শরীরে

ভিটামিন-ই এর শোষণের জন্য কিছুটা চর্বির প্রয়োজন হয়। ভিটামিন-ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনে, যেমন- ডি-কিংবা ডিএল আলফা টকোফেরিল অ্যাসিটেট, ডি- কিংবা ডিএল-আলফা টকোফেরল এবং ডি-কিংবা এল-আলফা টকোফেরিল এসিড সাক্সিনেট। ভিটামিন-ই গ্রহণের আগে যে কথা মনে রাখতে হবে আপনি যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভিটামিন-ই গ্রহণ করেন, তাহলে লেবেলের লেখাগুলো ভালো করে পড়ে নেবেন এবং কোনো ধরনের সতর্কতার উল্লেখ থাকলে সেটি মেনে চলবেন।

 

ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে কী সমস্যা হয় ?

আলোচিত ভিটামিনের নাম ভিটামিন-ই। অনেক খাদ্যে ভিটামিন-ই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে বলে শরীরে তার অভাব পরিলক্ষিত হয় না। ভিটামিন-ই রাসায়নিক ক্রিয়া বা অক্সিডেশনকে প্রতিহত করে, এ অক্সিডেশন শরীরে ক্ষতিকর
প্রভাব ফেলে। শরীরের স্নায়ু ও মাংসপেশির কাজ সঠিক করার জন্যও ভিটামিন-ই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এসব হচ্ছে-

অন্ত্রের অসুখ * লিভার বা যকৃতের অসুখ অগ্ন্যাশয়ের অসুখ, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলী অপসারণ। যে শিশু টিনের দুধ খায় তাদের ভিটামিন-ই এর ঘাটতি হতে পারে। মূলত পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ভিটামিন-ই এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।

দাবি করা হয় যে, ভিটামিন-ই ক্যান্সারের চিকিৎসায় এবং ব্রণ, বয়স বেড়ে যাওয়া, চুলপড়া, মৌমাছির হুলের কামড়ের যন্ত্রণা, ডায়াপার র্যাশ, বার্সাইটিস, পাকস্থলীর ঘা, হার্ট অ্যাটাক, প্রসব যন্ত্রণা, কিছু রক্তের অসুখ, গর্ভপাত, মাংসপেশির দুর্বলতা, দুর্বল অঙ্গস্থিতি, যৌন অক্ষমতা, বন্ধ্যত্ব, মেনোপজ, রোদে পোড়া ত্বক এবং বায়ুদূষণের ফলে ফুসফুসের ক্ষতি প্রভৃতি প্রতিরোধ করে। এসব দাবি প্রমাণিত হয়নি। কিছু ক্যান্সারের চিকিৎসায় বর্তমানে ভিটামিন-ই ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি কার্যকর কি না সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। যে ব্যক্তির অসুখ থাকার ফলে
শরীরে ভিটামিন-ই শোষিত হতে পারে না, তাদের বেলায় এ ঘাটতি দেখা যায়।

ভারসাম্যহীনতা

ভিটামিন ‘ই’-এর ঘাটতি হলে শরীরে ভারসাম্যহীন বোধ হয়। মূলত ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে স্নায়ুগুলোতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে যায়। এ কারণে এ সমস্যা হয়।

চুল পাতলা হয়ে যাওয়া

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ই’ থাকলে চুল ও ত্বক ভালো থাকে। ভিটামিন ‘ই’ ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। ‘ই’-এর অভাবে চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়।

ঝাপসা দেখা

আপনি যদি প্রায়ই ঝাপসা দেখেন, বিশেষ করে রাতে, তবে ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে এমনটা হতে পারে। ভিটামিন ‘ই’-এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান চোখের রেটিনাকে সুরক্ষা দেয়। এর অভাবে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়। এ ছাড়া এই ভিটামিনের অভাবে শরীরে হালকা রক্তশূন্যতা হতে পারে।

পেশির দুর্বলতা

   অনেক গবেষণায় বলা হয়, ভিটামিন ‘ই’-এর অভাবে মায়োপ্যাথি হয়। মূলত শরীরে পেশির আঁশের দুর্বলতা হলে এ           সমস্যা হয়। এ কারণে শরীর দুর্বল লাগতে পারে। তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ‘ই’ রাখা জরুরি।

অ্যালার্জি 

ভিটামিন-ই গ্রহণের পর কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় কিংবা অ্যালার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসককে জানাতে হবে।

