বিশ্বকর্মা পূজা পদ্ধতি – Vishwakarma Puja Mantra in Bengali Language

হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা দেবতাদের শিল্পী। তিনি দেবশিল্পী নামে পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস তাঁর পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি।

বিশ্বকর্মা পূজা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আশিস কামনায় এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ ও গজারূঢ়। তাঁর আকৃতি অনেকটা কার্তিকের মতো। বেদে বিশ্বকর্মাকে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তারূপে বর্ণনা করা হয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস মতে তিনি বিশ্বের তাবৎ কর্মের সম্পাদক। তিনি শিল্পসমূহের প্রকাশক, অলঙ্কার শিল্পের স্রষ্টা, দেবতাদের গমনাগমনের জন্য বিমান নির্মাতা ইত্যাদি। অর্থাৎ শিল্পবিদ্যায় তাঁর একচ্ছত্র অধিকার। তাই যাঁরা শিল্পকর্মে পারদর্শিতা লাভ করতে চান, তাঁরা বিশ্বকর্মার অনুগ্রহ কামনা করেন। রামায়ণে বর্ণিত অপূর্ব শোভা ও সম্পদবিশিষ্ট লঙ্কা নগরীর নির্মাতা বিশ্বকর্মা বলে কথিত। তিনি উপবেদ, স্থাপত্যবেদ ও চতুঃষষ্টিকলারও প্রকাশক। দেবশিল্পিরূপে তিনি দেবপুরী, দেবাস্ত্র ইত্যাদিরও নির্মাতা। জনশ্রুতি আছে যে, পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথমূর্তিও বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেন। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে কলকারখানায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিশ্বকর্মার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য দেব-দেবীর মতোই মূর্তি গড়ে অথবা ঘটে-পটে বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। সূতার-মিস্ত্রিদের মধ্যে এঁর পূজার প্রচলন সর্বাধিক। তবে বাংলাদেশে  স্বর্ণকার,  কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন। এ সময় প্রত্যেকের ঘরে বিশেষ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হয় এবং কোথাও কোথাও পূজার পরে  ঘুড়ি ওড়ানো হয়।

বিশ্বকর্মার ধ্যান মন্ত্র  – Vishwakarma Puja Mantra

ওঁ বিশ্বকর্মন্ মহাভাগ সুচিত্রকর্মকারক্ ।
বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃক্ ত্বঞ্চ রসনামানদণ্ডধৃক্ ।।

অর্থ- হে দংশপাল ( বর্মের দ্বারা পালনকারী ) , হে মহাবীর , হে বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ও বিশ্ব বিধাতা, হে সুন্দর চিত্র রূপ কর্মকারক , আপনি মাল্য চন্দন ধারন করে থাকেন ।

বিশ্বকর্মার প্রনাম মন্ত্র:

দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক ।
বিশ্বকর্মন্নমস্তুভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদয়ক ।।

অর্থ- দেবশিল্পী , মহাভাগ ( দয়াদি অষ্ট গুন যুক্ত ) দেবতা দের কারু কার্য্যসাধক সর্বাভীষ্ট প্রদানকারী হে বিশ্বকর্মা আপনাকে নমস্কার ।

ধ্যান ও প্রনাম মন্ত্রে বিশ্বকর্মার যে পরিচয় পাওয়া গেলো- সেটি হল বিশ্বকর্মা মহাবীর আবার দয়াদি অষ্ট গুন যুক্ত। তিনি সৃষ্টি কর্তা আবার সৃষ্টি বিধাতা। তিনি মহাশিল্পী আবার মহাযোদ্ধা।

