ডাল এর উপকারিতা – Benefits Of Pulses In Bengali

ডাল (Pulse) শিম গোত্রের অন্তর্গত খাদ্যশস্য। ডাল প্রধানত বিউলি, মুগ, মসুর, ছোলা, মটর, অড়হর, মাষকলাই, খেসারি প্রভৃতি শুঁটিজাতীয় মৌসুমি ফসলের শুকনো বীজ। সব রকমের ডাল মানুষের জন্য অন্ত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী। ডাল প্রোটিন প্রধান খাদ্য। এতে প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ এবং অত্যধিক লাইসিন থাকায় ও দামে সস্তা হওয়ায় ডালকে প্রায়শই গরিবের আমিষ বলা হয়। প্রোটিন ছাড়াও ডালে পর্যাপ্ত শর্করা, চর্বি ও খনিজ লবণ থাকে। এতে গমের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ও চালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ প্রোটিন আছে।

ডাল আমাদের অনেকেরই প্রিয় ও ভালো খাবার আর ডালে আছে অসাধারণ অসাধারণ কিছু প্রোটিন আর ডাল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেকটাই উপকারী তাই সময় নষ্ট না করে আমরা একটা একটা করে জেনে নেবো যে কোন কোন ডালের কি কি উপকার

মসুর ডালের উপকারিতা 

মসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। যেমন, খনিজ পদার্থ, আঁশ, খাদ্যশক্তি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি-২ ও শর্করা ইত্যাদি।

উপকারিতা

মুসুর ডাল নিশ্চয়ই আপনাদের পছন্দের তালিকায় সবথেকে ওপরেই থাকবে। ডালের মধ্যে মুসুর ডালেই সবথেকে বেশী প্রোটিন থাকে। তাছাড়া মুসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও থাকে। ১০০ গ্রাম রান্না করা মুসুর ডালে প্রায় ১১৬ ক্যালোরি থাকে। তাছাড়া ওতে ১১ শতাংশ ডায়েটারি ফাইবার, ৬৩ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে। তাছাড়া মুসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্যান্টোথ্যানিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ৬, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক থাকে। আর বাঙালী মাত্রেই তো জানেন পেটের সমস্যা অনিবার্য! পেট খারাপ, অম্বল, হজমের গোলমাল নিশ্চয়ই আপনারও লেগেই থাকে। তো এবার থেকে মুসুর ডাল খান। দেখবেন হজমের গোলমাল, পেটের সমস্যার একদম মুশকিল আসান হয়ে যাবে। মুসুর ডালের স্যুপের রোগ দূর করার যে অদ্ভুত ক্ষমতা আছে সে কথা তো ডাক্তাররাও বলে থাকেন। গলা, অন্ত্রের বিভিন্ন রোগকে টাটা যদি বলতে চান, তাহলে মুসুর ডালের পাতলা স্যুপ বানিয়ে খান। আর আপনার যদি হিমোগ্লোবিন কম থাকে? তাহলেও আপনার সে রোগেরও দাওয়াইও কিন্তু হতে পারে মুসুর ডাল।

1. কলেস্টেরল কমায়:
মসুর ডালে উচ্চ মাত্রার এটা দ্রবণীয় ফাইবার থকে যা রক্তের কলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এটা আপনার শরীরের কলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে আপনার ধমনীকে পরিষ্কার রাখে।

2. হার্ট ভালো রাখে:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নিয়োমিত মসুর ডালের মতো উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে হার্টের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া মসুর ডাল ফলেট (folate) এবং ম্যাগনেসিয়াম এর একটা বিরাট উত্স, যা হার্টকে আরও বেশি তারুন্য পেটে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের সর্বত্র রক্ত, অক্সিজেন এবং পুষ্টি প্রবাহ করতে সাহায্য করে।

3.হজমে সহায়তা করে:
মসুর ডালে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ রয়েছে। ফলে এটি হজমে সহায়তা করে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।

4.  ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কমায়:
মসুর ডালের ফাইবারে আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি শরীর চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, তাছাড়া এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে।

5. গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী:
ডালে একসঙ্গে আয়রন ও ফলেট দুটিই পাওয়া যায়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই দুটি উপাদান বেশ প্রয়োজনীয়। সেই সঙ্গে আয়রন রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

যাঁরা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে চান তাঁরা ভাতের পরিমাণ কমিয়ে তার বদলে নিয়মিত ডাল খেতে পারেন। এতে ক্ষুধা হ্রাস পাওয়াসহ ভরাপেটের অনুভূতি থাকবে দীর্ঘক্ষণ। এছাড়াও মসুর ডাল খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে বাড়িয়ে দেয় ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ। -সূত্র: মাইন্ড বডি গ্রীন।

খেসারি ডালের উপকারিতা 

খেসারী ডালে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে এবং দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এই ডাল যোগ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে। খেসারী ডালে বিদ্যমান পটাসিয়াম রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। খেসারী ডাল, অড়হর ডাল, মসূর ডাল, মটরশুঁটি, কলাইয়ের ডাল ইত্যাদি ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।

মাসকলাই ডালের উপকারিতা 

হজমশক্তি বাড়ায়

এতে প্রচুর ফাইবার আছে বলে হজম ভালো হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই ডাল উপকারী।

হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ রাখে

হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে মাষকলাই ডাল উপকারী। এর পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরে কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এ ডাল উপকারী। এতে ম্যাগনেশিয়াম থাকায় রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।

শুক্রবর্ধক

মাষকলাই ডাল শুক্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। ‘প্রাকৃতিক উদ্দীপক’ হিসেবে এই ডাল শুক্রসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারে। পানিতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ঘি দিয়ে ভেজে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।

পেশি গঠনে

পেশির কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে মাষকলাই ডাল। শরীরের বৃদ্ধিতে ডালে থাকা প্রোটিন খুবই দরকারি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখতে পারে মাষকলাই ডাল।

স্নায়বিক রোগ সারাতে

স্নায়বিক দুর্বলতা, স্মৃতি দুর্বলতা, সিজোফ্রেনিয়ার, হিস্টিরিয়ার মতো সমস্যা দূর করতে পারে মাষকলাই।

ব্যথানাশক

আয়ুর্বেদশাস্ত্রে মাষকলাই ডালের দারুণ ব্যথানাশক গুণের কথা বলা হয়। অস্থিসন্ধির ব্যথা সারাতে এ ডাল উপকারী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আয়ুর্বেদশাস্ত্রের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণাতেও মাষকলাই ডালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি দেখা গেছে।

ত্বকের সুরক্ষায়

দারুণ স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় মাষকলাই। ত্বক থেকে ময়লা, মৃত কোষ সরিয়ে ত্বকের সতেজতা ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায় মাষকলাই। রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও এই ডাল উপকারী। এতে আছে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ক্ষমতা। তাই মুখের ব্রণ দূর করতে পারে এটি। মুখের দাগ দূর করতেও মাষকলাইয়ের ডালের ব্যবহার দেখা যায়।

খুশকি দূর করে

মাষকলাইয়ের ডাল মাথায় মাখলে চুল নরম হয়, খুশকি দূর হয়। তথ্যসূত্র: হেলথ বেনেফিটস টাইমস।

বিউলির ডালের উপকারিতা

আলু পোস্ত দিয়ে বিউলির ডাল। কি ভাবলেই জিভে জল আসছে তো? আপনার জিভে বিউলির ডালের নাম শুনলেই এবার টসটস করে জল গড়াবে, যদি শোনেন বিউলির ডালের উপকারিতা। বিউলির ডালে প্রোটিন তো থাকেই, তাছাড়া পটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি মিনারেলস আর থিয়ামিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, নিয়াসিনও প্রচুর পরিমাণে থাকে। আপনার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কম করতেও কিন্তু বিউলির ডাল জিন্দাবাদ!

