মাছ খাওয়ার উপকারিতা – Benefits Of Eating Fish

মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয় আমাদের। প্রতি বেলাতেই খাবারে মাছ আমাদের চাই-ই চাই। মাছে অনেক পুষ্টি, ভিটামিন আছে বলেই জানি। কিন্তু জানেন কি মাছে ক্ষতিকর উপাদানও আছে?

Benefits Of Eating Fish Everyday

মাছ খেতে কার না ভালো লাগে। বিভিন্ন কারণে পুষ্টিবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বলেন, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কোনো না কোনো মাছ রাখা দরকার। কেননা নানা রকমের মাছে রয়েছে হাজারো খাদ্যগুণ। নিয়মিত মাছ খেলে মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কমে যায় মস্তিষ্কের বয়স। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই মাছ খেলে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি ভালো হয় বলে প্রচলিত আছে। তবে এই মাছ খাওয়ার যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে, তেমনি এই মাছেই আছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। অতিরিক্ত মাছ খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সামুদ্রিক মাছের কিছু উপাদানের কারণে গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অবস্থায় মাঝের উপকারী উপাদানগুলোই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মাছ খাওয়ার উপকারিতা

স্ট্রোক প্রতিরোধ করে : গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অন্তত সপ্তাহে একদিন মাছ খান তাদের স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা ১৩ শতাংশ কম, যারা মাছ একবারেই খান না তাদের তুলনায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট অ্যাসোসিয়েশন, সপ্তাহে অন্তত দুই দিন মাছ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ মাছের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা হৃদপি-ের সুরক্ষা করে।
ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে : চর্বি জাতীয় মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটের বিরাট উৎস। ওমেগা-৩ কার্ডিওভ্যাসকুলারের সুস্থ্যতার জন্য কাজ করে। তাছাড়া, বাত, ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ এবং কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে।
সাধারণত ঠাণ্ডা পানির মাছে বেশি ওমেগা-৩ থাকে। যেমন: সামুদ্রিক পোনা মাছ, হেরিং, স্যামন, ম্যাকেরল এবং ট্রাউট মাছ।
শিশুদের নিয়মিত মাছ খাওয়ালে স্বাভাবিকের তুলনায় বুদ্ধি বাড়ে। রোজ নয়, শিশুদের সপ্তাহের মাত্র একদিন মাছ খাওয়ালেই যারা মাছ খায় না তাদের তুলনায় আইকিউ চার পয়েন্ট বেশি হয়। এমনকি যারা মাঝে মধ্যে মাছ খায় তাদের আই কিউ-ও স্বাভাবিকের তুলনায় ৩.৩ পয়েন্ট বেশি হয়। শিশুদের নিয়মিত মাছ খাওয়ালে তাদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ঘুমের মাত্রা ঠিক থাকে। শুধু ঘুমের সময় নয়, ভালো ঘুমের জন্যও উপকারী মাছ। এই সমীক্ষা চালানো হয় চিনের ৫৪১ জন শিশুর ওপরে। এদের বয়স ৯ থেকে ১১ বছর। ৫৪ শতাংশ ছেলে এবং ৪৬ শতাংশ মেয়ে। শুধু ওই শিশুরাই নয়, তাদের অভিভাবকদের থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নেওয়া হয়েছে। তার ওপরে নির্ভর করেই তৈরি হয়েছে রিপোর্ট।

গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর

মাছে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঙ্গর, সোর্ডফিশ, টুনাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে অতিরিক্ত মাত্রায় পারদসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান থাকে, যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশেই প্রক্রিয়াজাত মাছ বিক্রি করা হয়। এই প্রক্রিয়াজাত করণের কোনো ত্রূটির কারণে মাছ খাওয়া দেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অতিরিক্ত মাছ খাওয়া

নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সামুদ্রিক মাছসহ বিভিন্ন স্বাদুপানির মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে গবেষক নরম্যান হর্ড জানান, এই বিশেষ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রদাহবিরোধী ধর্ম রয়েছে। আর এ কারণে হার্টের স্বাস্থ্য ও প্রদাহজনিত সমস্যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড উপকারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি অতিরিক্ত খেলে শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থা পাল্টে যেতে পারে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়ে শরীর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, হতে পারে রোগ সংক্রমণ। ওই গবেষক বলেন, অতিরিক্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের কারণে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা পাল্টে যায়, যা জীবাণুর সঙ্গে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই পরিমিত পরিমাণে মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

কোন মাছ আমাদের কি উপকার করে 

মাছ আমাদের নিত্য দিনের খাবারের সঙ্গী। আমাদের খাবারের দ্বিতীয় তালিকাতে আছে মাছ। আমাদেরকে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙ্গালী। কিন্তু আমরা তো প্রতিদিন একই জাতের মাছ খায় না। বিভিন্ন জাতের মাছ ভাতের সাথে খেয়ে থাকি। একেক মাছের আছে একেক গুন। সব মাছের পুষ্টিগুন সমান নয়। তাই আসুন আমরা জেনে নেয় কি মাছে কি গুন আছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী–

1. রুই মাছ বা রুই মাছের ঝোল : বল বীর্য ও শুক্র বাড়ায় কিন্তু বাত রোগ থাকলে তা কমায়।

2. কাতলা মাছ বা কাতলা মাছ রান্না : বায়ু পিত্ত ও কফ কমায় কিন্তু শক্তি বাড়ায়।

3. বাউস মাছ বা কালি বাউস মাছ : শুক্র ও বল বাড়ায়।

4. চিতল মাছ: শুক্র ও বল বাড়ায়।

5. ইলিশ মাছ বা ইলিশ মাছের পাতুরি: হজম শক্তি বাড়ায়, বায়ু কমায়, পিত্ত ও কফ কমায়।

6. আইড় মাছ: শুক্র বল ও মেধা বাড়ায় কিন্তু বায়ু ও কফ কমায়।

7. বোয়াল মাছ: শক্তি বাড়ায়, রক্ত ও পিত্তকে দুষিত করে কিন্তু ত্রিদোষ বাড়ায় অম্লপিত্ত কুষ্ট ও হাপানি প্রভৃতিকঠিন রোগ উৎপাদন করে। সব রোগীর জন্যই অপথ্য।

8. মাগুর মাছ: শুক্র, বল ও রক্ত বাড়ায়, রক্তহীন ও পউরানা রুগীদের জন্য ভাল খাবার।

9. শিং মাছ: কফ, মায়ের দুধ ও শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের বাত কমায়।

10. কৈ মাছ: শক্তি ও পিত্ত বাড়ায়, বায়ু কমায়।

11. খলিশা মাছ: পায়খানা কষায়, বায়ু বাড়ায় গুলরোগ ও আমদোষ কমায়।

12. শোল মাছ: পায়খানা কষায়, পিত্ত ও রক্তের জন্য খুবই উপকারী।

13. গজার মাছ: পায়খানা কষায়, শরীরে শক্তি বাড়ায়।

14. চিংড়ি মাছ: রুচি, বল, শুক্র ও কফ বাড়ায়। শরীরের মেদ পিত্ত ও রক্ত দোষে খুবই উপকারী। শীত পিত্ত বা শরীরে এলার্জি বৃদ্ধি করে।

15. চাপিলা: শুক্র, বল, কফ বাড়ায়। বায়ু ও পিত্ত কমে, শরীরে আমবাত হয়।