বেদে বিশ্বকর্মা

ঋক বেদের দশম মণ্ডলের দুটি বিশিষ্ট সূক্তে বিশ্বকর্মাকে স্তব করা হয়েছে । দুল্যক ও ভূলোক প্রথমে জলাকার ও সম্মিলিত ছিল। উভয়ের সীমা যত বৃদ্ধি পেলো- ততই তারা পরস্পর দূরবর্তী হতে লাগলো। এবং এক সময় পৃথক হল। বিশ্বকর্মা মনে মনে এই বিষয়ে চিন্তা করে নিরীক্ষণ করলেন। এই বিশ্ব তাঁরই কর্ম বলে তাঁর নাম বিশ্বকর্মা । বিশ্বকর্মা ‘বিমনা’ অর্থাৎ তিনি সমষ্টি মনা। বিশ্বকর্মা ‘ধাতা’ অর্থাৎ তিনি স্রষ্টা, বিশ্বকর্মা শ্রেষ্ঠ, বিশ্বকর্মা সর্ব দ্রষ্টা , এবং তিনি ‘ধামানি বেদ ভুবনানি বিশ্বা’ বিশ্ব ভুবনের সকল ক্ষেত্রই তাঁর পরিজ্ঞাত এবং তিনি সর্ব অন্তর্যামী ।

বিশ্বকর্মার চোখ, বদন, বাহু , পদ সর্বত্র, সর্ব দিকে । তিনি বিশ্বতশ্চক্ষু, বিশ্বতোমুখ , বিশ্বতস্পাৎ । এই বিশ্ব যজ্ঞে তিনি নিজেকে আহুতি দিয়েছেন । অর্থাৎ বিশ্ব জগতের কল্যাণে তিনি সর্বদা চিন্তা রত। তিনি বাচস্পতি অর্থাৎ বাক্যের অধীশ্বর। তিনি মনোজেব অর্থাৎ মনের ন্যায় বেগ মান । তিনি বিশ্বের সমস্ত প্রানীর মঙ্গলকারী । তিনি সাধুকর্মা অর্থাৎ তাঁর চেষ্টা ও বিধান মঙ্গলময় ।

পুরান শাস্ত্রে বিশ্বকর্মা

বেদের যিনি বিশ্ব স্রষ্টা , পুরানে তিনি দেবতা দের শিল্পী বিশ্বকর্মা । তিনি স্বর্গের একজন দেবতা । তিনি সহস্র রকম শিল্প জানেন । তিনি দেবতা দের শিল্পের কারিগর । কারিগরি সকল বিদ্যা বিশ্বকর্মার হাতে । কোন কোন পুরান বলে বিশ্বকর্মার পিতা হলেন প্রভাস । প্রভাস হলেন অষ্টবসুর এক জন । আর বিশ্বকর্মার মাতা হলেন বরবর্ণিনী । বরবর্ণিনী হলেন দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী । আবার ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরান বলে ব্রহ্মার নাভি থেকে বিশ্বকর্মার সৃষ্টি ।

পুরানের বিশ্বকর্মা একজন শিল্পী। তিনি বিমান নির্মাতা ( দিব্য দেব বিমান ), অলংকার ভূষন , আয়ূধ প্রস্তুতকারক । মনুষ্য শিল্পীরা বিশ্বকর্মার প্রবর্তিত শিল্প কেই উপজীব্য করে বেঁচে আছে । বিশ্বকর্মা প্রচুর জিনিষ নির্মাণ করেছেন। কুঞ্জর পর্বতে অবস্থিত অগস্ত্য মুনির ভবন, কুবেরের অলকা পুরী ও দিব্য বিমান, রাবনের স্বর্ণ লঙ্কা , ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা পুরী – সকল কিছু বিশ্বকর্মার দ্বারা সৃষ্টি। রাবনের রাজাপ্রসাদের সাথে সুন্দর উদ্যান, গোষ্ঠ, মন্ত্রণা গৃহ, মনোরম ক্রীড়া স্থান, রাজাপ্রাসাদের কারুকার্য ইত্যাদি দেবশিল্পীর নিখুত শিল্প কলার পরিচয় দেয় । এছাড়া ভাগবত পুরান অনুসারে দ্বারকা নগরীর যে সুরক্ষিত, ভাস্কর্য , কলা কৌশলের একটি ধারনা পাওয়া যায়- তাতে শিল্পী বিশ্বকর্মার শিল্প কে দেখে আশ্চর্য হতে হয় ।