মটর ডালের উপকারিতা

প্রোটিনের পাশাপাশি ডায়েটারি ফাইবারে পরিপূর্ণ মটর ডালে
রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফোলেট, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি৫, পটাশিয়াম।

সবুজ মুগ ডালের উপকারিতা

মাছের মাথা দিয়ে সোনা মুগের ডাল! আহ! ভাবলেও তো জিভে জল আসে। কিন্তু মুগ ডালের হরেক গুণাগুণ তো জানেন না। মুগ ডাল আমাদের পেটের পক্ষে হজম করা খুবই সোজা। তাই বিভিন্ন রোগে রোগীকে মুগ ডালের খিচুড়ি খাবার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও মুগের ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। কারণ মুগের ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আয়রন আর ফাইবার থাকে। আর আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে? আজ্ঞে হ্যাঁ। তাহলেও মুগ ডাল কিন্তু সেটা কমাতেও আপনাকে সাহায্য করবে।

অড়হর বা তুর ডালের উপকারিতা

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আমাদের অতি পরিচিত অড়হর ডালকে কিন্তু তুর ডাল বলেই ডাকা হয়। অড়হর ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন তো থাকেই। সেইসাথে থাকে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড। যেমন মিথিওনিন, লাইসিন, ট্রিপটোফ্যান ইত্যাদি। তাছাড়া ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, পটাসিয়াম, সোডিয়ামও থাকে। অড়হর ডাল খাওয়া উপকার তো বটেই। কিন্তু জানেন কি অড়হর ডালের পাতা নিয়ে আপনি যদি আপনার কোনো কাটা বা ক্ষতের জায়গায় লাগান, তাহলে ঘা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। আর হোলির দিন ভাঙ খেয়ে টঙ হয়ে তো বাড়ি ফিরলেন। কিন্তু নেশা কাটাবেন কি করে? কিছুই না। কাঁচা অড়হর ডাল ভালো করে বেটে জলে গুলে খেয়ে নিন। নেশা এক মুহূর্তে ভ্যানিশ হয়ে যাবে!

ছোলার ডাল উপকারিতা

লুচি আর ছোলার ডাল মানেই তো বাঙালীর স্বপ্নের কম্বিনেশন। ছোলার ডাল লুচি দিয়ে তো খান, কিন্তু জানেন কি ছোলার ডালের চমৎকার? ছোলার ডালে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ডায়েটারি ফাইবার তো থাকেই, তাছাড়া ফোলেট, আয়রন, ফসফরাসও থাকে। ডায়াবেটিসের রোগীদের যদি ছোলার ডাল খাওয়ানো যায়, তাহলে ফল মেলে। আর ছোলার ডালে কোলেস্টেরল কম পাওয়া যায়, ফলে কোলেস্টেরল কম করতে হলে ছোলার ডাল বেশী করে খান। আর অ্যানিমিয়ার ধাত থাকলেও ছোলার ডাল খান। দেখবেন সুস্থ থাকছেন।

বুটের ডাল উপকারিতা

প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ আছে প্রায় ১৮ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট আছে প্রায় ৬৫ গ্রাম। আর ফ্যাট আছে প্রায় ৫ গ্রাম। ছোলায় আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় রয়েছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। ভিটামিন ‘এ’ আছে প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম। প্রচুর পরিমাণে আছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। আছে ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস।
গুণাগুণ
ছোলার শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম, যা শরীরে প্রবেশ করলে অস্থির ভাব দূর হয়।
ছোলা খাওয়ার পর বেশ অল্প সময়েই হজম হয়।
এর শর্করা গ্লুকোজ হয়ে দ্রুত রক্তে চলে যায় না। অতএব, ছোলা ডায়াবেটিকস রোগীর জন্য খুবই উপকারী খাবার।
ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়।
ছোলার অাঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। নিয়মিত ছোলা খেলে আর নিয়মমত পায়খানা হলে খাদ্যনালীতে ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে না। ফলে খাদ্যনালীর ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বলা যায়।
এর অাঁশ রক্তের চর্বি কমায়।
ছোলা দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্তির যোগান দেয় শরীরে। জানা গেছে, প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে প্রায় ৩৮০ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।