গর্ভাবস্থা

এটি গুরুত্বপূর্ণ, যখন আপনি গর্ভবতী হচ্ছেন তখন পর্যাপ্ত ভিটামিন গ্রহণ করছেন। তবে আপনাকে দেখতে হবে গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা আপনি সঠিক মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করছেন কি না, কেননা ভ্রুণের বিকাশ এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে মায়ের সঠিক পুষ্টি গ্রহণের ওপর। গর্ভাবস্থায় বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে পারে, তাই বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করবেন না।

বুকের দুধ

শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্তনদানরত মহিলার সঠিকমাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকেন তা হলে মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এ ক্ষেত্রে শিশুকে অন্য উপায়ে ভিটামিন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ানোকালে অতিরিক্ত মাত্রায়
ভিটামিন গ্রহণ করেন তাহলে আপনার নিজের জন্য এবং শিশুর জন্য সেটি ক্ষতিকর হবে।

শিশু

দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে শিশুর অসুবিধার কথা জানা যায়নি। শিশু বুকের দুধ খেলে তাকে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন দেয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী শিশুর শরীরে ভিটামিন-ই এর মাত্রা কম থাকে। আপনার চিকিৎসক এ ব্যাপারে ভিটামিন-ই এর মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন।

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ

দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধার কথা জানা যায়নি।

অন্য ওষুধ গ্রহণ

আপনি যদি ভিটামিন-ই গ্রহণের সময় অন্য কোনো ওষুধ খেতে থাকেন তা হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দুটি ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারেন কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন।

অন্যান্য চিকিৎসাগত সমস্যা

অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা উপস্থিত থাকলে ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। আপনার অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা আছে কি না সেটি চিকিৎসককে অবশ্যই জানাবেন, বিশেষ করে আপনার যদি
রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকে। আপনি কি পর্যাপ্ত ভিটামিন-ই গ্রহণ করছেন ভিটামিন-ই শরীরের জন্য একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন। গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, চোখের ছানি, মাংসপেশির ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও আন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন-ই গ্রহণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন-ই পাওয়ার জন্য নিচের পরামর্শ গ্রহণ করুন-

ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খান 

বাদাম, খাদ্যশস্য, ভুট্টার ভ্রুণ এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-ই এর চমৎকার উৎস। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখুন।

ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট খান

খাদ্য থেকে ১০০-৪০০ আইইউ ভিটামিন-ই পাওয়া সম্ভব হয় না। ভিটামিন-ই এর অন্যতম ভালো উৎস জলপাই তেল। অথচ প্রতি চা চামচ জলপাই তেলে থাকে প্রায় ১.৭৪ আইইউ ভিটামিন-ই। তার মানে দৈনিক ১০০ আইইউ ভিটামিন-ই পেতে আপনাকে দৈনিক খেতে হবে ৩ কাপ জলপাই তেল। সুতরাং পর্যাপ্ত ভিটামিন-ই পেতে খাবারের পাশাপাশি আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ভিটামিন-ই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

ভিটামিন-ই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শরীরে ভিটামিন-ই এর যদিও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবু সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে কিছু অবাঞ্ছিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। অল্প সময়ের জন্য অনুমোদিত মাত্রায় ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে সাধারণত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। যদি ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে আপনার কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে অতি শিগগিরই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। দৈনিক ৪০০ ইউনিটের বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে নিুলিখিত
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে- চোখে ঝাপসা দেখা * ডায়রিয়া * মাথাঘোরা * মাথাব্যথা * বমিবমি ভাব * পেট কামড়ানো * অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা।

ভিটামিন ‘ই’-এর কিছু উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ড

কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে শরীরে চাই অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা মেলে ভিটামিন-ই থেকে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের জন্য ক্ষতিকারক মুক্তমৌলের সঙ্গে লড়াই করে। দূষণ এবং ধূপমান থেকে শরীরে মুক্তমৌল তৈরি হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’তে ভরপুর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি সহায়ক, যা শরীরে তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া-নাষক অ্যান্টিবডি।

ক্ষত সারাতে

বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে এর রয়েছে নানান উপকারীতা। এরমধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।

বয়সের ছাপ দূর করা

কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।

অকালে পাকা চুল

চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুপ পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।