বন্ধুরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো। শীত চলে যাবার পর গরমের রেশ চলে এসেছে। আর কিছুদিন পরে আবার বর্ষা শুরু হবে। যদিও বর্ষা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে এই বছর। বর্ষার রিমঝিম শব্দ সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করেছে রবীন্দ্রনাথকে। রবীন্দ্র সঙ্গীত বর্ষার গান এড়িয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এড়িয়ে যাওয়ার দুঃসাহসও করেন না কেউ। তাই তো দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে বর্ষার অজস্র গান। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়, এমন দিনে মন খোলা যায়’, ‘আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে, দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে’, ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিক-দিগন্তের পানে’ কিংবা টুপ করে কেউ ইনবক্সে চালিয়ে দেয়- ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে, জানি নে জানি নে কিছুতে যে কেন মন লাগে না’ বা ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে ওঠে’ এরকম গান যে কখন কণ্ঠে বেজে ওঠে, উতলা মন নিজেও জানে না। প্রেমিক-প্রেমিকা দুজন দুজনাকে উৎসর্গ করে ‘বাদল দিনের প্রথম কদমফুল করেছো দান, আমি নিতে এসেছি শ্রাবণের গান’। আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে মানুষের সব অনুভব-অনুভূতির খবর পেলেন। শতবর্ষ পেরিয়েও যা রয়ে যায় একেবারে অমলিন! চলুন তবে আমরা চলে যাবো মূলপর্বে। বর্ষার গানের তালিকা,বর্ষার গান ও কবিতা নিয়ে।
1.আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে জানি নে,
জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না
এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্ভ্রান্ত মেঘে
মন চায় মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লার সারা দিনমান।
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা– মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥
2.যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়…………….(।।)
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে জল ভরা দৃষ্টিতে এসো কোমল শ্যামল ছায় ।
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আরো
তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়…………….(।।)
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে মেঘ মাল্লা বৃষ্টিরও মনে মনে ।।
কদম গুচ্ছ খোঁপায়ে জড়ায়ে দিয়ে জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়….(।।)
যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়…
3.এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ও গো তোমার নিমন্ত্রণ
এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ও গো তোমার নিমন্ত্রণ
যুথিবনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া
যুথিবনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া
হায় হায় রে
দিন যায় রে
ভরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাবো কবে পাবো
ও গো তোমার নিমন্ত্রণ
শুধু ঝরে ঝরঝর
আজ বারি সারাদিন
আজ যেন মেঘে মেঘে
হলো মন যে উদাসীন
শুধু ঝরে ঝরঝর
আজ বারি সারাদিন
আজ যেন মেঘে মেঘে
হলো মন যে উদাসীন
আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
কী যে…

4. এই বৃষ্টি ভেজা রাতে
এই বৃষ্টি ভেজা রাতে
তুমি নেই বলে,
সময় আমার কাটেনা
চাঁদ কেনো আলো দেয়না,
পাখি কেন গান গায় না,
তারা কেন পথ দেখায় না
তুমি কেন কাছে আসোনা? [x2]
তারা তোমাকে চায়,
তারা তোমাকে চায়
পাখি মৃদু কন্ঠে বলে
তারা তোমাকে চায়,
তারা তোমাকে চায়
এই শরতের সন্ধ্যায় তুমি নেই বলে
সময় আমার কাটেনা
কাসফুল কেনো ফোটেনা
ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়না,
মেঘের ভেলায় ভাসে না
ভেসে তুমি কেন আসোনা।
তারা তোমাকে চায়,
তারা তোমাকে চায়।
হৃদয়ের যত অনুভুতি আছে,
তারা তোমাকে চায়,
তারা তোমাকে চায়।
এই বসন্তের সন্ধ্যায় তুমি নেই বলে
সময় আমার কাটেনা
ফুলগুলো কেন হাসেনা,
হৃদয় দোলা দেয়না,
আবেশে তে জড়ায় না
তুমি কেন কাছে আসোনা।এই বৃষ্টি ভেজা রাতে
তুমি নেই বলে
সময় আমার কাটেনা
চাঁদ কেনো আলো দেয়না
পাখি কেন গান গায় না
তারা কেন পথ দেখায় না
তুমি কেন কাছে আসোনা?
