ক্যালসিয়াম, সাপ্লিমেন্ট খেলে কি হয় – Benefits of Supplements

Food Supplement – Health Tips in Bangla Language

সাপ্লিমেন্ট কি ? সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার নিয়ম, সাপ্লিমেন্ট গাইড, সাপ্লিমেন্ট ভিটামিন ইত্যাদি জানার জন্য আমাদের আজকের এই প্রয়াস  প্রতিদিনের ডায়েটে পুষ্টির হার বৃদ্ধি করতে অনেকেই ফুড সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকেন। কিন্তু সবসময় যে ঠিকঠাক রিসার্চ করে সাপ্লিমেন্ট বাছা হয়, তা নয় !  লোকমুখে শুনে, বা আন্দাজের ওপর ভর করে অনেকেই ভুল সাপ্লিমেন্ট নিয়ে ফেলেন। আর এতে হিতে বিপরীত হয়।

সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের প্রতিদিনের কাজ করার শক্তি যোগায় আমাদের রোজকার খাওয়া খাবার। ভালো খাদ্যাভ্যাস যেমন কাজ করার জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়, তেমনি আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটায়। কাজ ও জায়গা নির্বিশেষে এই খাদ্যের কিছু রকমফের ঘটে। একই সাথে বয়সের প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের শরীরের ঘাটতির রকম অনুসারে আমরা খাবার খাই। চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সঠিক ডায়েট নির্ণয় করে নি। দৈনন্দিন কাজের জন্যে আমরা সাধারণ খাবার খেলেও যারা স্বাস্থ্য চর্চা করেন বা যারা খেলাধূলার সাথে যুক্ত, তাদের ক্ষেত্রে এই খাদ্যাভ্যাসের ধরন অনেকটাই আলাদা। তাদের অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রমের জন্যে অতিরিক্ত শক্তি খরচ হয়। এই কারণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাটের যোগান যাতে সঠিক পরিমাণে তাদের শরীরে আসে তার খেয়াল রাখা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।

সেই জন্যে স্বাস্থের চর্চার সাথে কি খাবার খাওয়া উচিত, তার যেমন খেয়াল রাখতে হয়, তার সাথে খাবারের প্রয়োজনীয় বিকল্প বা ফুড সাপ্লিমেন্ট বেছে নেওয়ার দরকারও পড়ে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা ফুড সাপ্লিমেন্ট বেছে নি। অনেক সময় এর জন্যে ভরসা করি নিজের সীমিত জ্ঞান, বা অনলাইনে পাওয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য। যার কারণে এর ভুল প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের উপর। ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমাদের দৈনন্দিন কাজ এবং পেশাগত কাজও। কি কি ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত তা জানার পাশাপাশি কি কি ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত না, এটাও আমাদের জেনে রাখা দরকার। আজকের প্রতিবেদনে কোন ছয়টি সাপ্লিমেন্ট খাবেন না বা চিন্তা ভাবনা করে তবেই খাবেন, তা জেনে নিন।

ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলে কি হয়

1. ক্যালসিয়াম আমরা সবাই জানি ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের প্রধান উপাদান। এটা আমাদের হাড় শক্ত করে। কিন্তু শুধুমাত্র এটাই একমাত্র উপাদান নয় যা আমাদের হাড় মজবুত করে। অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের সেবন অস্টিওপোরোসিস কে ঠেকায় না, হৃদরোগ জনিত সমস্যাও নিয়ে আসতে পারে। যদি হাড়ের সমস্যা না থাকে, তাহলে দুগ্ধজাত খাবারের বদলে অন্য সবজি বেছে নিন। ক্যালসিয়াম সরাসরি খাওয়ার থেকে অন্য প্রয়োজনীয় খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়ামের সাথে নেওয়া ভালো।

মাল্টিভিটামিন এর উপকারিতা

2. মাল্টি ভিটামিন মাল্টি ভিটামিন হলো অনেকগুলো ভিটামিন এবং মিনারেলের সম্মিলিত রূপ। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই খনিজ শরীরের দ্বারা শোষণ করার জন্যে সঠিক রূপে থাকে না। যার ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শরীরের কিডনি। অতিরিক্ত আয়রনের জন্যে অনেকসময় প্রদাহজনিত সমস্যাও দেখা যায়। শরীরের দরকার থাকলেও মাল্টি ভিটামিন সেই দরকার কতটা মেটায় এটা নিয়েও প্রমাণিত কোনো মতবাদ নেই। তাই মাল্টি ভিটামিন ছেড়ে সঠিক খাদ্যের উপর ভরসা করা ভালো।

