ক্যাস্টর অয়েল – Castor Oil এর ব্যবহার

Castor Oil এর ব্যবহার – Benefits Of Castor Oil

ক্যাস্টর অয়েল বলতেই আমরা বুঝি এমন একটি উপকারী তেল যা আমাদের ত্বক, চুল ও শরীরের নানান কাজে লাগে। চুলের সৌন্দর্য রক্ষায় এর ভূমিকা অনন্য। চুল পাকা রোধ করে ও চুল পড়া কমাতে ক্যাস্টর অয়েলের জুড়ি নেই।

চুল আমাদের সৌন্দর্যের অনেক বড় একটা অংশ বহন করে। সেই চুলই যদি ক্রমাগত ঝরে গিয়ে মাথায় টাকের সৃষ্টি করে তাহলে কী আর দুঃখের সীমা থাকে! তাই চুল পড়া নিয়ে আমাদের চিন্তার অন্ত নেই। আজকের দিনে আমরা মোটামুটি সবাই এই সমস্যায় ভুগছি। চুল পড়ার নানান কারণথাকতে পারে- এর মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, অপর্যাপ্ত ঘুম, অতিরিক্ত কাজের চাপ, অসুস্থতা, বংশগত সমস্যা, পরিবেশের প্রভাব ইত্যাদি। এ সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য ক্যাস্টর অয়েল হতে পরে অনন্য একটি উপায়।

ক্যাস্টর অয়েল, এই নামটি অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন। তবে বাস্তবতা হলো, এর প্রকৃত গুনাগুণ সম্পর্কে আমরা হয়তো খুব কমই জানি। তবে চলুন জেনে নিই এই তেলে কি রয়েছে – ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই, মিনরেলস, প্রোটিন, এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড যা চুল পড়া রোধ করার সাথে সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। এটি চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর করে এর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে। তবে চুলের জন্যে সর্বদা আনরিফাইনড ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করাই উত্তম। এখন আপনার মনে হতে পারে কেন আনরিফাইনড ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে হবে? কারণ আনরিফাইনড ক্যাস্টর অয়েলে প্রাকৃতিক গুণাবলী বিদ্যমান যা চুল এবং স্ক্যাল্পের জন্য খুবই কার্যকরী। রিফাইন্ড ক্যাস্টর অয়েল বিভিন্ন প্রসেসিং এর মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে এর মধ্যে প্রাকৃতিক গুণাবলী ততোটা থাকে না যা আনরিফাইনড ক্যাস্টর অয়েল এ থাকে এবং ফলশ্রুতিতে এটি যথেষ্ট কম কার্যকরী। বাংলাদেশে আপনারা Well’s Castor Oil নামে এই অয়েলটি পাবেন। দাম পড়বে ১৫০-১৮০ টাকা এর মধ্যে। তবে এটা কেমিক্যালি রিফাইন্ড। এতে চুলের তেমন কোন কাজ হয় না।

ক্যাস্টর অয়েল কি কি কাজে লাগে

1. শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি প্রদান করে

2. বলিরেখা দূর করে

3. চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে

4. আইভ্রু ও আইল্যাশ ঘন করে

ক্যাস্টর অয়েল কি দাড়ি গজাতে সাহায্য করে ?

ক্যাস্টর অয়েল নতুন করে দাড়ি গজাতে সাহায্য করেনা। নিচের কার্যকারিতা পড়লেই বুঝবেন।

চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল এর কার্যকারিতা সমূহঃ

1. চুল পরে যাওয়া ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

2. অকালে চুলের গোঁড়া নরম হয়ে চুল উঠে পরা রোধ করে থাকে।

3. আপনার স্ক্যাল্প মানে মাথার ত্বকের পিএইচ ব্যাল্যান্স করে রাখতে সহায়তা করে থাকে।

4. বিভিন্ন ক্যামিকেল জাতীয় উপাদান ব্যবহারের পর আপনার চুল অনেকটাই নির্জীব হয়ে যায় ক্যাস্টর অয়েল আপনাকে এই ধরনের সমস্যা থেকে একশত ভাগ মুক্তি দিতে পারে।

5. খুশকি দূর করে।

6. চুলের গোঁড়া শক্ত করে এবং পুষ্টি যোগায় চুলের আগা থেকে একদম গোঁড়া অবধি।

7.মাথার চুলকানি এবং উকুন নাশক হিসেবেও ভালো কার্যকরী।

8. চুল ঝলমলে করে তোলে এবং স্মুদ অর্থাৎ মোলায়েম করে চুলের মাঝে জট বাঁধা রোধ করে।

9. মাথা ঠান্ডা রাখে।

10. চুলের অগ্রভাগ ফেটে যাওয়া অথবা রুক্ষতা থেকে মুক্তি দেয়।

ক্যাস্টর অয়েলের দাম কত

আজকাল দাম বিভিন্ন দোকান ভেদে ওয়েলস রিফাইন্ড ক্যাস্টর অয়েলের দাম ১২০-১৭০ এর ভেতরে ওঠানামা করে। আমি ১৫০ টাকায় কিনেছিলাম। বাকিটা আপনি আপনার মতন দোকান থেকে যাচাই করে বা অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন কিন্তু কেনার সময় একটু বুঝে শুনে ব্যাস আর কিছু না।

ক্যাস্টর অয়েল খেলে কি হয়

কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে

গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাস্টর অয়েলে ল্যাক্সাটিভ উপাদান আছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে এক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল খান, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করবে। আপনি এটি ফলের রসের সাথে মিশিয়েও পান করতে পারেন। তবে তিনদিনের বেশি ক্যাস্টর অয়েল পান করা উচিত হবে না।