বিশ্বকর্মার অপর নির্মাণ হল দেবপুরী । তিনি সমস্ত সৌন্দর্য কে মিলিয়ে এই পুরী নির্মাণ করেছিলেন । এই পুরীকে পাওয়ার জন্য বারংবার অসুর গণ সুর লোকে হানা দিয়েছিলেন। তাই বিশ্বকর্মার সৃষ্টিকে প্রনাম না করে থাকা যায় না । মৎস্য পুরান বলে- কি কূপ, কি প্রতিমা, কি গৃহ, কি উদ্যান সকল কিছুর উদ্ভাবক হলেন বিশ্বকর্মা। শুধু এখানেই বিশ্বকর্মার সৃষ্টি শেষ নয়, যে বিমানে চড়ে দেবতারা গমন করেন- তাও বিশ্বকর্মার তৈরী। এবং বিভিন্ন দিব্য বান- যা কেবল দেবতাদের অস্ত্রাগারে থাকে – তাও বিশ্বকর্মার তৈরী। যে ধনুক দিয়ে ভগবান শিব ত্রিপুরাসুরকে বধ করেছিলেন, যে ধনুক পরশুরামের কাঁধে শোভা পেতো- সেই ধনুক বিশ্বকর্মার সৃষ্টি। বৃত্রাসুর বধের জন্য বিশ্বকর্মা দধীচি মুনির অস্থি থেকে বজ্র নির্মাণ করে দেবেন্দ্র কে দিয়েছিলেন । কিছু পুরান বলে ভগবান বিষ্ণুর চক্র, ভগবান শিবের ত্রিশূল বিশ্বকর্মার সৃষ্টি । শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেখি মহিষাসুর বধের জন্য দেবী মহামায়া প্রকট হলে দেবীকে তীক্ষ্ণ বর্শা, অভেদ্য কবচ এবং বহু মারনাস্ত্র বিশ্বকর্মা দেবীকে প্রদান করেন । রামচন্দ্রের সেতু বন্ধনের অন্যতম কারিগর নল এই বিশ্বকর্মার পুত্র । বিষ্ণু পুরান বলে ত্বষ্টা নামক এক শিল্পী ছিল- যিনি বিশ্বকর্মার পুত্র । দেবতাদের শিল্পী যেমন বিশ্বকর্মা , তেমনি অসুর দের শিল্পী হলেন ময় দানব । বায়ু পুরান ও পদ্ম পুরান মতে ভক্ত প্রহ্লাদের কন্যা বিরোচনার সাথে বিশ্বকর্মার বিবাহ হয় । বিশ্বকর্মার ঔরসে বিরোচোনার গর্ভে অসুর শিল্পী ময় দানবের জন্ম হয় ।

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরান মতে বিশ্বকর্মা ও তাঁর স্ত্রী ঘৃতাচী দুজনেই শাপ পেয়ে ধরাধামে জন্ম নেন । ঘৃতাচী ছিলেন স্বর্গের এক নর্তকী । তাঁদের নয়টি সন্তান হয় – যথা মালাকার , কর্মকার , কাংস্যকার, শঙ্খকার , সূত্রধর, কুবিন্দক, কুম্ভকার, স্বর্ণকার, চিত্রকর । বিশ্বকর্মা প্রত্যেক কেই নানান শিল্প শেখান । তিনি মালাকারকে পুস্প শিল্প, কর্মকারকে লৌহ শিল্প, কাংস্যকারকে কাংস শিল্প, শঙ্খ কারকে শঙ্খ শিল্প, সূত্রধরকে কাষ্ঠ শিল্প, কুবিন্দক কে বয়ন শিল্প, কুম্ভকারকে মৃৎ শিল্প, স্বর্ণকারকে অলঙ্কার শিল্প, চিত্রকরকে অঙ্কন শিল্প শেখান। স্কন্ধ পুরান বলে বৃত্রাসুর হলেন বিশ্বকর্মার পুত্র। যাকে ইন্দ্র দেবতা বধ করেন । তবে স্কন্ধ পুরানের এই মত অপর কোন পুরানে পাওয়া যায় নি ।