5.এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।
ব্যাকুল বেগে আজি বহে যায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
এমন ঘনঘোর বরিষায়।।
6.বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান
বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান
যদি ডেকে বলি, এসো হাত ধরো
চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান করি মেঘো মল্লারে
করুনাধারা দৃষ্টিতে
আসবে না তুমি; জানি আমি জানি
অকারনে তবু কেন কাছে ডাকি
কেন মরে যাই তৃষ্ণাতে
এইই এসো না চলো জলে ভিজি
শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে
কত না প্রণয়, ভালোবাসাবাসি
অশ্রু সজল কত হাসাহাসি
চোখে চোখ রাখা জলছবি আঁকা
বকুল কোন ধাগাতে
কাছে থেকেও তুমি কত দূরে
আমি মরে যাই তৃষ্ণাতে
চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
যদি ডেকে বলি, এসো হাত ধরো
চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান করি মেঘো মল্লারে
করুনাধারা দৃষ্টিতে
আসবে না তুমি; জানি আমি জানি
অকারনে তবু কেন কাছে ডাকি
কেন মরে যাই তৃষ্ণাতে
এইই এসো না চলো জলে ভিজি
শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে
বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান
7.আকাশ এতো মেঘলা যেও নাকো একলা
আকাশ এতো মেঘলা যেও নাকো একলা
এখনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জল-তরঙ্গে নাচবে নটি রঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার ।।
গল্প করার এইতো দিন
মেঘ কালো হোক মন রঙিন ।।
সময় দিয়ে হৃদয়টাকে বাঁধবো নাকো আর
আকাশ এতো মেঘলা যেও নাকো একলা
এখনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জল-তরঙ্গে নাচবে নটি রঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার ।
আঁধারো ছায়াতে চেয়েছি হারাতে
দু’বাহু বাড়াতে তোমারি কাছে ।।
যাক না এমন এইতো বেশ
হয় যদি হোক গল্প শেষ ।।
পূর্ন হৃদয় ভুলবে সেদিন সময় শূন্যতার ।
আকাশ এতো মেঘলা যেও নাকো একলা
এখনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জল-তরঙ্গে নাচবে নটি রঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার ।
8.ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে– আয় গো আয়।
ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে– আয় গো আয়।
কাঁচা রোদখানি পড়েছে বনের ভিজে পাতায়॥
ঝিকি ঝিকি করি কাঁপিতেছে বট–
ওগো ঘাটে আয়, নিয়ে আয় ঘট–
পথের দু ধারে শাখে শাখে আজি পাখিরা গায়॥
তপন-আতপে আতপ্ত হয়ে উঠেছে বেলা,
কলস পাকড়ি আঁকড়িয়া বুকে
ভরা জলে তোরা ভেসে যাবি সুখে
তিমিরনিবিড় ঘনঘোরে ঘুমে স্বপনপ্রায়– আয় গো আয়॥
মেঘ ছুটে গেল, নাই গো বাদল– আয় গো আয়।
আজিকে সকালে শিথিল কোমল বহিছে বায়– আয় গো আয়।
এ ঘাট হইতে ও ঘাটে তাহার
কথা বলাবলি নাহি চলে আর,
একাকার হল তীরে আর নীরে তাল-তলায়–
আয় গো আয়॥
9.মেঘের গায়ে, নূপুর পায়ে, নাচে বরষা
মেঘের গায়ে, নূপুর পায়ে, নাচে বরষা
বৃষ্টি কি তার ছন্দ জেনেছে
শ্রাবণ কি তার মন্ত্র বলেছে
দু’হাত তুলে কোমল সুরে
ডাকে কুয়াশা ভেজে বরষা
চোখে কি তার ছায়া ফেলেছে
হৃদয়ের কাছে ছোঁয়া মিলেছে
কাজল দীঘির ক্লান্ত বধির
তুলেছে কি ঢেউ
সুরের মায়ায় কোমল ছায়ায়
দেখেছে কি কেউ
মনে কি তার আগল খুলেছে
আধারের পাশে মূর্তি গড়েছে
ঢেউয়ের তালে বানের জলে
মেশে মোহনায়
ছন্দ তালে নদী ভিজে যায়…
10.বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথা?
বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথা?
আজি পড়িছে মনে মম কত কথা।
গিয়াছে রবি শশী গগন ছাড়ি,
বরষে বরষা বিরহ-বারি;
আজিকে মন চায় জানাতে তোমায়
হৃদয়ে হৃদয়ে শত ব্যথা।
দমকে দামিনী বিকট হাসে;
গরজে ঘন ঘন, মরি যে ত্রাসে।
এমন দিনে হায়, ভয় নিবারি,
কাহার বাহু ‘পরে রাখি মাথা।।