ওজন কমানোর উপায়

3. ওজন কমানোর জন্যে যা কিছু ওজন কমানোর জন্যে অনেক সময় বাজার চলতি কিছু সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। অনেকে এর উপর ভরসা করলেও আসলে এটা কাজের কাজ কিছু করে না বলেই অনেকে মনে করেন। আপাত দৃষ্টিতে এটা দাবি করে যে এটা শরীরের খিদে বাড়িয়ে দেয় বা হজম ক্ষমতা ত্বরান্বিত করে। কিন্তু বাস্তবে সেভাবে কার্যকরী নয়। তাই ওজন কমানোর চিন্তা থাকলে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, সঠিক ডায়েট, সময় আর স্বাস্থ্য চর্চা একমাত্র ওজন কমাতে পারে।

মাছের তেল  – Fish Oil Benefits

4. কম গুণমান সম্পন্ন মাছের তেল বা fish oil অনেকেই নেন। কিন্তু এই oil সঠিক ভাবে প্যাকেজিং করা না হলে এবং সঠিক তাপমাত্রায় না থাকলে এর গুণগত মন নষ্ট হয়ে যায়। সব থেকে এর মধ্যে পরিচিত হলো omega-3। কিন্তু ঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করলে এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। একান্তই ফিশ অয়েল নিতে চাইলে সামুদ্রিক মাছের উপর ভরসা রাখুন।

প্রোবায়োটিক বলতে কী বোঝায়

5. প্রবায়টিকস এবং প্রোটিন মাছের তেলের মত প্রবায়োটিকস একই রকম যত্নে না রাখলে এর গুণমান নষ্ট হয়ে যায়। কমদামী এবং কম গুণসম্পন্ন প্রবায়োটিকস খেলে তাতে ব্যাকটেরিয়াল সংখ্যান কমতে থাকে। একইভাবে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগেও শরীরের কতটা প্রয়োজন তা জেনে নিন। অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় এতে মানবদেহের রেচনাঙ্গ।

যৌনতা – Sexuality

6. যৌনতা সম্পর্কিত অনেকেরই এই ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অভাব থাকে। ধারনার সীমিত পরিসর থাকার জন্যে ভরসা করেন অন্যের মতামতের উপর। কখনো বা বাজার চলতি বিজ্ঞাপন বা ইন্টারনেটের উপর। ফলে নিজের যৌন উদ্দীপনার সঠিক প্রকাশের জন্য ভরসা করেন হরমোন উদ্দীপিত করে এমন কোনো ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট। যা শরীরের উপর দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি করে। যদি সত্যি মনে করেন এই ধরনের কোনো সমস্যা আছে তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

ফুড সাপ্লিমেন্ট ঘিরে মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, কি সেই সব ধারণা

1. সাপ্লিমেন্ট এক ধরণের ওষুধ- সাপ্লিমেন্ট কখনওই অ্যালোপ্যাথিকের বিকল্প হতে পারে না, কারণ এর মধ্যে রোগ প্রতিরোধের কোনও ক্ষমতা নেই।

2. শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাপ্লিমেন্ট একাই যথেষ্ট ভুল ধারণা। ঠিকঠাক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রথমেই দরকার সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত যোগ ব্যায়াম।

3. সবার ক্ষেত্রে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট’র ফল এক হবে। সাপ্লিমেন্ট’র কার্যকারীতা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যেমন-মান, পরিমাণ, কখন এবং কীভাবে খাওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, সব মানুষের শরীর একই হারে পুষ্টি শোষন করতে পারে না। কাজেই, প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট’র ফল আলাদা হবে।

4. সাপ্লিমেন্টের মধ্যে স্টেরয়েড মেশানো থাকে।  স্টেরয়েড এক ধরনের ওষুধ। সাধারণত মাংস পেশির সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাপ্লিমেন্ট খাওয়া হয় পুষ্টির হার বাড়াতে। কাজেই, সাপ্লিমেন্ট’র মধ্যে কখনওই স্টেরয়েড মেশানো থাকে না। ঠিকঠাক দোকান থেকে কিনলে সাপ্লিমেন্ট নিরাপদ।

5. শুধুমাত্র ওয়ে প্রোটিন পেশির গঠন উন্নত করে।  ওয়ে প্রোটিনের থেকে ভাল ফল দেয় প্লান্ট প্রোটিন।

6. একবার সাপ্লিমেন্ট খেলে, সারা জীবন ভাল স্বাস্থ্য বজায় থাকবে তা কিন্তু কখনোই নয়। ভাল স্বাস্থের জন্য শরীরে নিয়মিত পুষ্টির জোগান প্রয়োজন। সঙ্গে অবশ্যই যোগ ব্যায়াম।

7. জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সাপ্লিমেন্ট কখনও নকল হতে পারে না। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের সাপ্লিমেন্ট-এর নকলও কিন্তু বাজারে মেলে। কাজেই শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য দোকান থেকেই সাপ্লিমেন্ট কিনুন।