এত সর্তেও বলা যায় বিশ্বকর্মার এক মেয়ে পিতার অমতে বিয়ে করেছিল। এই কারনে বিশ্বকর্মা বানর হয়ে পৃথিবীতে জন্মান । ঘটনা টি এই- বিশ্বকর্মা ও ঘৃতাচীর কন্যা চিত্রাঙ্গদা পৃথিবীর সূর্য বংশীয় রাজা সুরথ কে ভালোবাসতো। সুরথও চিত্রঙ্গদা কে ভালোবাসতো । কিন্তু দেবতা হয়ে ত মানুষের সাথে বিবাহ হয় না । বিশ্বকর্মা জানতে পেরে মেয়েকে যথেষ্ট শাসন করলেন । এই অবস্থায় পৃথিবীর মেয়েরা যা করে বিশ্বকর্মার কন্যা টিও তাই করলো । স্বর্গ থেকে পালালো । দুজনে বিবাহ করে নিলো। ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে বিশ্বকর্মা আসলেন । কন্যা ভাবলেন পিতা বুঝি আশীর্বাদ করতে এসেছেন । কিন্তু না। বিশ্বকর্মা অভিশাপ দিলেন । কন্যার বিবাহ বিচ্ছেদ হোক – এমন অভিশাপ দিলেন । কিন্তু সনাতন ধর্মে বিবাহকে খুব পবিত্র সম্পর্ক মানা হয়- যেখানে বিবাহ বিচ্ছদের স্থান নেই। তাই মহর্ষি ঋতধ্বজ ভাবলেন দেবতা হয়ে বিশ্বকর্মার একি পশুর মতো বুদ্ধি? মুনি বিশ্বকর্মা কে বানর কূলে জন্মাবার শাপ দিলেন । বিশ্বকর্মা বানর হলেন । অবশেষে এক সময় কন্যার বিবাহ মেনে নিলে কন্যা ও বিশ্বকর্মা দুজনেরই শাপ দূর হয় ।

বিশ্বকর্মার হাতে দাঁড়িপাল্লা

বাঙালী হিন্দু গণ যে বিশ্বকর্মার মূর্তি পূজো করেন তিনি চতুর্ভুজা । এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, অন্য হাতে হাতুরী, ছেনী ( লম্বা , ভারী লোহার যন্ত্র, মাথায় হাতুরী মেরে ফুটো করার কাজে ব্যবহার হয় ) , কুঠার থাকে । অবশ্যই এগুলি শিল্পের প্রয়োজনীয় জিনিষ, তাই শিল্প দেবতা বিশ্বকর্মা এগুলি ধারন করে থাকেন । দাঁড়িপাল্লার একটি কারন আছে । আমরা যদি দাঁড়িপাল্লা কে ভালো মতো লক্ষ্য করি- দেখি সুপাশে সমান ওজনের পাল্লা থাকে। ওপরের মাথার সূচক যখন সমান ভাবে ঊর্ধ্ব মুখী হয়- তখন বুঝি মাপ সমান হয়েছে । এভাবে একটি পাল্লায় বাটখারা রেখে অপর টিতে দ্রব্য রেখে পরিমাপ হয় । এর তত্ত্ব কথা আছে । আমাদের জীবনের কাটাতি আত্মিক বিন্দুতে স্থির রাখতে হবে । দুই পাল্লার একদিকে থাকবে জ্ঞান আর কর্ম। জ্ঞানের দিকে বেশী ঝুকে পড়লে কর্ম কে অবহেলা করা হবে- পরিণামে আসবে দুঃখ, অভাব। আর কাটাতি কর্মের দিকে বেশী ঝুকে পড়লে তবে আসবে আধ্যাত্মিক অকল্যাণ । তাই কাটাতি দুয়ের মাঝে সমন্বয় করে রাখতে হবে । কোন দিকেই না যেনো বেশী ঝুকে পড়ে। এই নিয়ম না মেনে চললে বিশ্বপ্রেম , বিশ্ব ভাতৃত্ব সচেতনতা কোন টাই সম্ভব না।

হস্তী কেন বিশ্বকর্মার বাহন ?