ক্যাস্টর অয়েলের ক্ষতিকর দিক

ক্যাস্টর অয়েলের অতিরিক্ত ব্যবহারে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। আর এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়ার সাথে সাথে ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে। অতিরিক্ত ব্যবহারে বমি ভাব ও বমি হতে পারে। পানিশূন্যতাও দেখা দিতে পারে এই তেল ব্যবহারে। বেশি ব্যবহার করলে পেশির সংকোচন হতে পারে। এরকম হলে তেল ব্যবহার বাদ দিতে হবে।

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহারে ত্বকে র‍্যাশ ও চুলকানি হতে পারে। এরকম হলে সাবান পানি বা অ্যাপল সাইড ভিনেগার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নির্দিষ্ট পরিমাণে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারেই কেবল এর সুফল মিলবে।

প্রতিদিন ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলেই যে সুফল পাওয়া যাবে এমন কোনো কথা নেই। প্রতিদিন ব্যবহারে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আবার কারো কারো শরীরে দুর্বলতাও দেখা যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা উচিত।

ক্যাস্টর অয়েল মুখে ব্যবহারের নিয়ম

ত্বকের জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করার ফলে যে সমস্যাটি দেখা দেয়, ত্বক অনেক বেশী শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফলে ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে মুখের ত্বক অনেক বেশী তৈলাক্ত হয়ে যায়, যার থেকে ব্রণ এর উৎপত্তি ঘটে থাকে। ব্রণ এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে আপনি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে। ক্যাস্টর অয়েল এর ফ্যাটি এসিড ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। ব্রণ ভালো করার জন্যে মুখে যত্ন সহকারে ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে নিন। চাইলে সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে পারেন।

চুল পড়া রোধে ক্যাস্টর অয়েল

1. চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো স্ক্যাল্পের ইনফেকশন এবং ডিসঅর্ডার। ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস স্ক্যাল্পকে আক্রান্ত করে দিনে দিনে চুল ঝরাকে বাড়িয়ে দেয় এবং চুলের বৃদ্ধিকে হ্রাস করে। ক্যাস্টর অয়েলের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রপার্টিস স্ক্যাল্পের ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে যা চুল পড়া কমিয়ে আনে অনেকাংশে।

2. শুষ্কতা বা রুক্ষতা চুল পড়া এবং চুল ভাঙ্গার আরেকটি প্রধান কারণ। ক্যাস্টর অয়েল সহজেই স্ক্যাল্পে শোষিত হয়। ফলে স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার এবং নিউট্রিশনের ব্যালেন্স ঠিক থাকে যা চুলের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।

নতুন চুল গজাতে ক্যাস্টর অয়েল

1.ক্যাস্টর অয়েল স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করলে এটি স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন যত বাড়বে এর অবস্থা তত উন্নত হবে এবং হেয়ার ফলিকলগুলো আরও সুস্থ্য থাকবে। ফলে তা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

2. ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান কাজই হলো চুলের এবং স্ক্যাল্পের বিষাক্ত পদার্থ হ্রাস করে চুলের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করা।

3. ক্যাস্টর অয়েল ওমেগা – ৯ ফ্যাটি আসিড (Omega-9 fatty acids) এবং এসেন্সিয়াল ভিটামিনস এ সমৃদ্ধ যা চুলকে মজবুত এবং উজ্জল করে ও পুনরায় চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ব্যবহারবিধি

1. যেহেতু ক্যাস্টর অয়েল খুব ঘন তাই এটি চুলে লাগানোর পূর্বে রেগুলার চুলের তেল (কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল) এর সাথে মিশিয়ে লাগালে সুবিধা হবে। স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা রাখতে হবে। তেল লাগানোর পর হেয়ার ক্যাপ অথবা হট টাওয়েল চুলে পেঁচিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এরপর চুলে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। আরও ভালো ফল চাইলে তেল লাগিয়ে পুরো রাত রেখে দিতে পারেন।

2. চুলের গ্রোথ বাড়ানোর জন্য হট অয়েল ট্রিটমেন্ট হিসেবেও ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তেল গরম করে নিতে হবে। প্রক্রিয়া টি সহজ করার জন্য ক্যাস্টর অয়েলের বোতলটি গরম পানির একটি গ্লাসে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করূন।

উপরের নিয়ম দু’টি অনুযায়ী তেলটি ব্যবহার করলে আশা করি এক মাসের মধ্যেই ভালো ফল পাবেন।

ক্যাস্টর অয়েল এর কিছু হেয়ার মাস্ক

1. এক চা চামচ মধু, দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং একটি ডিম ভালো মতো মিশিয়ে চুলে ভালো মতো লাগান। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি আপনার নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ চুলের উজ্জলতা বাড়িয়ে একে নরম করবে।

শেষ কথা 

এতক্ষন আমরা চুলের মাঝে ক্যাস্টর অয়েল কি ধরনের প্রভাব ফেলে তাই দেখলাম। এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এতো এতো তেলের মাঝে আপনি কি ধরনের ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করবেন অথবা কিভাবেই বা এই তেল আপনার চুলে প্রয়োগ করবেন সেসব বিষয় নিয়ে। ভাবনার কারন নেই, আপনার সুবিধার জন্যেই আমাদের এই আলোচনা তাই প্রত্যেকটি বিষয় খুব গুরুত্ত্ব দিয়ে দেখুন এবং মনে রাখুন এতে করে আপনারই উপকার হবে।