বিশ্বকর্মার মূর্তি যদি আমরা দেখি, তাহলে দেখি তাঁর বাহন হস্তী । কলকাতার কর্মকার সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা শিক্ষা ব্রতী স্বর্গত হরষিত কেশরী রায় প্রথম বিশ্বকর্মার হস্তী বাহন বিগ্রহের পূজা করেন । হাতী কেন বাহন ? পুরানের প্রনাম মন্ত্রে বিশ্বকর্মা কে মহাবীর বলে বর্ণনা করা হয়েছে । হাতীর কত টা শক্তি তার আন্দাজ করতে পারি। নিমিষে গাছ পালা মাথা দিয়ে ঠেলে ফেলে দেয় । কারোর ওপর চরণ ভার দিলে- তার মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মৃত্যু- আর অস্থি সকল চূর্ণ চূর্ণ হবে । এমন প্রবাদ আছে, হাতী নাকি একটু বড় পাথর শুঁড়ে তুলে ছুঁড়ে মারতে পারে । প্রাচীন কালে রাজারা যুদ্ধে হস্তী বাহিনীর প্রবল ভাবে ব্যবহার করতেন । তাই এই মহা শক্তিমান প্রানী এই দিক থেকে মহা যোদ্ধা বিশ্বকর্মার বাহন হবার যোগ্যতা রাখে ।

হস্তীর হাত নেই । তবে একটি ‘কর’ বা ‘শুন্ড’ আছে । কর আছে বলেই হাতীর এক নাম ‘করী’ । ‘কৃ’ ধাতু থেকেই ‘কর’ শব্দটির উৎপত্তি। সে এই শুন্ডের সাহায্যেই গাছের ডাল টানে, জল খায়, স্নান করে । আবার দেখি শিল্পের মাধ্যমেই কর্ম সংস্থান । তাই বিশ্বকর্মা কর্মের দেবতা । এই শূন্ড দ্বারা কর্ম করা – এই দিক থেকে হস্তী একভাবে বিশ্বকর্মার বাহন হিসাবে মানানসই ।

হস্তীকে দিয়ে অনেক কাজ করানো হয় । বন দপ্তর হস্তীকে দিয়ে কাঠ সরানোতে কাজে লাগায় । মোটা মোটা গাছের গুঁড়ি, কান্ড মাহুতের নির্দেশে হাতী এক স্থান থেকে আর এক স্থানে নিয়ে যায়, আবার কখনো সে গাছের ডাল বয়ে নিয়ে যায় মাহুতের নির্দেশে । আবার বন্য হাতীদের তাড়াতে বন দপ্তর পোষা হাতী গুলিকে কাজে লাগায়। হাতীর জীবন টাই এই রকম কাজের। নিজের খাদ্য আরোহণ থেকে , মাল বওয়া সব সময় কাজ । আর শিল্পের সাথে কর্মের সংস্থান জল আর ঠান্ডার মতো। জলে যেমন ঠান্ডা ভাব থাকে তেমনই কর্মের মাধ্যমেই শিল্পের বিকাশ। তাই বিশ্বকর্মা হলেন কর্মেরও দেবতা । এই দিকে থেকে শ্রমিক হাতী বিশ্বকর্মার বাহন হিসাবে একেবারে মানানসই ।

শিল্পের বিকাশ , বেকার দের কর্ম সংস্থান , শিল্পকে কেন্দ্র করে একটি দেশের বিকাশ যথার্থ বিশ্বকর্মা পূজা । বন্ধ কারখানা , অন্ধকার ময় শ্রমিক বস্তী , বন্ধ কাজ কর্ম- সেখানে বিশ্বকর্মার পূজা অনেক টা ‘ঘরে নাই ভাত- দুয়ারে বাজে ঢাক’ এমন অবস্থা। কর্ম রূপে যেনো আমরা বিশ্বকর্মার পূজা করতে পারি। শ্রম দিবস হিসাবে এই বিশ্বকর্মা পূজার দিন টা যেনো পালন করতে পারি- এই প্রার্থনাই সকলে বিশ্বকর্মার কাছে করবো।